মানুষ ও তার সভ্যতার প্রশ্ন ——-

প্রকাশিত: ৭:৩৬ পূর্বাহ্ণ, এপ্রিল ১২, ২০২৫

মানুষ ও তার সভ্যতার প্রশ্ন ——-

জয়দ্বীপ রায় |

অজ্ঞানের সীমায় জর্জরিত মানুষের জীবনের সবচেয়ে বড় ভ্রম হচ্ছে, সে নিজে যে এক সৃজনশীল প্রাণী, তা সে উপলব্ধি করতে পারে না। তার ফলস্বরূপ, অন্যকেও সে অস্বীকার করার চেষ্টা করে। কিন্তু ঐতিহাসিক বস্তুবাদী দর্শন ও রাজনৈতিক অর্থশাস্ত্রের বিচারে মানুষ ও তার সম্ভাবনা এক অসীম বিষয়, যা তার সমগোত্রীয় ভাই বা বোন হোমো সেপিয়েন্স দিয়েই সীমাবদ্ধ হয়ে যায়।

তবুও প্রকৃতির সাথে মানুষের সৃজনশীলতা এতটাই সম্পর্কিত যে, এর উত্তর প্রকৃতিই দিতে থাকে। খুব ধীরে হলেও, তা বিকশিত হয়।

বিকাশহীনতা প্রকৃতি কখনও প্রশ্রয় দেয় না, কারণ তা নিয়মের বাইরে প্রতিক্রিয়া হিসেবে ক্রিয়া করার প্রয়াস। প্রকৃতির নিয়মের ধারাবাহিকতা রক্ষা করার প্রয়াসকেই সমাজবিজ্ঞান ‘বিপ্লব’ নামে আখ্যা দিয়েছে। আর এই বিপ্লব হচ্ছে প্রতিনিয়ত ভাঙা-গড়ার খেলা—নিজের মধ্যে বা অন্যের মধ্যেও। এই খেলায় সবাই সমান। কেউ কারো আপন নয়, বরং অংশগ্রহণকারী—এক অর্থে, নিষ্কাম ও মায়াহীন কর্মযোগী।

এই প্রয়াস চালিয়ে যাওয়া সভ্যতার নৈতিক দায়িত্ব। এতে নিজের মাঝে, পরের মাঝে বা বৃহত্তর সমাজে প্রসববেদনার মতো কিছু ব্যথা অনুভূত হয়, মানুষের আবেগের উপর চাপ পড়ে, পুরাতন চিন্তা হুঁচট খায়, নতুনকে গ্রহণ করার প্রশ্ন উঠলে জড়তা সৃষ্টি হয়। কিন্তু এই সকল ব্যথা ও দ্বন্দ্ব ইতিহাসের বিশাল সময়ের বিবেচনায় অগ্রাহ্যযোগ্য। কারণ, দুই-তিন সিঁড়ি পরে এগুলো কেউ মনেও রাখবে না—রাখবে শুধু কতটুকু এগোলো।

তাই, আমি বা আমার বন্ধু বা আমার ভাই বা বোন কেউ বুঝুক আর না বুঝুক, আমাদের জানা বিপ্লবী ক্ষুদিরাম বা ভগৎ সিংয়ের মতো ফাঁসির কাস্টে ঝুলার প্রশ্নেও এই পথ না ছাড়াই একমাত্র পথ—কারণ জীবন আছে মানে সূর্যের আলোর মতো সত্য অস্তিত্ব নিয়েই আছে।

আর যেদিন মানবজীবন এই সত্য হারাবে, সেদিন মানবজীবনের এক স্থায়ী অন্ধকারাচ্ছন্ন মৃত্যু ঘটবে।

———-জয়দ্বীপ রায়, লন্ডন, ১২ এপ্রিল ২০২৫