সিলেট ৩১শে অক্টোবর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ | ১৫ই কার্তিক, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
প্রকাশিত: ৩:০৬ অপরাহ্ণ, সেপ্টেম্বর ৫, ২০২৩
জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে পৃথিবী ক্রমশ উঞ্চ হচ্ছে, আর সেই সাথে বিপন্ন হচ্ছে কোটি কোটি মানুষের জীবন ও জীবিকা। তাই জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব সম্পর্কে সাধারণ মানুষের জানার পরিধি বিস্তারের স্বার্থে সংশ্লিষ্ট তথ্যের অবাধ প্রচারণার কোনো বিকল্প নেই। তবে মুশকিল হচ্ছে জলবায়ু পরিবর্তন বিষয়ক আলোচনা বা তথ্য প্রচারের ক্ষেত্রে কারিগরি ভাষা ব্যবহৃত হয়। ফলে বিষয়টি নিয়ে সাধারণ মানুষের মধ্যে সৃষ্টি হয় অসচেতনতা।
একথা অনস্বিকার্য যে জলবায়ু নিয়ে যে কোনো ধরনের পরিকল্পনা ও সিদ্ধান্ত গ্রহনের ক্ষেত্রে গবেষক এবং নীতিনির্ধারকরা বিজ্ঞানভিত্তিক, তথ্যনির্ভর এবং কারিগরিভাবে পরীক্ষিত তথ্যের উপর নির্ভর করে থাকেন সাধারণ মানুষের জন্য সচরাচর যা বোধগম্য হয়না। ফলে সমাজের একটি বিরাট অংশ জলবায়ু বিষয়ক সিদ্ধান্ত গ্রহনের ক্ষেত্রে পিছিয়ে থাকে। আর বিষয়টিকে সামনে রেখে জলবায়ু সম্পর্কে সাধারণ মানুষের ধারণাকে আরো জোরদার করতে শব্দকোষটি প্রকাশ করেছে দ্য থার্ড পোল। এই শব্দকোষটিতে জলবায়ু সংক্রান্ত সংশ্লিষ্ট তথ্য, সংজ্ঞা এবং অন্যান্য বিষয়গুলো সহজ ভাষায় তুলে ধরা হয়েছে। আমাদের প্রত্যাশা দ্য থার্ড পোলের এই ‘এক্সপ্লেইনারটি’ (ব্যাখ্যা) জলবায়ু নিয়ে সাধারণ মানুষের জানার পরিধিকে আরো বিস্তৃত করবে। বিশেষ করে জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবে ক্ষতিগ্রস্থ সাধারণ জনগণ সংশ্লিষ্ট বিষয়গুলো সম্পর্কে আরো ভালোভাবে জানতে পারবে যা তাদের সিদ্ধান্ত গ্রহনে সহায়তা করবে বলে আমরা মনে করি।
এই নির্দেশিকাটি ইংরেজি, হিন্দি, নেপালি, উর্দু এবং বাংলা ভাষায় প্রকাশিত হলো। আন্তর্জাতিক পর্যায়ে নতুন কোনো স্বীকৃত তথ্য প্রকাশ হবার সঙ্গে সঙ্গে নির্দেশিকাটির অপরাপর সংকলনে তা অন্তর্ভূক্ত করা হবে।
১২৩
১.৫সে. এবং ২সে.
২০২২ সালে বৈশ্বিক গড় তাপমাত্রা ছিল শিল্প বিপ্লবের আগের তুলনায় ১.১৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস বেশি। উষ্ণতার এই মাত্রা বৃদ্ধির ফলে মানুষ, বন্যপ্রাণী এবং সমগ্র প্রাকৃতিক ব্যবস্থায় এর নেতিবাচক প্রভাব বাড়তে থাকে। প্রকৃতিতে তীব্র তাপপ্রবাহের পাশপাশি বাড়তে থাকে অস্বাভাবিক বন্যা এবং খরা, পাল্টে যায় বৃষ্টিপাতের ধরণ। এর ফলে সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বৃদ্ধিসহ নানা ধরনের প্রভাবে মানুষের জীবন ও প্রকৃতিতে অস্বাভাবিক পরিবর্তন আসতে থাকে।
জলবায়ু পরিবর্তনের নেতিবাচক পরিস্থিতি মোকাবেলায় ২০১৫ সালে বিশ্ব নেতৃবৃন্দ প্যারিস চুক্তি সইয়ের মধ্য দিয়ে বৈশ্বিক তাপমাত্রা ২ ডিগ্রি সেলসিয়াসের নিচে নামিয়ে আনতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ হয়। আর এই লক্ষ্য বাস্তবায়নে বৈশ্বিক তাপমাত্রা ১.৫ ডিগ্রি সেলসিয়াসের মধ্য ধরে রাখতে প্রয়োজনীয় ‘প্রচেষ্টা’ চালিয়ে যেতে সচেষ্ট হয়। আসলে ১.৫সি এবং ২সি-এর প্রভাবের ক্ষেত্রে পার্থক্য অনেক বেশি। বিশ্বের তাপমাত্রা মাত্র ২ ডিগ্রি সেলসিয়াস বৃদ্ধি পাওয়ার অর্থ হচ্ছে জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে দৃশ্যমান প্রভাবের মাত্রা বহুগুনে বেড়ে যাবে। এমনকি চলমান পরিস্থিতি তার সব ধরনের বিপদসীমাকে অতিক্রম করবে।
ইন্টার গর্ভণমেন্টাল প্যানেল অন ক্লাইমেট চেঞ্জ-এর (আইপিসিসি) একটি প্রতিবেদনে বলা হয়েছে বিশ্বের তাপমাত্রা বৃদ্ধির মাত্রা ১.৫ ডিগ্রি সেলসিয়াসের মধ্যে ধরে রাখতে হলেে ২০২৫ সালের মধ্যে গ্রীনহাউস গ্যাস নির্গমন সর্বোচ্চ বৃদ্ধি পাবে এবং সেই হারকে ২০৩০ সালের মধ্যে কমপক্ষে ৪৩ শতাংশে নামিয়ে আনতে হবে ।
তবে নানা প্রতিশ্রুতি সত্ত্বেও, এই লক্ষ্য অর্জনের পথে দৃশ্যমান কোনো অগ্রগতি নেই। ২০২৩ সালের মার্চ মাসে প্রকাশিত আইপিসিসির প্রতিবেদন অনুসারে, গ্রীনহাউস গ্যাস নির্গমনের মাত্রা হ্রাসের প্রবনতা চলমান সত্বেও এই শতাব্দীতে বৈশ্বিক উষ্ণতা বৃদ্ধির মাত্রা ১.৫ ডিগ্রি সে. ছাড়িয়ে যেতে পারে।
অ
অভিযোজন
‘জলবায়ু পরিবর্তনের সাথে অভিযোজন’ বলতে পরিবেশ, সমাজ, জনস্বাস্থ্য এবং অর্থনীতিতে বৈশ্বিক উষ্ণায়নের ফলে সম্ভাব্য ক্ষতিকর প্রভাবগুলো কমিয়ে আনতে সরকার এবং সাধারন মানুষ যেসব পদক্ষেপ নিয়ে থাকে তা বোঝায়। এই প্রভাবগুলির অর্থপূর্ণ অভিযোজন পদ্ধতি বিভিন্ন দেশ, অঞ্চল এবং সম্প্রদায়ের চাহিদার সাথে সমন্বয় রেখে নির্ধারণ করা উচিত।
দক্ষিণ এশিয়ায় যেসব অভিযোজন পদ্ধতি কার্যকর হতে পারে তার মধ্যে অন্যতম হচ্ছে খরা-প্রতিরোধী ফসলের নতুন জাত উদ্ভাবন, উপকূলীয় শহর বা নদীর আশেপাশে বসবাসকারী সম্প্রদায়ের সুরক্ষার জন্য উন্নত বন্যা প্রতিরক্ষামূলক ব্যবস্থা প্রচলন, জলবায়ু পরিবর্তন-সম্পর্কিত দুর্যোগের ক্ষয়ক্ষতি হ্রাসে পূর্বাভাস ব্যবস্থার উন্নতি এবং ম্যানগ্রোভ বনের মতো প্রাকৃতিক বাস্তুতন্ত্র পুনরুদ্ধার করা, যা চরম আবহাওয়ার বিরুদ্ধে একটি প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা হিসেবে কাজ করতে পারে। জলবায়ু অভিযোজন সম্পর্কে জানতে এখানে ক্লিক করুন।
অভিবাসন
জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বৃদ্ধি পায় এবং বন্যা, তাপপ্রবাহ এবং খরার মতো ঘন ঘন এবং তীব্র চরম আবহাওয়ার ঘটনা ঘটতে থাকে। এই বিরুপ পরিস্থিতি থেকে বাঁচতে বিশ্বজুড়ে অনেক মানুষ উন্নত জীবনযাপনের সন্ধানে বাড়িঘর ছেড়ে যেতে বাধ্য হয়। একে প্রায়ই জলবায়ু অভিবাসন বলা হয়। তাপমাত্রা বৃদ্ধি এবং জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব বৃদ্ধির সাথে সাথে জলবায়ু স্থানান্তর আগামী দশকগুলোতে উল্লেখযোগ্যভাবে বৃদ্ধি পাবে বলে আশা করা হচ্ছে।
অ্যানথ্রোপজেনিক (নৃতাত্ত্বিক)
‘অ্যানথ্রোপজেনিক’ (নৃতাত্বিক) পরিভাষার অর্থ হচ্ছে এমন সব বিষয় যা কেবল মানুষের দ্বারা সৃষ্ট। ঐতিহাসিকভাবে পৃথিবীতে হাজার বছর ধরে ধীরে ধীরে জলবায়ু পরিবর্তিত হচ্ছে। তবে ১৮০০ শতক থেকে মানুষের জীবাশ্ম জ্বালানী ব্যবহারসহ বনভূমি উজার করার মতো কার্যকলাপ বায়ুমণ্ডলে গ্যাসের ভারসাম্য পরিবর্তিত হয়েছে, যার ফলে বৈশ্বিক তাপমাত্রা মারাত্মকভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে। এই বিষয়গুলো জলবায়ু পরিবর্তনের নৃতাত্ত্বিক বা ‘অ্যানথ্রোপজেনিক’ বিষয়সমূহের উদাহরণ।
আরবান হিট আইল্যান্ড ইফেক্ট
আরবান হিট আইল্যান্ডের প্রভাব বলতে বোঝায় যেখানে শহুরে এলাকায় তাপমাত্রা আশেপাশের অঞ্চলের তুলনায় উল্লেখযোগ্যভাবে বেশি। এর সম্ভাব্য কারণগুলোর মধ্যে রয়েছে কংক্রিটের মতো কৃত্রিম পৃষ্ঠ এবং তাপ শোষণকারী রাস্তা; জ্বালানি পোড়ানো এবং অন্যান্য মানবসৃষ্ট কার্যক্রমের সময় উষ্ণতা বৃদ্ধি এবং সবুজ উদ্ভিদের অভাব। এই পরিস্থিতিতে শহর বা নগরে তাপপ্রবাহের তীব্রতা বেড়ে যেতে পারে।
আকস্মিক বন্যা
আকস্মিক বন্যা হল তীব্র এবং হঠাৎ বন্যা, যা অল্প সময়ের মধ্যে ভারী বৃষ্টিপাত বা তুষার বা বরফ দ্রুত গলে যাওয়ার মতো ঘটনাগুলির কারনে সৃষ্টি হয়ে থাকে। আকস্মিক বন্যা গুরুতর ক্ষতির কারণ হতে পারে কারণ সেগুলো কোনো সতর্কতা ছাড়াই সৃষ্টি হতে পারে। অনেক সময়ই বাসিন্দাদের সরিয়ে নেয়া বা প্রয়োজনীয় সতর্কতা অবলম্বন করা সম্ভব হয়ে উঠে না।
ভারতীয় হিমালয়ে, ১৯৮৬ সাল থেকে ১৭টি বড় আকস্মিক বন্যার ঘটনা ঘটে। বিজ্ঞানীরা বলেন, গত ২০ বছরে হিমালয়ে আকস্মিক বন্যা বৃদ্ধির জন্য বনে তীব্র দাবানল একটি অন্যতম প্রধান কারণ।
ইকোসিস্টেম (বাস্তুসংস্থান)
একটি ইকোসিস্টেম হল প্রকৃতির একটি জৈবিক প্রক্রিয়া যার মধ্যে রয়েছে প্রাণী, উদ্ভিদ এবং অণুজীব ইত্যাদি। এই প্রক্রিয়ায় প্রকৃতির সবগুলো উপাদান একটি অপরটির সাথে যুক্ত এবং নির্ভরশীল। যেমন পানি এবং মাটি। ইকোসিস্টেম ব্যাপক হতে পারে – যেমন বনভূমি। আবার অনেক ক্ষুদ্রও হতে পারে।
এল নিনো
এল নিনো হল একটি জলবায়ু ধরণ যেখানে পূর্ব-মধ্য গ্রীষ্মমন্ডলীয় প্রশান্ত মহাসাগরের পৃষ্ঠের পানি স্বাভাবিকের চেয়ে উল্লেখযোগ্যভাবে উষ্ণ হয়ে যায়। এটি সারা বিশ্বে বৃষ্টিপাতের ধরণ এবং আবহাওয়াকে প্রভাবিত করে এবং বিশ্বব্যাপী তাপমাত্রা বৃদ্ধি করে। এল নিনো হল এল নিনো-সাউদার্ন অসিলেশন (ENSO) নামক একটি ঘটনার অংশ। আর প্রকৃতির এই ধরনের বিপরীত শীতল পর্যায়কে লা নিনা বলা হয়। এল নিনোর ঘটনাগুলো নিয়মিতভাবে না ঘটলেও গড়ে প্রতি দুই থেকে সাত বছরে এটি ঘটে থাকে।
এনার্জি ট্রানজিশন
বিদ্যুৎ বা জ্বালানী খাত বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই জীবাশ্ম জ্বালানির উপর অনেক বেশি নির্ভরশীল যা জলবায়ু পরিবর্তনের প্রাথমিক কারণ। কয়লা, তেল এবং প্রাকৃতিক গ্যাস থেকে সৌর এবং বায়ুর মতো নবায়নযোগ্য শক্তির উৎসের দিকে স্থানান্তরকে মূলত এনার্জি ট্রানজিশন বলা হয়ে থাকে। এর ফলে কার্বন নির্গমন অপেক্ষাকৃতভাবে হ্রাস পায়।
ওজোন স্তর
ওজোন একটি গ্যাস অণু যা তিনটি অক্সিজেন পরমাণু দ্বারা গঠিত। ওজোন স্তর পৃথিবীর স্ট্র্যাটোস্ফিয়ারের একটি অংশ, যেখানে বায়ুমণ্ডলে ৯০% ওজোন পাওয়া যায়। এই ওজোন স্তরটি পৃথিবীর জীবনের জন্য গুরুত্বপূর্ণ কারণ এটি সূর্যের ক্ষতিকারক অতিবেগুনী বিকিরণ শোষণ করে।
১৯৭০-এর দশকে গবেষণায় দেখা গেছে যে ওজোন স্তর ক্ষয়প্রাপ্ত হচ্ছে, পৃথিবীতে জীবনের জন্য সম্ভাব্য গুরুতর ঝুঁকি রয়েছে। সিএফসি এবং এইচসিএফসিসহ ওজোন স্তরের হ্রাসের জন্য দায়ী গ্যাসগুলি মন্ট্রিল প্রোটোকলের বৈশ্বিক পরিবেশ চুক্তির অধীনে পর্যায়ক্রমে বন্ধ করা হচ্ছে। এই রাসায়নিকের ব্যবহার সীমিত করার ক্ষেত্রে এই চুক্তির সাফল্যের কারণে, ওজোন স্তর এখন পুনরুদ্ধারের পথে রয়েছে।
ক
কার্বন ক্রেডিট এবং অফসেট
কার্বন ক্রেডিট এবং কার্বন অফসেট দুটি ধরনের কার্বন ট্রেডিং বা কার্বন বাণিজ্য। কার্বন ক্রেডিটের মাধ্যমে সরকারসমূহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের জন্য একটি লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করে দেয়। যেসব ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠান তাদের ‘নির্ধারিত লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে কম কার্বন নির্গত করে -তারা অতিরিক্ত কার্বন ক্রেডিট দ্বারা অন্যান্য বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠানের সাথে ব্যবসা করতে পারে। এর মাধ্যমে মূলত ব্যবসা প্রতিষ্ঠানগুলোকে কার্বন নির্গমন হ্রাসে উৎসাহিত করা হয়।
কার্বন অফসেট সংক্রান্ত ধারনাটি মূলত বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠানকে মাথায় রেখে চালু করা হয়েছে। এক্ষেত্রে যদি একটি প্রতিষ্ঠান বায়ুমণ্ডলে কার্বনের মাত্রা কমিয়ে আনার লক্ষ্যে বৃক্ষরোপন করে থাকে তাহলে তাকে কার্বন অফসেট হিসাবে গণনা করা হয়। পাশাপাশি এই প্রক্রিয়ায় সেই নির্দিষ্ট প্রতিষ্ঠানটি অন্যান্য সমমনা প্রতিষ্ঠানের সাথে বাণিজ্য করতে পারে যারা একইভাবে কার্বন নির্গমনকে সহনীয় মাত্রায় রাখার প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। ব্যক্তি পর্যায়েও কার্বন ‘অফসেট’ করা সম্ভব, যেমন যে কেউই উচ্চ কার্বন কার্যকলাপ বন্ধ করা অর্থাৎ বিমানে চড়া বন্ধ করে কিংবা কার্বন অপসারণ প্রকল্পে অর্থ দান করে এই প্রক্রিয়ায় সংযুক্ত হতে পারে।
কার্বন ট্রেডিংকে অনেকেই বিতর্কিত একটি বিষয় বলে মনে করেন। সমালোচকদের যুক্তি, বাস্তবে কার্বন বাজার ধনী দেশ, কোম্পানি এবং ব্যক্তিদের নির্গমন হ্রাসের আপাত একটি উপায় হয়ত প্রদর্শন করে কিন্তু আসলে এটি প্রদর্শন করে তারা দূষণ কার্যক্রম কিন্তু একপ্রকারে চালিয়ে যায়।পাশাপাশি এই ট্রেডিং যথেষ্ট কার্যকরভাবে পরিচালিত হচ্ছে কিনা সেটি নির্ধারণ করা কিছুটা জটিল। কার্বন অফসেট প্রকল্পগুলির প্রকৃত অর্থে কার্বন অপসারণ করতে সক্ষম হচ্ছে কিনা তা নিয়েও যথেষ্ট প্রশ্ন রয়েছে। অনেকের মতে, এই প্রক্রিয়ায় যে জলবায়ু পরিবর্তনে যে ইতিবাচক বিষয়গুলোর কথা বলা হয় তা অনেকটাই অতিরঞ্জিত।
কার্বন ক্যাপচার, ইউটিলাইজেশন এবং স্টোরেজ (সিসিএস এবং সিসিইউএস)
কার্বন ক্যাপচার এবং স্টোরেজ (সিসিএস) প্রক্রিয়ায় শিল্প-কারখানায় উৎপাদিত কার্বন ডাই অক্সাইডকে সরাসরি ধরে রেখে ভূগর্ভে প্রবেশ করিয়ে দেয়া হয় যাতে এটি বায়ুমণ্ডলে পৌঁছাতে না পারে। কার্বন ক্যাপচার, ইউটিলাইজেশন অ্যান্ড স্টোরেজ (সিসিইউএস) অ্যালকোহল, জৈব জ্বালানি, প্লাস্টিক বা কংক্রিটের মতো পণ্য উৎপাদনে ক্যাপচার করা কার্বন ব্যবহার করে আরও এক ধাপ এগিয়ে যায়।
অনেক বিশেষজ্ঞদের মতে,জলবায়ু পরিবর্তন প্রশমনে কার্বন ক্যাপচার প্রযুক্তির যে বিশেষ একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রয়েছে তা সঠিক নয়। বিশেষ করে শিল্প-কারখানায় জলবায়ু প্রভাব হ্রাস করে এই প্রক্রিয়ায় সহজেই দূষণকারী জ্বালানী বা উপকরণের ব্যবহার বন্ধ করা সম্ভব নয়। আইপিসিসির প্রতিবেদন অনুসারে সিসিএস প্রযুক্তিসমূহ হয়ত বৈশ্বিক তাপমাত্রা ২ সে. এর মধ্যে ধরে রাখতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে পারে।
তবে আরো অনেকের মতে সিসিএস এবং সিসিইএস প্রযুক্তির কারনে জীবাশ্ম জ্বালানি ব্যবহার থেকে সরে আসার প্রক্রিয়াটি বিলম্বিত হতে পারে এবং এই ধরনের প্রযুক্তির বেশিরভাগই যথেষ্ট পরীক্ষিত নয়। ২০২৩ সালের জুলাইয়ে, ইউরোপীয় ইউনিয়ন এবং জার্মানি, ফ্রান্স এবং নিউজিল্যান্ড সহ ১৭ টি দেশ এই মর্মে একমত হয় যে কার্বন ক্যাপচার প্রযুক্তির উপর নির্ভরতা সীমিত হওয়া উচিত কারণ এটি জীবাশ্ম জ্বালানি পর্যায়ক্রমে বন্ধ করার ক্ষেত্রে একটিমাত্র বিকল্প পহ্না হিসেবে পরীক্ষিত নয়।
কার্বন ডাই অক্সাইডসম (CO2e)
কার্বন ডাই অক্সাইড সম (CO2e) একটি পরিভাষা যার মাধ্যমে কেবল একটি একক ব্যবহার করে বিভিন্ন গ্রীনহাউস গ্যাসের প্রভাবকে তুলে ধরা হয়। একটি স্বল্প পরিমানে গ্যাস যা গ্রীনহাউস প্রভাবকে আরও ত্বরান্বিত করতে পারে যেমন, মিথেন। এতে কার্বন ডাই অক্সাইডের চেয়ে বহুগুণে বেশি CO2e থাকতে পারে।
কার্বন ফুটপ্রিন্ট
কার্বন ফুটপ্রিন্ট হচ্ছে একজন ব্যক্তি বা বস্তু প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে কী গ্রিনহাউস গ্যাস উৎপন্ন করে তাকে বুঝায়। অর্থাৎ তারা কী খায়, কীভাবে তারা ভ্রমণ করে, তারা কী ক্রয় করে এবং কীভাবে তাদের ব্যবহৃত বিদ্যুৎ পরিবেশে উঞ্চতা বৃদ্ধি করে থাকে সেসব বিষয়গুলোকেই মূলত কার্বন ফুটপ্রিন্টের মধ্যেম বিবেচনা করা হয়।
কার্বন মার্কেট
কার্বন ট্রেডিং মার্কেটের অধীনে, একটি দেশ বা কোম্পানি তার কার্বন নির্গমনকে একটি নির্দিষ্ট সম্মত স্তরের নিচে নামিয়ে অবশিষ্ট অংশ অন্যদের কাছে বিক্রি করতে পারে (কার্বন ক্রেডিট আকারে)।
A tree planting programme in Thailand
RECOMMENDED
ব্যাখ্যা: কার্বনের বাজার বাণিজ্য কি জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব মোকাবেলায় সহায়তা করতে পারে?
এটি তাদের কাছেই বিক্রি করা হয়ে থাকে যারা এখনো নির্দিষ্ট লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে বেশি নির্গমন করছে। বলতে গেলে এটি আসলে কার্বন নির্গমের এক ধরনের আর্থিক প্রণোদনা।
কার্বন ডাই অক্সাইড অপসারণ (সিডিআর) এবং সিকোয়েস্টেশন
কার্বন ডাই অক্সাইড অপসারণ (সিডিআর) এমন একটি প্রক্রিয়া যার মাধ্যমে কার্বন ডাই অক্সাইডকে বায়ু থেকে আটকে রাখা হয় যাতে এটি গ্রিনহাউস গ্যাস হিসাবে কাজ না করে। যখন এই কার্বন দীর্ঘমেয়াদে সংরক্ষণ করা হয়, তখন একে বলা হয় কার্বন সিকোয়েস্ট্রেশন।
কার্বন সিকোয়েস্টেশন মূলত প্রাকৃতিকভাবে ঘটে। জৈবিক প্রক্রিয়ায় মাটি, সমুদ্র, বন, তৃণভূমি এবং অন্যান্য প্রাকৃতিক বাস্তুতন্ত্রে প্রচুর পরিমাণে কার্বন ডাই অক্সাইড সঞ্চিত থাকে। তবে এটি কৃত্রিম প্রক্রিয়াতেও (কার্বন ক্যাপচার এবং স্টোরেজ প্রযুক্তি) সংরক্ষণ করা যেতে পারে।
জলবায়ু পরিবর্তন প্রশমনে সিডিআর এবং কার্বন সিকোয়েস্টেশনএকটি অপরিহার্য হাতিয়ার হিসেবে বিবেচিত। আইপিসিসি তথ্য মতে, ” বৈশ্বিক উষ্ণায়নকে ১.৫সে. এর মধ্যে সীমাবদ্ধ করতে সিডিআর প্রয়োজন”, বিশেষ করে ডিকার্বনাইজ করা কঠিন এমন “শিল্প, দূরপাল্লার পরিবহন এবং কৃষির মতো ক্ষেত্রে।” বেশিরভাগ দেশের জাতীয়নেট-জিরো পরিকল্পনাতে সিডিআর একটি প্রধানতম লক্ষ্য।
কার্বন সিঙ্ক
কার্বন সিঙ্ক প্রাকৃতিক এবং কৃত্রিম ভাবে কার্বন ডাই অক্সাইড সঞ্চয় করে থাকে। বায়ুমণ্ডলে গ্রিনহাউস গ্যাসের অনুপাত নিয়ন্ত্রণে কার্বন সিঙ্কগুলি একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। প্রাকৃতিক বন, মহাসাগর, ভূমি, এবং জলাভূমি, এই সবই আসলে প্রাকৃতিক কার্বন সিঙ্ক। কার্বন ক্যাপচার অ্যান্ড স্টোরেজ প্রযুক্তি কৃত্রিম কার্বন সিঙ্ক হিসেবে কাজ করতে পারে।
ক্লাইমেট চেঞ্জ (জলবায়ু পরিবর্তন)
জাতিসংঘ অনুসারে জলবায়ু পরিবর্তন হচ্ছে তাপমাত্রা এবং আবহাওয়ার ধরণে একটি দীর্ঘমেয়াদী পরিবর্তন। জীবাশ্ম জ্বালানি পোড়ানো এবং বনভূমি উজাড় করার মতো বিভিন্ন কর্মকান্ডের ফলে গ্রিনহাউস গ্যাস তৈরি হয়ে গড় বৈশ্বিক তাপমাত্রা বৃদ্ধি পায়।
জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব ব্যাপক, যার মধ্যে রয়েছে অতি ঘন ঘন এবং তীব্র চরম আবহাওয়া, সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা, চরম বা ব্যাহত বৃষ্টিপাত এবং মেরু ও পর্বত অঞ্চলে বরফ গলে যাওয়া।
ক্লাইমেট জাস্টিস (জলবায়ু ন্যায্যতা)
জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবগুলো ক্ষতিকর প্রভাবগুলো পৃথিবীর অনেক দেশেই বিদ্যমান যারা আসলে বৈশ্বিক নির্গমনে সর্বনিম্ন অবদান রেখেছে। অথচ এমন দেশগুলোই এখন জলবায়ু পরিবর্তনের ক্ষতিকর পরিণতির জন্য সবচেয়ে ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় রয়েছে। জলবায়ু ন্যায়বিচার আন্দোলনের মধ্য দিয়ে উন্নত দেশগুলোর কাছ থেকে এক ধরনের ক্ষতিপূরণ আদায়ের দাবী তুলে ধরা হয়। কারণ এসব উন্নত দেশই জীবাশ্ম জ্বালানি ব্যবহার করে কার্বন নির্গমনের মাধ্যমে উন্নয়ন সাধন করেছে।
ক্লাইমেট রেফিউজি (জলবায়ু উদ্বাস্তু)
জলবায়ু উদ্বাস্তু হচ্ছে এমন ধরনের ব্যক্তি বা সম্প্রদায় যারা জলবায়ু পরিবর্তনের নানা নেতিবাচক প্রভাবের কারণে নিজ বাসস্থান ছেড়ে অন্যত্র চলে যেতে বাধ্য হয়। এ ধরনের প্রভাবের মধ্য যেমন হতে পারে বন্যা বা সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বৃদ্ধি।
জলবায়ু উদ্বাস্তু সম্পর্কে আনুষ্ঠানিক কোনো সংজ্ঞা নেই। জাতিসংঘের ব্যবহৃত শরণার্থীর সংজ্ঞা হচ্ছে – “যে ব্যক্তি যুদ্ধ, সহিংসতা, সংঘাত বা নিপীড়ন থেকে বাঁচতে পালিয়ে এসেছে এবং ভিন্ন একটি দেশে নিরাপত্তার আশায় আন্তর্জাতিক সীমান্ত অতিক্রম করেছে।” প্রাকৃতিক বন্যা বা সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বৃদ্ধির ফলে নিজ বাড়ি হারিয়ে অন্যত্র গমন করেছে তারা জাতিসংঘের এই সংজ্ঞার আওতায় পড়েন না।
কপ
জলবায়ু পরিবর্তন বিষয়ক আলোচনায় ‘COP’ (কপ) বলতে জাতিসংঘের জলবায়ু বিষয়ক ফ্রেমওয়ার্ক কনভেনশনের বার্ষিক সম্মলনকে বোঝানো হয়ে থাকে। জলবায়ু পরিবর্তন বিষয়ে বৈশ্বিক পদক্ষেপ নিয়ে আলোচনার জন্য ১৯৯২ সালে ১৯৮টি সদস্য রাষ্ট্র এই কনভেনশনে স্বাক্ষর করে।
কপ সম্মেলনে বিশ্বের বিভিন্ন দেশের প্রতিনিধিরা আমাদের এই পৃথিবীর উষ্ণায়নের জন্য দায়ী গ্রীনহাউস গ্যাস নির্গমন হ্রাসে কী পদক্ষেপ নিতে হবে এমন বিষয় নিয়ে আলোচনা করে থাকে। পাশপাশি এই সম্মলেন জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবের সাথে অভিযোজন এবং উন্নয়নশীল দেশগুলোকে জীবাশ্ম জ্বালানি থেকে সরে আসতে এবং জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবগুলোর জন্য আরও সহনশীল হওয়ার জন্য প্রয়োজনীয় আর্থিক সহায়তা নিয়ে আলোচনা হয়ে থাকে।
সর্বশেষ কপ সম্মলেন (কপ ২৭) অনুষ্ঠিত হয় ২০২২ সালের নভেম্বরে মিশরের শার্ম আল-শেখ-এ। আর পরবর্তী কপ সম্মেলন (কপ ২৮) অনুষ্ঠিত হবে চলতি বছর সংযুক্ত আরব আমিরাতের দুবাইতে (৩০ নভেম্বর থেকে ১২ ডিসেম্বর)।
কিয়োটো প্রোটোকল
জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবেলায় গ্রিনহাউস গ্যাস নির্গমন হ্রাসে ১৯৯৭ সালে কিয়োটো প্রোটোকল স্বাক্ষরিত হয়। এই চুক্তিটি ২০০৫ সালে কার্যকর হয় এবং ১৯২টি পক্ষ এতে স্বাক্ষর করে (যদিও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র চুক্তিটি অনুমোদন করেনি)। কিয়োটো প্রোটোকল ঐতিহাসিক নির্গমন এবং অন্যান্য পরিস্থিতির উপর ভিত্তি করে শিল্পোন্নত দেশগুলোর জন্য বাধ্যতামূলক নির্গমন-হ্রাস লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করে।
কিগালি সংশোধনী
ওজোন স্তর সুরক্ষায় ১৯৮৭ সালে স্বাক্ষরিত হয় মন্ট্রিল প্রোটোকল যেটি পরে সংশোধন করা হয় ২০১৬ সালে রুয়ান্ডার রাজধানী কিগালিতে। কিগালি সংশোধনীর লক্ষ্য হচ্ছে হাইড্রোফ্লুরোকার্বন (HFCs), শক্তিশালী গ্রীনহাউস গ্যাসের উৎপাদন ও ব্যবহার কমিয়ে আনা।
২০১৫ সালে, জলবায়ু পরিবর্তনের বিরুদ্ধে বৈশ্বিক পদক্ষেপের সমন্বয়ের জন্য প্রধান আন্তর্জাতিক চুক্তি হিসাবে প্যারিস চুক্তির দ্বারা কিয়োটো প্রোটোকলকে বাতিল করা হয়েছিল।
ক্রায়োস্ফিয়ার
ক্রায়োস্ফিয়ার শব্দটি গ্রহের সেই অঞ্চলগুকে বোঝায় যেখানে বেশিরভাগ পানি হিমায়িত আকারে থাকে, যেমন মেরু অঞ্চল এবং পার্বত্য অঞ্চল। বিশ্বের সর্বোচ্চ পর্বতশ্রেণী হিন্দুকুশ-হিমালয়য়ে হিমবাহ এবং নদী ও হ্রদে বরফের আকারে হিমায়িত পানি বিদ্যমান।
গ
গ্লসিয়াল লেক আউটবার্স্টসৃষ্ট বন্যা
একটি হিমবাহী হ্রদ বিষ্ফােরণসৃষ্ট বন্যা হচ্ছে পর্বতে হিমবাহ থেকে গলিত পানি থেকে গঠিত একটি হ্রদ থেকে হঠাৎ করে পানির নির্গমন, যা বরফ (হিমবাহ দ্বারা বাহিত শিলা এবং পলি) দ্বারা আটকে থাকে। এই বন্যা ভূমিকম্প, তুষারপাত বা অত্যধিক জমে যাওয়ার বরফ উঞ্চ হয়ে যাবার কারণে হতে পারে। এই ধরনের প্রাকৃতিক ঘটনা প্রায়ই অত্যন্ত ধ্বংসাত্মক, এবং হিমালয় অঞ্চলের জন্য একটি ক্রমবর্ধমান হুমকি।
গ্রিন হাইড্রোজেন এবং গ্রে হাইড্রোজেন
যেহেতু ব্যবহারযোগ্য পরিমাণে গ্যাস হিসেবে প্রাকৃতিকভাবে হাইড্রোজেন পাওয়া যায় না, তাই এটিকে কৃত্রিমভাবে তৈরি করা হয়। যে প্রক্রিয়ায় এটিকে তৈরি করা হয় তার নাম ইলেক্ট্রোলাইসিস। এর মাধ্যমে পানিকে হাইড্রোজেন এবং অক্সিজেনে বিভক্ত করা হয়। যখন এই প্রক্রিয়াগুলো সৌর বা বায়ুচালিত শক্তির মতো বিশুদ্ধ উৎস ব্যবহার করে চালিত হয়, তখন একে সবুজ হাইড্রোজেন বলা হয়। জীবাশ্ম জ্বালানি থেকে শক্তি ব্যবহার করে উৎপাদিত হাইড্রোজেনকে গ্রে হাইড্রোজেন বলা হয়। আরও জানতে এখানে পড়ুন।
গ্রীনহাউস গ্যাস এবং গ্রীনহাউস প্রভাব
কার্বন ডাই অক্সাইড, মিথেন, নাইট্রোজেন অক্সাইড, সিএফসি, এইচসিএফসি এবং এইচএফসি গ্রিনহাউস গ্যাস হিসাবে পরিচিত। এই গ্যাসগুলো বায়ুমণ্ডলে তাদের উপস্থিতির মাধ্যমে সূর্যের তাপকে আটকে রেখে গ্রিনহাউসের কাঁচের দেয়াল এবং ছাদের মতো পৃথিবীর চারপাশের বাতাসকে উষ্ণ করে। এটি গ্রিনহাউস প্রভাব।
জীবাশ্ম জ্বালানি পোড়ানোর মতো কর্মকাণ্ডের ফলে বায়ুমণ্ডলে গ্রিনহাউস গ্যাসের আধিক্য বাড়ছে। এটি গ্রিনহাউস প্রভাবকে শক্তিশালী করছে, আরও তাপ আটকে দিচ্ছে। ফলে পৃথিবী দিনকে দিন উষ্ণ হচ্ছে।
গ্রীনওয়াশিং
পরিবেশবাদী জে ওয়েস্টারভেল্ড ১৯৮৬ সালে গ্রীনওয়াশিং ধারনার প্রবর্তন করেন। এটি এমন একটি অনুশীলন যার মাধ্যমে একটি কারখানা বা কোম্পানি মনে করে যে তাদের পণ্য বা পরিষেবাগুলি পরিবেশ বান্ধব। অথচ বাস্তবে দেখা যায় সেগুলো পরিবেশের জন্য ক্ষতিকারক হতে পারে। ‘গ্রিনওয়াশিং’-এ জড়িত কারখানাগুলো পরিবেশ-বান্ধব পণ্য কেনার জন্য গ্রাহকদের মধ্যে এক ধরনের আকাঙ্ক্ষা তৈরি করে। িকংবা সরকার বা সাধারন মানুষের ধারনাকে ধোঁকা দিতে নিজেদের উৎপাদনের ক্ষেত্রে তেমন কোনো পরিবর্তন না এনেই পরিবেশ বান্ধব পন্যের বাণিজ্য করে থাকে।
জ
জীববৈচিত্র্য
একটি নির্দিষ্ট এলাকায় যত ধরনের প্রাণ বা জীবনের অস্তিত্ব পাওয়া যায় তাকে সেই অঞ্চলের বৈচিত্র্য বলে। এর মধ্যে থাকতে পারে যে কোনো ধরনের প্রাণী, গাছপালা এবং অণুজীব যা একটি বাস্তুতন্ত্রে একে অপরের সাথে সংযুক্ত, এবং এই সবগুলো অনুষঙ্গ মিলেই জীববৈচিত্র রচনা করে।
পৃথিবীর সমস্ত প্রাণ এবং মানবতা রক্ষা করতে হলে জীববৈচিত্র্য রক্ষা করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। কারণ খাদ্য, পানি এবং বিশুদ্ধ বায়ু সরবরাহ করার জন্য আমরা যে বাস্তুতন্ত্রের উপর নির্ভরশীল তা কেবলমাত্র তখনই কাজ করতে পারে যখন প্রকৃতিতে বিভিন্ন প্রজাতি পর্যাপ্ত সংখ্যকভাবে উপস্থিত থাকে। কিন্তু বর্তমানে জীববৈচিত্র্য হুমকির সম্মুখীন কেবলমাত্র মানুষের বিভিন্ন কর্মকান্ডের কারনে। গবেষণায় দেখা গেছে পৃথিবীতে প্রায় এক মিলিয়ন উদ্ভিদ ও প্রাণীর প্রজাতি বিলুপ্তির আশংকায় রয়েছে।
পৃথিবীতে জীববৈচিত্র্য হুমকির মুখে পতিত হবার প্রধানতম কয়কেটি কারনের মধ্যে অন্যতম হলো ভূমি ব্যবহারে নেতিবাচক পরিবর্তন, যেমন বনভূমি উজাড় এবং কৃষি বা খনিজ সম্পদ আহরনের জন্য প্রাকৃতিক পরিবেশকে যথেচ্ছ রূপান্তর; বন্য প্রাণী শিকার এবং নিধন, ভিন্ন পরিবেশ থেকে নিয়ে আসা কোনো প্রজাতির সংখ্যা বৃদ্ধি; এবং জলবায়ু পরিবর্তন ইত্যাদি।
জৈবশক্তি এবং জৈব জ্বালানি
জৈব জ্বালানী উৎপাদিত হয় মূলত উদ্ভিদ বা প্রাণীজ বর্জ্য থেকে যা প্রকৃতিতে কঠিন, তরল বা বায়বীয় অবস্থায় পাওয়া যায়। জৈব জ্বালানী হল তরল, কঠিন বা বায়বীয় জ্বালানী যা উদ্ভিদের উপাদান এবং প্রাণীর বর্জ্য থেকে উৎপন্ন হয়। বর্তমান সময়ে আখ, ভুট্টা এবং সয়াবিন থেকে জৈব জ্বালানি উৎপাদিত হচ্ছে। এই ধরনের জ্বালানি পুড়িয়ে যে শক্তি উৎপন্ন হয় তাকে বায়োএনার্জি বলে।
বিশেষজ্ঞদের মতে বায়োইথানল এবং বায়োডিজেলের মতো জীবাশ্ম জ্বালানি ব্যবহার করে কার্বন নির্গমনের মাত্রা হ্রাস করা সম্ভব অর্থাৎ পরিবেশে কার্বনের মাত্রা কমিয়ে আনা সম্ভব। ২০২২ থেকে ২০২৭ সালের মধ্যে বিশ্বব্যাপী জৈব জ্বালানির চাহিদা ২২ শতাংশ বৃদ্ধির লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। তবে বিশেষজ্ঞরা জৈব জ্বালানির জন্য ভূমি ব্যবহারের নেতিবাচক প্রভাবের বিষয়ে সতর্ক করে বলেন এই সব ভূমি খাদ্য উৎপাদন এবং জীববৈচিত্র্যকে সূরক্ষার জন্য প্রয়োজন। সমালোচকদের মতে, জৈব জ্বালানীর ব্যবহার কিন্তু বিদ্যুত উৎপাদনে কার্বন নির্গমনের মাত্রাকে হ্রাস করে না।
জীবাশ্ম জ্বালানি
জীবাশ্ম জ্বালানীর মধ্যে রয়েছে কয়লা, তেল এবং প্রাকৃতিক গ্যাস, যা লক্ষ লক্ষ বছর আগের মৃত উদ্ভিদ ও প্রাণীর দেহাবশেষ থেকে তৈরি হয়। তাই মানুষের সময়কালে এগুলো নবায়নযোগ্য নয়। বিদ্যুৎ উৎপাদনের জন্য জীবাশ্ম জ্বালানী পোড়ানোর ফলে বায়ুমন্ডলে বিপুল পরিমাণে কার্বন ডাই অক্সাইড এবং অন্যান্য গ্রিনহাউস গ্যাস নির্গত করে এবং এটি জলবায়ু পরিবর্তনের একক বৃহত্তম কারণ।
জীবাশ্ম জ্বালানি
জীবাশ্ম জ্বালানির মধ্যে রয়েছে কয়লা, তেল এবং প্রাকৃতিক গ্যাস, যা লক্ষ লক্ষ বছর আগের মৃত উদ্ভিদ ও প্রাণীর দেহাবশেষ থেকে তৈরি হয়। তাই মানুষের সময়কালে এগুলো নবায়নযোগ্য নয়। বিদ্যুৎ উৎপাদনের জন্য জীবাশ্ম জ্বালানী পোড়ানোর ফলে বায়ুমন্ডলে বিপুল পরিমাণে কার্বন ডাই অক্সাইড এবং অন্যান্য গ্রিনহাউস গ্যাস নির্গত করে এবং এটি জলবায়ু পরিবর্তনের একক বৃহত্তম কারণ।
জলবায়ু পরিবর্তন সংক্রান্ত আন্তঃসরকারি প্যানেল (আইপিসিসি)
জলবায়ু পরিবর্তন সংক্রান্ত আন্তঃসরকারি প্যানেল, বা আইপিসিসি একটি বৈজ্ঞানিক সংস্থা যা ১৯৮৮ সালে বিশ্ব আবহাওয়া সংস্থা (WMO) এবং জাতিসংঘের পরিবেশ কর্মসূচি সমন্বয়ে তৈরি হয়। এর লক্ষ্য হচ্ছে বিভিন্ন দেশের সরকারকে সর্বশেষ জলবায়ু বিজ্ঞান সম্পর্কে অবহিত করা এবং আগামী দশকে জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব বিশ্বে কী হতে পারে তা ব্যাখ্যা করা।
বর্তমানে, আইপিসিসির ১৯৫টি দেশের সঙ্গে কাজ করছে। এটি সারা বিশ্ব থেকে বিজ্ঞানীদের একত্রিত করে যারা এই কাজে স্বেচ্ছায় অবদান রাখে। আইপিসিসি কোনো মৌলিক গবেষণা পরিচালনা করে না। বরং শত শত বিজ্ঞানভিত্তিক গবেষণা পরীক্ষা করে মূল্যায়ন প্রতিবেদন তৈরি করে। এই প্রতিবেদনে জলবায়ু পরিবর্তন, স্থলভাগে এর পরিণতি কী হতে পারে এবং কীভাবে প্রশমন (জলবায়ু পরিবর্তন সীমিত করা) এবং অভিযোজনের মাধ্যমে জনগণকে সবচেয়ে বিরুপ প্রভাব থেকে রক্ষা করা যায় তা নিয়ে আলোচনা করে।
জাতীয়ভাবে নির্ধারিত অবদান (এসডিসি)
২০১৫ সালে প্যারিস চুক্তির অধীনে সদস্য রাষ্ট্রগুলো তাদের জাতীয় নির্গমন কমাতে এবং জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবগুলির সাথে খাপ খাইয়ে নেয়ার জন্য একটি রূপরেখা প্রস্তুত করার সিদ্ধান্ত গ্রহন করে। এই প্রতিশ্রুতিগুলো জাতীয়ভাবে নির্ধারিত অবদান (এনডিসি) হিসাবে উল্লেখ করা হয়।
এনডিসিগুলো প্রতি পাঁচ বছরে জমা দেয়া হয়, এবং ধারাবাহিক এনডিসিগুলোকে পূর্ববর্তীগুলির থেকে আরও উচ্চাভিলাষী হিসেবে প্রস্তুত করা হয়। এই জাতীয় লক্ষ্যগুলো জলবায়ু পরিবর্তনের তীব্রতা এবং প্রভাব হ্রাস করার জন্য একটি সমন্বিত বৈশ্বিক প্রচেষ্টারই একটি অংশ।
সার্কুলার ইকোনমি
একটি সার্কুলার ইকোনমি বা বৃত্তাকার অর্থনীতির দেশে সম্পদের পুনর্ব্যবহার এমনভাবে করা হয় যা বর্জ্য হ্রাস করে এবং সম্পদের দক্ষতা বাড়িয়ে দেয়। একটি ‘রৈখিক অর্থনীতির’ (লিনিয়ার মডেল) বিপরীত একটি দর্শন। লিনিয়ার মডেলে সম্পদ আহরণ করার পর ব্যবহার শেষে ফেলে দেয়া হয়। একটি সার্কুলার ইকোনমিতে এটি নিশ্চিত করা হয় যে ব্যবহৃত উপকরণগুলো উত্পাদন শৃঙ্খলে ফিরিয়ে দেয়া হয়।
সিএফসি (ক্লোরোফ্লুরোকার্বন)
সিএফসি (বা ক্লোরোফ্লুরোকার্বন) হল কার্বন, ক্লোরিন এবং ফ্লোরিন উপাদানগুলির সমন্বয়ে গঠিত একটি গ্যাস যা দ্রাবক, রেফ্রিজারেন্ট এবং অ্যারোসল স্প্রেতে ব্যবহৃত হয়। বিংশ শতকে, সিএফসি ওজোন স্তরের ক্ষতির অন্যতম মূল কারন হিসেবে চিহ্নিত হয়। ওজোন স্তর হচ্ছে পৃথিবীর বায়ুমণ্ডলের একটি অংশ যা সূর্য থেকে অতিবেগুনী বিকিরণকে আটকে প্রাণীদের এর ক্ষতিকর প্রভাব থেকে রক্ষা করে।
১৯৮৭ সালে ল্যান্ডমার্ক মন্ট্রিল প্রোটোকলের মাধ্যমে বিশ্বব্যাপী সিএফসি-এর ব্যবহার পর্যায়ক্রমে বন্ধ করা হয়।
দ
দ্য থার্ড পোল
হিন্দুকুশ হিমালয় পর্বতশ্রেণী এবং তিব্বতীয় সুউচ্চ মালভূমিকে ঘিরে থাকা সমৃদ্ধ বিশাল যে এলাকাটি রয়েছে, মূলত সেই অঞ্চলটিই দ্য থার্ড পোল হিসাবে ব্যাপকভাবে পরিচিত। এই সুববিশাল অঞ্চলের এমন নামকরনের কারণ হচ্ছে এখানকার বরফক্ষেত্রগুলো পৃথিবীর অন্যান্য মেরু অঞ্চলের বাইরে থাকা স্বাদুপানির বৃহত্তম উৎস। এই অঞ্চলটি এমন ১০টি প্রধানতম নদীর উৎসস্থল যেই নদীগুলো এশিয়ার ২ বিলিয়ন (সমগ্র বিশ্বের মোট জনসংখ্যার ২৪%) মানুষের জন্য সেচ, বিদ্যুত এবং পানীয় জলের চাহিদার যোগান দিয়ে থাকে।
ট
টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা
টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা হচ্ছে ২০১৫ সালে জাতিসংঘ ঘোষিত ১৭টি লক্ষ্যমাত্রা যা ২০৩০ সালের অর্জন করার লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয়েছে। এই লক্ষ্যমাত্রগুলো সারা বিশ্বে সামাজিক, অর্থনৈতিক এবং পরিবেশগত চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় একটি বিশদ কর্মকৌশল।
জলবায়ু পরিবর্তনের সাথে সবচেয়ে ঘনিষ্ঠভাবে যুক্ত টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যগুলোর মধ্যে একটি হচ্ছে ‘সাশ্রয়ী ও পরিচ্ছন্ন জ্বালানি ব্যবহার, বিশ্বব্যাপী নবায়নযোগ্য শক্তির ব্যবহার বৃদ্ধিসহ; জলবায়ু পরিবর্তনের মাত্রা এবং প্রভাব সীমিত করতে জরুরী ‘জলবায়ু পদক্ষেপ‘ গ্রহণ ইত্যাদি।
টিপিং পয়েন্ট
জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব সংক্রান্ত আলোচনায় টিপিং পয়েন্ট হল একটি সুনির্দিষ্ট অবস্থা যা একবার পেরিয়ে গেলে, জলবায়ুতে একটি বৃহৎ, অপরিবর্তনীয় এবং স্থায়ী পরিবর্তনের সূত্রপাত হতে পারে। গবেষকরা এখন পর্যন্ত ১৬টি জলবায়ু টিপিং পয়েন্ট চিহ্নিত করেছেন এবং তারা বলছেন যে এরই মধ্য বেশ কয়েকটি টিপিং পয়েন্ট পেরিয়ে গেছে, যেমন – গ্রিনল্যান্ডে বরফের টুপির পতন এবং পারমাফ্রস্ট গলে যাওয়ার মতো বড় পরিবর্তনগুলো উল্লেখযোগ্য।
উদাহরণ হিসেবে বলা যায় বিশ্বের বৃহত্তম রেইনফরেস্ট দক্ষিণ আমেরিকার আমাজন হচ্ছে বিশ্বের অন্যতম জীববৈচিত্র্য সমৃদ্ধ একটি বাস্তুতন্ত্র। আমাজন জলবায়ুর উপর বিশাল প্রভাব ফেলে, যার মধ্যে বৃষ্টিপাত সৃষ্টি করা এবং এই অঞ্চলে তাপমাত্রা স্থিতিশীল রাখা। কিন্তু আমাজন রেইনফরেস্টের এক পঞ্চমাংশের কাছাকাছি কেটে ফেলা হয়েছে। এর ফলে বৃষ্টির উপর নির্ভরশীল উদ্ভিদের সংখ্যা কমে গেছে। এটি আসলে বৃষ্টিপাতের উপর নির্ভরশীল এই বনকে হুমকির মুখে ফেলে দিয়েছে। কিছু কিছু বিজ্ঞানীর মতে, একটি টিপিং পয়েন্ট যেখানে বন যে চক্রের উপর নির্ভর করে তা ভেঙে পড়বে যখন বন উজাড় ২০ – ২৫% এ পৌঁছাবে। আর এর ফলে কয়েক দশকের মধ্যে একটি বিশাল এলাকা তৃণভূমিতে পরিণত হবে।
ন
নবায়নযোগ্য শক্তি
নবায়নযোগ্য শক্তি বলতে বায়ুচালিত শক্তি, পানি, সৌর বিকিরণ এবং পৃথিবীর প্রাকৃতিক উষ্ণতার মতো উৎস ব্যবহার করে উৎপাদিত শক্তিকে বোঝায়। জীবাশ্ম জ্বালানির বিপরীতে, পুনর্নবীকরণযোগ্য উৎস ব্যবহার করে শক্তির উৎপাদন সাধারণত বায়ুমণ্ডলে গ্রিনহাউস গ্যাস নির্গত করে না। তারা পুনর্নবীকরণযোগ্য হিসাবে পরিচিত কারণ, মাটি থেকে খনন করা জীবাশ্ম জ্বালানির বিপরীতে, তারা সীমাবদ্ধ সম্পদ নয়।
জীবাশ্ম জ্বালানি থেকে শক্তি উৎপাদনে নবায়নযোগ্য উৎসে রূপান্তর জলবায়ু পরিবর্তন সীমিত করার প্রচেষ্টার একটি অপরিহার্য অংশ। ২০২০ সালে, বিশ্বব্যাপী বিদ্যুৎ উৎপাদনে নবায়নযোগ্য শক্তির অংশ ২৯% এ পৌঁছেছে।
যদিও জলবিদ্যুৎ পুনর্নবীকরণযোগ্য শক্তির একটি রূপ, বাঁধ নির্মাণ নদী ব্যবস্থা, তাদের পরিবেশবিদ্যা এবং তাদের উপর নির্ভরশীল মানুষের জীবনে উল্লেখযোগ্যভাবে নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে। তাই এটি সর্বদা শক্তি উৎপাদনের একটি পরিবেশ বান্ধব রূপ হিসাবে বিবেচিত হয় না। সহনশীলতা
জলবায়ু সহনশীলতা বলতে বোঝায় যেভাবে স্থানিয় বাসিন্দারা জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবগুলোর সাথে মোকাবিলা করতে সক্ষম হয়। যেখানে ‘অভিযোজন’ বলতে জলবায়ু পরিবর্তনের প্রতিক্রিয়ায় একটি পদ্ধতিতে একটি স্থায়ী পরিবর্তন বোঝায়, সহনশীলতা বলতে জলবায়ু পরিবর্তন-সম্পর্কিত বিপর্যয়ের পরে ‘স্বাভাবিক’ অবস্থায় ফিরে আসার কৌশলকে বোঝায়।
নেট জিরো
নেট জিরো এমন একটি পরিস্থিতি যেখানে দেখা যায় পরিবেশে প্রবেশকারী গ্রীনহাউস গ্যাস নির্গমনের পরিমান বায়ুমণ্ডল থেকে কার্বন অপসারণের পরিমানের সমান। একে জলবায়ু নিরপেক্ষতাও বলা হয়। ২০১৮ সালে, জলবায়ু পরিবর্তন সংক্রান্ত আন্তঃসরকারি প্যানেল ২০৫০ সালকে নির্দিষ্ট সময়সীমা হিসাবে চিহ্নিত করেছে যার মাধ্যমে বিশ্বকে অবশ্যই নেট জিরো অবস্থানে পৌঁছাতে হবে। ধারনা করা হয় প্যারিস চুক্তি অনুযায়ি বৈশ্বিক উষ্ণতাকে ১.৫ ডিগ্রি সেলসিয়াসে সীমাবদ্ধ করার লক্ষ্য অর্জন করতে হলে নেট জিরো অবস্থানে পৌছাতে হবে।
লন্ডন ভিত্তিক অলাভজনক এবং গবেষণা সংস্থা নেট জিরো ট্র্যাকারের একটি প্রতিবেদন অনুসারে যুক্তরাজ্য, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, ভারত এবং চীনসহ প্রায় ১২৮টি দেশ এবং অঞ্চল নেট-জিরো লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছে। বিশ্বের সবচেয়ে বড় পাবলিক ট্রেডিং কোম্পানিগুলোর এক-তৃতীয়াংশেরও বেশি নেট-শূন্য লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছে। নেট-জিরো টার্গেটসহ অনেক সরকার এবং কোম্পানি এই লক্ষ্যে পৌঁছানোর জন্য পরিষ্কার এবং সময়োপযোগী পথ নির্ধারণে ব্যর্থতার জন্য সমালোচিত হয়েছে।
ন্যায়ভিত্তিক রুপান্তর
কার্বন নিঃসরণ নিয়ন্ত্রণে রাখতে এবং জলবায়ু পরিবর্তন সীমিত করার জন্য একটি স্বল্প-কার্বন অর্থনীতিতে স্থানান্তর অপরিহার্য। কিন্তু ডিকার্বনাইজিং মানে শিল্প-কারখানায় জীবাশ্ম জ্বালানি ব্যবহার থেকে সরে আসাসহ ব্যাপক পরিবর্তনের পথে হাটা যার সঙ্গে লক্ষ কর্মী যুক্ত।
একটি ‘জাস্ট ট্রানজিশন’ হল শিল্পে এমন একটি রুপান্ত যেখানে এই পরিবর্তনের সামাজিক এবং অর্থনৈতিক প্রভাবগুলি পর্যাপ্তভাবে সম্বোধন করা হয়। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছে কর্মীদের অধিকার এবং স্থানিয় সম্প্রদায়ের চাহিদা সুরক্ষিত করা এবং যাদের চাকরির পরিবর্তন হওয়া উচিত তাদের জন্য সহায়তা এবং সুযোগ প্রদান করা।
প
প্যারিস চুক্তি
প্যারিস চুক্তি হল একটি যুগান্তকারী আন্তর্জাতিক চুক্তি যার লক্ষ্য বৈশ্বিক গড় তাপমাত্রা বৃদ্ধিকে “প্রাক-শিল্প স্তরের উপরে ২ ডিগ্রি সেলসিয়াসের নীচে” সীমাবদ্ধ রাখা এবং বৈশ্বিক উঞ্চতাকে ১.৫ সেলসিয়াসে সীমাবদ্ধ করার ‘প্রচেষ্টা অভ্যাহত রাখা। এটি ২০১৫ সালে চূড়ান্ত করা হয় এবং বিশ্বের প্রায় প্রতিটি দেশই এতে স্বাক্ষর এবং অনুমোদন করে।
প্যারিস চুক্তির অধীনে, দেশগুলো নির্গমন হ্রাস এবং জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবগুলোর সাথে খাপ খাইয়ে নেয়ার পরিকল্পনা উপস্থাপন করে (যা জাতীয়ভাবে নির্ধারিত অবদান বা এনডিসি নামে পরিচিত), এবং প্রতি পাঁচ বছরে এই প্রতিশ্রুতিগুলো পর্যালোচনা করার হয়ে থাকে। চুক্তিটি জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব মোকাবেলা করার জন্য উন্নয়নশীল দেশগুলোকে আর্থিক সহায়তার বিধান এবং বৈশ্বিক কার্বন বাজারের ব্যবস্থাপনাকেও অন্তর্ভুক্ত করে।
পার্টিকুলেট ম্যাটার এবং পিএম ২.৫
পার্টিকুলেট ম্যাটার বলতে বাতাসে পাওয়া কঠিন কণা এবং তরল ফোঁটার মিশ্রণকে বোঝায়। কিছু কণা পদার্থ প্রাকৃতিক প্রক্রিয়া থেকে আসে, এবং এটি জ্বালানী পোড়ানো এবং নির্মাণের মতো মানুষের কার্যকলাপ দ্বারাও উৎপন্ন হয়।
কিছু বস্তুকণা মানুষের জন্য উল্লেখযোগ্য স্বাস্থ্য সমস্যা সৃষ্টি করতে পারে, বিশেষ করে এমন কণা যেগুলো এত ছোট যে তারা শ্বাস নেয়ার সময় শরীরের গভীরে প্রবেশ করতে পারে। বিশেষ উদ্বেগের বিষয় হল ২.৫ মাইক্রোমিটারের কম ব্যাসযুক্ত কণা, যা ‘পিএম ২.৫’ নামে পরিচিত।
পারমাফ্রস্ট
যে কোনো ভূমি যেটি কমপক্ষে দুই বছর ধরে সম্পূর্ণ হিমায়িত থাকে তাকে পারমাফ্রস্ট বলে। মাটি, বালি, শিলা এবং বরফ দ্বারা গঠিত জৈব উপাদান দিয়ে তৈরি, পারমাফ্রস্ট মেরু অঞ্চলে পাওয়া যায় এবং হিন্দুকুশ হিমালয় অঞ্চলের ভূপৃষ্ঠের প্রায় ৪০% জুড়েই এর উপস্থিতি রয়েছে। জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে পারমাফ্রস্ট গলে যাচ্ছে। যদি বৈশ্বিক গড় তাপমাত্রা প্রাক-শিল্প স্তরের উপরে ২ সে বৃদ্ধি পায়, তাহলে অনুমান করা হয় যে পারমাফ্রস্টের পরিমাণ ৪০% এরও বেশি কমে যাবে।
পারমাফ্রস্টের যে কােনো ক্ষয়ক্ষতির কারনে মেরু এবং পর্বত অঞ্চলে জলবিদ্যুত চক্র এবং বাস্তুতন্ত্রের নাটকীয় পরিবর্তন ঘটাবে। পারমাফ্রস্ট গলে যাবার ফলে প্রচুর পরিমাণে গ্রীনহাউস গ্যাস নির্গত হতে পারে, যার ফলে উষ্ণতা বৃদ্ধি পায়।
প্রশমন
বায়ুমণ্ডলে জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব মোকাবেলায় গ্রিনহাউস গ্যাসের অনুপাত কমাতে গৃহীত পদক্ষেপগুলোকে জলবায়ু পরিবর্তন প্রশমন হিসাবে চিহ্নিত করা হয়। প্রশমন ব্যবস্থার মধ্যে রয়েছে নবায়নযোগ্য জ্বালানির উৎসে স্থানান্তরিত করে নির্গমন হ্রাস করা; শিল্প প্রক্রিয়া থেকে নির্গমন ক্যাপচার এবং সংরক্ষণ; এবং প্রাকৃতিক কার্বন সিঙ্ক যেমন বন এবং মহাসাগরের বাস্তুতন্ত্রের উন্নতি করা।
প্রাকৃতিক গ্যাস
প্রাকৃতিক গ্যাস হল একটি জীবাশ্ম জ্বালানী যা বিদ্যুৎ উৎপাদন, ভবন উঞ্চ করা, রান্না করা এবং শিল্প প্রক্রিয়ায় ব্যবহৃত হয়। ইথেন এবং প্রোপেনের মতো অল্প পরিমাণে অন্যান্য হাইড্রোকার্বনসহ এর বেশিরভাগই মিথেন দ্বারা গঠিত। এটি ভূগর্ভস্থ জলাধার থেকে ড্রিলিং কূপের মাধ্যমে উত্তোলন করা হয়।কয়লা এবং তেলের তুলনায়, প্রাকৃতিক গ্যাস পোড়ালে কার্বন ডাই অক্সাইড কম নির্গত হয়। অনেকেই জীবাশ্ম জ্বালানি থেকে নবায়নযোগ্য শক্তিতে রূপান্তর প্রক্রিয়াকে সহায়তা করার জন্য গ্যাস একটি ‘সেতু’ বা ‘ট্রানজিশন ফুয়েল’ ব্যবহারের পক্ষে পরামর্শ দিয়েছেন। কিন্তু অনেক বিশেষজ্ঞ মনে করেন একটি রেড হেরিং, এবং এটি সস্তা এবং কম দূষণকারী পুনর্নবীকরণযোগ্য জ্বালানি বিনিয়োগকে বাধাগ্রস্ত করতে পারে।
প্রাকৃতিক সমাধান
ইন্টারন্যাশনাল ইউনিয়ন ফর কনজারভেশন অফ নেচার (আইইউসিএন) প্রকৃতি-ভিত্তিক সমাধানের মধ্য দিয়ে পরিবর্তিত বাস্তুতন্ত্র রক্ষা, পরিচালনা এবং পুনরুদ্ধার করার পদক্ষেপকে বুঝিয়েছে। এর ফলে সামাজিক চ্যালেঞ্জগুলিকে কার্যকরভাবে এবং অভিযোজিতভাবে মোকাবেলা করে, মানব কল্যাণ এবং জীববৈচিত্র্যের সূরক্ষা সম্ভব হবে।
জলবায়ু প্রসঙ্গে, প্রকৃতি-ভিত্তিক সমাধানগুলোর মধ্যে বাস্তুতন্ত্রের সুরক্ষা এবং পুনরুদ্ধার অন্তর্ভুক্ত থাকতে পারে যা কার্বন সিঙ্ক হিসাবে কাজ করে। ম্যানগ্রোভ বনগুলি কীভাবে প্রকৃতি-ভিত্তিক সমাধান জলবায়ু পরিবর্তন প্রশমন এবং অভিযোজন উভয় ক্ষেত্রেই সাহায্য করতে পারে তার একটি ভাল উদাহরণ: তারা কার্বন সঞ্চয় করার পাশাপাশি উপকূলীয় ঝড় বন্যা থেকে স্থানীয় সম্প্রদায়কে রক্ষা করতে পারে।
হ
হিমবাহ
মেরু অঞ্চলে এবং উচ্চ পর্বতে হিমবাহগুলো ধীরে ধীরে জমে থাকা বরফের দিকে ধাবিত হচ্ছে, ঠিক যেন হিমায়িত নদীর মতো। শত শত বছর ধরে মাটিতে তুষার পড়ে এবং বরফের ভারে সংকুচিত হয়ে হিমবাহের সৃষ্টি হয়। হিমবাহের স্থান পরিবর্তন মূলত বরফের ওজনের উপর অভিকর্ষ বলের কারনে ত্বরান্বিত হয়।
জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে বিশ্ব উষ্ণ হচ্ছে, তাই হিমবাহগুলো এখন দ্রুত গলতে শুরু করেছে। হিমবাহ গলার প্রভাব সমুদ্রপৃষ্ঠ, পানিচক্রসহ বহু দূরবর্তী অঞ্চল পর্যন্ত বিস্তৃত। এখানে হিমালয়ের গলিত হিমবাহ সম্পর্কে আরও পড়ুন।
হিন্দুকুশ হিমালয়
হিন্দুকুশ হিমালয় (বা এইচকেএইচ) এর মাধ্যমে দক্ষিণ এবং মধ্য এশিয়ার পার্বত্য অঞ্চলকে বোঝায় যার একটি অংশ হিন্দুকুশ পর্বতমালা (আফগানিস্তান থেকে তাজিকিস্তান) এবংঅন্যটি হিমালয় নিজেই (পাকিস্তান থেকে মায়ানমার)।
২০২৩ সালে ইন্টারন্যাশনাল সেন্টার ফর ইন্টিগ্রেটেড মাউন্টেন ডেভেলপমেন্ট (ICIMOD) পরিচালিত একটি গবেষণায় দেখা গেছে, হিন্দুকুশ হিমালয় অঞ্চলের জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে ব্যাপক পরিবর্তনগ লক্ষ্য করা যাচ্ছে। এতে বলা হয় জলবায়ু পরিবর্তনের কারনে হিমবাহগুলো দ্রুত গলছে, তুষারপাতের দিন হ্রাস পাচ্ছে এবং পারমাফ্রস্ট গলে যাচ্ছে৷ দক্ষিণ এশিয়া এবং এর বাইরে এই প্রাকৃতিক পর্বতমালার উপর নির্ভরশীল জনগোষ্ঠী এবং জীববৈচিত্র্যের উপর ব্যাপক প্রভাব পড়ছে। বিস্তারিত জানতে এখানে পড়ুন।
হাইড্রোকার্বন
হাইড্রোকার্বন হল জীবাশ্ম জ্বালানীর যেমন কয়লা, পেট্রোলিয়াম এবং প্রাকৃতিক গ্যাসের মৌলিক উপাদান। রাসায়নিকভাবে, হাইড্রোকার্বন হল কার্বন এবং হাইড্রোজেন পরমাণুর সমন্বয়ে গঠিত জৈব যৌগ। বিদ্যুৎ উৎপাদনের জন্য বা পরিবহনে জ্বালানী হিসাবে হাইড্রোকার্বন পোড়ানোর ফলে বায়ুমণ্ডলে কার্বন ডাই অক্সাইড এবং অন্যান্য গ্রিনহাউস গ্যাস নির্গত হয়, যা জলবায়ু পরিবর্তনে অবদান রাখে।
হাইড্রোক্লোরোফ্লুরোকার্বন (HCFCs)
হাইড্রোক্লোরোফ্লুরোকার্বন (HCFCs) হল একটি রাসায়নিক যৌগ যেটি হাইড্রোজেন, ক্লোরিন, ফ্লোরিন এবং কার্বন পরমাণু ধারণ করে। এগুলো রেফ্রিজারেশন, এয়ার কন্ডিশনার, ফোম-ব্লোয়িং এবং অ্যারোসলে ব্যবহারের জন্য তৈরি করা হয়েছিল। এগুলি শক্তিশালী গ্রিনহাউস গ্যাস, এবং মন্ট্রিল প্রোটোকলের অধীনে পর্যায়ক্রমে এগুলো বিলুপ্ত করা হচ্ছে কারণ তা ওজোন স্তরের মারাত্বক ক্ষতি সাধন করে৷
হাইড্রোফ্লুরোকার্বন (HFCs)
হাইড্রোফ্লুরোকার্বন (HFCs) হল এমন গ্যাস যা এয়ার কন্ডিশনার, রেফ্রিজারেশন এবং অন্যান্য শিল্পে ব্যবহৃত হয়, যেগুলি CFC এবং HCFCs পরিবর্তে এই গ্যাসের ব্যবহার শুরু হয়। বলা হয়ে থাকে এই গ্যাস ওজোন স্তরকে ক্ষয় করে না। তবে এটি শক্তিশালী গ্রিনহাউস গ্যাস এবং এটি জলবায়ু পরিবর্তনে ভূমিকা রাখে।
২০১৬ সালে মন্ট্রিল প্রোটোকলের কিগালি সংশোধনীর অধীনে বিশ্বের সরকারগুলো HFC-এর উৎপাদন ও ব্যবহার পর্যায়ক্রমে কমিয়ে আনতে সম্মত হয়।
হিমবাহ
মেরু অঞ্চলে এবং উচ্চ পর্বতে হিমবাহগুলো ধীরে ধীরে জমে থাকা বরফের দিকে ধাবিত হচ্ছে, ঠিক যেন হিমায়িত নদীর মতো। শত শত বছর ধরে মাটিতে তুষার পড়ে এবং বরফের ভারে সংকুচিত হয়ে হিমবাহের সৃষ্টি হয়। হিমবাহের স্থান পরিবর্তন মূলত বরফের ওজনের উপর অভিকর্ষ বলের কারনে ত্বরান্বিত হয়।
জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে বিশ্ব উষ্ণ হচ্ছে, তাই হিমবাহগুলো এখন দ্রুত গলতে শুরু করেছে। হিমবাহ গলার প্রভাব সমুদ্রপৃষ্ঠ, পানিচক্রসহ বহু দূরবর্তী অঞ্চল পর্যন্ত বিস্তৃত। এখানে হিমালয়ের গলিত হিমবাহ সম্পর্কে আরও পড়ুন।
বায়োমাস
বায়োমাস হল যে কোন জৈব পদার্থ যা উদ্ভিদ, প্রাণী এবং অণুজীব থেকে আসে, যার মধ্যে কৃষি, বনজ এবং অন্যান্য শিল্পের থেকে জৈব বর্জ্য রয়েছে। বায়োমাস সরাসরি জ্বালানি শক্তি উৎপাদন করতে পারে, বা জৈব জ্বালানীতে রূপান্তরিত হতে পারে।
বনভূমি নিধন
কাঠ, কৃষি এবং প্রাকৃতিক খনিজ সম্পদ আহরনের উদ্দেশ্যে প্রাকৃিতিক বনভূমি কেটে ফেলাই হচ্ছে বন নিধন। এটি জীববৈচিত্র্য এবং আমাদের জলবায়ু, উভয়ের জন্য একটি বড় হুমকি। বন উজাড়ের ফলে বায়ুমণ্ডলে প্রচুর পরিমাণে গ্রিনহাউস গ্যাস নির্গত হয়।
বৈশ্বিক উষ্ণতা
অনেকেই ‘জলবায়ু পরিবর্তন’ এবং ‘বৈশ্বিক উষ্ণতা’কে একে অপরের পরিপূরক হিসেবে ব্যবহার করেন। আসলে বৈশ্বিক উষ্ণতা’ বলতে পৃথিবীর পৃষ্ঠের ক্রমবর্ধমান তাপমাত্রাকে বোঝায় আর ‘জলবায়ু পরিবর্তন’ বলতে বায়ু এবং বৃষ্টিপাতের মতো অন্যান্য আবহাওয়াকে বোঝায়। বৈশ্বিক উঞ্চতার অন্যতম মূল কারন হচ্ছে বায়ুমন্ডলে গ্রিনহাউস গ্যাসের মাত্রা বৃদ্ধি।
অনেক গণমাধ্যমে ‘গ্লোবাল ওয়ার্মিং’-এর চেয়ে ‘গ্লোবাল হিটিং’ শব্দটিকে ব্যবহার করা হয়।
বাসস্থান বিভাজন
বাসস্থান বিভক্তকরণ ঘটে যখন একটি বৃহৎ আবাসস্থল বা এলাকা ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র অংশে বিভক্ত হয়ে একে অপরের থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ে। যেমন একটি বনভূমিকে নিধন করে ছোট ছোট জঙ্গলে পরিণত করা যেটি একটি থেক অন্যটি বিচ্ছিন্ন অবস্থায় থাকে। এটি জীববৈচিত্র্যের জন্য একটি বড় হুমকি, কারণ অনেক প্রজাতি বাসস্থানের ছোট অংশে টিকে থাকতে পারে না।
সবুজ জ্বালানি
সবুজ জ্বালানি বলতে এমন ধরনের জ্বালানী বা বিদ্যুতকে শক্তিকে বোঝায় যা বায়ু বা সূর্যের মতো নবায়নযোগ্য উৎস থেকে আসে। জীবাশ্ম জ্বালানির বিপরীতে, সবুজ শক্তি বা গ্রিন এনার্জি উৎপাদনের ফলে কার্বন নির্গমন হ্রাস পায়। পুনর্নবীকরণযোগ্য শক্তির মধ্যে জলবিদ্যুৎ -কে সত্যিকার অর্থে ‘সবুজ’ বলা যেতে পারে। অবশ্য এটি নিয়েও বিতর্ক রয়েছে। কারন নদী এবং সংশ্লিষ্ট বাস্তুতন্ত্রের উপর এই ধরনের প্রকল্পের ফলে উল্লেখযোগ্য প্রভাবের কারণে।
শিল্প বিপ্লব
১৮ শতকের শুরুতে ইউরোপ এবং উত্তর আমেরিকায় কৃষিভিত্তিক অর্থনীতি থেকে প্রযুক্তিনির্ভর অর্থনীতিতে রুপান্তরের যে বিপ্লব সাধিত হয় মূলত তাকেই শিল্প বিপ্লব বলা হয়।
এই বিপ্লবের মধ্য দিয়ে কারখানাভিত্তিক শিল্প গড়ে উঠে যেখানে বিদ্যুত উৎৎপাদনে জীবাশ্ম জ্বালানীর ব্যবহার শুরু হয়। এরপর শুরু হয় তেল এবং গ্যাসের ব্যবহার। এটি বায়ুমণ্ডলে কার্বন ডাই অক্সাইডের মাত্রা ব্যাপকভাবে বৃদ্ধি করে, যা জলবায়ু পরিবর্তনের সূচনা করে।
লা নিনা
লা নিনা হল এল নিনো-সাউদার্ন অসিলেশনে (ENSO) এল নিনোর বিপরীত একটি পরিস্থিতি। লা নিনার সময়, মধ্য ও পূর্ব নিরক্ষীয় প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলে সমুদ্রের তাপমাত্রা গড়ের চেয়ে শীতল হয়। এল নিনোর মতো, এটি বিশ্বব্যাপী বৃষ্টিপাতের ধরণ এবং বায়ুমণ্ডলীয় চাপকে প্রভাবিত করে।
লস অ্যান্ড ড্যামেজ
জলবায়ু পরিবর্তনের অনেকগুলো প্রভাবের মধ্যে কয়েকটি হচ্ছে ঘন ঘন এবং তীব্র বন্যা, তাপপ্রবাহ এবং সমুদ্রের উচ্চতা বৃদ্ধি ইত্যাদি। অনেক ক্ষেত্রে, এই পরিবর্তনগুলোর সাথে মানিয়ে নেয়া অসম্ভব, জলবায়ু পরিবর্তনের নেতিবাচক প্রভাবের কারনে অনেক মানুষই প্রান লস অ্যান্ড ড্যামেজ।
হারায়, কৃষি জমি অনুর্বর হয়ে যায়, এবং অনেকের বাসস্থান স্থায়ীভাবে পরিবর্তিত হয়ে যায়। জলবায়ু পরিবর্তনের সামাজিক ও আর্থিক প্রভাব যা এড়ানো যায় না বা মানিয়ে নেয়া যায় না তাকে ‘লস অ্যান্ড ড্যামেজ’ বলা হয়।
‘লস অ্যান্ড ড্যামেজ’ অর্থনৈতিক হতে পারে, যেমন জীবিকার ক্ষতি বা অনাকাঙ্ক্ষিত আবহাওয়ার নিদর্শনগুলির কারণে কম কৃষি ফলন। এটি অ-অর্থনৈতিকও হতে পারে, যেমন সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য, আদিবাসী জ্ঞান, এবং জীববৈচিত্র্য – যা পরিমাপ করা কঠিন হতে পারে।
জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে ক্ষতির জন্য কে অর্থ প্রদান করে তা জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবেলায় বিশ্বব্যাপী আলোচনায় একটি মূল এবং বিতর্কিত বিষয়।
মন্ট্রিল প্রোটোকল
ওজোন স্তর ক্ষয় ঠেকাতে ১৯৮৭ সালে মন্ট্রিল প্রোটোকল সই হয় যেটি একটি আন্তর্জাতিক পরিবেশগত চুক্তি এবং যার লক্ষ্য ছিল ক্লোরোফ্লুরোকার্বন (CFCs) এবং হাইড্রোক্লোরোফ্লুরোকার্বন সহ ওজোন-ক্ষয়কারী পদার্থ (ODS) উৎপাদন ও ব্যবহার বন্ধ করা। এই রাসায়নিকগুলো, সাধারণত রেফ্রিজারেশন এবং এয়ার কন্ডিশনারে ব্যবহৃত হয়, ওজোন স্তরের ক্ষতি করে যা পৃথিবীর জীবনকে সূর্যের বিকিরণের বিপজ্জনক প্রভাব থেকে রক্ষা করে।
মন্ট্রিল প্রোটোকলকে প্রায়শই বিশ্বের সবচেয়ে সফল আন্তর্জাতিক পরিবেশগত চুক্তি হিসাবে বিবেচনা করা হয়। গবেষণায় অনুমান করা হয়েছে যে চুক্তি না হলে ওজোন স্তরটি 2050 সালের মধ্যে ধসে পড়তে পারত
মহাসাগরের লবণাক্ততা
পৃথিবীর বায়ুমণ্ডলে নির্গত কার্বন ডাই অক্সাইডের প্রায় ৩০% সমুদ্র দ্বারা শোষিত হয়। বায়ুমণ্ডলে কার্বন ডাই অক্সাইডের মাত্রা যেমন বৃদ্ধি পায়, তেমনি সমুদ্রের পানিতে কার্বন ডাই অক্সাইডের পরিমাণও বৃদ্ধি পায়। এটি মহাসাগরের রাসায়নিক গঠন পরিবর্তন করে, সমুদ্রের পানিকে আরও লবণাক্ত করে তোলে, এই প্রক্রিয়াটির নামই মহাসাগরের অম্লকরণ (লবণাক্ততা বৃদ্ধি) নামে পরিচিত।
সামুদ্রে লবণাক্ততা বৃদ্ধির ফলে সামুদ্রিক জীববৈচিত্র্য মারাত্মকভাবে প্রভাবিত করতে পারে, যেমন এর ফলে ঝিনুক এবং অন্যান্য শেলফিশের মতো প্রাণীরা তাদের খোলস তৈরি করে। প্রবাল প্রাচীরগুলি আরও গুরুতরভাবে হুমকির সম্মুখীন। এর ফলে জনসংখ্যা এবং অর্থনীতিতে মারাত্মক প্রভাব পড়তে পারে যারা আয় এবং খাদ্যের উৎস হিসাবে সমুদ্রের উপর নির্ভরশীল।
টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা
টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা হচ্ছে ২০১৫ সালে জাতিসংঘ ঘোষিত ১৭টি লক্ষ্যমাত্রা যা ২০৩০ সালের অর্জন করার লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয়েছে। এই লক্ষ্যমাত্রগুলো সারা বিশ্বে সামাজিক, অর্থনৈতিক এবং পরিবেশগত চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় একটি বিশদ কর্মকৌশল।
জলবায়ু পরিবর্তনের সাথে সবচেয়ে ঘনিষ্ঠভাবে যুক্ত টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যগুলোর মধ্যে একটি হচ্ছে ‘সাশ্রয়ী ও পরিচ্ছন্ন জ্বালানি ব্যবহার, বিশ্বব্যাপী নবায়নযোগ্য শক্তির ব্যবহার বৃদ্ধিসহ; জলবায়ু পরিবর্তনের মাত্রা এবং প্রভাব সীমিত করতে জরুরী ‘জলবায়ু পদক্ষেপ’ গ্রহণ ইত্যাদি।
ভালনারেবিলিটি (দুর্বলতা)
জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব বিভিন্ন সম্প্রদায়ের উপর অনুপাতহীনভাবে অনুভূত হয়। ভৌগলিক অবস্থান, আর্থ-সামাজিক অবস্থা এবং সামাজিক প্রান্তিককরণের মতো কারণের উপর ভিত্তি করে জলবায়ু পরিবর্তনের দুর্বলতা ভিন্ন হয়।
অ্যারন হোয়াইট-এর পক্ষ থেকে অতিরিক্ত ইনপুট গ্রহন করা হয়েছে
#
শালিনী কুমারী
শালিনী কুমারী দ্য থার্ড পোলের একজন সম্পাদকীয় সহকারী। এই দায়িত্ব পালনের আগে, তিনি বিবিসি হিন্দিতে ডিজিটাল সাংবাদিকতার প্রশিক্ষণার্থী হিসাবে কাজ করেছেন। তিনি এজেক এমসিআরসি, জামিয়া মিলিয়া ইসলামিয়া, নয়াদিল্লি থেকে কনভারজেন্ট সাংবাদিকতায় স্নাতকোত্তর।
সম্পাদক : সৈয়দ আমিরুজ্জামান
ইমেইল : rpnewsbd@gmail.com
মোবাইল +8801716599589
৩১/এফ, তোপখানা রোড, ঢাকা-১০০০।
© RP News 24.com 2013-2020
Design and developed by M-W-D