শীতের আগমনে নতুন রূপে শ্রীমঙ্গলের প্রকৃতি

প্রকাশিত: ৬:৩৬ পূর্বাহ্ণ, অক্টোবর ২৮, ২০২৪

শীতের আগমনে নতুন রূপে শ্রীমঙ্গলের প্রকৃতি

Manual4 Ad Code

মো.আফজল হোসেইন | শ্রীমঙ্গল (মৌলভীবাজার), ২৮ অক্টোবর ২০২৪ : বিভিন্ন ঋতুর আগমনে প্রাকৃতিক লীলাবৈচিত্র্যে নতুন রূপের সমারোহ ঘটে শ্রীমঙ্গলে। হেমন্তের ঋতুতে অর্থাৎ ইংরেজি মাসের অক্টোবরের শেষ নভেম্বরের শুরুতে কুয়াশা পড়তে দেখা যায় এই অঞ্চলে। এই সময়টি নাতিশীতোষ্ণ হলেও ধীরে ধীরে বাড়ছে শীত।

Manual8 Ad Code

প্রতিটি ঋতু এখানে প্রকৃতিকে সাজায় তার অনুপম রূপসজ্জায়; তারপর তার সেই রূপ আবার মুছে দিয়ে বিদায় নেয়। এক ঋতু যায়, আসে অন্য ঋতু। ঋতুর পরিবর্তনে শ্রীমঙ্গলেও দেখা মিলে ভিন্ন প্রাকৃতিক দৃশ্য।সকালের কুয়াশায় ঢেকে যায় সবুজ ঘেরা পাহাড়, মাঠ-ঘাট এবং শিশির বিন্দুর ওপর সূর্যের রশ্মি পড়ে এক অপরূপ সৌন্দর্য সৃষ্টি হয়। এই অঞ্চলের আশপাশ জুড়ে রয়েছে চা-বাগান, উঁচু পাহাড়, নদী, ছড়া, খাল-বিল ও বনস্পতিসমাকুল। বাইক্কা বিলের অবস্থানের ফলে এই অঞ্চলে বৃদ্ধি পেয়েছে প্রাকৃতিক সৌন্দর্য। বিভিন্ন প্রজাতির পরিযায়ী পাখির আগমন ঘটে এই বিল জুড়ে। পাখিদের আনাগোনা কিচির-মিচির শব্দে মুখরিত হয়ে থাকে পুরো এলাকা।আর এভাবে এই অঞ্চলে ছোটো পরিধিতে প্রকাশ পেয়েছে প্রাকৃতিক রূপের লীলাখেলায়।

এই অঞ্চলের বৈচিত্র্যময় প্রকৃতিকে অবলোকন করে প্রেমে পড়ে প্রকৃতিপ্রেমীরা। তাইতো ওঁরা বার বার ছুটে আসে শীতের শুরুর এই মৌসুমে।

শ্রীমঙ্গলে রয়েছে অসংখ্য দর্শনীয় স্থান সারিবদ্ধ চা-বাগান, রাবার-বাগান, আনারস বাগান, লেবু বাগান, ভাড়াউড়া লেক, বাইক্কা বিল, লাউয়াছড়া জাতীয় উদ্যানের অংশ, বধ্যভূমি ৭১, নীলকন্ঠ চা-কেবিন, শতবর্ষের স্মৃতিবিজড়িত ডিনস্টন সিমেট্রি প্রভৃতি।

Manual7 Ad Code

শ্রীমঙ্গলের বৈচিত্র্যময় প্রকৃতির সৌন্দর্যের অনুভূতি প্রকাশ করতে গিয়ে মো. ইমরান বলেন, সিলেটের বিভিন্ন দর্শনীয় স্থানে যাওয়া হলেও শ্রীমঙ্গলে এই প্রথম।সিলেটের বিভিন্ন দর্শনীয় স্থানের সাথে শ্রীমঙ্গলের অনেক স্থানের সাদৃশ্য রয়েছে বলে মনে করেন এই পর্যটক। তবে তিনি মনে করেন, সিলেটের তুলনায় শ্রীমঙ্গলের যাতায়াত ব্যবস্থা অনেক সহজ। ঢাকা জেলার রাজবাড়ী থেকে উনি সহ পাঁচজন ঘুরতে এসেছেন শ্রীমঙ্গলে। শ্রীমঙ্গলের পরিচিত দুজন লোক থাকায় ভ্রমণে তেমন কোনো ঝামেলা পোহাতে হয়নি।তিনি বলেন, প্রথমে শীতের সকালে প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের সন্ধানে আঁকাবাকা সড়কে চলতে চলতে দেখা মিললো সবুজের সমাহার অপূর্ব সারিবদ্ধ চা-বাগান ও টিলা। যেদিকে তাকাই শুধু সবুজ আর সবুজ। প্রকৃতির এই রূপ আমাদের করেছে কল্পনাপ্রবণ ভালোবাসায় সিক্ত।

গ্র্যান্ড সুলতান রিসোর্ট অতিক্রম করে রাধানগর সড়কে চলতেই অন্যরকম দৃশ্য চোখে পড়ে, এই গ্রামে অসংখ্য ছোট-বড় রিসোর্ট প্রকৃতির সাথে মিল রেখে নির্মাণ করা হয়েছে যা অতীতে দেখা হয়নি। ডলুছড়ায় রয়েছে অসংখ্য আনারস ও লেবু বাগান সকালের ধবল কুয়াশায় আবরণে ঢেকে গেছে বাগানগুলো।পাতায়-পাতায় শিশির জমেছে বোধ হয় কোনো এক কৃষক এই মাত্র পানি ছিটিয়ে গেলো। এছাড়াও বাগানের গাছে-গাছে লেবু, ঝাল মরিচ ও কলা লম্বমান এবং উচু পাহাড়ে উঁকি দিয়ে আছে পাকা আনারস।শীতের সকালে বাগান থেকে সেই সব ফল পাড়ার দৃশ্য দেখা বেশ আনন্দের। পিচঢালা পথে ঠেলাতে তাদের উৎপাদিত ফল সমূহ নিয়ে চলার অপরূপ দৃশ্য চোখে পড়ে এবং আনারস, লেবু, কলা ও ঝাল মরিচ পসরা সাজিয়ে নেওয়া হচ্ছে বিপণনের জন্য শ্রীমঙ্গলের পাইকারী বাজারে। পথ যতই অতিক্রম করি বৈচিত্র্যময় প্রকৃতির দৃশ্য ততোই চোখে পড়ে। এছাড়াও উঁচু পাহাড় থেকে ঘনকুয়াশার আবরণ ভেদ করে পূর্বদিকে সূর্য উদিত হওয়ার দৃশ্য দেখতেও অপরূপ।

Manual2 Ad Code

ব্রাহ্মণবাড়িয়া থেকে আগত মো. শরীফ মিয়া বলেন, শ্রীমঙ্গলের লীলাবৈচিত্রময় প্রকৃতির গল্প শুনেছি কিন্তু দেখা হয়নি এই অঞ্চলের প্রাকৃতিক সৌন্দর্য। প্রথমবারের মতো আসা এই অঞ্চলে। দু’দিন ছুটি নিয়ে বন্ধু মিলে শ্রীমঙ্গলের উদ্দেশ্যে রওয়ানা দেই। শ্রীমঙ্গল পৌঁছে সকালের নাস্তা সেড়ে চা-বাগানের সন্ধানে বেরিয়ে পড়ি। শহর থেকে কিছু পথ অতিক্রম করতেই দেখা মিললো সড়কের দু’পাশে সারিবদ্ধ চা-বাগান এবং দাঁড়িয়ে থাকা উঁচু পাহাড়গুলো। এই অঞ্চলের প্রকৃতির বৈশিষ্ট্য সম্পর্কে জানা থাকলেও বাস্তবে তা দেখতে আরো চমৎকার। তবে তিনি বলেন, শ্রীমঙ্গলের বৈচিত্র্যময় প্রকৃতির এমন দৃশ্য অবলোকনে হৃদয়ে প্রশান্তি মিলে। বৈচিত্র্যময় প্রকৃতি দেখে ক্লান্ত হলে এখানে রয়েছে ছোট-বড় চা-কফির দোকান। এক চুমুক চায়ের স্বাদ নিতেই সতেজতায় ফিরে পায় দেহের প্রাণ।এই অঞ্চলের লীলাবৈচিত্রময় প্রকৃতি এমনভাবে ভালোবাসা দিয়ে বরণ করে নিলো এবার ফিরে গেলেও সময় নিয়ে আবার আসবো শ্রীমঙ্গলে।

Manual3 Ad Code

 

এ সংক্রান্ত আরও সংবাদ

 


Follow for More!

Manual1 Ad Code
Manual5 Ad Code