বাংলা কাব্যধারায় আমূল বদলে দিয়েছিলেন কিংবদন্তি কবি সুকান্ত ভট্টাচার্য

প্রকাশিত: ১:১৮ পূর্বাহ্ণ, মে ১৩, ২০২৫

বাংলা কাব্যধারায় আমূল বদলে দিয়েছিলেন কিংবদন্তি কবি সুকান্ত ভট্টাচার্য

Manual3 Ad Code

সৈয়দ আমিরুজ্জামান |

যে শিশু ভূমিষ্ঠ হল আজ রাত্রে
তার মুখে খবর পেলুম:
সে পেয়েছে ছাড়পত্র এক,
নতুন বিশ্বের দ্বারে তাই ব্যক্ত করে অধিকার
জন্মমাত্র সুতীব্র চীৎকারে।
খর্বদেহ নিঃসহায়, তবু তার মুষ্টিবদ্ধ হাত
উত্তোলিত, উদ্ভাসিত
কী এক দুর্বোধ্য প্রতিজ্ঞায়।
সে ভাষা বোঝে না কেউ,
কেউ হাসে, কেউ করে মৃদু তিরস্কার।
আমি কিন্তু মনে মনে বুঝেছি সে ভাষা
পেয়েছি নতুন চিঠি আসন্ন যুগের-
পরিচয়-পত্র পড়ি ভূমিষ্ঠ শিশুর
অস্পষ্ট কুয়াশাভরা চোখে।
এসেছে নতুন শিশু, তাকে ছেড়ে দিতে হবে স্থান;
জীর্ণ পৃথিবীতে ব্যর্থ, মৃত আর ধ্বংসস্তূপ-পিঠে।
চলে যেতে হবে আমাদের।
চলে যাব- তবু আজ যতক্ষণ দেহে আছে প্রাণ
প্রাণপণে পৃথিবীর সরাব জঞ্জাল,
এ বিশ্বকে এ-শিশুর বাসযোগ্য ক’রে যাব আমি-
নবজাতকের কাছে এ আমার দৃঢ় অঙ্গীকার।
অবশেষে সব কাজ সেরে,
আমার দেহের রক্তে নতুন শিশুকে
করে যাব আশীর্বাদ,
তারপর হব ইতিহাস।।
-(‘ছাড়পত্র’ – সুকান্ত ভট্টাচার্য)

বাংলা সাহিত্যের মার্কসবাদী ও প্রগতিশীল চেতনার অধিকারী কিংবদন্তি কবি এবং বিপ্লবী কমরেড সুকান্ত ভট্টাচার্যের ৭৮তম মৃত্যুবার্ষিকী আজ ।

পিতা-নিবারন ভট্টাচার্য, মা-সুনীতি দেবী। ১৯২৬ সালের ১৫ আগস্ট তিনি তাঁর পৈতৃক নিবাস ফরিদপুর জেলার, বর্তমান গোপালগঞ্জ জেলার কোটালীপাড়া উপজেলার, উনশিয়া গ্রামে জন্ম গ্রহণ করেন। এক নিম্নবিত্ত পরিবারে জন্ম। বেলেঘাটা দেশবন্ধু স্কুল থেকে ১৯৪৫ সালে প্রবেশিকা পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করে অকৃতকার্য হন। এ সময় ছাত্র আন্দোলন ও বামপন্থী রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডে যুক্ত হওয়ায় তাঁর আনুষ্ঠানিক শিক্ষার সমাপ্তি ঘটে। সুকান্তের বাল্যবন্ধু ছিলেন কবি অরুনাচল বসু। সুকান্ত সমগ্রতে লেখা সুকান্তের চিঠিগুলির বেশিরভাগই অরুনাচল বসুকে লেখা। অরুনাচল বসুর মাতা কবি সরলা বসু সুকান্তকে পুত্রস্নেহে দেখতেন। সুকান্তের ছেলেবেলায় মাতৃহারা হলেও সরলা বসু তাকে সেই অভাব কিছুটা পুরন করে দিতেন। কবির জীবনের বেশিরভাগ সময় কেটেছিল কলকাতার বেলেঘাটার ৩৪ হরমোহন ঘোষ লেনের বাড়ীতে। সেই বাড়িটি এখনো অক্ষত আছে। পাশের বাড়ীটিতে এখনো বসবাস করেন সুকান্তের একমাত্র জীবিত ভাই বিভাস ভট্টাচার্য। পশ্চিমবঙ্গের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী কমরেড বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য সুকান্তের সম্পর্কিত ভাতুষ্পুত্র।

১৯৪৪ সালে কমিউনিস্ট পার্টির সদস্যপদ লাভ :

দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ, তেতাল্লিশের মনন্তর, ফ্যাসিবাদী আগ্রাসন, সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা প্রভৃতির বিরুদ্ধে তিনি কলম ধরেন। ১৯৪৪ সালে তিনি ভারতের কমিউনিস্ট পার্টির সদস্যপদ লাভ করেন। সেই বছর আকাল নামক একটি সংকলনগ্রন্থ তাঁর সম্পাদনায় প্রকাশিত হয়। কৈশোর থেকেই সুকান্ত যুক্ত হয়েছিলেন শ্রমিক শ্রেণির মতাদর্শে জগতটাকে বদলে ফেলার প্রত্যয়ে সাম্যবাদী রাজনীতির সঙ্গে। পরাধীন দেশের দুঃখ দুর্দশাজনিত বেদনা এবং শোষণমুক্ত স্বাধীন সমাজের স্বপ্ন, শোষিত মানুষের কর্ম জীবন এবং ভবিষ্যৎ পৃথিবীর জন্য সংগ্রাম তাঁর কবিতার মূল প্রেরণা। ১৯৪১ সালে সুকান্ত কলকাতা রেডিওর গল্পদাদুর আসরে যোগদান করেন। সেখানে প্রথমে তিনি রবীন্দ্রনাথের কবিতা আবৃত্তি করেন। রবীন্দ্রনাথের মৃত্যুর পর সেই আসরেই নিজের লেখা কবিতা পাঠ করে তাঁকে শ্রদ্ধা জানান। গল্পদাদুর আসরের জন্য সেই বয়সেই তাঁর লেখা গান মনোনীত হয়েছিল আর তাঁর সেই গান সুর দিয়ে গেয়েছিলেন সেকালের অন্যতম সেরা গায়ক পঙ্কজ মল্লিক। সুকান্তকে আমরা কবি হিসেবেই জানি। কিন্তু রবীন্দ্রনাথ যেমন কেবল মাত্র কবি ছিলেন না, সাহিত্যের সকল ক্ষেত্রে তাঁর ছিলো অবাধ বিচরণ। তেমনি সুকান্তও ঐ বয়সেই লিখেছিলেন কবিতা ছাড়াও, গান, গল্প, নাটক এবং প্রবন্ধ। তাঁর ‘ছন্দ ও আবৃত্তি’ প্রবন্ধটি পাঠেই বেশ বোঝা যায় ঐ বয়সেই তিনি বাংলা ছন্দের প্রায়োগিক দিকটিই শুধু আয়ত্বে আনেন নি, সে নিয়ে ভালো তাত্বিক দক্ষতাও অর্জন করেছিলেন।

Manual6 Ad Code

আট-নয় বছর বয়স থেকেই সাহিত্য চর্চার শুরু :

আট-নয় বছর বয়স থেকেই সুকান্ত লিখতে শুরু করেন। স্কুলের হাতে লেখা পত্রিকা ‘সঞ্চয়ে’ একটি ছোট্ট হাসির গল্প লিখে আত্মপ্রকাশ করেন। তার দিনকতক পরে বিজন গঙ্গোপাধ্যায়ের ‘শিখা’ কাগজে প্রথম ছাপার মুখ দেখে তাঁর লেখা বিবেকান্দের জীবনী। মাত্র এগার বছর বয়সে ‘রাখাল ছেলে’ নামে একটি গীতি নাট্য রচনা করেন। এটি পরে তাঁর ‘হরতাল’ বইতে সংকলিত হয়। বলে রাখা ভালো, পাঠশালাতে পড়বার কালেই ‘ধ্রুব’ নাটিকার নাম ভূমিকাতে অভিনয় করেছিলেন সুকান্ত। সপ্তম শ্রেণিতে পড়ার সময় বাল্য বন্ধু লেখক অরুণাচল বসুর সঙ্গে মিলে আরেকটি হাতে লেখা কাগজ ‘সপ্তমিকা’ সম্পাদনা করেন। অরুণাচল তাঁর আমৃত্যু বন্ধু ছিলেন। মার্কসবাদী চেতনায় আস্থাশীল কবি হিসেবে সুকান্ত কবিতা লিখে বাংলা সাহিত্যে স্বতন্ত্র স্থান করে নেন। সুকান্তকে বলা হয় গণমানুষের কবি। অসহায়-নিপীড়িত সর্বহারা মানুষের সুখ, দুঃখ তার কবিতার প্রধান বিষয়। অবহেলিত মানুষের অধিকার আদায়ের স্বার্থে ধনী মহাজন অত্যাচারী প্রভুদের বিরুদ্ধে নজরুলের মতো সুকান্তও ছিলেন সক্রিয়। যাবতীয় শোষণ-বঞ্চনার বিপক্ষে সুকান্তের ছিল দৃঢ় অবস্থান। তিনি তার কবিতার নিপুণ কর্মে দূর করতে চেয়েছেন শ্রেণী বৈষম্য। মানবতার জয়ের জন্য তিনি লড়াকু ভূমিকায় অবতীর্ণ হয়েছেন। অসুস্থতা আর অর্থাভাব তাকে কখনো দমিয়ে দেয়নি। মানুষের কল্যাণের জন্য সুকান্ত নিরন্তর নিবেদিত থেকেছেন। তিনি মানবিক চেতনায় উজ্জীবিত হয়ে বিদ্রোহের ডাক দিয়েছেন। তার অগ্নিদীপ্ত সৃষ্টি প্রণোদনা দিয়ে সব ধরনের প্রতিবন্ধকতা অতিক্রম করতে প্রয়াসী ছিলেন। মানবিক চেতনায় উদ্বুদ্ধ কবি সুকান্ত ভট্টাচার্য বাংলা কাব্যধারার প্রচলিত প্রেক্ষাপটকে আমূল বদলে দিতে পেরেছিলেন। সুকান্ত কমিউনিস্ট পার্টির পত্রিকা দৈনিক স্বাধীনতার (১৯৪৫) ‘কিশোর সভা’ বিভাগ সম্পাদনা করতেন। মার্কসবাদী চেতনায় আস্থাশীল কবি হিসেবে সুকান্ত কবিতা লিখে বাংলা সাহিত্যে স্বতন্ত্র স্থান করে নেন। তার কবিতায় অনাচার ও বৈষ্যমের বিরুদ্ধে প্রবল প্রতিবাদ পাঠকদের প্রভাবিত করে তোলে। গণমানুষের প্রতি গভীর মমতায় প্রকাশ ঘটেছে তাঁর কবিতায়।

তাঁর রচনাবলির মধ্যে বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য হলো:

ছাড়পত্র (১৯৪৭), পূর্বাভাস (১৯৫০), মিঠেকড়া (১৯৫১), অভিযান (১৯৫৩), ঘুম নেই (১৯৫৪), হরতাল (১৯৬২), গীতিগুচ্ছ (১৯৬৫) প্রভৃতি। পরবর্তীকালে উভয় বাংলা থেকে সুকান্ত সমগ্র নামে তাঁর রচনাবলি প্রকাশিত হয়। সুকান্ত ফ্যাসিবাদবিরোধী লেখক ও শিল্পিসঙ্ঘের পক্ষে আকাল (১৯৪৪) নামে একটি কাব্যগ্রন্থ সম্পাদনা করেন। সুকান্তের কবিতা বিষয়বৈচিত্র্যে ও লৈখিক দক্ষতায় অনন্য। সাধারণ বস্তুকেও সুকান্ত কবিতার বিষয় করেছেন। বাড়ির রেলিং ভাঙা সিঁড়ি উঠে এসেছে তার কবিতায়। সুকান্তের কবিতা সব ধরনের বাধা-বিপত্তিকে জয় করতে শেখায়। যাপিত জীবনের দুঃখ-যন্ত্রণাকে মোকাবেলা করার সাহস সুকান্তের কবিতা থেকে পাওয়া যায়। তারুণ্যের শক্তি দিয়ে উন্নত শিরে মানুষের মর্যাদার জন্য মানুষকে প্রস্তুত হওয়ার আহ্বান সুকান্তের কবিতায় লক্ষণীয়। সুকান্তের কবিতা সাহসী করে, উদ্দীপ্ত করে। তার বক্তব্যপ্রধান সাম্যবাদী রচনা মানুষকে জীবনের সন্ধান বলে দেয়। স্বল্প সময়ের জীবনে তিনি বাংলা সাহিত্যকে অনেক কিছু দিয়ে গেছেন। রবীন্দ্রনাথ, নজরুল, দিজেন্দ্রলাল রায়, জীবনানন্দ দাশসহ সে সময়ের বড় বড় কবির ভিড়ে তিনি হারিয়ে যাননি। নিজের যোগ্যতার স্বাক্ষর রেখে গেছেন নিজ প্রতিভা, মেধা ও মননে। সুকান্ত তার বয়সিক সীমাবদ্ধতাকে অতিক্রম করেছেন তার পরিণত ভাবনায়। ভাবনাগত দিকে সুকান্ত তার বয়স থেকে অনেক বেশি এগিয়ে ছিলেন।

Manual6 Ad Code

মাত্র ২১ বছর বয়সে বিদায় নিলেন স্বাধীনতার কিংবদন্তি কবি সুকান্ত :

একাধারে বিপ্লবী ও স্বাধীনতার আপোসহীন সংগ্রামী কবি সুকান্ত ছিলেন কমিউনিস্ট পার্টির সার্বক্ষণিক কর্মী। পার্টি ও সংগঠনের কাজে অত্যধিক পরিশ্রমের ফলে নিজের শরীরের উপর যে অত্যাচারটুকু তিনি করলেন তাতে তাঁর শরীরে প্রথম ম্যালেরিয়া ও পরে দুরারোগ্য ক্ষয়রোগে আক্রান্ত হয়ে ১৯৪৭ সালের ১৩ই মে মাত্র ২১ বছর বয়সে কলিকাতার ১১৯ লাউডট ট্রিষ্ট্রের রেড এড কিওর হোমে মৃত্যুবরণ করেন। সুকান্ত ভট্টাচার্যের জীবন মাত্র মাত্র ২১ বছরের আর লেখালেখি করেন মাত্র ৬/৭ বছর। সামান্য এই সময়ে নিজেকে মানুষের কবি হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করে গেছেন। তাঁর রচনা পরিসরের দিক থেকে স্বল্প অথচ তা ব্যাপ্তির দিক থেকে সুদূরপ্রসারী।

বিপ্লবী কবি সুকান্ত ভট্টাচার্যের গ্রন্থ তালিকা :

Manual7 Ad Code

ছাড়পত্র (১৩৫৪ ব.), ছাড়পত্র, আগামী, রবীন্দ্রনাথের প্রতি, চারাগাছ, খবর, ইউরোপের উদ্দেশ্যে, প্রস্তুত, প্রার্থী, একটি মোরগের কাহিনী, সিঁড়ি, কলম, দুরাশা, মৃত্যু, আগ্নেয়গিরি, ঠিকানা, লেনিন, অনুভব, কাশ্মীর, সিগারেট, দেশলাই কাঠি, বিরতি, চিল, চট্টগ্রামঃ১৯৪৩, মধ্যবিত্ত’৪২, সেপ্টেম্বর’৪৬, ঐতিহাসিক, শত্রু এক, মজুরদের ঝড় (ল্যাংস্টন হিউজ), ডাক, বোধন, রানার, মৃত্যুজয়ী গান, কনভয়, ফসলের ডাকঃ১৩৫১, কৃষকের গান, এই নবান্নে, আঠারো বছর বয়স, হে মহাজীবন, ঘুম নেই (১৩৫৭ ব*), শুরুতেই, বিক্ষোভ, পয়লা মে-র কবিতাঃ১৯৪৬, পরিখা, সব্যসাচী, উদ্বীক্ষণ, বিদ্রোহের গান, অনন্যেপায়, অভিবাদন, জনতার মুখে ফোটে বিদ্যুৎবাণী, কবিতার খসড়া, আমরা এসেছি, একুশে নভেম্বরঃ১৯৪৬, দিন বদলের পালা, মুক্ত বীরদের প্রতি, প্রিয়তমাসু, ছুরি, সূচনা, অদ্বৈত, মণিপুর, দিকপ্রান্তে, চিরদিনের, নিভৃত (অনিশ্চিত পৃথিবীতে অরণ্যের ফুল), বৈশম্পায়ন, নিভৃত (বিষন্ন রাত প্রসন্ন দিন আনো), কবে, অলক্ষ্যে, মহাত্মাজীর প্রতি, পঁচিশে বৈশাখের উদ্দেশে, পরিশিষ্ট, মীমাংসা, অবৈধ, ১৯৪১ সাল, রোমঃ১৯৪৩, জনরব, রৌদ্রের গান, দেওয়ালী, পূর্বাভাস (১৩৫৭ ব*), পূর্বাভাস, হে পৃথিবী, সহসা, স্মারক, নিবৃত্তির পূর্বে, স্বপ্নপথ, সুতরাং, বুদ্বুদমাত্র, আলো অন্ধকার, প্রতিদ্বন্দ্বী, আমার মৃত্যুর পর, স্বতঃসিদ্ধ, মুহূর্ত (ক), মুহূর্ত (খ), তরঙ্গ ভঙ্গ, আসন্ন আঁধারে, পরিবেশন, অসহ্য দিন, উদ্যোগ, পরাভব, বিভীষণের প্রতি, ঘুম ভাঙার গানহদিশ, দেয়ালিকা, প্রথমবার্ষিকী, তারুণ্য, মৃত পৃথিবী, দূর্মর, অভিযান নাটিকা (১৩৬০ ব* ), অভিযান (১৩৫০ সাল), সূর্যপ্রনাম(১৩৪৮ সাল), বইয়ের শেষে সচিত্র মঞ্চ নির্দেশনা।

মিঠে-কড়া (১৯৫১ ইং), অতি কিশোরের ছড়া, এক যে ছিল, ভেজাল, গোপন খবর, জ্ঞানী, মেয়েদের পদবী, বিয়েবাড়ির মজা, রেশনকার্ড, খাদ্য-সমস্যার সমাধান, পুরানো ধাঁধা, ব্ল্যাক-মার্কেট, পৃথিবীর দিকে তাকাও, সিপাহী বিদ্রোহ, আজব লড়াই, হরতাল (১৩৬৯ ব*), লেজের কাহিনী (সোভিয়েট শিশুসাহিত্যিক ডি বিয়াঙ্কির ‘টেইলস’ গল্পের অনুবাদ), ষাঁড়-গাধা ছাগলের কথা, দেবতাদের ভয় (ব্যাঙ্গার্থক নাটিকা), রাখাল ছেলে, গীতিগুচ্ছ (১৯৬৫ ইং), বেশ কয়েকটি গানের সংকলন। আকাল (১৯৪৪ ইং)।

Manual4 Ad Code

এবার শেষ করছি, মার্কসবাদী ও প্রগতিশীল চেতনার কিংবদন্তি কবি এবং বিপ্লবী কমরেড সুকান্ত ভট্টাচার্যের আরেকটি কবিতা দিয়ে।

লেনিন
– সুকান্ত ভট্টাচার্য

লেনিন ভেঙেছে রুশে জনস্রোতে অন্যায়ের বাঁধ,
অন্যায়ের মুখোমুখি লেনিন প্রথম প্রতিবাদ।
আজকেও রুশিয়ার গ্রামে ও নগরে
হাজার লেনিন যুদ্ধ করে,
মুক্তির সীমান্ত ঘিরে বিস্তীর্ণ প্রান্তরে।
বিদ্যুৎ-ইশারা চোখে, আজকেও অযুত লেনিন
ক্রমশ সংক্ষিপ্ত করে বিশ্বব্যাপী প্রতীক্ষিত দিন,
বিপর্যস্ত ধনতন্ত্র, কণ্ঠরুদ্ধ, বুকে আর্তনাদ;
– আসে শত্রুজয়ের সংবাদ।

সযত্ন মুখোশধরী ধনিকেরও বন্ধ আস্ফালন,
কাঁপে হৃৎযন্ত্র তার, চোখে মুখে চিহ্নিত মরণ।
বিপ্লব হয়েছে শুরু, পদানত জনতার ব্যগ্র গাত্রোত্থানে,
দেশে দেশে বিস্ফোরণ অতর্কিতে অগ্ন্যুৎপাত হানে।
দিকে দিকে কোণে কোণে লেনিনের পদধ্বনি
আজো যায় শোনা,
দলিত হাজার কণ্ঠে বিপ্লবের আজো সম্বর্ধনা।
পৃথিবীর প্রতি ঘরে ঘরে,
লেনিন সমৃদ্ধ হয় সম্ভাবিত উর্বর জঠরে।
আশ্চর্য উদ্দাম বেগে বিপ্লবের প্রত্যেক আকাশে
লেনিনের সূর্যদীপ্তি রক্তের তরঙ্গে ভেসে আসে;
ইতালী, জার্মান, জাপান, ইংলন্ড, আমেরিকা, চীন,
যেখানে মুক্তির যুদ্ধ সেখানেই কমরেড লেনিন।
অন্ধকার ভারতবর্ষ: বুভুক্ষায় পথে মৃতদেহ
অনৈক্যের চোরাবালি; পরস্পর অযথা সন্দেহ;
দরজায় চিহ্নিত নিত্য শত্রুর উদ্ধত পদাঘাত,
অদৃষ্ট র্ভৎসনা-ক্লান্ত কাটে দিন, বিমর্ষ রাত
বিদেশী শৃঙ্খলে পিষ্ট, শ্বাস তার ক্রমাগত ক্ষীণ-
এখানেও আয়োজন পূর্ণ করে নিঃশব্দে লেনিন।
লেনিন ভেঙেছে বিশ্বে জনস্রোতে অন্যায়ের বাঁধ,
অন্যায়ের মুখোমুখি লেনিন জানায় প্রতিবাদ।
মৃত্যুর সমুদ্র শেষ; পালে লাগে উদ্দাম বাতাস
মুক্তির শ্যামল তীর চোখে পড়ে, আন্দোলিত ঘাস।
লেনিন ভুমিষ্ঠ রক্তে, ক্লীবতার কাছে নেই ঋণ,
বিপ্লব স্পন্দিত বুকে, মনে হয় আমিই লেনিন।।

পরিশেষে, শ্রমিক শ্রেণির রাজনৈতিক চিন্তা ও মতাদর্শের তাত্ত্বিক বিশ্লেষক ও প্রবক্তা মহান দার্শনিক ও সমাজবিজ্ঞানী কার্ল মার্কসের গুরুত্বপূর্ণ ও পৃথিবী বিখ্যাত উক্তি দিয়ে শেষ করছি। তিনি বলেছিলেন, “দার্শনিকরা জগতটাকে শুধু বিভিন্নভাবে ব্যাখ্যাই করে গেলেন, মূল কাজ হচ্ছে বদলে ফেলা।” কিংবদন্তি কবি ও বিপ্লবী কমরেড সুকান্ত ভট্টাচার্য সেই কাজটাই করে গেছেন। ৭৭তম মৃত্যুবার্ষিকীতে তাঁর বিনম্র শ্রদ্ধা ও অভিবাদন!।

#
সৈয়দ আমিরুজ্জামান
মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক গবেষক, সাংবাদিক ও কলামিস্ট;
বিশেষ প্রতিনিধি, সাপ্তাহিক নতুনকথা;
সম্পাদক, আরপি নিউজ;
কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য, জাতীয় কৃষক সমিতি;
সম্পাদকমন্ডলীর সদস্য, বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টি, মৌলভীবাজার জেলা;
‘৯০-এর মহান গণঅভ্যুত্থানের সংগঠক ও সাবেক কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য, বাংলাদেশ ছাত্রমৈত্রী।
সাবেক কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য, বাংলাদেশ খেতমজুর ইউনিয়ন।
সাধারণ সম্পাদক, মাগুরছড়ার গ্যাস সম্পদ ও পরিবেশ ধ্বংসের ক্ষতিপূরণ আদায় জাতীয় কমিটি।
প্রাক্তন সভাপতি, বাংলাদেশ আইন ছাত্র ফেডারেশন।
E-mail : syedzaman.62@gmail.com
WhatsApp : 01716599589
মুঠোফোন: ০১৭১৬৫৯৯৫৮৯

এ সংক্রান্ত আরও সংবাদ

 


Follow for More!

Manual1 Ad Code
Manual7 Ad Code