বঙ্গের মিষ্টান্ন সংস্কৃতি

প্রকাশিত: ১০:২৯ পূর্বাহ্ণ, নভেম্বর ২৯, ২০২৪

বঙ্গের মিষ্টান্ন সংস্কৃতি

গ্রন্থ রিভিউ বিষয়ক প্রতিবেদক | ঢাকা, ২৯ নভেম্বর ২০২৪ : প্রায় আড়াই হাজার বছর আগের চন্দ্রকেতুগড়ের সময় থেকে উনবিংশ শতকের শুরু পর্যন্ত বিস্তৃত অর্থাৎ আদি থেকে প্রাক আধুনিক পর্যন্ত লেখক স্বাতী তলাপাত্র কর্তৃক রচিত ‘বঙ্গের মিষ্টান্ন সংস্কৃতি’ শীর্ষক গ্রন্থটি প্রকাশিত হবে ডিসেম্বরের দ্বিতীয় সপ্তাহে।

গত দুবছর ধরে একটু একটু করে এই বইটার পাণ্ডুলিপির প্রথম অক্ষর থেকে শেষ হয়ে টাইপ সেটিং, প্রুফ রিডিং, এডিটিং সব হল। এবং গত দুবছর প্রায় প্রতিদিনই এই ছোট্ট বইটির প্রতিটি বিষয় নিয়ে আলোচনা করতে বাধ্য হয়েছি। আমার মতামত ও পরামর্শ দিতে বাধ্য হয়েছি। কোনো বিষয় সম্পর্কে কিছু না জেনে আজ পর্যন্ত কোথাও এমন মতামত দিইনি। অথচ বলপূর্বক এখানে দিতে হয়েছে। আমার সামগ্রিক স্বল্প ইতিহাস জ্ঞানের সঙ্গে ৩০ শতাংশ কাণ্ডজ্ঞান মিশিয়ে উপর উপর বাগ্মীতার মুখোশ ছিটিয়ে আলোচনা করতে হয়েছে।

আমি হয়তো কোনো‌ একটা থ্রিলার গল্পে অপরাধীর ক্লু খুঁজে চলেছি, এমন সময় গাজরের হালুয়ার উৎসকথা মন দিয়ে শুনতে হয়েছে। ডাকাতের গল্প পড়তে পড়তে মোরব্বাকে কেন মিষ্টি বলব তা নিয়ে তর্ক জুড়তে হয়েছে। বাঁকাউল্লার পুলিশি ডায়ারি পাতা ওলটাতে ওলটাতে চন্দ্রকেতুগড় যাওয়ার প্ল্যান করতে হয়েছে।

স্বাতী আর আমি একসঙ্গে থাকি। ফলে আমি জানি ও এই বইটার বিষয়ে কতটা ডুবে ছিল গত দুবছর। প্রতিটি প্রুফেই কিছু না কিছু নতুন বিষয় যোগ করেছে। যেখানে আমাদের বই তিনটে প্রুফেই ফাইনাল হয়ে যায়, সেখানে এখন পঞ্চম প্রুফ চলছে। বাধ্য হয়ে অভিযানের সিনিয়ার এডিটর শ্যামলদা থ্রেট দিয়েছেন, এটাই ফাইনাল প্রুফ, এখানে আর কিছু জোড়া যাবে না। যদি জোড়ো তাহলে কিন্তু আর বইমেলায় বই বেরোবে না।

প্রায় আড়াই হাজার বছর আগের চন্দ্রকেতুগড়ের সময় থেকে উনবিংশ শতকের শুরু পর্যন্ত এই বইয়ের বিস্তৃতি। সময়কাল হিসাবে অনেকে হলেও লিখিত তথ্যের অপ্রতুলতা বিরাট। বিভিন্ন পত্র-পত্রিকা, গবেষণাপত্র, গবেষণাগ্রন্থ, সাহিত্যগ্রন্থ থেকে একটা একটা করে মিষ্টির বিবরণ খুঁজে আনতে হয়েছে। সবথেকে মজার সিরিয়াস প্রাবন্ধিক বা গবেষকদের বেশিরভাগ খাদ্য সংস্কৃতিকে অগুরুত্বপূর্ণ বিষয় মনে করে থাকেন। অথচ একটি এলাকার খাদ্য-রীতি ভেঙে জুড়ে বড়ো বড়ো কর্পোরেট সংস্থার লুঠ এবং তারফলে শারীরিক অসুস্থতাজনিত ভয়ংকর ওষুধের ব্যবহার আমরা প্রতিনিয়ত চোখের সামনে দেখতে পাচ্ছি।

আমাদের হাজার হাজার বছরের রীতি তিনবেলার ভাত কেন আমাদের কাছে আজ বিষের মতো? চালের প্রয়োজনীয় অংশ কেন বাদ দিয়ে সৌন্দর্যটাই প্রধান এখন? আমাদের হাজার বছরের কৃষিকাজের রীতি বদলে কেন এত রাসায়নিকের ব্যবহার? কার স্বার্থে? না, এই বইয়ের বিষয় এত প্রতিবাদী নয়। এটা শুধুই আমাদের ইতিহাসকে মনে করিয়ে দেওয়া। জানানো আমরাই সারা পৃথিবীতে আখের গুড় সাপ্লাই করতাম একসময়। জানানো বাঙালি কখনও নিরামিষাশী ছিল না। জানানো আমাদের একটা স্বাস্থ্যকর খাদ্য ব্যবস্থা ছিল হাজার হাজার বছরের ট্রাডিশন অনুসারে। আর সেই পাতে মিষ্টিও ছিল‌ অপরিহার্য একটি পদ।

বইটি প্রকাশিত হবে ডিসেম্বরের দ্বিতীয় সপ্তাহে।
আর হ্যাঁ, এই দুর্দান্ত প্রচ্ছদটি করে দিয়েছে পার্থপ্রতিম দাস।

এ সংক্রান্ত আরও সংবাদ