সাময়িকভাবে বন্ধ হচ্ছে বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্রের ভ্রাম্যমাণ লাইব্রেরি

প্রকাশিত: ৯:৫২ পূর্বাহ্ণ, ডিসেম্বর ৩০, ২০২৪

সাময়িকভাবে বন্ধ হচ্ছে বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্রের ভ্রাম্যমাণ লাইব্রেরি

বিশেষ প্রতিনিধি | ঢাকা, ৩০ ডিসেম্বর ২০২৪ : নতুন বছরের শুরু থেকেই দেশব্যাপী ভ্রাম্যমাণ লাইব্রেরি কার্যক্রম “সাময়িকভাবে” বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছে বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্র। এই ভ্রাম্যমাণ লাইব্রেরি চালু রাখার দাবিতে দেশের বিভিন্ন জায়গায় মানববন্ধন করেছেন পাঠকরা। তবে বিশ্ব সাহিত্য কেন্দ্রের পরিচালক শামীম আল মামুন জানিয়েছেন, প্রকল্পের মেয়াদ শেষ হওয়ায় এবং নতুন করে মেয়াদ বাড়ানোর মধ্যবর্তী সময় বিবেচনায় কিছু দিন এই সেবা বন্ধ থাকবে।

এক বিবৃতিতে বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্র জানিয়েছে, বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্র ২৫ বছর ধরে ভ্রাম্যমাণ লাইব্রেরি কার্যক্রম পরিচালনা করে দেশবাসীর বুদ্ধিভিত্তিক ও সাংস্কৃতিক উৎকর্ষ সাধনের চেষ্টা করছে। ভ্রাম্যমাণ লাইব্রেরির গাড়ির সংখ্যা ৭৬টি। এই গাড়িগুলো দেশের ৩,২০০ এলাকায় বই দেওয়া-নেওয়া করে, অর্থাৎ সমান সংখ্যক ছোট লাইব্রেরির কাজ করে। এই লাইব্রেরির পাঠক সংখ্যা প্রায় ৫ লাখ (নিয়মিত ও অনিয়মিত)। এই বিপুল সংখ্যক গাড়ি পরিচালনার ব্যয় বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্রের একার পক্ষে বহন করা সম্ভব নয়। তাই গাড়ি, বই, ইত্যাদি নিজস্ব হওয়া সত্ত্বেও জনবল ও রক্ষণাবেক্ষণের অর্থ বিভিন্ন সূত্র থেকে সংগ্রহ করে কার্যক্রমটি চালাতে হয়।

বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্রের পরিচালক শামীম আল মামুন আরও জানান, গত ছয় বছর ধরে সরকারের সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয় কার্যক্রমটিকে আর্থিক সহযোগিতা দিয়ে চলেছে। মন্ত্রণালয় এই সহযোগিতা দেয় প্রতি পর্বে দুই বছরের জন্য। প্রথম পর্ব শেষ হলে মন্ত্রণালয় আরও দুই বছর করে দুই বার এই সহযোগিতা দেয়। আগামী ৩১ ডিসেম্বর প্রকল্পের তৃতীয় পর্ব শেষ হচ্ছে। কার্যক্রমের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের নিয়োগ দেওয়া হয় প্রকল্প মেয়াদের ভিত্তিতে। তাই এর আগের প্রতি পর্বের মতোই ওই ৩১ ডিসেম্বর তারিখে তাদের চাকরির মেয়াদও শেষ হয়ে যাবে। চিরাচরিত নিয়ম অনুযায়ী এবারও তাদের সব প্রাপ্য (চার মাসের অতিরিক্ত বেতনসহ) অর্থ পরিপূর্ণভাবে পরিশোধের ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।

পরিচালক আরও বলেন, “বিগত সরকারের শেষ দিনগুলোতে আমরা জানতে পারি, সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের পক্ষে এই প্রকল্পে আর অর্থায়ন করা হবে না। কিন্তু বর্তমান সরকারের সময় নতুন করে আভাস মেলে, সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয় আরও দুই বছরের জন্য প্রকল্পটিতে অর্থায়ন করতে আগ্রহী। এসব দোটানার মধ্যে বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্রের পক্ষে নতুন প্রকল্পের প্রক্রিয়াকরণে সঙ্গত কারণেই কিছুটা সময় লেগেছে। তাই আগামী ৩১ ডিসেম্বর প্রকল্পের তৃতীয় পর্ব শেষ হলেও যাবতীয় আনুষ্ঠানিকতা সম্পন্ন করে সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের কাছ থেকে প্রকল্পের নতুন পর্বের অনুমোদন পেতে কিছুটা সময় লাগবে। একই কারণে ৩১ ডিসেম্বরের পর এই কার্যক্রমটি কিছু সময়ের জন্য স্থগিত থাকবে।”

বিবৃতিতে বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্র আরও জানায়, “আমরা কথাটি কর্মীদের আগেই জানিয়ে দিয়েছি এবং এই মর্মে আশ্বস্ত করেছি যে, প্রকল্পটি যতো তাড়াতাড়ি সম্ভব পাস করিয়ে আনতে সাধ্যমতো চেষ্টা করবো। কিন্তু ভ্রাম্যমাণ লাইব্রেরির কিছু সংখ্যক কর্মী দাবি করছেন, প্রকল্পের কর্মকাণ্ড একদিনও স্থগিত না রেখে এটিকে অব্যাহতভাবে চালিয়ে যেতে হবে। সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের দেশব্যাপী ভ্রাম্যমাণ লাইব্রেরি প্রকল্পের সহযোগিতায় ২০১৮ সালের ডিসেম্বর মাস থেকে বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্রের এই কার্যক্রম পরিচালিত হচ্ছে। এটি বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্রের সম্পূর্ণ নিজস্ব অর্থায়নে পরিচালিত কোনও কর্মসূচি নয়। তাছাড়া এত বড় কর্মসূচি দেশব্যাপী চালিয়ে যাওয়ার আর্থিক সঙ্গতিও কেন্দ্রের নেই। কিন্তু ওই কর্মীরা এ ব্যাপারে অবিচল থেকে প্রথমে কেন্দ্রের সামনে বিক্ষোভ প্রদর্শন এবং পরে অনশন কর্মসূচি শুরু করেছেন। আশা করি তারা বাস্তবতা অনুধাবন এবং তাদের ঘোষিত কর্মসূচি প্রত্যাহার করবেন।”

আলোকিত মানুষ চাই”- এই শ্লোগানকে প্রতিপাদ্য করে ভ্রাম্যমাণ লাইব্রেরি কার্যক্রম সহ বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্র কর্তৃক পরিচালিত সকল কার্যক্রম ও কর্মসূচি পূর্বের ন্যায় বহাল রাখা এবং সম্প্রসারণ করার আহবান জানিয়ে মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক গবেষক, বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্রের সংগঠক, সাপ্তাহিক নতুন কথা’র বিশেষ প্রতিনিধি, আরপি নিউজের সম্পাদক ও বিশিষ্ট কলামিস্ট কমরেড সৈয়দ আমিরুজ্জামান বলেন, “আলোকিত মানুষ গড়ার স্বপ্ন নিয়ে স্বপ্নদ্রষ্টা অধ্যাপক আবদুল্লাহ আবু সায়ীদের হাত ধরেই সত্তর দশকের শেষের দিকে প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্র। হাটি হাটি পা পা করে ৪৫ বছর পূর্ণ হয়েছে তার। স্বাধীন, প্রজ্ঞাসম্পন্ন, চিন্তাশীল ও সৃজনশীল মূল্যবোধসম্পন্ন, শক্তিশালী মানুষ তৈরির লক্ষ্যেই বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্র ৪৫ বছর থেকে কাজ করছে। সাহিত্য, দর্শন, বিজ্ঞান, রাজনীতি, অর্থনীতি, সমাজবিদ্যাসহ বিশ্বজ্ঞানের শ্রেষ্ঠ বইগুলোর পঠন-পাঠন এই কাজের অন্তর্ভুক্ত।
বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্র কোনো গৎ-বাঁধা, ছক-কাটা, প্রাণহীন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান নয়, বরং একটি সপ্রাণ সজীব পরিবেশ- জ্ঞান ও জীবন সংগ্রামের ভেতর দিয়ে পূর্ণতর মনুষ্যত্বে ও উন্নততর আনন্দে জেগে ওঠার এক অবারিত পৃথিবী। এক কথায়, যাঁরা সংস্কৃতিবান, কার্যকর, ঋদ্ধ মানুষ- যাঁরা অনুসন্ধিৎসু, সৌন্দর্যপ্রবণ, সত্যান্বেষী; যাঁরা জ্ঞানার্থ, সক্রিয়, সৃজনশীল ও মানবকল্যাণে সংশপ্তক ‘বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্র; তাঁদের পদপাতে, মানসবাণিজ্যে, বন্ধুতায়, উষ্ণতায় সচকিত একটি অঙ্গন।
মানুষের মধ্যে বই পড়ার অভ্যাস গড়ে তোলা এবং বিভিন্নবিষয়ক জ্ঞান ও রুচিশীল সংস্কৃতিচর্চার মাধ্যমে প্রগতিশীল চিন্তাচেতনার বিকাশ ঘটানো এর উদ্দেশ্য। -এই লক্ষ্য-উদ্দেশ্যকে এগিয়ে নিতে সকল কার্যক্রম ও কর্মসূচি পূর্বের ন্যায় বহাল রাখা এবং সম্প্রসারণ করার পরিকল্পনা গ্রহণ করা যেতে পারে। সংস্কারের নামে প্রতিক্রিয়াশীল কোনো ধ্যান-ধারণা গ্রহণযোগ্য হবে না।”

এ সংক্রান্ত আরও সংবাদ