আজ প্রখ্যাত আইনজীবী সিরাজুল হকের ২২তম মৃত্যুবার্ষিকী

প্রকাশিত: ১২:২২ পূর্বাহ্ণ, অক্টোবর ২৮, ২০২৪

আজ প্রখ্যাত আইনজীবী সিরাজুল হকের ২২তম মৃত্যুবার্ষিকী

Manual4 Ad Code

নিজস্ব প্রতিবেদক | ঢাকা, ২৮ অক্টোবর ২০২৪ : উপমহাদেশের প্রখ্যাত আইনজীবী, মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম সংগঠক, বঙ্গবন্ধু হত্যা মামলায় রাষ্ট্রপক্ষের প্রধান কৌশলী এবং আইন, বিচার ও সংসদ বিষয়ক সাবেক মন্ত্রী আনিসুল হকের বাবা সিরাজুল হকের ২২তম মৃত্যুবার্ষিকী আজ।

এ উপলক্ষে তার নিজ জেলা ব্রাহ্মণবাড়িয়ার কসবা এবং আখাউড়ায় স্থানীয় আওয়ামী লীগ ও এর অঙ্গ সংগঠনের পক্ষ থেকে মিলাদ, দোয়া ও আলোচনা সভার আয়োজন করা হয়েছে।

মরহুম সিরাজুল হকের পৈত্রিক নিবাস ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার কসবা উপজেলাতে হলেও পিতার কর্মসূত্রে তিনি ১৯২৫ সালের ১ আগস্ট সাতক্ষীরা জেলায় জন্মগ্রহণ করেন। তিনি খুলনা জিলা স্কুল থেকে এসএসসি, কলকাতা প্রেসিডেন্সি কলেজ থেকে স্নাতক, কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতকোত্তর এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পুনরায় স্নাতকোত্তর ডিগ্রী অর্জন করেন।

মরহুম সিরাজুল হক মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম সংগঠক ছিলেন। তিনি ১৯৫২ সালের ভাষা আন্দোলনসহ স্বাধিকার আন্দোলন, ঊনসত্তরের গণঅভ্যূত্থান ও মহান মুক্তিযুদ্ধে অনন্য সাধারণ ভূমিকা পালন করেন।

মরহুম সিরাজুল হক ছিলেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ঘনিষ্ঠ ও বিশ্বস্ত সহচর। বঙ্গবন্ধু ও মরহুম সিরাজুল হক কলকাতায় একজন ইসলামিয়া কলেজে এবং অন্যজন প্রেসিডেন্সি কলেজে পড়তেন এবং এক সঙ্গে বেকার হোস্টেলে থাকতেন।

Manual8 Ad Code

১৯৭০ সালে পাকিস্তানের সাধারণ নির্বাচনে তৎকালীন কসবা-বুড়িচং নির্বাচনী এলাকা থেকে তিনি আওয়ামী লীগের মনোনীত প্রার্থী হিসাবে এমএনএ নির্বাচিত হন।

বঙ্গবন্ধুর অসহযোগ আন্দোলনের ডাকে সাড়া দিয়ে মরহুম সিরাজুল হক আওয়ামী লীগ ও ছাত্রলীগের কর্মীদের বঙ্গবন্ধুর ৭ মার্চের নির্দেশনা অনুযায়ী স্বাধীনতা সংগ্রামের জন্য প্রস্তুতপূর্বক মার্চ মাসের শেষ সপ্তাহে সীমান্ত অতিক্রম করে ভারতে যান এবং সেই থেকে মুক্তিযুদ্ধ শেষ হওয়া পর্যন্ত মুক্তিযুদ্ধের একজন অন্যতম সংগঠক হিসেবে নিরলসভাবে কাজ করেন।

Manual8 Ad Code

১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধের পক্ষে নিজেদের বক্তব্য তুলে ধরতে বাংলাদেশের যে প্রতিনিধিদল নিউইয়র্কে জাতিসংঘের স্থায়ী প্রতিনিধির সাথে দেখা করেন তার অন্যতম সদস্য ছিলেন মরহুম সিরাজুল হক।

১৯৭২ সালে গঠিত গণপরিষদের সংবিধান কমিটির অন্যতম সদস্য ছিলেন মরহুম সিরাজুল হক। তিনি ১৯৭৩ সালের স্বাধীন বাংলাদেশের প্রথম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে কসবা ও আখাউড়া নিয়ে গঠিত তৎকালীন কুমিল্লা-৪ (বর্তমান ব্রাহ্মণবাড়িয়া-৪ কসবা-আখাউড়া) আসনে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন।

১৯৭৫ সালের অক্টোবরে বঙ্গভবনে খন্দকার মোশতাক তৎকালীন এমপিদের নিয়ে এক বৈঠকের আয়োজন করেন। উক্ত বৈঠকে মরহুম সিরাজুল হক প্রথম ব্যক্তি হিসেবে আনুষ্ঠানিকভাবে বঙ্গবন্ধু হত্যার তীব্র প্রতিবাদ করেন এবং খন্দকার মোশতাককে রাষ্ট্রপতি বলা যায় না মর্মে দ্বিধাহীন চিত্তে ঘোষণা করেন।

Manual6 Ad Code

সিরাজুল হক উপমহাদেশের প্রখ্যাত আইনজীবী ছিলেন। তিনি ১৯৫৭ সালের ৮ জানুয়ারি হাইকোর্টের আইনজীবী হিসেবে সনদ লাভ করেন। পরবর্তীতে সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী এবং পরবর্তীতে সিনিয়র আইনজীবী হিসেবে সনদ লাভ করেন। তিনি আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলাসহ ১৯৫৮ সাল থেকে বঙ্গবন্ধুর বিরুদ্ধে যত মামলা হয়েছে তার বেশির ভাগেরই আইনজীবী ছিলেন। ১৯৮২ সালে তিনি সুপ্রিম কোর্ট বার এসোসিয়েশনের প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হন।

মার্শাল ল’র বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানানোর কারণে ১৯৮২ সালের ১০ অক্টোবর তাকে তৎকালীন সরকার গ্রেফতারপূর্বক কারাগারে প্রেরণ করে।
তিনি ১৯৯৬ সাল থেকে আমৃত্যু বঙ্গবন্ধু হত্যা মামলা এবং জেল হত্যা মামলায় রাষ্ট্রপক্ষের চিফ স্পেশাল প্রসিকিউটর ছিলেন।

২০০২ সালের ২৮ অক্টোবর এই মহান ব্যক্তিত্ব মৃত্যুবরণ করেন। তাকে বনানী কবরস্থানে সমাহিত করা হয়।

Manual7 Ad Code

বাংলাদেশের স্বাধীনতা ও মুক্তিযুদ্ধে গৌরবোজ্জল অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ মরহুম সিরাজুল হককে স্বাধীনতা পুরস্কার (মরণোত্তর) ২০২২ প্রদান করা হয়।

ব্যক্তিগত জীবনে সিরাজুল হক বেগম জাহানারা হকের সঙ্গে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হন। তিনি ছিলেন দুই পুত্র ও এক কন্যার জনক।

আইন, বিচার ও সংসদ বিষয়ক সাবেক মন্ত্রী আনিসুল হক তার বড় পুত্র। সিরাজুল হকের জ্যেষ্ঠ সন্তান ও একমাত্র কন্যা মরহুমা সায়মা ইসলাম এবং ছোট পুত্রের নাম মরহুম আরিফুল হক রনি। সিরাজুল হকের সহধর্মিণী বীর মুক্তিযোদ্ধা বেগম জাহানারা হক ২০২০ সালের ১৭ এপ্রিল ঢাকার একটি বেসরকারি হাসপাতালে ইন্তেকাল করেন। তাকেও বনানী কবরস্থানে সমাহিত করা হয়েছে।

এ সংক্রান্ত আরও সংবাদ

 


Follow for More!

Manual1 Ad Code
Manual7 Ad Code