কোন কিছুর তোয়াক্কা না করা একজন অদম্য নারী

প্রকাশিত: ১:০০ পূর্বাহ্ণ, নভেম্বর ২২, ২০২৩

কোন কিছুর তোয়াক্কা না করা একজন অদম্য নারী

তমালিকা কর্মকার |

আমি একজন রানুকে চিনি –

সংগ্রামী একটা মেয়ে, মাত্র নয় বছর বয়সে বাবাকে হারিয়ে জীবনের সাথে, পরিবার পরিজনদের সাথে সংগ্রাম করে শুধু পড়াশোনাটা করতে চেয়েছে। হাজারো বাঁধা, অভাব, আশেপাশের মানুষের বাঁকা চাহনি কোন কিছুর তোয়াক্কা না করা একজন অদম্য নারীকে দেখেছি।

আমার সাথে আলাপ হয় ২০১৩ সালে, একটা পাতলা লিকলিকে, শ্যামা গায়ের রঙ, কথায় গেঁয়ো টান, তবে রাঢ়াঙ দেখেছে। সে থিয়েটার করতে চায় আমার কাছে যখন বলে তখন ওর চোখের যে ভাষায় কথা বলেছে সেখানে কোন হেয়ালি দেখিনি। ১৯৯২ সাল থেকে আমি আরণ্যক করি দীর্ঘ এ যাত্রায় কাউকে আমার রেফারেন্সে কর্মশালায় পাঠিয়েছি বলে মনে পরে না।তবে হ্যাঁ একমাত্র রানুকে আমি রেফার করি এবং এ নিয়ে রানু ও আমাকে বহুবার ডিরেক্টলি, ইনডিরেক্টলি বিদ্রুপের মুখোমুখি হতে হয়েছে।

যে রানুর থিয়েটার সম্পর্কে কোন জ্ঞান নেই, তাল লয় কোন কিছু ঠিক করে করতে পারে না তাকে একটু একটু করে নিজের সাথে নিজে যুদ্ধ করতে দেখেছি।হাফবিটের সমস্যা থাকায় ৫/৬ টা শো কস্টিউমস পরিয়ে উইঙ্গসের পাশে দাঁড় করিয়ে রেখেছি।কোরিওগ্রাফি মোটামুটি ঠিক না হওয়া পর্যন্ত শো করতে দেই নি।

এরপরও ছোটখাটো ভুল হলে সবার আগে আমি মেজাজ দেখিয়েছি, এটাও সত্যি অনেক সময় রানু কেঁদেছে আমার কথায়, সিনিয়রদের কথায়।
এটা রানুর একটা দিকের কথা বললাম, ওদের পরিবারের কেউ তেমন শিক্ষিত নয়, একটা অজপাড়াগাঁ থেকে এসে নাগরিক জীবনের সাথে খাপখাওয়ানো অনেকটাই কষ্টের। অর্থোকষ্টে থেকেও কখনো কারো কাছে হাত পাততে দেখিনি, অসুস্থ মাকে নিয়ে একা লড়তে দেখেছি, ছোট ভাইকে পড়াশোনা করানোর জন্য কতোটা ত্যাগ করেছে তা দেখেছি।

সব চেয়ে ভালো লেগেছে মামুনুর রশীদের প্রতি অপার শ্রদ্ধা ও ডেডিকেশন।

ইচ্ছে করলেই নায়িকা হতে পারতো, আজকাল যারা দলে আসেই নায়িকা হওয়ার জন্য সেই কথাও বলেছিলাম রানুর মনের কথা জানার জন্য এরপর সে প্রতিউত্তরে বলেছিলো” আমি জানি জোর করে অভিনয় হয় না, আর আমি নায়িকা হতে চাই না, আমি লিখতে চাই, বেঁচে থাকতে চাই লেখার মাধ্যমে ‘
কথাগুলো শুনে মনে হলো আসলেই তো আমরা জানি না যে শুধু মঞ্চে দাঁড়িয়ে পটপট ডায়লগ বললেই অভিনয় হয় না।

প্রতিটি মানুষের যে সীমাবদ্ধতা আছে তা অনেকেই স্বীকার করতে পারে না।

রানুকে মাত্রায় কাজ করতে দেখেছি নিষ্ঠা নিয়ে, (আফজাল হোসেন) ভাই ওর কবিতার বইয়ের প্রচ্ছদ করে দিয়েছে এটা সবার ক্ষেত্রে সম্ভব নয় –

রানুর এই কনভোকেশনের ছবি দেখে গর্বে বুকটা ভরে গেছে কারণ যে মেয়ের ইন্টারমেডিয়েট পরীক্ষার সময় তার ভাই বই পুড়িয়ে ফেলেছে সে দমে না থেকে আজ মাস্টার্স পাশ করেছে –

এতে করে আমাদের মতো নাগরিক জীবনের মানুষের মতো সুযোগ আর পরিবেশ পেলে হয়তো আরও অনেক অনেক এগিয়ে যেতো-

ভালো থাকিস fighter
#
তমাদি

এ সংক্রান্ত আরও সংবাদ