লাউয়াছড়া খাসিয়া পুঞ্জির শিক্ষার্থীরা পেল নতুন বিদ্যালয় ও পাকা সিঁড়ি

প্রকাশিত: ৭:৪৫ অপরাহ্ণ, নভেম্বর ৯, ২০২৩

লাউয়াছড়া খাসিয়া পুঞ্জির শিক্ষার্থীরা পেল নতুন বিদ্যালয় ও পাকা সিঁড়ি

সাজু মারছিয়াং (শ্রীমঙ্গল, মৌলভীবাজার), ০৯ নভেম্বর ২০২৩ : সকাল থেকেই বইছিল লাউয়াছড়া খাসিয়া পুঞ্জির শিশুদের মাঝে উৎসবের আমেজ। একে একে আসতে শুরু করেছেন পুঞ্জি সংলগ্ন লেবু বাগানের শিশুরাও। নতুন পোশাক পরে সবাই উপস্থিত বিদ্যালয় প্রাঙ্গণে নতুন বিদ্যালয় উদ্বোধনের অপেক্ষায়। অবশেষে শিশুদের অপেক্ষার অবসান হলো দুপুরে। অতিথিরা রঙ্গীন ফিতা কাটার পরপরেই একে একে সবাই প্রবেশ করলো নতুন বিদ্যালয়ের নতুন এক পরিবেশে।

মৌলভীবাজারের শ্রীমঙ্গলের লাউয়াছড়া খাসিয়া পুঞ্জির শিশুদের জন্য ইউটিউব ভিত্তিক চ্যানেল ‘ইনফো হান্টার’-এর উদ্যোগে একটি কমিউনিটি প্রাথমিক বিদ্যালয় ও স্কুলে যাওয়ার রাস্তার টিলায় ১০০ ফুট উচু একটি পাকা সিঁড়ি নির্মাণ করা হয়েছে।

বৃহস্পতিবার (৯ নভেম্বর ২০২৩) দুপুর সাড়ে ১২টায় অতিথিদের নিয়ে কমিউনিটি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের নতুন ঘরের উদ্বোধন করা হয়। এর আগে ‘দরজা জানালা বিহীন’ জরাজীর্ণ স্কুল ঘরটি লাউয়াছড়া খাসিয়া পুঞ্জির শিশুদের পড়াশোনার দুর্ভোগের কথা সম্প্রতি ভিডিওতে প্রকাশ করে ইউটিউবভিত্তিক চ্যানেল ইনফো হান্টার (Info Hunter)। তাদের ফেসবুক পেজেও ভিডিওটি প্রচার করা হয়।

সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভিডিও প্রচারের পর ওই ভিডিও দেখে দুর্ভোগ লাঘবে স্কুল ঘরটি সহ পাকা সিঁড়ি নির্মানে মানবিক সহায়তায় এগিয়ে আসেন কানাডা প্রবাসী ইমন খাঁন সহ জার্মান, লন্ডন, আমেরিকায় বসবাসরত নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ৩ জন ব্যক্তি। তাদের সহায়তায় লাউয়াছড়া খাসিয়া পুঞ্জির দীর্ঘদিনের অপেক্ষার অবসান ঘটে। এ বিদ্যালয়ে লাউয়াছড়া খাসিয়া পুঞ্জির শিক্ষার্থী ছাড়াও বন সংলগ্ন লেবু বাগানের ১০টি পরিবারের শিশুরা সহ মোট ৪০ জন শিক্ষার্থী নিয়মিত পাঠদান করছে। কমিউনিটি এই বিদ্যালয়ে ২ জন নিয়মিত শিক্ষক দ্বারা পাঠদান হয়ে আসছে। ১ জন নিজস্ব খাসি মাতৃভাষা ও ১ জন বাংলা মাধ্যেমে পাঠদান করাচ্ছেন শিক্ষার্থীদের।

বৃহস্পতিবার সকালে উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন ইউটিউব চ্যানেল ইনফো হান্টারের পরিচালক সাকিবুর রহমান, ব্যবসায়ী সৈয়দ ইশতিয়াক বাবেল, আসাদুর রহমান, খাসি সোশ্যাল কাউন্সিলের সাধারণ সম্পাদক ফিলা পতমী, তথ্য ও প্রচার সম্পাদক সাজু মারছিয়াং, প্রথম আলো শ্রীমঙ্গল প্রতিনিধি শিমুল তরফদার, দৈনিক বাংলা জেলা প্রতিনিধি সালাউদ্দিন শুভ সহ প্রমুখ। এসময় ‘ইনফো হান্টারের’ পক্ষ থেকে ৪০ জন শিক্ষার্থীদের মাঝে ১টি করে স্কুল ব্যাগ, পেন্সিল বক্স, খাতা, রং পেন্সিল, চকলেট তাদের হাতে তুলে দেন আমন্ত্রিত অতিথিরা।

স্থানীয় খাসি অভিভাবক ইতি সুঙ জানান, কয়েকবছর ধরে আমাদের স্কুল ঘরটি জরাজীর্ণ ও ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় ছিল, ঝড় তুফানের সময় আমাদের ছেলে মেয়েরা নিয়মিত ক্লাস করতে পারতো না, অনেকদূর শহরে বাচ্চাদের নিয়ে পড়াশোনা করানো আমাদের জন্য সমস্যা ছিল। আমরা একদিন নিয়ে গেলে বাকি ৫ দিন নিয়ে যেতে পারতাম না। টাকাপয়সা ও দূরবর্তী থাকায় এই সমস্যা ছিল। সম্প্রতি ইনফো হান্টার চ্যানেলের পরিচালক সাকিবুর রহমান ভাই আমাদের স্কুলের সমস্যা নিয়ে ইউটিউবে ভিডিও প্রকাশ করেন । এতে করে অনেক ভাই আমাদের সমস্যা বুঝতে পারেন। সাকিবুর ভাইয়ের কারণে আজ আমরা স্কুলটি পেয়েছি। আমাদের দীর্ঘদিনের কষ্টের অবসান ঘটলো।

নবনির্মিত এই স্কুলের নিয়মিত শিক্ষক সামসুন্নাহার ও এলটি তংপের জানান, এখানে কমিউনিটি স্কুলটি হওয়ার পর আমাদের নিয়োগ দিয়েছেন লাউয়াছড়া খাসিয়া পুঞ্জির নেতৃবেৃন্দরা। আমরা দুজন শিক্ষক পাঠদান করাই। একজন বাংলা মাধ্যেমে ও একজন খাসি নিজস্ব ভাষার ক্লাস নিচ্ছি।

এ বিষয়ে ইনফো হান্টারের পরিচালক সাকিবুর রহমান বলেন, ‘আমি যখন আমার ইউটিউব ও পেজে এটা আপলোড দিই, তখন লাখ লাখ মানুষ দেখেছে। তাদের দীর্ঘদিনের ১টা প্রাথমিক স্কুলের জন্য। পরে ভাবলাম একটা স্কুলের ব্যবস্থা করে দেব। আমার ভিডিও দেখে অনেকে সাড়া দেন। এর মধ্যে ৪জনের সহযোগীতায় আমি স্কুলের ব্যবস্থা করে দিই। তাদের দীর্ঘদিনের সমস্যার কিছুটা হলেও অবসান ঘটলো। স্কুলটা করতে প্রায় আড়াই লক্ষ টাকা লেগেছে। সব টাকাই বিদেশী ৪ জন বন্ধুর মাধ্যমে পাই।
তিনি আরও বলেন, অন্যান্য পুঞ্জিগুলোকে এভাবে সহযোগিতা করব। আমার মানবিক ভাইদের সহযোগিতায় এই কাজগুলো ধারাবাহিকভাবে করে যাব।

খাসি সোশ্যাল কাউন্সিলের সাধারণ সম্পাদক ও লাউয়াছড়া পুঞ্জির মান্রী, ফিলা পতমী বলেন, স্কুলের জন্য স্থানীয় উপজেলা প্রশাসনের কাছে অনেকবার গিয়েছি কেউ আমাদের সহায়তায় এগিয়ে আসেনি। আজ সাকিবুর রহমান ভাইয়ের মাধ্যমে আমাদের বাচ্চারা স্কুল পেয়েছে উনাকে সহ স্কুলটি নির্মানে মানবিক সহায়তায় যারা এগিয়ে এসেছেন সে ৪ জন ভাইদেরকে আমার খাসিয়া পুঞ্জির সবার পক্ষ থেকে ধন্যবাদ জানাচ্ছি। উনাদের এ মানবিকতার কথা আমরা সারাজীবন স্বরনে রাখব।

এ সংক্রান্ত আরও সংবাদ