গাজায় গণহত্যা ও যুদ্ধাপরাধে স্টারলিংকের ভূমিকা

প্রকাশিত: ৮:৪৮ পূর্বাহ্ণ, এপ্রিল ৮, ২০২৫

গাজায় গণহত্যা ও যুদ্ধাপরাধে স্টারলিংকের ভূমিকা

আরিফুজ্জামান তুহিন |

ইসরায়েলি সেনাবাহিনী গাজায় ভূগর্ভস্থ টানেল (হামাসের টানেল নেটওয়ার্ক) শনাক্ত করতে এবং রিয়েল-টাইম সামরিক যোগাযোগের জন্য ‘স্টারলিংক’-এর স্যাটেলাইট ইন্টারনেট ব্যবহার করেছে। ২০২৩ সালের অক্টোবরে ইলন মাস্ক ইসরায়েল সফর করেন। হামাসের শীর্ষ নেতাদের লক্ষ্য করে ‘নিখুঁত’ ক্ষেপণাস্ত্র হামলায় স্টারলিংক স্যাটেলাইটের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা ছিল।

গাজায় প্রতিরোধ ক্ষমতা খুবই সীমিত। ইসরায়েল এই প্রতিরোধ যোদ্ধাদের খুঁজে খুঁজে ক্ষেপণাস্ত্র নিক্ষেপ করছে, যার লক্ষ্য নির্ধারণে স্টারলিংক স্যাটেলাইট ব্যবহৃত হচ্ছে। গাজায় নিহত বেসামরিক নাগরিকদের মৃত্যুর দায় শুধু ইসরায়েলের ওপরই বর্তায় না, ইলন মাস্কও এই হত্যাকাণ্ডে প্রযুক্তিগত সহায়তা দিয়ে যুদ্ধাপরাধে জড়িত। তার স্যাটেলাইট প্রযুক্তি গাজার নিরীহ মানুষের রক্তে রঞ্জিত হয়েছে।

বাংলাদেশে স্টারলিংক স্যাটেলাইট আনার জন্য তত্ত্বাবধায়ক সরকারের ভূমিকা প্রশ্নবিদ্ধ। এর পেছনে কারণ কী? ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে বাইডেন প্রশাসনের সুসম্পর্ক রয়েছে। ট্রাম্প প্রশাসনের সঙ্গে ইউনূসের সম্পর্ক খারাপ—এ তথ্য সবার জানা। ইউনূস সরকার আমেরিকার সঙ্গে সুসম্পর্ক বজায় রাখতে ইলন মাস্ককে পুরোপুরি সহায়তা করছে। ইলন মাস্ককে বিসনেস দিয়ে যদি আমেরিকার ট্রাম্প এর সাথে কিছু রিলেশন তৈরি করা যায়। তাহলে মধ্যপ্রাচ্যর শাসকদের কেন আমরা সমালোচনা করি? আমাদের সমালোচনা করার কি আদৌ অধিকার আছে?
যারা মধ্যপ্রাচ্যের সরকারগুলোর সমালোচনা করেন, তা যথার্থ। বাংলাদেশের জামাত-শিবিরের সমর্থকরা এরদোয়ান সরকারকে সমর্থন করে। নতুন গঠিত NCP দল তুরস্কের একে পার্টিকে (যা মূলত জামাত-ইসলামী আদর্শের) বাংলাদেশে প্রতিষ্ঠার জন্য তুরস্কে লবিং করছে। অথচ এরদোয়ান সাহেবের ইসরায়েলের সঙ্গে বছরে ৯ বিলিয়ন ডলার বাণিজ্য রয়েছে। প্যালেস্টাইনের মানুষের মৃত্যুতে এরদোয়ানের কী? তিনি তো মরছেন না! বরং ইসরায়েলের সঙ্গে তার ড্রোন তৈরির যৌথ প্রকল্পও রয়েছে।
জর্ডান, বাহরাইন, মরক্কো, সুদান, মিসর, কাতার—কার না ইসরায়েলের সঙ্গে বাণিজ্য রয়েছে? বিলিয়ন বিলিয়ন ডলারের লেনদেন। এমনকি বাংলাদেশের অনেকেই ইসরায়েলের সঙ্গে ব্যবসা করে তৃতীয় দেশের মাধ্যমে পণ্য রপ্তানি করে। অনন্ত জলিল (যিনি হিন্দি শব্দে চুল পড়ুন) ইসরায়েল ভ্রমণ করেছেন এবং অভিযোগ রয়েছে তিনি ইসরায়েলের সঙ্গে পোশাক ব্যবসা করছেন।

মধ্যপ্রাচ্যের মুসলিম দেশগুলোকে আপনি দোষ দিতে পারবেন না। কারণ, আপনার নিজের দেশের সরকারই আমেরিকার সুনজর পেতে যুদ্ধাপরাধী ইলন মাস্কের স্টারলিংক আমদানিতে উৎসাহী। তাহলে তুরস্কের এরদোয়ানকে দোষ দেবেন কীভাবে?
কেএফসি বা পিজ্জা হাট ভাঙচাল করলে, বাটা ভাঙলে, কিংবা আইএসের পতাকা উড়ালে কী লাভ? গ্রীষ্মে যখন ভয়াবহ লোডশেডিং হবে, তখন এই পাছার কারেন্ট কাজে লাগাতে পারবেন!

তাহলে আসল কথায় আসেন। সাম্রাজ্যবাদকে উপড়ে ফেলতে না পারলে দুনিয়ার যুদ্ধ থামবে না। সাম্রাজ্যবাদ বিরোধী লড়াই তীব্র করুন। সাম্রাজ্যবাদ বিরোধীতা, সাম্রাজ্যবাদ কাকে বলে এসব নিয়ে একটু পড়াশুনা করুন। ইউটিউব বেসড জ্ঞান চর্চা আপনাকে এসব শেখাবে না।
#
আরিফুজ্জামান তুহিন