সিলেট ১লা জুলাই, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ | ১৭ই আষাঢ়, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
প্রকাশিত: ৬:৫৮ অপরাহ্ণ, সেপ্টেম্বর ১৪, ২০২৩
বাংলাদেশে সংসদ নির্বাচন আসন্ন। চার মাসেরও কম সময়। কিন্তু নির্বাচন নিয়ে রাজনৈতিক দলসমূহ, বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংস্থা ও দূতাবাসের মাধ্যমে শক্তিধর দেশগুলো তৎপর হয়েছে। নানা মিডিয়াতে, আলোচনায় নির্বাচন এখন মূখ্য বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে। আলোচনা খুব তাপও ছড়াচ্ছে। সাধারণত ক্ষমতাশীন এবং ক্ষমতার বাইরে যারা তাদের মধ্যে বেশ বাক্যবাণ বিনিময় হচ্ছে। বহু দল বিরাজ করায় বহু মতও শোনা যায়।এগুলোর বিশ্লেষণ বড় পরিসরের বিষয়, এখানে তা নিয়ে বেশি কথা বলা সমীচীন নয়। তবে নির্বাচন বিষয়ক কিছু দেশী বিদেশী জরীপ নিয়ে কথা বলা যায়। তবে এবিষয়ে সর্তক থাকা দরকার জরীপ সব সত্যকে সফলভাবে তুলে ধরতে পারে না, তবে গতিমুখ বুঝা যায়।
নির্বাচন অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ হবে কীনা তা নিয়ে অনেকের সংশয় থাকলেও, আন্তর্জাতিক চাপ ও অন্যান্য আলামত দেখে মনে হয় সরকার একটি আন্তর্জাতিকভাবে বিশ্বাসযোগ্য নির্বাচন অনুষ্ঠানে নির্বাচন কমিশনকে সহায়তা দিতে প্রস্তুত বা অঙ্গীকারবদ্ধ। যদিও রাজনৈতিক মহলের কিছু কিছু অংশ এবিষয়ে সংশয়ী।
যাইহোক, নির্বাচনে এখনো সক্রিয় হল আন্তর্জাতিক মহল বিশেষ করে যুক্তরাষ্ট্র। যুক্তরাষ্ট্র নির্বাচনকে নিরপেক্ষ করার জন্য যারা দায়িত্বপ্রাপ্ত তাদের জন্য ভিসানীতি প্রয়োগের প্রস্তুতি নিয়ে রেখেছে। এটা বাংলাদেশের নির্বাচনকে কতটুকু ইতিবাচক চাপ তৈরি করবে তা নিশ্চিত নয়, নেতিবাচক চাপ যে রাখবে তা নিশ্চিত। বাংলাদেশের বিকাশমান মধ্য ও উচ্চবিত্ত আমলা (সব ধরনের) এবিষয়ে চিন্তিত। কিন্তু এই নীতি সামগ্রিকভাবে দেশের অগ্রগতিতে কী কাজে লাগবে তা নিশ্চিত নয়। যুক্তরাষ্ট্রের এই নীতির মধ্যে আগাম ভয় দেখানোর ব্যাপার আছে।
এইসব হলো ভোটের ব্যাপার। কিন্তু ভোটারের বক্তব্য কই? তাঁরা কাকে ভোট দিবেন?
নাজিম কামরান চৌধুরীর একটা বিশ্লেষণ আছে, সহজ করে বললে, বাংলাদেশের এ দলের ভোট শতকরা তিরিশ + এবং বি দলের ভোটও শতকরা তিরিশ +। তাহলে সমান শক্তি নিয়ে দুই দল মাঠে থাকলে ভোট ড্র হয় কিন্তু সেই জিতবে যে দল সদ্য যারা ভোটার হয়েছে তাদের শতকরা দশ ভাগ ফ্লোটিং ভোট পাবে, সেই দল জিতবে।
অন্যদিকে, যে দল ভোটারের মন জয় করবে তারা এগিয়ে থাকবে। যেমন, কৃষক পণ্যের মূল্য পেলে, যুবক চাকরির আশ্বাস পেলে, শ্রমিক ন্যায্য মজুরি পেলে, সরকারি কর্মচারীরা পে স্কেল পেলে, দ্রব্য মূল্য স্বাভাবিক থাকলে, দিন মজুর কাজের নিশ্চয়তা পেলে ইত্যাদি ইত্যাদি।
এই ভোটারের মন জয় করতে সরকারি দল পিছিয়ে থাকে কারণ, তারা সব দিতে পারে না। ক্ষমতার বাইরের দলগুলো মিষ্টি প্রতিশ্রুতি দিতে পারে।
এখানে উল্লেখ করা যায়, সব জয় বা উন্নয়ন ভোটারদের খুশি করে, কিন্তু ভোটের সময় ভোটাররা গণতান্ত্রিক আচার-আচরণ চায়। আবার বিরোধী দলগুলোও সবসময় ভালো করতে পারে না, কারণ তাদের যদি জনপ্রিয় নেতা না থাকে। ভারতের এক ভোটারকে জিজ্ঞেস করেছিলাম, রাহুল জিতে না কেন? তিনি বললেন, প্রধানমন্ত্রী হওয়ার মতো নেতৃত্বের ক্যারিশমা তার নেই। যেদিন এই ক্যারিশমা হবে সেদিন সে হবে।
ভোটার মানসিকতায় দেখা যায়, কেউ সরকারের ধারাবাহিকতা চায়, কেউ নীতির পরিবর্তন চায়, কেউ প্রার্থীর পছন্দ অপছন্দ হয়, কেউ কেউ কোনো দলকে পরপর ক্ষমতায় চায় না।
বাংলাদেশের রাজনীতির উপর মহলে একদল পরিবর্তন চায় নিজেদের ক্ষমতায় আসার জন্য, তাই, তারা নিজেদের ভোটব্যাংকের বাইরে থেকে কত ভোট টানতে পারবে, তা গুরুত্বপূর্ণ।
এ কে ফজলুল হক একবার বলেছিলেন, আমার ভোটাররা খবরের কাগজ পড়ে ভোট দেয় না, এখন হয়ত বলা যায়, টকশো শুনে হয়ত মানুষ ভোট দেয় না।
এ দল যদি উন্নয়নের সুফল বর্ণনার সাথে চাল ডাল সবজির দাম কমাতে পারে, তরুণদের চাকরি বাড়াতে পারে তবে তারা রেসে এগিয়ে যাবে। বি দল যদি মূল নেতার পরিচ্ছন্নতা দেখাতে পারে (কারণ, এ দলের প্রধানের গ্রহনযোগ্যতা শতকরা সত্তরের অধিক) তবে রেসে থাকবে।
ভোটার মানসিকতা এলাকা এলাকা পার্থক্য হয়। ব্যক্তির ইমেজও লাগে।
মানুষ ভোট কেন্দ্রে আসুক, পছন্দ অনুযায়ী ভোট দিক।
মানুষ হয়ত আদর্শ ভালোবাসে, মুক্তিযুদ্ধ ভালোবাসে, সাম্প্রদায়িক সম্প্রতি ভালোভাসে তবুও সে জাগতিক ভাবনায় ভোট দেয়। কিছু ভোট হয়ত পরকালের মোহে দেয়।
ভোট, ভাত ও স্বাধীনতার সাম্যের সমন্বয় ঘটে তখন সাধারণ ভোটারের জয় হয়।
পরিশেষে বলা যায়, ভোটকেন্দ্রে ভোটারদের নিরাপদে যাওয়ার সুযোগ হলে গণতান্ত্রিকভাবে কেউ না কেউ জিতবে।
তবে, একটা কথা মুখে মুখে হয়, এ দল পাহাড়ের চূড়ায়, বি দল পাহাড়ের ঢালুতে। জনগণ, ভোটাররা এখনও দর্শক, জানুয়ারির প্রথম সপ্তাহে সে তার রায় দিবে। অপেক্ষায় থাকবো।
#
শরীফ শমশির
মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক গবেষক, লেখক
সম্পাদক : সৈয়দ আমিরুজ্জামান
ইমেইল : rpnewsbd@gmail.com
মোবাইল +8801716599589
৩১/এফ, তোপখানা রোড, ঢাকা-১০০০।
© RP News 24.com 2013-2020
Design and developed by M-W-D