সিলেট ১লা জুলাই, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ | ১৭ই আষাঢ়, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
প্রকাশিত: ১২:২৮ পূর্বাহ্ণ, ফেব্রুয়ারি ৫, ২০২৪
নিজস্ব প্রতিবেদক | ঢাকা, ০৫ ফেব্রুয়ারি ২০২৪ : ‘সুবর্ণজয়ন্তীর অঙ্গীকার, ডিজিটাল গ্রন্থাগার’-এই প্রতিপাদ্য সামনে নিয়ে দেশব্যাপী জাতীয় গ্রন্থাগার দিবস-২০২৪ পালন করছে সরকার।
২০১৭ সালের ৩০ অক্টোবর মন্ত্রিসভার সিদ্ধান্তে এ দিনটিকে জাতীয় গ্রন্থাগার দিবস হিসেবে স্বীকৃতি দেয়া হয়। ২০১৮ সালে দেশে দিবসটি প্রথম পালিত হয়।
জাতীয় গ্রন্থাগার দিবস হিসেবে পালনের জন্য ৫ ফেব্রুয়ারি নির্ধারণ করার কারণ হলো- ১৯৫৪ সালের ৫ ফেব্রুয়ারি জাতীয় গ্রন্থাগারের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করা হয়। এর অন্য একটি কারণ হলো- ফেব্রুয়ারি মাসে বই নিয়ে দেশে বেশ আলোচনা হয়। একুশে বইমেলা, একুশে ফেব্রুয়ারি, এগুলোর সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে দিবসটি পালনের সিদ্ধান্ত নেয় সরকার।
আজ সোমবার (৫ ফেব্রুয়ারি ২০২৪) সারাদেশে জাতীয় গ্রন্থাগার দিবস পালন করা হবে।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ২০১৭ খ্রিষ্টাব্দের ৫ ফেব্রুয়ারি দিনটিকে জাতীয় গ্রন্থাগার দিবস হিসেবে ঘোষণা করেন। এর পরিপ্রেক্ষিতে প্রতি বছর ৫ ফেব্রুয়ারি জাতীয় গ্রন্থাগার দিবস হিসেবে পালন করা হয়। দেশের সব পর্যায়ের জনগণকে জাতীয় গ্রন্থাগার দিবসের তাৎপর্য সম্পর্কে সঠিকভাবে অবহিত ও সচেতনতার লক্ষ্যে সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়ের আওতাধীন গণগ্রন্থাগার অধিদফতর এবং এর আওতাধীন বিভাগীয় জেলা, উপজেলা গণগ্রন্থাগার একযোগে দিবসটি পালন করছে।
জনগণকে গ্রন্থাগারমুখী করা, পাঠাভ্যাস বাড়ানো, সমাজ গঠনের কেন্দ্রবিন্দু ও জনগণের বিশ্ববিদ্যালয় হিসেবে লাইব্রেরির ভূমিকাকে দৃঢ় করাই জাতীয় গ্রন্থাগার দিবসের লক্ষ্য।
দেশব্যাপী নানা আয়োজনে দিবসটি উদযাপন করছে সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়। রাজধানীর শাহবাগে গণগ্রন্থাগার অধিদপ্তর প্রাঙ্গণে দিবসের উদ্বোধনী আয়োজনের সূচনা হবে বেলা ১১টায়।
দ্বিতীয় পর্বে, সাড়ে ১১টায় ‘স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তীতে জাতীয় গন্থাগার দিবস উদযাপনের তাৎপর্য’ শীর্ষক আলোচনা অনুষ্ঠিত হবে অধিদপ্তরের শওকত ওসমান স্মৃতি মিলনায়তনে।
সভায় স্বাগত বক্তব্য দেবেন গণগ্রন্থাগার অধিদপ্তরের মহাপরিচালক মো. আবুবকর। সভাপতিত্ব করবেন সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়ের সচিব মো. আবুল মনসুর।
প্রধান অতিথি থাকবেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল। বিশেষ অতিথি থাকবেন সংস্কৃতি প্রতিমন্ত্রী কেএম খালিদ এমপি ও সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি সিমিন হোসেন রিমি এমপি।
মূল আলোচক থাকবেন বাংলাদেশ সংবাদ সংস্থা পরিচালনা বোর্ড চেয়ারম্যান ও বাংলাদেশ জাতীয় জাদুঘর ট্রাস্টি বোর্ড সভাপতি আ আ ম স আরেফিন সিদ্দিক। তৃতীয় পর্বে থাকবে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান।
দিবসটি উপলক্ষ্যে রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পৃথক বাণী দিয়েছেন। রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন তার বাণীতে বলেন, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিুবর রহমানের স্বপ্নের সোনার বাংলা বিনির্মাণে প্রয়োজন একটি সুশিক্ষিত ও আধুনিক চিন্তা-চেতনায় সমৃদ্ধ জ্ঞানভিত্তিক জাতি।
সরকার দেশের এক হাজার গ্রন্থাগারে ‘বঙ্গবন্ধু ও মুক্তিযুদ্ধ কর্নার স্থাপন গ্রকল্প’ বাস্তবায়ন করছে। এটা মহান মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস এবং জাতির পিতার জীবন ও কর্ম শিশু-কিশোরদের মাঝে ছড়িয়ে দিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তার বাণীতে বলেন, তথ্য প্রযুক্তির অভাবিত উন্নয়নস্রোতে পরিবর্তনের নতুন ধারার বাস্তবায়নে উন্নয়ন প্রকল্পের মাধ্যমে বর্তমান আওয়ামী লীগ সরকার গ্রন্থাগারের অবকাঠামোগত সুযোগ-সুবিধা বৃদ্ধি করছে, পাশাপাশি গ্রন্থাগারগুলোকে ডিজিটালাইজেশনের জন্য প্রকল্প বাস্তবায়নের উদ্যোগ নিয়েছে।
গ্রন্থাগার সংগঠক এমদাদ হোসেন ভূঁইয়া বলেন, গ্রন্থাগারের উন্নয়নে সংস্কৃতি মন্ত্রণালয় গণগ্রন্থাগার অধিদপ্তর ও জাতীয় গ্রন্থকেন্দ্রের মাধ্যমে কাজ করছে।
কিন্তু টেকসই উন্নয়নের লক্ষ্যে বেসরকারি গ্রন্থাগারগুলোর ‘এমপিওভুক্তি’র দাবিও ক্রমশ জোরালো হচ্ছে। এর বিকল্প নেই। বিষয়টি ২০১৯ সালে মহান জাতীয় সংসদে উঠেছে। দেশে সরকারি গণগ্রন্থাগার ৭১টি ও বেসরকারি গ্রন্থাগার আছে প্রায় দুই হাজার।
গণগ্রন্থাগার অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী জেলা, উপজেলা পর্যায়ে এখন মোট গণগ্রন্থাগারের সংখ্যা ৭১টি। সুফিয়া কামাল জাতীয় গণগ্রন্থাগারের বইয়ের সংখ্যা প্রায় ২ লাখ ৯ হাজার। ৫৮ জেলায় মোট বইয়ের সংখ্যা প্রায় ১৭ লাখ ৩৭ হাজার। সুফিয়া কামাল জাতীয় গণগ্রন্থাগারে প্রতিদিন ৩ হাজার ৩৬০ জন পাঠক আসেন। অন্যদিকে জেলা পাঠাগারগুলো দৈনিক ব্যবহার করছেন প্রায় ২ লাখ ৭৬ হাজার পাঠক।
দিবসটি উদযাপনের মাধ্যমে দেশের সকল সরকারি-বেসরকারি গ্রন্থাগার, শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে বিদ্যমান গ্রন্থাগার, এনজিও পরিচালিত গ্রন্থাগার ইত্যাদির মধ্যে একটি কার্যকর এবং ফলদায়ক সমন্বয়ের সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে। এরূপ সমন্বয়ের ফলে বাংলাদেশের গ্রন্থাগার সেবার মান ও কার্যকারিতা দু-ই আরও বৃদ্ধি পেয়েছে। সভ্যতাকে টিকিয়ে রাখতে হলে গ্রন্থাগারগুলোকে টিকিয়ে রাখতে হবে। গ্রন্থাগার হচ্ছে সভ্যতার বাহন। দিবসটি ঘিরে সারা দেশের গ্রন্থ ও গ্রন্থাগার অঙ্গনগুলো নানামুখী কর্মকাণ্ডে মুখর থাকে। দিবসটির তাৎপর্য তুলে ধরে রাজধানী ঢাকাসহ সব জেলায় সকালে শোভাযাত্রা ও বিকেলে সেমিনার, সিম্পোজিয়াম, পাঠচক্র, সাংষ্কৃতিক অনুষ্ঠান হয়।
বেসরকারি পর্যায়ে বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্র ৯০ লাখ ছাত্রছাত্রীকে বই পড়াচ্ছে। চার হাজার স্কুলে যেখানে কোনো লাইব্রেরি ছিল না, লাইব্রেরি করেছে বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্র। এ ছাড়া আরও দুই হাজার বিদ্যালয়ে বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্র লাইব্রেরি স্থাপন করেছে। ব্র্যাক শিক্ষা কর্মসূচি প্রায় তিন হাজার গণকেন্দ্র ও পাঁচ হাজার কিশোর-কিশোরী ক্লাবের মাধ্যমে লাইব্রেরি কার্যক্রম পরিচালনা করে, দেশব্যাপী প্রায় ১৪ লাখ পাঠক-পাঠিকা তৈরি করেছে। এসব কেন্দ্রে বছরব্যাপী বিভিন্ন ধরনের কর্মকাণ্ড পরিচালিত হয়। জ্ঞান ও তথ্য জনগণের কাছে পৌঁছে দেওয়ার জন্য ব্রিটিশ কাউন্সিল সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে যৌথভাবে পরিচালনা করছে লাইব্রেরিজ আনলিমিটেড’ কর্মসূচি। জাতীয় গ্রন্থাগার দিবস ঘোষণার মাধ্যমে সরকারি–বেসরকারি সব পর্যায়ের গ্রন্থাগার–সংক্রান্ত কার্যাবলি আরও বেগবান হচ্ছে।
গ্রন্থাগারগুলোতে পাঠকের বয়স অনুযায়ী বইয়ের সংখ্যা বৃদ্ধি করা, চিত্তবিনোদেনর ব্যবস্থা করা ও বই পড়ার প্রতি মানুষের আগ্রহ সৃষ্টি করার জন্য পাঠক ফোরাম, বই প্রদর্শনীর আয়োজন করা হচ্ছে। আগামী দিনে সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়ের উদ্যোগে জাতীয় গণগ্রন্থাগার কর্তৃপক্ষ সমগ্র দেশে বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্রের মতো জ্ঞানের আলো ছড়িয়ে দেওয়ার জন্য ব্যাপক কর্মসূচি গ্রহণ করবে।
যে পরিবারে গ্রন্থাগার আছে, তা ওই পরিবারে এক ধরনের আলাদা জ্যোতি ছড়ায়। ওই পরিবারে অসামাজিক ও জঙ্গিবাদী কাজ হতে পারে না। প্রতিটি সচেতন পরিবারেরই উচিত একটি পারিবারিক লাইব্রেরি প্রতিষ্ঠা করা। শিশুদের বই পড়ায় উদ্বুদ্ধ করা। ছোট হলেও প্রতিটি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে গ্রন্থাগার চালু করা উচিত। প্রতিটি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে গ্রন্থাগার আছে কি না, থাকলে চালু আছে কি না, শিক্ষার্থী ও শিক্ষকেরা তা পড়েন কি না ইত্যাদি বিষয়ে খোঁজখবর রাখতে হবে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের।
দুঃখের বিষয়, অনেক বিদ্যালয়ের শিক্ষক, প্রধান শিক্ষক এবং অনেক অভিভাবক বলে থাকেন, বাইরের বই পড়ে সময় নষ্ট করার সময় নেই আমাদের শিক্ষার্থীদের। কলেজ পর্যায়েও বই পড়া, প্রতিষ্ঠানে গ্রন্থাগার স্থাপন ও সচল রাখার ওপর গুরুত্ব দিতে হবে। শিক্ষার্থীদের যদি আমরা সঠিক জ্ঞানের রাজ্যে নিয়ে যেতে পারি, বই পড়ার মধ্যে ডুবিয়ে রাখতে পারি, তাহলে তাদের আত্মা পরিশুদ্ধ হবে, তারা জঙ্গিবাদে জড়াবে না, ইভ টিজিং করবে না, মাদকাসক্ত হবে না, হাতে হকিস্টিক আর পিস্তল নিয়ে প্রতিপক্ষকে তাড়া করবে না। বই পড়লে তারা আলোয় উদ্ভাসিত হবে, অন্যায় করবে না। তাদের মনের দিগন্ত প্রসারিত হবে। তাদের পরিচয় করিয়ে দিতে হবে বিশিষ্ট লেখক ও মহামানবদের সঙ্গে। আর সেটি সম্ভব বই পড়ার মাধ্যমে। বই পড়েই তারা বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের সোনার বাংলা গড়তে পারবে, দেশকে ভালোবাসতে শিখবে।
গ্রন্থাগারের উন্নয়নে ৩৫০ কোটি টাকা ব্যয়ে গণগগ্রন্থাগার অধিদপ্তরের চারটি প্রকল্প চলমান রয়েছে। ২০২১ সাল নাগাদ এগুলোর কাজ শেষ হবে। এ ছাড়া গণগ্রন্থাগার অধিদপ্তরের তিনটি প্রকল্প প্রক্রিয়াধীন।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন গ্রন্থাগারবান্ধব সরকার দেশের জনগণকে আরও জ্ঞানমনস্ক করতে গ্রন্থাগারগুলোর সক্ষমতা অব্যাহতভাবে বৃদ্ধি করে চলেছেন। এ লক্ষ্যে গৃহীত প্রকল্পগুলোর মধ্যে ছয় জেলায় লাইব্রেরি ভবন তৈরি হয়েছে। চট্টগ্রাম মুসলিম ইনস্টিটিউট সাংস্কৃতিক কমপ্লেক্স নির্মাণ, অনলাইনে গণগ্রন্থাগারগুলোর ব্যবস্থাপনা ও উন্নয়ন, দেশব্যাপী ভ্রাম্যমাণ লাইব্রেরি পরিচালনা, ব্রিটিশ কাউন্সিলের লাইব্রেরিজ আনলিমিটেড শীর্ষক অনুমোদিত প্রকল্পের বাস্তবায়ন পুর্ণোদ্যমে এগিয়ে চলেছে।
বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর গ্রন্থাগার সম্পর্কে বলেছেন, ‘এখানে ভাষা চুপ করিয়া আছে, মানবাত্মার অমর আলোক কালো অক্ষরের শৃঙ্খলে বাঁধা পড়িয়া আছে। বই হচ্ছে অতীত আর বর্তমানের মধ্যে বেঁধে দেয়া সাঁকো।’
ডক্টর মুহম্মদ শহীদুল্লাহ বলেন, জীবনে তিনটি জিনিসের প্রয়োজন বই, বই এবং বই।
ভারতের সাবেক রাষ্ট্রপতি এ পি জে আবদুল কালাম বলেন, একটি বই একশটি বন্ধুর সমান, কিন্তু একজন ভালো বন্ধু, পুরো একটি লাইব্রেরির সমান। দেকার্তে বলেন, ভালো বই পড়া মানে গত শতাব্দীর সেরা মানুষদের সঙ্গে কথা বলা।
অস্কার ওয়াইলড বলেন, একজন মানুষ ভবিষ্যতে কী হবেন, সেটি অন্য কিছু দিয়ে বোঝা না গেলেও তার পড়া বইয়ের ধরন দেখে, তা অনেকাংশেই বোঝা যায়।
মনীষীদের এই উক্তিগুলো থেকে খুব সহজেই বোঝা যায়, উন্নত জাতি গঠনে গ্রন্থ এবং গ্রন্থাগারের গুরুত্ব অপরিসীম।
এ বছর বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবার্ষিকী উপলক্ষে সরকারঘোষিত মুজিব বর্ষে দিবসটির তাৎপর্য আরও বেড়ে গেছে। বঙ্গবন্ধু আমাদের মধ্যে নেই, কিন্তু তাঁর আদর্শ, তাঁর দর্শন, চিন্তাচেতনা, উদ্যোগ—সবই লিপিবদ্ধ আছে বইয়ের পাতায়। সেখান থেকেই নতুন প্রজন্ম জানতে পারছে সবকিছু। যে জাতি তার ইতিহাস জানে না, তারা সামনের দিকে এগিয়ে যেতে পারে না। তাই সামনে এগোতে প্রকৃত ইতিহাস জানতে হবে, আর ইতিহাসের সেই গল্প লেখা আছে বইয়ে, আর সেই বই সংরক্ষিত আছে গ্রন্থাগারে। সুতরাং জাতীয় গ্রন্থাগার দিবসে গ্রন্থ, গ্রন্থাগার এবং গ্রন্থাগারিকতা শব্দগুলো একই সঙ্গে উচ্চারিত হচ্ছে গুরুত্বের নিয়ে। আমরা জানি, যে জাতির গ্রন্থাগার যত সমৃদ্ধ, সে জাতি তত উন্নত। তাই জাতীয় গ্রন্থাগার দিবস উদ্যাপনের মাধ্যমে, আমরা সুন্দর আগামী প্রজন্ম গড়ে তুলতে পারব—এই হোক আমাদের সবার প্রত্যাশা।
গণগ্রন্থাগার অধিদফতরের মহাপরিচালক আবু বক্কর সিদ্দিক জানান, জাতীয় গ্রন্থাগার দিবস উপলক্ষে এর তাৎপর্য ও গুরুত্বের ওপর এক বিশেষ আলোচনা সভা ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান আয়োজন করা হবে।
দিবসটি উপলক্ষে জাতীয় পর্যায়ের পাশাপাশি জেলা সরকারি গণগ্রন্থাগারসমূহে রচনা, চিত্রাংকন ও বইপাঠ প্রতিযোগিতাসহ বিভিন্ন অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছে।
উল্লেখ্য, কেন্দ্রীয়ভাবে অনুষ্ঠান পালনের পাশাপাশি জেলা প্রশাসন, বাংলা একাডেমি, জাতীয় গ্রন্থকেন্দ্র, কবি নজরুল ইনস্টিটিউট, বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমি, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, বাংলাদেশ গ্রন্থাগার সমিতি, বাংলাদেশ গ্রন্থাগারিক ও তথ্যায়নবিদ সমিতি, বেসরকারি গণগ্রন্থাগার সমিতি, বিভিন্ন পাবলিক ও বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের লাইব্রেরির পেশাজীবী, ইসলামি ফাউন্ডেশন ও ব্র্যাকসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান একযোগে দিবসটি পালন করবে।
শ্রীমঙ্গলে বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্রের চারদিনব্যাপী ভ্রাম্যমাণ বইমেলা
শ্রীমঙ্গল উপজেলা প্রশাসনের সার্বিক সহযোগিতায় বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্রের চারদিনব্যাপী বইমেলা শুরু হয়েছে।
শনিবার (৩ ফেব্রুয়ারি ২০২৪) বেলা ১২টায় শ্রীমঙ্গলস্থ জেলা পরিষদ অডিটোরিয়াম ও আধুনিক ডাকবাংলো প্রাঙ্গণে বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্র কর্তৃক পরিচালিত ভ্রাম্যমাণ এই বইমেলার উদ্বোধন করেন ভিক্টোরিয়া উচ্চ বিদ্যালয়ের অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষক, কবি ও প্রাবন্ধিক দ্বীপেন্দ্র ভট্টাচার্য।
ভ্রাম্যমাণ বইমেলার উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে অতিথি হিসেবে বক্তব্য দেন মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক গবেষক, বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্রের সংগঠক, সাপ্তাহিক নতুন কথা’র বিশেষ প্রতিনিধি, আরপি নিউজের সম্পাদক ও বিশিষ্ট কলামিস্ট কমরেড সৈয়দ আমিরুজ্জামান; শ্রীমঙ্গল প্রেসক্লাবের সভাপতি বিশ্বজ্যোতি চৌধুরী, ছড়াকার ও অধ্যাপক অনিরুদ্ধ সেনগুপ্ত, লেখক ও অধ্যাপক অবিনাশ আচার্য, চারুকলা ইন্সটিটিউটের পরিচালক ও চিত্রশিল্পী মিহির ভৌমিক, লেখক ও সাংবাদিক আতাউর রহমান কাজল, আবৃত্তি প্রশিক্ষক ও লেখক বিকাশ দাশ বাপ্পন, এশিয়ান টিভির প্রতিনিধি ও সমাজকর্মী এস কে দাশ সুমন, সাংবাদিক দেওয়ান মাসুকুর রহমান, সাংবাদিক আফজাল হোসেন, বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্রের ভ্রাম্যমাণ বইমেলার ইনচার্জ দেবজ্যোতি মন্ডল, ভ্রাম্যমাণ বইমেলার সংগঠক দেবাশীষ বড়াল ও ভ্রাম্যমাণ বইমেলার বিক্রয় প্রতিনিধি মো. সোহেল সরকার প্রমুখ।
চারদিনব্যাপী বইমেলা’র সফলতা কামনা করে উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে অতিথির বক্তৃতায় মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক গবেষক, বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্রের সংগঠক, সাপ্তাহিক নতুন কথা’র বিশেষ প্রতিনিধি, আরপি নিউজের সম্পাদক ও বিশিষ্ট কলামিস্ট কমরেড সৈয়দ আমিরুজ্জামান বলেন, “আলোকিত মানুষ গড়ার স্বপ্ন নিয়ে স্বপ্নদ্রষ্টা অধ্যাপক আবদুল্লাহ আবু সায়ীদের হাত ধরেই সত্তর দশকের শেষের দিকে প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্র। হাটি হাটি পা পা করে ৪৫ বছর পূর্ণ হয়েছে তার। স্বাধীন, প্রজ্ঞাসম্পন্ন, চিন্তাশীল ও সৃজনশীল মূল্যবোধসম্পন্ন, শক্তিশালী মানুষ তৈরির লক্ষ্যেই বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্র ৪৫ বছর থেকে কাজ করছে। সাহিত্য, দর্শন, বিজ্ঞান, রাজনীতি, অর্থনীতি, সমাজবিদ্যাসহ বিশ্বজ্ঞানের শ্রেষ্ঠ বইগুলোর পঠন-পাঠন এই কাজের অন্তর্ভুক্ত।
বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্র কোনো গৎ-বাঁধা, ছক-কাটা, প্রাণহীন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান নয়, বরং একটি সপ্রাণ সজীব পরিবেশ- জ্ঞান ও জীবন সংগ্রামের ভেতর দিয়ে পূর্ণতর মনুষ্যত্বে ও উন্নততর আনন্দে জেগে ওঠার এক অবারিত পৃথিবী। এক কথায়, যাঁরা সংস্কৃতিবান, কার্যকর, ঋদ্ধ মানুষ- যাঁরা অনুসন্ধিৎসু, সৌন্দর্যপ্রবণ, সত্যান্বেষী; যাঁরা জ্ঞানার্থ, সক্রিয়, সৃজনশীল ও মানবকল্যাণে সংশপ্তক ‘বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্র; তাঁদের পদপাতে, মানসবাণিজ্যে, বন্ধুতায়, উষ্ণতায় সচকিত একটি অঙ্গন।
মানুষের মধ্যে বই পড়ার অভ্যাস গড়ে তোলা এবং বিভিন্নবিষয়ক জ্ঞান ও রুচিশীল সংস্কৃতিচর্চার মাধ্যমে প্রগতিশীল চিন্তাচেতনার বিকাশ ঘটানো এর উদ্দেশ্য। আর তাই এর ৪৫ বছর পূর্তি উৎসব আয়োজন বর্ণাঢ্য ও উৎসবমূখর হোক, সেই প্রত্যাশা করছি।
৩ ফেব্রুয়ারি থেকে ৬ ফেব্রুয়ারি ২০২৪ পর্যন্ত শ্রীমঙ্গলস্থ জেলা পরিষদ অডিটোরিয়াম ও আধুনিক ডাকবাংলো প্রাঙ্গণে আয়োজিত বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্রের চারদিনব্যাপী বইমেলায় জ্ঞানপিপাসু প্রতিটি মানুষের অবারিত অংশগ্রহণে আলোকিত মানুষ’ গড়ার আন্দোলন তরান্বিত হোক।”
অনুষ্ঠানে উপস্থিতির জন্য সকলকে ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা জানিয়ে বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্রের ভ্রাম্যমাণ বইমেলার ইনচার্জ দেবজ্যোতি মন্ডল বলেন, বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্রের ‘আলোকিত মানুষ’ গড়ার আন্দোলনের অংশ হিসেবে সারাদেশজুড়ে জ্ঞানপিপাসু প্রতিটি মানুষের হাতে পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ বইগুলো নিরন্তরভাবে সহজলভ্য করার উদ্দেশ্যে গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়ের আর্থিক সহযোগিতায় একটি ‘ভ্রাম্যমাণ বইমেলা কর্মসূচি’ চালু হয়েছে।
মেলাটি প্রতিদিন বেলা ১২টা থেকে সন্ধ্যা ৭টা পর্যন্ত দর্শনার্থী, পাঠক ও ক্রেতার জন্য উন্মুক্ত থাকবে।
বইমেলায় থাকছে গল্প, উপন্যাস, প্রবন্ধ, কবিতা, বঙ্গবন্ধু ও মুক্তিযুদ্ধ, অনুবাদ, সাইন্স ফিকশন, রূপকথা ও ছোটদের জন্য বাছাই করা বই।
প্রতিটি বইয়ের প্রকৃত মূল্য থেকে থাকছে ২৫-৩০% পর্যন্ত বিশেষ মূল্যছাড়।
সম্পাদক : সৈয়দ আমিরুজ্জামান
ইমেইল : rpnewsbd@gmail.com
মোবাইল +8801716599589
৩১/এফ, তোপখানা রোড, ঢাকা-১০০০।
© RP News 24.com 2013-2020
Design and developed by M-W-D