রক্তে রাঙ্গানো ফেব্রুয়ারি ভাষার মাস শুরু

প্রকাশিত: ১:১২ পূর্বাহ্ণ, ফেব্রুয়ারি ১, ২০২৪

রক্তে রাঙ্গানো ফেব্রুয়ারি ভাষার মাস শুরু

Manual5 Ad Code

নিজস্ব প্রতিবেদক | ঢাকা, ০১ ফেব্রুয়ারি ২০২৪ : ‘আমার ভাই এর রক্তে রাঙ্গানো একুশে ফেব্রুয়ারি আমি কি ভুলিতে পারি’- রক্তে রাঙ্গানো ফেব্রুয়ারি মাস, ভাষা আন্দোলনের মাস শুরু হয়েছে আজ।

এ দিন থেকে ধ্বনিত হবে সেই অমর সংগীতের অমিয় বাণী। বাঙ্গালী জাতি পুরো মাস জুড়ে ভালোবাসা জানাবে ভাষা শহীদদের প্রতি। ভাষার অধিকার প্রতিষ্ঠার সংগ্রামে ফেব্রুয়ারি ছিল ঔপনিবেশিক প্রভুত্ব ও শাসন-শোষণের বিরুদ্ধে বাঙালির প্রথম প্রতিরোধ এবং জাতীয় চেতনার প্রথম উন্মেষ।

১৯৫২ সালের একুশে ফেব্রুয়ারি রাষ্ট্র ভাষা বাংলার দাবিতে দুর্বার আন্দোলনে সালাম, জব্বার, শফিক, বরকত ও রফিকের রক্তের বিনিময়ে বাঙালি জাতি পায় মাতৃভাষার মর্যাদা এবং আর্থ-সামাজিক ও রাজনৈতিক প্রেরণা। তারই পথ ধরে শুরু হয় বাঙালির স্বাধীকার আন্দোলন এবং একাত্তরে নয় মাস পাকিস্তানী বাহিনীর বিরুদ্ধে সশস্ত্র যুদ্ধের মধ্য দিয়ে অর্জিত হয় স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশ।

বস্তুত ফেব্রুয়ারি মাস এক দিকে শোকাবহ হলেও অন্য দিকে আছে এর গৌরবোজ্জ্বল অধ্যায়। কারণ পৃথিবীর একমাত্র জাতি বাঙালি, যারা নিজেদের ভাষার জন্য এ মাসে জীবন দিয়েছিল।

আদি বাঙালির সাংস্কৃতিক ও আর্থ-সামাজিক জীবন এবং ক্রমবিকাশের চূড়ান্ত পর্যায়ে এসে বাঙালির শৌর্য-বীর্য যেন ধপ করে জ্বলে উঠে এ মাসেই। বায়ান্নের একুশে ফেব্রুয়ারি- ফাগুণের আগুনে ভাষা আন্দোলনের দাবি আর উন্মাতাল গণমানুষের মুষ্টিবদ্ধ হাত একাকার হয়ে যায় সেদিন। ভাষার জন্য প্রথম বলীদান বিশ্ববাসী অবাক বিস্ময়ে লক্ষ্য করে। সেই থেকে শুরু হয়ে যায় বাঙালির শেকল ভাঙার লড়াই। পাকিস্তানিদের সাথে হিসেব-নিকেশের হালখাতার শুরুতেই রক্তের আঁচড় দিয়ে বাঙালি শুরু করে তার অস্তিত্বের লড়াই। পলাশীর আম্রকাননে হারিয়ে যাওয়া সেই সিরাজদ্দৌলা আবার বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান রূপে এ লড়াইয়ে সেনাপতি হিসেবে আবির্ভূত হন। ’৫২ সালে যে আগুন জ্বলেছিল রাজধানী ঢাকা শহরে সে আগুন যেন ক্রমান্বয়ে ছড়িয়ে পড়তে থাকে দেশের আনাচে-কানাচে সবখানে। যে আগুন জ্বলেছিল মোর প্রাণে, সে আগুন ছড়িয়ে গেল সবখানে সবখানে সবখানে। বাঙালির বুকের ভেতর জ্বলে উঠা আগুন যেন সহস্র বাঙালির মধ্যে প্রবাহিত হতে থাকে। যা এসে শেষ হয় একাত্তরের ১৬ ডিসেম্বর চুড়ান্ত বিজয় অর্জনের মধ্য দিয়ে। পৃথিবীর মানচিত্রে জন্ম নেয় স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশ।

নানা কর্মসূচির মধ্য দিয়ে ভাষা আন্দোলনের মাস ফেব্রুয়ারির প্রথম প্রহর শুরু হয়। কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার আবার হয়ে উঠবে জমজমাট।

আজ থেকে ফেব্রুয়ারি মাসের সবচেয়ে বড় কর্মযজ্ঞ মাসব্যাপী বইমেলা শুরু হচ্ছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বাংলা একাডেমি ও সোহরাওয়ার্দী উদ্যান প্রাঙ্গণে মাসব্যাপী দেশের বৃহত্তম অমর একুশে বইমেলা-২০২৪ উদ্বোধন করবেন।

বাংলা একাডেমির মহাপরিচালক কবি মোহাম্মদ নুরুল হুদা বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আজ বিকেল ৩টায় মেলার উদ্বোধন করবেন।’

প্রধানমন্ত্রী বাংলা একাডেমি সাহিত্য পুরস্কার-২০২৩ বিজয়ীদের পুরস্কার বিতরন করবেন। পাশাপাশি বাংলা একাডেমি প্রকাশিত ‘বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সংগৃহীত রচনা: দ্বিতীয় খন্ড’ সহ কয়েকটি বইয়ের মোড়ক উন্মোচন করবেন।

Manual4 Ad Code

বাংলা একাডেমি আয়োজিত এবারের বইমেলার প্রতিপাদ্য হচ্ছে ‘পড়ো বই, গড়ো দেশ: বঙ্গবন্ধুর বাংলাদেশ (বই পড়ো, দেশ গড়ো: বঙ্গবন্ধুর বাংলাদেশ)।’

বইমেলায় ৬৩৫টি প্রতিষ্ঠানকে মোট ৯৩৭টি স্টল বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। বাংলা একাডেমি মাঠে ১২০টি প্রতিষ্ঠানকে ১৭৩টি এবং সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে ৫১৫টি প্রতিষ্ঠানকে ৭৬৪টি স্টল বরাদ্দ দিয়েছে কর্তৃপক্ষ।

এ বছর মোট ৩৭টি প্যাভিলিয়নও বরাদ্দ দেয়া হয়েছে।

Manual7 Ad Code

গত বছর ৬০১টি প্রতিষ্ঠানের পক্ষে মোট ৯০১টি স্টল বরাদ্দ দেয়া হয়েছিল।

যে কোন ধরণের সমালোচনা এড়াতে এ বছর বাংলা একাডেমি এককভাবে মেলার সমস্ত আয়োজন সম্পন্ন করেছে উল্লেখ করে অমর একুশে গ্রন্থমেলা কমিটির সদস্য সচিব ড. কে এম মুজাহিদুল ইসলাম বলেন, ‘আগামীকাল সকালের মধ্যে প্রায় ৯৫ শতাংশ কাজ শেষ হবে’।

মুজাহিদুল ইসলাম বলেন, ‘আগের বছরগুলোতে কিছু ইভেন্ট ম্যানেজমেন্ট কোম্পানি মেলার আয়োজনে জড়িত ছিল যার ফলে গত বছর কিছুটা সমালোচনার সম্মুখীন হয়েছিল।’

মেলায় সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান ও মাসব্যাপী সেমিনারের পাশাপাশি শিশু-কিশোরদের জন্য ছবি আঁকা, সংগীত ও আবৃত্তি প্রতিযোগিতার ব্যবস্থা থাকবে।

আয়োজকরা জানিয়েছেন, ২৩ জানুয়ারি ডিজিটালাইজড লটারি সিস্টেমের মাধ্যমে পুরানো এবং নতুন তালিকাভুক্ত প্রকাশনার জন্য স্টল বরাদ্দ সম্পন্ন করা হয়েছিল।

মুজাহিদুল বলেন, বিগত বছরের মতো এবারও মেলার মূল মঞ্চ হবে বাংলা একাডেমি প্রাঙ্গণে। বইয়ের মোড়ক উন্মোচন ও ‘লেখক বলছি’ মঞ্চ সোহরাওয়ার্দী উদ্যান প্রাঙ্গণে স্থাপন করা হবে।

Manual3 Ad Code

রমনা কালী মন্দিরের পাশে সাধুসঙ্গ এলাকায় ‘শিশু চত্বর’ স্থাপন করা হয়েছে।

Manual6 Ad Code

প্রতি কর্মদিবসে বইমেলা বিকাল ৩টা থেকে রাত ৯টা পর্যন্ত এবং সরকারি ছুটির দিনে সকাল ১১টা থেকে রাত ৯টা পর্যন্ত সবার জন্য উন্মুক্ত থাকবে এবং দুপুরের খাবার ও নামাজের জন্য এক ঘণ্টা বিরতি থাকবে।

বাংলা সাহিত্যের বিভিন্ন ক্ষেত্রে উল্লেখযোগ্য অবদানের জন্য এ বছর ১১টি বিভাগে বাংলা একাডেমি সাহিত্য পুরস্কার-২০২৩ দেওয়া হবে। বিভাগগুলো হলো-: কবিতা, কথাসাহিত্য, প্রবন্ধ/গবেষণা, অনুবাদ, নাটক, শিশুসাহিত্য বিভাগ, মুক্তিযুদ্ধ, বঙ্গবন্ধু, পরিবেশ/বিজ্ঞান ক্ষেত্র, জীবনী এবং লোক কাহিনী।

পুরস্কারপ্রাপ্তরা হলেন-: শামীম আজাদ (কবিতা), ঔপন্যাসিক নুরুদ্দিন জাহাঙ্গীর ও সালমা বাণী (যৌথভাবে কথাসাহিত্যে), জুলফিকার মতিন (প্রবন্ধ/গবেষণা), সালেহা চৌধুরী (অনুবাদ), নাট্যকার মৃত্তিকা চাকমা ও মাসুদ পথিক (যৌথভাবে নাটক), তপঙ্কর চক্রবর্তী (শিশু সাহিত্য), আফরোজা পারভিন এবং আসাদুজ্জামান আসাদ (মুক্তিযুদ্ধের উপর গবেষণা), সাইফুল্লাহ মাহমুদ দুলাল এবং মো. মজিবুর রহমান (বঙ্গবন্ধুর উপর গবেষণা), পক্ষীবিদ ইনাম আল হক (পরিবেশ/বিজ্ঞান ক্ষেত্র), ইসহাক খান (জীবনী) এবং তপন বাগচী ও সুমন কুমার দাস (যৌথভাবে লোক কাহিনী)।

এদিকে ডিএমপি পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সঙ্গে বৈঠক শেষে এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়েছে, ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ (ডিএমপি) মেলার নির্বিঘœ নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে সর্বাত্মক ব্যবস্থা গ্রহণ করেছে। ডিএমপি বইমেলা মাঠের ভেতরে ও বাইরে ইউনিফর্ম ও সাদা পোশাকে পর্যাপ্ত পুলিশ মোতায়েন করবে এবং মেলার আশপাশের পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণের জন্য ওয়াচ টাওয়ার ও ফায়ার টেন্ডার স্থাপন করা হবে।

মেলার মাঠ ও এর আশপাশের এলাকা সিসিটিভি ক্যামেরা ও ড্রোন নজরদারিতে থাকবে বলে জানান ডিএমপি কমিশনার হাবীবুর রহমান।

ডিএমপি টিমগুলোকে পুরো অনুষ্ঠানস্থলে নজরদারি করার দায়িত্ব দেওয়া হবে এবং পাশাপাশি কোন ধরনের গুজব ঠেকাতে সোশ্যাল মিডিয়া মনিটর করা হবে।

এছাড়াও জাতীয় কবিতা উৎসবও শুরু হবে কাল থেকে। স্বৈরাচারের বিরুদ্ধে শৃঙ্খল মুক্তির ডাক দিয়ে ১৯৮৭ সালে শুরু হয় এ ঊৎসবের। বাংলাদেশ পথ-নাটক পরিষদ কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে আয়োজন করেছে এ পথ নাট্যউৎসবের। বিভিন্ন সামাজিক, রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠন এ মাসে বিভিন্ন অনুষ্ঠানের উদ্যোগ নিয়েছে।

এ সংক্রান্ত আরও সংবাদ

 


Manual1 Ad Code
Manual3 Ad Code