আমরা আর সম্পর্ক এগোতে পারছিনা

প্রকাশিত: ৯:১৩ পূর্বাহ্ণ, অক্টোবর ১৩, ২০২৩

আমরা আর সম্পর্ক এগোতে পারছিনা

Manual6 Ad Code

তাসনীম সারা |

— ম্যাডাম ডিভোর্সের কারণ হিসেবে কি লিখবো? আপনার হাজবেন্ড আপনার ওপর শারিরীক টর্চার করেন নাকি পরকীয়া প্রেম? — কিছুই না। — কিছুই না? ম্যাডাম তা’হলে লিখি আপনার শ্বশুরবাড়ির লোক আপনার ওপর টর্চার করে? — নাহ্।

Manual1 Ad Code

Manual4 Ad Code

— তা’হলে কীভাবে ডিভোর্স হবে ম্যাডাম? — লিখুন আমরা আর সম্পর্ক এগোতে পারছিনা। তাই ডিভোর্স চাই। — কিন্তু ম্যাডাম এটা তো স্ট্রং কারণ না। স্ট্রং কারণ ছাড়া তো ডিভোর্স সম্ভব না। — আপনি লিখুন। আমার হাজবেন্ড এর ওপর তো আমি অযথা দোষারোপ করতে পারবো না। আমরা আমাদের সম্পর্ক এগোতে পারছি না, চাইছি না, এরজন্য আলাদা হতে চাইছি। — ডোন্ট মাইন্ড ম্যাডাম আপনাদের কি এ্যারেঞ্জ ম্যারেজ ছিলো? — নাহ্ লাভ ম্যারেজ। — লাভ ম্যারেজ? — জ্বী। চার বছর সম্পর্কের পর আমরা বিয়ে করি এবং সাড়ে সাত বছর সংসার আমাদের। — ম্যাডাম এতদিন পর ডিভোর্স? — জ্বী। আনোয়ার শেখ এবার সোজা হয়ে বসলেন। চশমাটা ঠিক করে মনযোগী হয়ে তাকালেন তার সামনে বসে থাকা নারীটির দিকে। ছিপছিপে, মাঝারি গড়নের উজ্জ্বল শ্যাম বর্ণের সে। পরণে বেগুনী রঙা একটা শাড়ি তার সাথে ঢিলেঢালা একটা বেণী, সাজগোজ খুব সাধারণ আর হাতে কালো চামড়ার একটা ঘড়ি ব্যাস! ওহ্ একটা কালো চামড়ার ব্যাগও সে কোলের ওপর নিয়ে বসে আছে। সাজগোজ কিংবা মুখের নকশা দেখে মনে হচ্ছে রুচিশীল একজন মানুষ আর বেশ টাকাপয়সা ওয়ালা। এত মায়াবী মেয়েটার কি এমন হলো সে ডিভোর্স চাইতে আসলো? এসব নানাকিছু ভাবনা মাথায় আসলো আনোয়ার সাহেবের। হালকা কাশি দিয়ে গলা পরিষ্কার করে উনি ক্লায়েন্টকে জিজ্ঞেস করলেন_ — ম্যাডাম আপনি যদি মাইন্ড না করেন তা’হলে একটা প্রশ্ন করতে পারি কি? — জ্বী বলুন? আর আমাকে ম্যাডাম বলার দরকার নেই আমার নাম রুশরা। রুশরা বলেই ডাকতে পারেন। — রুশরা মা আপনি আমার মেয়ের বয়সী হবেন। মা আপনি খুব মায়াবী। এমন মায়াবী মানুষের জীবনে দুঃখের ছায়া নামার কারণ কি জানতে পারি মা? আপনি আমাকে আপন ভেবে বলতে পারেন। যদি আমি সমস্যা সমাধান করতে পারি? এবারে একটু নড়েচড়ে বসলো রুশরা নামক নারীটি। — বুঝতে পারছি না কোথা থেকে শুরু করবো। — আপনি শুরু থেকেই শুরু করুন মা কোনো সমস্যা নেই। — তা’হলে আমার ছেলেবেলার কাহিনী থেকেই শুরু করি? — আচ্ছা। . একটু দম নিয়ে বলতে শুরু করলো সে_ . আমার বাবা’র বাড়ি রংপুরে। রংপুরের স্থানীয় মানুষ আমরা। আমার ছোট চাচা রাজনীতি করতেন এবং সেই সুবাদে আমাদের খুব নামডাক এলাকায়। আমাদের যৌথ পরিবার, সেই সুবাদে ভাইবোন সংখ্যা মোটামুটি অনেক। ফুপিরাও আমাদের সাথেই থাকতেন। তো সব ভাই বোনের মধ্যে আমি সবচাইতে ছোট এবং আমার বাবা’র একমাত্র মেয়ে। বাবা মা অনেক কষ্টের পর আমাকে পেয়েছেন। এক মেয়ে এবং সবার ছোট হিসেবে আমি ছিলাম সবার চোখের মনি। আমি মুখ দিয়ে বলার আগেই সবকিছু হাজির হয়ে যেত আমার সামনে। এতো এতো আদর থাকা সত্বেও আমার মধ্যে উড়নচণ্ডী স্বভাবটা আসলো না। এই ব্যাপারটায় সবাই অবাক আবার গর্ববোধ করতে থাকলো। আমি পড়াশোনায় অনেক ভালো ছিলাম, স্কুলে সবসময় প্লেসের মধ্যেই থাকতাম। ভালো স্টুডেন্ট, সাহসীকতা এবং ভদ্রতার কারণে আমার নামডাক ছিলো পাড়ায়। বন্ধু বান্ধবের মায়েরা আমাকে দিয়ে সবসময় তুলনা করতো এ নিয়ে বন্ধু মহলে অনেকেই আমাকে পছন্দ করতো না। আমি ওসব আমলে নিতাম না। আমার একটা বেস্ট ফ্রেন্ড ছিলো এবং সে ছিলো আমার জীবনের অবিচ্ছেদ্য অংশ। কারো কথা আমলে না নিলেও ও যদি একবার আমার সাথে অভিমান করতো তা’হলে আমার পৃথিবী থমকে যেত! আমি অশান্ত হয়ে উঠতাম, বুঝতে পারতাম না আমার এখন কি করা উচিৎ? ও অবশ্য বেশি রেগে থাকতো না তবে ওর যখন রাগ ভাঙতো তখন আমি ওকে জড়িয়ে ধরে কাঁদতাম। ও খুব হাসতো হেসে বলতো _ — ” এখন যে খুব কাঁদছিস, যখন আমার বয়ফ্রেন্ড হবে বা তোর বয়ফ্রেন্ড হবে তখন তো ভুলেই যাবি। এরকম পাগলামি করতে পারবি না।” আমি আরো কেঁদে ফেলতাম, বলতাম_ — ” ওরকম দিন কখনোই আসবে না। ” কিন্তু ওরকম দিন আসলে আসলো জীবনে। ক্লাস নাইনে ওর একটা বয়ফ্রেন্ড হয়ে গেলো ওর বয়ফ্রেন্ড হওয়ার পর থেকে ওর সাথে আমার যেই বন্ডিং টা আগের মতো থাকলো না। আমি ওকে বলতাম তুই বদলে যাচ্ছিস কিন্তু ও বলতো নাহ্ আমি আগের মতোই আছি। আমি আর কিছু বলতাম না। ওর বয়ফ্রেন্ড আমার সাথে পরিচিত হওয়ার পর আমাকে নক দিতো মাঝেমধ্যে। আমি তেমন রিপ্লাই করতাম না। একদিন ওর বয়ফ্রেন্ড সহ ও ঘুরতে যাচ্ছিলো তো সেদিন আমাকেও নেয়। আমরা দু’জনেই শাড়ি পরেছিলাম। আমরা যখন রাস্তায় ঘুরছি, ভীড়ের মাঝে এক ফাঁকে ছেলেটা আমার শরীরে বাজেভাবে হাত দেয়। আমি তৎক্ষনাৎ আমার বান্ধবীকে বলে দিই, বান্ধবী ক্ষেপে যায়। ছোটখাট ঝগড়া করে চলে আসি। অন্যদিনের মতো ও আর আমাকে মানাতে আসেনা। আমার খুব খুব কষ্ট হয়। আমি নিজেই থাকতে পারছিলাম না তাই পরে আমিই যোগাযোগ করি। সব ঠিক হয় মোটামুটি কিন্তু আমাদের দূরত্ব কমে না। এর মাঝে ছেলেটা আবার আমাকে উত্যক্ত করতে শুরু করে। আমি বান্ধবীকে বলায় ও ভায়োলেন্ট হয়ে যায়! আমি ওকে প্রুফ দিতে চাই কিন্তু ও কিছু দেখতেই রাজি না। ঐ ছেলের প্রতি ওর ভালোবাসা এতটাই গভীর যে ও আমাদের বন্ধুত্ব ভুলে যায়। আমাদের সম্পর্ক নষ্ট হয়ে যায়। খুব খুব কষ্ট পাই আমি। ঐ ঘটনার পর থেকে আমার ভালোবাসার ওপর একটা ঘৃণা চলে আসে। যে ভালোবাসা মানুষকে অন্য সম্পর্ক থেকে দূরে নিয়ে যায় তা অভিশপ্ত, এটাই মনে হতে থাকে আমার। আমি হয়ে যাই অনুভূতিহীন পাথর স্বরূপ। . . চলবে. ………. গল্প :- ‘বিচ্ছেদ’ পর্ব :- ০১ – ‘তাসনীম সারা’  

এ সংক্রান্ত আরও সংবাদ

 


Follow for More!

Manual1 Ad Code
Manual8 Ad Code