গাজা ও রোহিঙ্গা সংকটে যুক্তরাষ্ট্রের ভূমিকা এবং বাংলাদেশের অর্থনীতি ও সামরিক টানাপোড়েন!

প্রকাশিত: ২:১২ অপরাহ্ণ, এপ্রিল ৯, ২০২৫

গাজা ও রোহিঙ্গা সংকটে যুক্তরাষ্ট্রের ভূমিকা এবং বাংলাদেশের অর্থনীতি ও সামরিক টানাপোড়েন!

শরীফ শমশির |

বাংলাদেশসহ সারা বিশ্ব যখন গাজায় ইসরায়েলী আগ্রাসনের বিরুদ্ধে সমাবেশ ও বিক্ষোভ করছে তখন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ও ইজরায়েলের প্রধানমন্ত্রী এক বৈঠকে মিলিত হয়ে গাজাকে কীভাবে আবাসিক প্লটে বিভক্ত করা যায় তার হিসাব কষছে। খুবই দূর্ভাগ্যজনক একটা পরিস্থিতি বিশ্বের শান্তিকামী মানুষ পর্যবেক্ষণ করছে। এটা জনগণের সামনে স্পষ্ট যে, যুক্তরাষ্ট্র ও ইজরায়েল সামরিক আগ্রাসনের মাধ্যমে ফিলিস্তিনিদের হত্যা করছে এবং তাদের মাতৃভূমি থেকে উচ্ছেদ করছে। জাতিসংঘ, ইউরোপীয় ইউনিয়ন, ওআইসি, আরবসহ মুসলিম বিশ্বের রাষ্ট্রসমূহ কার্যকর কিছু করছে না।

এখানে উল্লেখ্য, মিসর, জর্ডান এবং লেবানন এই সংকট মোকাবিলায় হিমসিম খাচ্ছে এবং মধ্যপ্রাচ্য হামাস ও ফাত্তাহ প্রশ্নে দ্বিধা বিভক্ত। সিরিয়া ও ইরান; শিয়া রাষ্ট্র হিসেবে ইজরায়েলকে কিছুটা মোকাবিলা করার কথা বললেও সিরিয়া এখন সুন্নীদের দখলে। ফলে ধর্মীয় কারণে কোনো মুসলিম রাষ্ট্র কার্যত ফিলিস্তিন প্রশ্নে একমত নয় এবং তারা নিষ্ক্রিয়। কারণ সকলেই জানেন, ইহুদিবাদ একটা যুক্তরাষ্ট্র-ইউরোপের একটা সামরিক প্রকল্প। এখানে যুদ্ধের পর যুদ্ধ করে রাষ্ট্রগুলো শান্তি চুক্তির পক্ষে চলে গেছে। ক্যাম্প ডেভিড চুক্তি, আনোয়ার সাদাতের শান্তি পুরস্কার ইত্যাদি একটা চরম বাস্তবতা। এই বাস্তবতার দুটি দিক; একটা হলো আরব বিশ্বের অনৈক্য এবং শেষ পর্যন্ত যুক্তরাষ্ট্রের উপর নির্ভরশীলতা। পরিণতিতে, গাজায় লক্ষ লক্ষ লোকের মৃত্যু এবং তার ধ্বংসস্তুপের উপর ট্রাম্পের আবাসিক পরিকল্পনা।

এই রকম একটা ত্রিশঙ্কু অবস্থায় পড়েছে বাংলাদেশ রোহিঙ্গা সমস্যা নিয়ে। রোহিঙ্গা সমস্যা ১৯৭৮ সাল থেকে ছিল মায়ানমার সরকার, বৌদ্ধ বনাম রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর রাজনৈতিক ও সামরিক পরিস্থিতি। এর মধ্যে প্রায় বার লক্ষের উপর রোহিঙ্গা বাংলাদেশে। বাংলাদেশ মানবিক কারণে তাদের আশ্রয় দিয়েছে, জাতিসংঘ চায় এখানে তার ত্রাণ কাজ চলুক। চীন- ভারত চায় আরকানের আশেপাশে তাদের বিনিয়োগ নিরাপদ থাকুক। জাপান চায় মিয়ানমার বাংলাদেশ ও ভারতের সাতরাজ্যে একটা বাণিজ্য জোট তৈরি হোক। সর্বশেষ যুক্তরাষ্ট্র চায় আরাকান আর্মির সাথে জোট বেঁধে জান্তা সরকারের পতন ঘটিয়ে আরকানে বাফার রাষ্ট্র বা জোন তৈরি হোক।

রোহিঙ্গা শরণার্থীদের আকাঙ্খা হলো নিরাপদে নাগরিক পরিচয়ে আরাকানে ফিরে যাবে যাতে আর কোনও গনহত্যার শিকার হতে না হয়। বাংলাদেশ চায় মিয়ানমার তার নাগরিকদের ফিরিয়ে নিক পূর্ণ নাগরিক মর্যাদায় ও নিরাপত্তা নিয়ে।

এটা সকলেই জানেন, রোহিঙ্গা সমস্যা এখন যুক্তরাষ্ট্রের সামরিক আকাঙ্খায় পরিণত হয়েছে। জাতিসংঘের মহাসচিব এসে মাটি প্রস্তুত করেছে সমস্যার মোড় ঘুরিয়ে দিয়ে, আরকান আর্মির সাথে কথা বলা, ত্রাণ পৌছানোর করিডোর পাওয়া, একজন প্রশান্ত মহাসাগরীয় যুক্তরাষ্ট্রের জেনারেল আসলেন, আমাদের সেনাবাহিনীর সাথে দেখা করলেন এবং বর্তমানে দুজন উচ্চ পদস্থ ডেলিগেশন আসছেন। তাঁদের সাথে যুক্তরাষ্ট্রের মিয়ানমারের রাষ্ট্রদূতও আসবেন। ফলে এটা পরিস্কার যে, রোহিঙ্গা সমস্যা এখন যুক্তরাষ্ট্রের সামরিক আকাঙ্খায় অগ্রাধিকারে এসেছে। কিছু না বলেও বলা যায়, রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর নিরাপদ প্রত্যাবর্তন এখন আর জরুরি নয়; প্রয়োজন রোহিঙ্গাদের বলির পাঁঠা বানানো। একই সাথে বাংলাদেশও একটা সামরিক সংকটে নিপতিত হবে।

বাংলাদেশের অর্থনীতি আগামী বছর একটা অগ্রগতিতে যাওয়ার কথা কিন্তু প্রবৃদ্ধির শ্লথগতি, ট্রাম্পের শুল্কারোপ, আইএমএফের কঠিন শর্ত ও নির্বাচন বনাম সংস্কারের রাজনৈতিক দ্বন্দ্ব, অর্থনীতিকে প্রবল চাপে ফেলবে।

গাজায় ইসরায়েলের নৃশংসতা বিশ্ববিবেক হয়তো দেখবে কিন্তু রোহিঙ্গাদের বিপর্যয়ের বোঝা বাংলাদেশকে এককভাবে টানতে হবে। বাংলাদেশ ও বাংলাদেশের জনগণকে একটা বিপর্যয়ের কিনারে যাতে যেতে না হয় তার জন্য রাজনৈতিক সচেতনতা দরকার।
মানুষ ভূরাজনৈতিক ও সামরিক টানাপোড়েন থেকে মুক্তি পাক- এই কামনা থাকলো।
#
শরীফ শমশির
লেখক ও গবেষক