দেশে তৈরি প্রথম স্যানিটারি প্যাড সেনােরা

প্রকাশিত: ১২:০৭ অপরাহ্ণ, নভেম্বর ২৫, ২০২৪

দেশে তৈরি প্রথম স্যানিটারি প্যাড সেনােরা

নাসরীন মুস্তাফা |

দেশে তৈরি প্রথম স্যানিটারি প্যাড ‘সেনােরা। স্কয়ার টয়লেট্রিজ খুব জরুরী কাজটি করেছিল বাংলাদেশের নারীদের জন্য।

আমি তখন স্কয়ার গ্রুপের বিজ্ঞাপনী ফার্ম মিডিয়াকমে ক্রিয়েটিভ কনটেন্ট লেখার পার্ট টাইম চাকরি করতাম। সুযোগ পেলাম ‘সেনোরা’ নিয়ে ভাবার।

গিয়াস উদ্দীন সেলিমের পরিচালনায় ‘সেনোরা’কে নিয়ে আধা ঘন্টার একটি তথ্যচিত্রের স্ক্রিপ্ট লিখেছিলাম। প্রথম আলোর নারী পাতায় প্রতি সপ্তাহে একটি করে ‘গল্প’ লিখতাম, জীবনজয়ী সত্যিকারের নারীদের নিয়ে, যাদের আমরা চিনি না কিন্তু চেনা উচিত। এর পাশে থাকতো নারীর স্বাস্থ্য সমস্যা, মাসিক সংক্রান্ত জিজ্ঞাসা নিয়ে নারীদের পাঠানো প্রশ্নের জবাব। কত রকমের অভিজ্ঞতা যে হয়েছিল!

যুদ্ধাহত সেনাদের ক্ষতস্থান থেকে রক্ত শুষে নেওয়ার উপযোগী প্যাড বানিয়েছিলেন বেঞ্জামিন ফ্রাঙ্কলিন। তিনি কি জানতেন, বিদ্যুৎ আবিষ্কারের চেয়ে কম গুরুত্বপূর্ণ নয় এটি! তবে নারীর উপযোগী করে বেল্ট লাগিয়ে মাসিকচক্রকে সামলানোর উপযোগী করে প্যাড ব্যবহারের বুদ্ধি দিয়েছিলেন নারী বিজ্ঞানীই। তিনি ম্যারি কেনার। এক কোম্পানী আগ্রহ দেখিয়েও যখন জানতে পারে, তিনি আফ্রিকান-আমেরিকান, তখন বাতিল করে চুক্তি। সে আরেক গল্প।

নারীকে ঘরে-বাইরে সফল করে তুলতে স্যানিটারি প্যাডের অবদান তুলনাহীন। আর সামান্য কিছু কাজ বাকি আছে। প্যাডে প্লাস্টিক ব্যবহৃত হয়, জীবনভর একজন নারী প্যাড ব্যবহার করলে গড়ে প্লাস্টিক ব্যবহারের পরিমাণ হয় ২৩ কেজি, যা মাটির সাথে মিশে যেতে সময় লাগে ৫০০ থেকে ৮০০ বছর। বাণিজ্যিক মুনাফার দৌড়ে প্যাড সত্যিকারের স্বাস্থ্যসম্মত হতে পারেনি এখনো। পরিবেশবান্ধব নয়, খুব কম দামে কিংবা বিনা মূল্যে প্যাড দেওয়া উচিত হলেও সেটা সম্ভব হয়নি। প্যাড ডিস্পোজাল করা অস্বস্তিকর। যদি ফ্ল্যাশ করে দেওয়া যেত! পানিতে গলে গেলে, মাটিতে মিশে গেলে ভালোই হত!

ভাবতাম এরকম অনেক কিছুই। জানলাম দারুণ খবর। পাটের স্যানিটারি প্যাড আসছে! আন্তর্জাতিক উদরাময় গবেষণা কেন্দ্র, বাংলাদেশ (আইসিডিডিআর,বি) এর সহকারী বিজ্ঞানী ফারহানা সুলতানা তার প্রস্তাবিত- টেকসই মাসিক স্বাস্থ্যের জন্য পাটের সেলুলোজ-ভিত্তিক স্যানিটারি প্যাড ও মেশিন উদ্ভাবনের জন্য আন্তর্জাতিক পুরস্কার জিতেছেন। চতুর্থ ইনোভেশন পিচ প্রতিযোগিতায় গ্র্যান্ড পুরস্কার জিতেছেন ফারহানা।

পরিবেশবান্ধব স্যানিটারি প্যাড যেন বিনামূল্যে বাংলাদেশের নারীর হাতে যদি তুলে দেওয়া যায়, তাহলে ফারহানা আলমের পরিশ্রম সার্থক হবে। বাংলাদেশের নারীর এগিয়ে যাওয়ার পথে বিশাল এক বাধা দূর হবে।

সাব্বাশ মেয়ে! তোমাকে দেখে সাহস পেলাম আরেক বার।

এ সংক্রান্ত আরও সংবাদ