বনানী রায়ের কথাসাহিত্য মহাভারতের মহারণ্যে

প্রকাশিত: ১২:৩৮ পূর্বাহ্ণ, ফেব্রুয়ারি ১১, ২০২৫

বনানী রায়ের কথাসাহিত্য মহাভারতের মহারণ্যে

খন্দকার সোহেল |

পাঠক হিসেবে ‘খুবই খারাপ’ তকমাটা আমার চারপাশের মানুষজন জানেন। আমি সবার বই পড়ি না। পড়তে পারি না। জোর করে বই পড়ার অভ্যাসটাও আমার নেই। কাউকে খুশি করার তাগিদটাও আমার সহজাত নয়। পুতু পুতু প্রেমালাপের উপন্যাস কিংবা টেবিল মেইড লেখাগুলো চট করেই ধরতে পারি বলে এইসব লেখা আমাকে মোটেও টানে না। বন্ধু সার্কেলের অসংখ্য লেখক তাই জানেন তাদের অনেকের বই আমার পড়া হয়নি। যে ভাষাচিত্র তিল তিল রক্তবিন্দু দিয়ে গড়ে তোলা সেই প্রতিষ্ঠানের অসংখ্য বইও পড়া হয়নি।
বলতে বা স্বীকার করতে তাই দ্বিধা নেই, সম্পাদক বা প্রকাশকের জায়গায় দাঁড়িয়ে শতভাগ ‘গুণবিচারী’ হওয়ার বদলে ‘সম্পর্কবিচারী’ হয়েই অসংখ্য বই প্রকাশ করতে হয়েছে।
তবে, ব্যতিক্রম তো কিছু আছেই। তথাকথিত সাইনবোর্ডসর্বস্ব বড়ো লেখকদের বই প্রকাশ না করে নতুন ও সম্ভাবনাময় লেখকদের বই প্রকাশের ব্রত নিয়েছিলাম ভাষাচিত্র প্রতিষ্ঠাকালে। যাত্রাপথের প্রায় দুই দশক পেরিয়ে বলতেই পারি, আমাদের স্বাপ্নিক যাত্রায় আমরা সফল হয়েছি। অসংখ্য তরুণ লেখক বর্তমানে আমাদের সাহিত্য জগতে মাথা উঁচু করেই পথ চলছেন যাদের প্রথম এবং প্রথমদিকের অসংখ্য বইয়ের প্রকাশক ভাষাচিত্র।
আমরা তারকা লেখকের পেছনে ছুটিনি। তারকা লেখক তৈরি করতে চেয়েছি। তাই আমাদের পথচলায় অসংখ্য নতুন ও নবীন লেখককে সময় দিতে হয়েছে, পরামর্শ দিতে হয়েছে, ভাবনা-বিনিময় করতে হয়েছে। লেখালেখির বিষয় ও বৈচিত্র্য নিয়ে অনেক অনেক বাতচিত হয়েছে নতুন প্রজন্মের লেখকদের সঙ্গে।
প্রকাশক বা সম্পাদক হিসেবে প্রতি বছর অসংখ্য পাণ্ডুলিপি জমা হয় ভাষাচিত্রে। অসংখ্য পাণ্ডুলিপি প্রকাশের উপযোগী হয় না বলে ফিরিয়েও দিতে হয়। যাদের ফিরিয়ে দেই তাদের অধিকাংশই উপন্যাসিক। অনেকে জানতে চান কেন বইটি প্রকাশের উপযোগী নয়। অনেকে ভালো বই পড়ার পরামর্শও চান।
নতুনদের সাজেস্ট করি কিছু বই। সমকালের তথাকথিত বাজারসাহিত্য উজিয়ে চিরকালের কিছু বইয়ের কথাই বলার চেষ্টা করি। তেমনই একটি বই ভাষাচিত্র প্রকাশিত শাহযাদ ফিরদাউস-এর ‘ব্যাস’। অনেককে পড়িয়েছি। শাহযাদ ফিরদাউসকে অনেকে লেখকদের লেখক বলে অভিহিত করেন। চমৎকৃত হই যখন ব্যাস পড়ি। এই বই একবার নয়, বার বার পড়ার মতো বই। এই বই চিরকালের পাঠকের জন্য বই। যারা পড়েছেন, তারা এর মাহাত্ম্য সম্পর্কে জানেন, বোঝেন।
অনেক নতুন লেখককে বলার চেষ্টা করেছি, ‘ভাই, আমাদের ইতিহাস, ঐতিহ্য, পুরাণ, লোকগাঁথা থেকে কোনো বিষয়, চরিত্র, কাহিনি নিয়ে উপন্যাস কেন লিখছেন না?’
মনমতো উত্তর পাইনি। তাই পাণ্ডুলিপি পড়তে গিয়ে হোঁটচ খাই, হতাশ হই এবং পাণ্ডুলিপি ফিরিয়ে দিতে বাধ্য হই।
একই ঘটনা ও চিন্তাসংক্রান্ত হতাশার সুড়ঙ্গে বহুবছর বাদে এক ফোঁটা আলোর রেখা হয়েই যেন এসেছেন বনানী রায়। চলতি বাজারসাহিত্যকে তুড়ি মেরে উনি যেন লেখালেখির একটা কঠিন পথই বেছে নিলেন…
২০২৪ সালে ভাষাচিত্র প্রকাশ করেছে বনানী রায়ের উপন্যাস ‘শকুন্তলা’। নাম শুনেই বইটা প্রকাশ করতে রাজি হয়ে গিয়েছিলাম। রাতারাতি বইটির দারুণ প্রচ্ছদ করে দিয়েছিলেন পার্থ দা। এই সুযোগে কৃতজ্ঞতা জানিয়ে রাখি কলকাতার প্রিয় প্রচ্ছদশিল্পী পার্থপ্রতিম দাস-এর প্রতি।
এ বছর অর্থাৎ বইমেলা ২০২৫-এ আসছে বনানী রায়-এর ‘মহাভারতের মহারণ্যে’ শীর্ষক আরও একটি উপন্যাস। মহাভারতের অসংখ্য চরিত্র, অসংখ্য ঘটনা এবং বিচিত্র সব কাহিনি বা আখ্যান নিয়ে দুই খণ্ডে তিনি লিখেছেন উপন্যাস ‘মহাভারতের মহারণ্যে’। ছোটো পরিসরে সাধারণ পাঠকের জন্য অসাধারণভাবে উপস্থাপনের চেষ্টা করেছেন বনানী রায়। প্রথম খণ্ড শিগগিরই অমর একুশে বইমেলায় প্রকাশিত হবে ভাষাচিত্র থেকে। দ্বিতীয় খণ্ড প্রকাশিত হবে বইমেলার পর।
যারা বিচিত্র বিষয় নিয়ে পড়তে পছন্দ করেন, যারা ইতিহাস, ঐতিহ্য, সংস্কৃতি ও সাহিত্যকে অন্তরে লালন করেন, চর্চা করেন তাদের জন্য বনানী রায় একটি চিরকালের বই রচনা করলেন বলেই মনে করি।
মহাভারতের মতো বিরাট একটি আখ্যান নিয়ে উপন্যাস লেখার সাহস সঞ্চয় করার জন্য হ্যাটস অফ দিদি Banani Roy.
আশা করি, লেখকপড়ুয়া বাদ দিয়ে প্রকৃত বইপড়ুয়া পাঠক আপনার এই পরিশ্রমের মূল্য দিবেন।

শুভকামনা নিরন্তর

> মহাভারতের মহারণ্যে
বনানী রায়
মুদ্রিত মূল্য ৪০০ টাকা
আগ্রহীরা কেউ যদি অনলাইনে অর্ডার করতে চান তাদের জন্য লিংক :
https://www.rokomari.com/book/452526/mohabharoter-moharonne

এ সংক্রান্ত আরও সংবাদ