চা শ্রমিকদের দৈনিক মজুরি ৫০০ টাকা নির্ধারণের দাবীতে শ্রীমঙ্গলে মিছিল ও সমাবেশ

প্রকাশিত: ২:১০ অপরাহ্ণ, সেপ্টেম্বর ১৫, ২০২৪

চা শ্রমিকদের দৈনিক মজুরি ৫০০ টাকা নির্ধারণের দাবীতে শ্রীমঙ্গলে মিছিল ও সমাবেশ

বিশেষ প্রতিনিধি | শ্রীমঙ্গল (মৌলভীবাজার), ১৫ সেপ্টেম্বর ২০২৪ : নতুন গেজেট বাতিল করে দৈনিক ন্যূনতম মজুরি ৫০০ টাকা নির্ধারণ করাসহ ৭ দফা দাবীতে শ্রীমঙ্গল ও মৌলভীবাজারে বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ করেছে চা শ্রমিকরা।

রোববার (১৫ সেপ্টেম্বর ২০২৪) দুপুরে শ্রীমঙ্গল শহরের চৌমুহনা চত্বরে বাংলাদেশ চা শ্রমিক ফেডারেশনের কেন্দ্রীয় কমিটির উদ্যোগে এ মিছিল ও সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়। একই দাবিতে মৌলভীবাজার প্রেসক্লাব মোড়ে মানববন্ধন কর্মসূচি পালন করে চা শ্রমিক ছাত্র ও যুবসমাজ। এসময় দাবি আদায় না হলে কঠোর আন্দোলনে যাওয়ার হুঁশিয়ারি দেন তারা।

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, চা শ্রমিকরা আগে দৈনিক মজুরি পেতেন ১৭০ টাকা। পরে বাড়ানো হয়েছে মাত্র ৮ টাকা ৫০ পয়সা। অর্থাৎ তাদের দৈনিক মজুরি মাত্র ১৭৮ টাকা ৫০ পয়সা। এটি বাতিল করে দৈনিক নগদ মজুরি ৫০০ টাকা নির্ধারণ ছাড়াও চা শ্রমিকদের অন্যান্য দাবিগুলো হলো রেশন-আবাসন, শিক্ষা, স্বাস্থ্যসেবাসহ আনুষঙ্গিক সুবিধা বাড়ানো, বন্ধ ও রুগ্ন চা বাগানের লিজ বাতিল করে রাষ্ট্রীয়ভাবে বাগান পরিচালনা করে চা শ্রমিকদের জীবন-জীবিকা রক্ষা করা, মালিকপক্ষের দালাল নেতৃত্ব অপসারণ করে আপসহীন বিপ্লবী ধারার শ্রমিক নেতৃত্ব প্রতিষ্ঠা করে ভূমি অধিকার নিশ্চিত করা ইত্যাদি।

মৌলভীবাজার প্রেসক্লাব মোড়ে মানববন্ধনে বক্তব্য দেন চা শ্রমিক সন্তান ও বাংলাদেশ ছাত্র মৈত্রীর মৌলভীবাজার জেলা সভাপতি অজিত বুনার্জি, নয়ন কৈরীসহ আরও অনেক। এসময় তারা ১১ দফা দাবি উপস্থাপন করেন এবং সরকারের সুদৃষ্টি কামনা করেন।

শ্রীমঙ্গলে বাংলাদেশ চা শ্রমিক ফেডারেশনের কেন্দ্রীয় সভাপতি বিপ্লব মাদ্রাজি পাশীর সভাপতিত্বে এবং সাংগঠনিক সম্পাদক কিরণ শুক্ল বৈদ্যের সঞ্চালনায় বিক্ষোভ সমাবেশে বক্তব্য রাখেন বাসদ মৌলভীবাজার জেলা সমন্বয়ক ও চা শ্রমিক ফেডারেশনের কেন্দ্রীয় উপদেষ্টা মঈনুর রহমান মগনু, সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী ও সংগঠনের উপদেষ্টা আবুল হাসান, চা শ্রমিক ফেডারেশনের কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক দীপংকর ঘোষ, অর্থ সম্পাদক প্রেম কুমার পাল, সদস্য ময়না রাজভর, সমাজতান্ত্রিক ছাত্র ফ্রন্ট মৌলভীবাজার জেলা সভাপতি বিশ্বজিৎ নন্দী, মৌলভী চা বাগানের শ্রমিক নেতা দ্বীপচান তেলি, মাথিউড়া চা বাগানের আবুল কালাম আজাদ, লালন রাজভর, ধলই চা বাগানের উজ্জ্বল কৈরি, মিরতিংগা চা বাগানের ইমরান নাজির প্রমুখ।

নতুন গেজেট বাতিল করে দৈনিক ন্যূনতম মজুরি ৫০০ টাকা নির্ধারণ করাসহ ৭ দফা দাবী প্রসঙ্গে দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টির মৌলভীবাজার জেলা সম্পাদক মন্ডলীর সদস্য, সাপ্তাহিক নতুন কথার বিশেষ প্রতিনিধি, আরপি নিউজের সম্পাদক ও বিশিষ্ট কলামিস্ট কমরেড সৈয়দ আমিরুজ্জামান মজুরী বৃদ্ধিসহ অন্যান্য দাবীতে চলমান এ আন্দোলনের প্রতি পুন:সমর্থন ও একাত্মতা প্রকাশ করেন।
বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টির মৌলভীবাজার জেলা সম্পাদক মন্ডলীর সদস্য কমরেড সৈয়দ আমিরুজ্জামান আলাপ আলোচনার মাধ্যমে মর্যাদাপূর্ণ জীবনযাপন উপযোগী যৌক্তিক মজুরি নির্ধারণের আহবান জানিয়েছেন।
তিনি বলেন, সামান্য কিছু সুযোগ-সুবিধাসহ দৈনিক মাত্র ১৭০ টাকা মজুরিতে আট ঘন্টা, কখনো-বা আরো অধিক সময় ধরে কাজের বিপরীতে এই সামান্য পারিশ্রমিক শোষণ-বৈষম্যমূলক ও সংবিধান পরিপন্থি। মজুরী বৃদ্ধিসহ অন্যান্য দাবীনামা নিয়ে দরকষাকষি ও আলোচনার মাধ্যমে উদ্ভূত পরিস্থিতি থেকে উত্তরণে বাগান মালিকদের ঔপনিবেশিক মানসিকতা পরিহার করতে হবে ও সরকারকেও চা-শ্রমিকদের দেশের নাগরিক হিসেবে গণ্য করে ন্যায্য ও মানবিক উদ্যোগ নিতে হবে। একইসাথে, চা বাগানের শ্রমিকদের জন্য প্রযোজ্য শ্রম আইনের কার্যকর বাস্তবায়নের পাশাপাশি দেশের অন্যান্য সম-পর্যায়ের খাতের সর্বনিম্ন মজুরি বিবেচনায় নিয়ে মর্যাদাপূর্ণ জীবন ধারণের উপযুক্ত ও চা-শ্রমিকদের নিকট গ্রহণযোগ্য ন্যায্য পারিশ্রমিক নির্ধারণে বাগান মালিক, বাংলাদেশীয় চা সংসদ, শ্রম অধিদপ্তর ও সরকারকে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণের দাবি জানিয়েছেন তিনি।
প্রতি দুই বছর পরপর চা-শ্রমিক ও বাগান কর্তৃপক্ষের মধ্যে মজুরি সংক্রান্ত চুক্তি নবায়নের রীতি রয়েছে, যদিও অধিকাংশ ক্ষেত্রে মজুরি নির্ধারণে বাস্তবে একতরফাভাবে বাগান কর্তৃপক্ষই সিদ্ধান্ত নিয়ে থাকে, তথাপি দীর্ঘদিন ধরে চা-শ্রমিকরা মজুরি চুক্তির বাইরে রয়েছে। দ্রব্যমূল্যের চরম ঊর্ধ্বগতির এই সময় চলমান আন্দোলনের প্রেক্ষিতে মাত্র ৮ টাকা ৫০ পয়সা মজুরি বৃদ্ধির প্রস্তাব চা-শ্রমিকদের ন্যায্য দাবির প্রতি অবজ্ঞা ও নিছক উপহাসমূলক অধিকার লঙ্ঘন ছাড়া আর কিছু নয় উল্লেখ করে তিনি বলছেন, চা-শ্রমিকদের প্রাপ্ত আবাসনসহ সব ধরনের সুযোগ-সুবিধা বিবেচনায় নিয়েও একথা নির্দ্বিধায় বলা যায় যে, দেশের অন্য যে-কোনো খাতের তুলনায় চা শ্রমিকদের মজুরি সর্বনিম্ন ও শোষণ-বৈষম্যমূলক। অথচ সার্বিক বিবেচনায় এ খাতটি অর্থনৈতিকভাবে খুবই গুরুত্বপূর্ণ। তাছাড়া, এখন পর্যন্ত কোনো পরিসংখ্যান বা তথ্য-উপাত্ত দিয়েও কেউ বলতে পারেননি যে, চা-বাগানের মালিক পক্ষ আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত বা এমন কোনো অবস্থায় আছেন যে, যাদের অবদানের ওপর নির্ভর করে চা-শিল্প বিকাশমান, সেই শ্রমিকদের ন্যায্য মজুরি প্রদানে তারা অক্ষম। বরং এটি একটি লাভজনক বাণিজ্যিক খাত। অন্যদিকে চা-শ্রমিকদের ন্যায্য মজুরিসহ অন্যান্য মৌলিক অধিকার ও সুযোগ-সুবিধা নিশ্চিত করার দায়িত্ব শুধু মালিকপক্ষের মর্জির ওপর ছেড়ে দেয়া ঠিক নয়। চা শ্রমিকদের দেশের নাগরিক হিসেবে বিবেচনায় নিয়ে তাদের প্রাপ্য অধিকার নিশ্চিতে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়সমূহকে যথাযথ গুরুত্ব দিয়ে চলমান আন্দোলনের যৌক্তিকতা অনুধাবনের পাশাপাশি সমতাভিত্তিক আলোচনার মাধ্যমে চা শ্রমিকদের নিকট গ্রহণযোগ্য মজুরি নির্ধারণে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে।’
তিনি বলেন, দেশের “ন্যূনতম মজুরি বোর্ড” অন্যান্য খাতের ন্যূনতম মজুরি যেখানে কয়েক গুণ বেশি নির্ধারণ করেছে, সেখানে কোন অদৃশ্য শক্তির প্রভাবে শ্রম মন্ত্রণালয়ের “গাইড লাইন” উপেক্ষা করে বারবার চা বাগান মালিক পক্ষের নির্ধারণ করা ন্যূনতম মজুরির হার বহাল রেখে শ্রম মন্ত্রণালয়ে সুপারিশ করছে, তা খতিয়ে দেখা প্রয়োজন।