সভায় ছাত্রশিবিরকে আমন্ত্রণ জানানোয় ছাত্রদলসহ পাঁচ ছাত্রসংগঠনের আপত্তি

প্রকাশিত: ১২:৩১ পূর্বাহ্ণ, ফেব্রুয়ারি ১৭, ২০২৫

সভায় ছাত্রশিবিরকে আমন্ত্রণ জানানোয় ছাত্রদলসহ পাঁচ ছাত্রসংগঠনের আপত্তি

নিজস্ব প্রতিবেদক | ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, ১৭ ফেব্রুয়ারি ২০২৫ : আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস ও শহীদ দিবস-২০২৫ উপলক্ষে ছাত্রসংগঠনগুলোর সঙ্গে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের মতবিনিময় সভায় বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রশিবিরকে আমন্ত্রণ জানানোয় প্রতিবাদ জানিয়েছে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী ছাত্রদলসহ পাঁচটি ক্রিয়াশীল ছাত্রসংগঠন। পরবর্তী সময়ে সভার নির্ধারিত বিষয়ে পুরো আলোচনা বাকি থাকতেই সভা শেষ করেছে আয়োজক কমিটি।

রোববার বিকেল পাঁচটার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের আবদুল মতিন ভার্চ্যুয়াল ক্লাসরুমে এই সভার আয়োজন করা হয়। সভায় শিবিরের নেতাদের উপস্থিতি নিয়ে আপত্তি তোলেন পাঁচটি ছাত্রসংগঠনের নেতারা। ছাত্রশিবিরকে এই সভায় কেন আমন্ত্রণ জানানো হলো, আয়োজকদের সে প্রশ্ন রাখেন তাঁরা। এই পাঁচ সংগঠন হলো বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী ছাত্রদল, বাংলাদেশ ছাত্র ইউনিয়ন, বিপ্লবী ছাত্র মৈত্রী, সমাজতান্ত্রিক ছাত্র ফ্রন্ট ( বাসদ) ও গণতান্ত্রিক ছাত্র কাউন্সিল।

এরপর একুশে ফেব্রুয়ারি ভাষাশহীদ দিবস পালনে সবার সহযোগিতা চেয়ে সভাটি সংক্ষিপ্ত করে শেষ করে দেওয়া হয় বলে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস ও শহিদ দিবস-২০২৫ আয়োজক কমিটির সদস্যসচিব ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর সাইফুদ্দিন আহমেদ জানান। তিনি বলেন, ‘সভায় ইসলামী ছাত্রশিবিরের উপস্থিতি নিয়ে ছাত্রদলসহ আরও কয়েকটি বাম ছাত্রসংগঠন আপত্তি তোলে। আমরা তাদের বলি, এটা তো মাতৃভাষা দিবস বিষয়ে আলোচনা। পরবর্তী সময়ে আমরা সংক্ষিপ্ত করে সভাটি শেষ করে দিই।’

সভায় অন্যান্য ছাত্রসংগঠনের নেতাদের সঙ্গে ইসলামী ছাত্রশিবিরের পক্ষে সংগঠনের কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক নুরুল ইসলাম সাদ্দাম, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সভাপতি এস এম ফরহাদ ও সেক্রেটারি জেনারেল মহিউদ্দিন খান উপস্থিত ছিলেন।

এ বিষয়ে ছাত্রদলের সাধারণ সম্পাদক নাছির উদ্দীন নাছির বলেন, ‘ছাত্রশিবির একাত্তর প্রশ্ন এখনো মীমাংসা করেনি। কিছুদিন আগেও ছাত্রশিবিরের পত্রিকা ছাত্র সংবাদে ’৭১–এর মুক্তিযুদ্ধকে তারা প্রশ্নবিদ্ধ করেছে। কিন্তু পরবর্তী সময়েও এ বিষয়ে তারা স্পষ্ট করে কিছু বলেনি। সেখানে তাদেরকে কেন সভায় আমন্ত্রণ জানানো হলো, এ বিষয়ে ছাত্রদলসহ সভায় বেশির ভাগ ছাত্রসংগঠন আপত্তি জানিয়েছে।’

সভায় ছাত্রশিবিরের নেতাদের আমন্ত্রণ জানানোর প্রতিবাদ জানিয়ে একটি বিবৃতি দিয়েছে গণতান্ত্রিক ছাত্রজোট। তাতে বলা হয়, ‘অভ্যুত্থানের পরেও ছাত্রশিবিরের প্রকাশনায় একাত্তরে গণমানুষের লড়াইকে বিকৃতভাবে উপস্থাপন করা হয়। সেই সংগঠনকে একুশ নিয়ে বৈঠকে আমন্ত্রণ জানানো এ দেশের মানুষের গণসংগ্রামের ইতিহাসের প্রতি তাচ্ছিল্য প্রদর্শনের শামিল। দীর্ঘদিন ছাত্রলীগের ছায়াতলে ছাত্রশিবিরের গুপ্ত রাজনীতি বিশ্ববিদ্যালয়ের রাজনৈতিক সংস্কৃতির জন্য দূষণীয়। একই সঙ্গে দেশের শিক্ষাঙ্গনে শিবিরের দীর্ঘদিনের সন্ত্রাস, দখলদারিত্ব, রগ কাটার মাধ্যমে হত্যাকাণ্ডের হিংস্র ইতিহাসও এ দেশের ছাত্রসমাজ ভুলে যায়নি। ফলে ছাত্রশিবিরের মতো একটি ধর্মীয় ফ্যাসিস্ট ও বিতর্কিত সংগঠনকে বারবার বৈঠকে ডেকে এনে গুরুত্বপূর্ণ বৈঠকগুলোকে অকার্যকর করার দায় বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনকে নিতে হবে।’

সভায় ছাত্রশিবিরের উপস্থিতির প্রতিবাদ জানিয়ে পৃথক বিবৃতি দিয়েছেন ছাত্র ইউনিয়নের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সভাপতি মেঘমল্লার বসু ও সাধারণ সম্পাদক মাঈন আহমেদ।