একজন মহৎ মানুষের চলে যাওয়া: শোক ও শ্রদ্ধা!

প্রকাশিত: ২:৪৫ অপরাহ্ণ, ফেব্রুয়ারি ২২, ২০২৪

একজন মহৎ মানুষের চলে যাওয়া: শোক ও শ্রদ্ধা!

Manual5 Ad Code

শরীফ শমশির |

শহীদুল ইসলাম; আমাদের শহীদ ভাই আজ আমাদের ইহলোকে ছেড়ে পরলোকে গমন করেছেন। তাঁর মৃত্যুতে আমিসহ আমরা যারা তার স্নেহধন্য তারা সকলেই গভীর শোকাহত।

গত কয়েক দিন ধরে তাঁর ছোটভাই রেজাউল ইসলাম ফোনে ও সংবাদের মাধ্যমে তাঁর শারীরিক অবস্থার অবনতির কথা জানাচ্ছিল। আমি নির্বাক ছিলাম। রেজাউলের কন্ঠে ভাইয়ের যাত্রা পথের করুণ সুর বাজছিল। কাল রাতে হাসপাতাল শয্যায় শায়িত শহীদ ভাইয়ের ছবি দেখে মনে হচ্ছিল তিনি জগতের শৃঙ্খলায় নেই। শহীদ ভাই খুব পরিপাটি মানুষ, কাল তিনি এলোমেলো ছিলেন। মন অশুভ সংবাদের কু ডাকছিল।

Manual4 Ad Code

আমার স্নায়ু রোগ। ওষুধ খেতে হয় ঘুমিয়ে থাকার জন্য। সকাল হয় দেরিতে। প্রায় এগারটার দিকে চোখ খুলে হুঁশে আসি। তখন নিঃশব্দ মোবাইল দেখি, কোনো কল মিসড হয়ে আছে কীনা। একটা কল দেখে ভাবিনি কিন্তু ফজলুর কল দেখে শহীদ ভাই চলে গেছেন, বুঝতে দেরি হয়নি। ফজলু ঝিনেদার মানুষ, শহীদ ভাইও কালীগঞ্জেরই মানুষ।

তারপর ফেসবুক খুলতেই রেজাউলের স্টাটাস, ছাত্রনেতা ও সাংবাদিক শহীদুল ইসলাম আর নেই। তিনি দেহত্যাগ করেছেন।

গত কয়েক বছর তিরাশির ছাত্র আন্দোলনের কয়েকজন প্রভাবশালী নেতা মুশতাক ভাই, সাবেক ডাকসুর জিএস ও আমার বন্ধু সুজাউদ্দীন জাফরের তত্ত্বাবধানে তার ঢাকার কমিউনিটি হাসপাতালসহ অন্যান্য জায়গায় চিকিৎসা চলছিল।

Manual4 Ad Code

শহীদ ভাইয়ের শুভানুধ্যায়ী যারা দেশে বিদেশে আছেন তারা সকলেই শহীদ ভাইয়ের বিষয়ে উদ্বিগ্ন ছিলেন। তাঁর নিয়মিত খবর নিয়েছেন নাসির ভাই, জাকির ভাই, রুমি ভাই, মাশরুর চট্টগ্রামের সুহৃদরা।

শহীদ ভাই মুক্তিযুদ্ধের সময় যুদ্ধে অংশ নিয়েছিলেন স্বাধীন জনগণতান্ত্রিক বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠার জন্য। তারপর দেশ স্বাধীন হলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজবিজ্ঞান বিভাগে ভর্তি হন। এভাবেই জড়িয়ে পড়েন ছাত্র রাজনীতির সাথে।

আশির দশকের শুরুতে এরশাদ সামরিক শাসনের বিরুদ্ধে সংগ্রামের সূচনা হয়েছিল ছাত্রদের মাধ্যমে। তিরাশির ১৪ ফেব্রুয়ারীর আগে বায়তুল মোকাররম- এ প্যালেস্টানের সংহতির জন্য একটা মিছিল হয়, শহীদ ভাই সলিমুল্লাহ খান প্রমুখ ঐ মিছিলে ছিলেন। এরপর ছাত্র সংগ্রাম পরিষদ গঠিত হলে তাতে যেসব সংগঠন ছিল তার মধ্যে বাঙলা ছাত্র ইউনিয়ন ছিল, শহীদ ভাই তার নেতা ছিলেন। মধ্য ফেব্রুয়ারী থেকে আশির দশকের ছাত্র আন্দোলনের বা সংগ্রাম পরিষদের একজন গুরুত্বপূর্ণ নেতা ছিলেন শহীদ ভাই, তার কমিটমেন্ট দিয়ে।

Manual7 Ad Code

শহীদ ভাই ছাত্র আন্দোলনের ঐক্যে বিশ্বাস করতেন। সব সংগঠনের সাথে তাঁর সুসম্পর্ক ছিল। তিনি বিপ্লবী ছাত্র ইউনিয়ন, ছাত্র ঐক্য ফোরামের সাথে নিবিড় সম্পর্ক রাখতেন। আর এভাবেই তিনি সকলের ঐক্যে গণতান্ত্রিক ছাত্র ইউনিয়নের সভাপতি নির্বাচিত হয়েছেন।

তিনি বাংলাদেশের মজদুর পার্টি হয়ে ওয়ার্কার্স পার্টির কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য হয়েছিলেন।
তারপর অকৃতদার শহীদ ভাই দি নিউ নেশন পত্রিকায় সাংবাদিকতা শুরু করেন।

শহীদ ভাই লিখতেন ভালো। ভালো মানুষ ছিলেন। কিন্তু জীবনের চড়াই-উতরাই তিনি মসৃণভাবে পার করতে পারেননি। একারণে হয়তো মন তাঁর বিক্ষিপ্ত হয়ে যায়।
তাঁর শরীরের চিকিৎসা সহজ ছিল কিন্তু মনের চিকিৎসা অগম্য ছিল।
বেশ কয়েক বছর তিনি গ্রামে ভাই বোনের পরিচর্যায় ছিলেন।

ঢাকার বন্ধুরা তাঁকে ভুলেন নি, ভালোবাসতেন।
শহীদ ভাই মহৎ মানুষ ছিলেন, আমার দেখা সেরা। সকলকে সম্মান করতেন, ভালোবাসতেন।
শহীদ ভাই রসিক ছিলেন। বোদ্ধা ছিলেন। ভালো লিখতেন। সেসব আরেকদিনের জন্য তোলা রইলো।
ফেব্রুয়ারী মাসে শহীদ ভাই চলে গেলেন, তিরাশির ১৪ ফেব্রুয়ারী স্মরণের পর শহীদ ভাইকে স্মরণ করতে হবে, সামনের বছর গুলোতে।

Manual3 Ad Code

মানুষ চলে যাবে, আফসোস নেই, শহীদ ভাইয়ের মতো মহৎ মানুষরা চলে গেলে, আফসোস কোথায় রাখবো!
শহীদ ভাই শান্তিতে ঘুমাবেন; আমরা তাঁর স্মৃতিকাতর থাকবো।

#

শরীফ শমশির
লেখক ও গবেষক

 

এ সংক্রান্ত আরও সংবাদ

 


Manual1 Ad Code
Manual3 Ad Code