কিংবদন্তী শ্রমিক নেতা কমরেড আবুল বাশারের ১৩তম মৃত্যুবার্ষিকী আজ

প্রকাশিত: ১০:০০ পূর্বাহ্ণ, নভেম্বর ৭, ২০২৩

কিংবদন্তী শ্রমিক নেতা কমরেড আবুল বাশারের ১৩তম মৃত্যুবার্ষিকী আজ

নিজস্ব প্রতিবেদক | ঢাকা, ০৭ নভেম্বর ২০২৩ : বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টির প্রাক্তন সভাপতি, দেশের শ্রমিক আন্দোলনের পথিকৃত, আমৃত্যু শ্রমিক-কর্মচারীদের অর্থনৈতিক ও গণতান্ত্রিক অধিকার প্রতিষ্ঠায় অনড় ভূমিকা পালনকারী শ্রমিক-কর্মচারী ঐক্য পরিষদের অন্যতম নেতা ও জাতীয় শ্রমিক ফেডারেশনের সংগ্রামী সভাপতি কমরেড আবুল বাশারের ১৩তম মৃত্যুবার্ষিকী আজ।

১৯৩৪ সালের ২৯ ডিসেম্বর, শনিবার (১৫ পৌষ ১৩৪১ বাংলা) বৃহত্তর নোয়াখালী জেলার (বর্তমান লহ্মীপুর জেলা) রায়পুরা উপজেলার ৬নং দক্ষিণ কেরুয়া গ্রামে এই প্রায়াত নেতার জন্ম।

৫০-এর দশকে তিনি চট্টগ্রামের কালুরঘাটে ইস্পাহানী জুট মিলসে কারিগরি বিভাগের একজন শ্রমিক হিসাবে কর্মময় জীবন শুরু করেন। স্বল্প সময়ের মধ্যেই তিনি কারখানার শ্রমিক ইউনিয়নে সক্রিয় কর্মী এবং পরে ইউনিয়নের মূল নেতায় পরিনত হন। শ্রমিক স্বার্থে দৃঢ় ও শ্রমিক অধিকার আদায়ে সাহসী ও লড়াকু ভূমিকার কারণে চট্টগ্রাম অঞ্চলের সকল পাটকল, বস্ত্রকল, বন্দর শ্রমিকসহ অন্যান্য শ্রমিকদের মধ্যে তাঁর প্রভাব বিস্তার ঘটে।

৬০ এর দশকে সামরিক শাসক জেনারেল আয়ুব-এর শাসনকালে পাটকলের ৫৬ দিনের লাগাতর ধর্মঘটের নেতৃত্ব দেন তিনি । এ ধর্মঘটের মধ্য দিয়ে সামরিক শাসক ও তৎকালিন পাটকল মালিকরা শ্রমিকদের দাবি মেনে নিতে বাধ্য হন। এ আন্দোলনের মাধ্যমে আবুল বাশার সারাদেশের পাটকল শ্রমিকদের একছত্র নেতৃত্ব প্রদান করেন। পরে তিনি অন্যান্য শ্রমিক-কর্মচারীদের সংগঠিত করার জন্য উদ্যোগী হন। ঐ সময়ে তিনি ওয়াপদা শ্রমিক-কর্মচারীদের ইউনিয়ন প্রতিষ্ঠা করেন। ধীরে ধীরে তিনি বস্ত্রকলসহ বিভিন্ন ধরনের ছোট বড় কারখানা শ্রমিকদের দাবিদাওয়া আদায়ে নেতৃত্ব প্রদান করেন।

বিশ্বব্যাংক ও আইএমএফ-এর নির্দেশিত বি-শিল্পকরণ নীতির বিরুদ্ধে সোচ্চার ভূমিকা পালন করেন। শ্রমিক আন্দোলন দ্বিধা-বিভক্তিরোধে ১৯৮৪ সালে দলমত নির্বিশেষে শ্রমিকদের ঐক্যবদ্ধ আন্দোলন গড়ে তোলার লক্ষ্যে শ্রমিক-কর্মচারী ঐক্য পরিষদ গঠনে সক্রিয় ভূমিকা পালন করেন। রাষ্ট্রায়ত্ব পাট-সুতা-বস্ত্রকল শ্রমিক-কর্মচারীদের দ্রুত ঐক্যবদ্ধ করার লক্ষ্যে ১৯৮৬ সালে গঠন করেন পাট-সুতা বস্ত্রকল শ্রমিক-কর্মচারী সংগ্রাম পরিষদ। এ ঐক্য মোর্চার মাধ্যমে শ্রমিকদের বড় বড় আন্দোলন সংগঠিত হয় এবং শ্রমিকদের বহুবিধ দাবি ও সমস্যার সমাধান করেন। ‘৬৯-এর গণঅভ্যূত্থান ও ‘৭১-এর স্বাধীনতা আন্দোলনে তিনি অগ্রণী ভূমিকা পালন করেন এবং সরাসরি মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহন করেন। ৯০ এর এরশাদ বিরোধী গণতান্ত্রিক সংগ্রামকে এগিয়ে নেয়ার লক্ষ্যে শ্রমজীবি মানুষকে উদ্বুব্ধ করার ক্ষেত্রে দৃঢ় ভূমিকা পালন করেন।
তিনি অবিভক্ত গোপন কমিউনিস্ট পার্টির সদস্য ছিলেন। স্বাধীনতার পর তিনি মজদুর পার্টি গঠন করেন এবং সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হন। ১৯৮৫ সালে ওয়ার্কার্স পার্টি ও মজদুর পার্টি ঐক্যবদ্ধ হলে তিনি ঐক্যবদ্ধ পার্টি (ওয়ার্কার্স পার্টির) সভাপতি নির্বাচিত হয়েছিলেন। মৃত্যুর সময় তিনি পার্টির পলিটব্যুরোর সদস্য ছিলেন।

দলমত নির্বিশেষে সকল শ্রমিকের স্বার্থ এক ও অভিন্ন- এ নীতিতে তিনি আমৃত্যু অবিচল ছিলেন। ঐক্যবদ্ধ শ্রমিক আন্দোলনের বিভেদকে তিনি মনে প্রানে ঘৃনার দৃষ্টিতে দেখতেন এবং শ্রমিক আন্দোলনে রাজনৈতিক সংকীর্ণতার উর্ব্ধে ছিলেন সবসময়।

৭ নভেম্বর ২০১০ রবিবার (২৩ কার্তিক ১৪১৭ বাংলা) কমরেড আবুল বাশার চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যুবরণ করেন।

এ সংক্রান্ত আরও সংবাদ