ঢাকা থেকে চট্টগ্রাম অভিমুখে বামপন্থিদের নেতৃত্বে জনতার রোডমার্চ শুরু

প্রকাশিত: ১:০১ অপরাহ্ণ, জুন ২৭, ২০২৫

ঢাকা থেকে চট্টগ্রাম অভিমুখে বামপন্থিদের নেতৃত্বে জনতার রোডমার্চ শুরু

নিজস্ব প্রতিবেদক | ঢাকা, ২৭ জুন ২০২৫ : চট্টগ্রাম বন্দর ব্যবস্থাপনায় বিদেশি কোম্পানিকে যুক্ত করার পদক্ষেপ, রাখাইনের জন্য মানবিক করিডোরের উদ্যোগ বন্ধের দাবিতে ঢাকা থেকে চট্টগ্রাম অভিমুখে রোডমার্চ শুরু করেছে বিভিন্ন বামপন্থি, প্রগতিশীল রাজনৈতিক দল ও সংগঠন।

শুক্রবার (২৭ জুন ২০২৫) সকালে সাম্রাজ্যবাদবিরোধী দেশপ্রেমিক জনগণ’-এর ব্যানারে জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে থেকে এই রোডমার্চ শুর হয়।

এর আগে ছোট ছোট মিছিল নিয়ে জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে আসেন বিভিন্ন সংগঠনের নেতাকর্মীরা। তাদের প্রায় সবার হাতেই দেখা যায় প্ল্যাকার্ড ও ব্যানার।

রোডমার্চ পূর্ব সমাবেশে বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টির সাধারণ সম্পাদক ও বাম গণতান্ত্রিক জোটের সমন্বয়ক কমরেড রুহিন হোসেন প্রিন্স বলেন বলেন, ‘চট্টগ্রাম বন্দর কোনোভাবেই বিদেশিদের হাতে দেয়ার সুযোগ নেই। যেকোনো মূল্যে জাতীয় সম্পদ ও সার্বভৌমত্ব রক্ষা করতে হবে।’

তিনি আরও বলেন, ‘রাখাইনে করিডোর দেয়ার উদ্যোগ দেশের সার্বভৌমত্বের ওপর হুমকি। তাই দেশের জন্য এমন হুমকি প্রতিহত করা হবে।’

জানা গেছে, রোডমার্চটি নারায়ণগঞ্জ, সোনারগাঁ, চান্দিনা ও কুমিল্লা হয়ে আজ রাতে ফেনী পৌঁছাবে। পথে নারায়ণগঞ্জ ও কুমিল্লার বিভিন্ন পয়েন্টে পথসভা ও মিছিল এবং কুমিল্লায় প্রথম দিনের সমাপনী সমাবেশ অনুষ্ঠিত হবে।
আগামীকাল শনিবার সকালে ফেনী থেকে যাত্রা শুরু করে মিরসরাই, সীতাকুণ্ডে পথসভা ও মিছিল এবং চট্টগ্রাম বন্দরের সামনে সমাপনী সমাবেশের মাধ্যমে রোডমার্চ শেষ হবে। ঢাকা-চট্টগ্রাম রোডমার্চ কর্মসূচির সঙ্গে সংহতি জানিয়ে এই দুই দিন দেশের সব জেলা-উপজেলায় বিক্ষোভ কর্মসূচি পালিত হবে।

দুই দিনব্যাপী ঢাকা-চট্টগ্রাম রোড মার্চ সফল করার আহবান জানিয়ে সাম্রাজ্যবাদবিরোধী দেশপ্রেমিক জনগণের পক্ষ থেকে সংহতি প্রকাশ করে বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টির মৌলভীবাজার জেলা সম্পাদক মন্ডলীর সদস্য, আরপি নিউজের সম্পাদক ও বিশিষ্ট কলামিস্ট কমরেড সৈয়দ আমিরুজ্জামান জানান, “চট্টগ্রাম বন্দর দেশের গুরুত্বপূর্ণ জাতীয় সম্পদ। দেশের অর্থনীতির চালিকাশক্তি-হৃৎপিণ্ড।

আমদানি ও রপ্তানির ৯২ শতাংশ এই বন্দর দিয়ে হয়। ভৌগোলিক কারণে এই বন্দরের সঙ্গে জাতীয় সার্বভৌমত্ব ও নিরাপত্তা জড়িত। চট্টগ্রাম বন্দরের সবচেয়ে বৃহৎ ও লাভজনক টার্মিনাল হলো নিউমুরিং টার্মিনাল। এই টার্মিনালকে বিদেশি কম্পানির হাতে তুলে দেওয়ার পরিকল্পনা করছে অন্তর্বর্তী সরকার।
আন্তর্জাতিক দরপত্র ছাড়াই দুবাইভিত্তিক ডিপি ওয়ার্ল্ড কম্পানিকে চট্টগ্রামের নিউমুরিং টার্মিনালের দায়িত্ব দিতে সরকার এখন মরিয়া। সরকারের এই এখতিয়ারবহির্ভূত কর্মকাণ্ড সর্বস্তরের জনগণের মধ্যে গভীর উদ্বেগ সৃষ্টি করেছে। বন্দরকে আরো লাভজনক করতে জাতীয় সক্ষমতা বৃদ্ধি না করে বিদেশিদের কাছে ইজারা দিলে বন্দরের ওপর বিদেশি কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠিত হবে। দেশের সার্বভৌমত্ব ও নিরাপত্তা হুমকির মুখে পড়বে।”
তিনি আরও বলেন, “সরকার মায়ানমারের রাখাইনের জন্য কথিত মানবিক করিডর বা ত্রাণ চ্যানেল দেওয়ার ঘোষণা দিয়েছে।
যুক্তরাষ্ট্রসহ পশ্চিমা দেশগুলো এই করিডর দ্রুত বাস্তবায়নের জন্য বাংলাদেশকে চাপ দিচ্ছে। কিন্তু মানবিক করিডরের কথা বলা হলেও তা যুক্তিরাষ্ট্রের ‘চীন ঘেরাও’ নীতির স্বার্থে যে ব্যবহৃত হবে, তা বলার অপেক্ষা রাখে না। ফলে বাংলাদেশ ভূ-রাজনৈতিকভাবে আক্রান্ত হবে। বাংলাদেশকে মায়ানমারের বিরুদ্ধে যুদ্ধে লিপ্ত হতে বাধ্য করবে। ভারত, চীন, পাকিস্তানসহ নানা শক্তির দ্বন্দ্ব-সংঘাত ও ছায়া যুদ্ধে জড়িয়ে পড়বে বাংলাদেশ। সেই সঙ্গে রাখাইন করিডর মারফত বাংলাদেশসহ এই অঞ্চলে মার্কিন সাম্রাজ্যবাদী নিয়ন্ত্রণ বাড়বে।”

কমরেড সৈয়দ আমিরুজ্জামান জানিয়েছেন, সরকার মার্কিন স্যাটেলাইট কম্পানি স্টারলিংককে এ দেশে ইন্টারনেট সেবা দেওয়ার অনুমতি দিয়েছে এবং এরই মধ্যে তা চালু হয়েছে। এই পদক্ষেপ বাংলাদেশের নিরাপত্তা ও সার্বভৌমত্বের জন্য মারাত্মক হুমকি। কারণ এই মার্কিন কম্পানি শুধু নিরীহ ইন্টারনেট সেবাই দেয় না, সেই সঙ্গে দেশে দেশে সামরিক ও রাজনৈতিক নজরদারি চালায়।
তিনি আরও জানান, সামরিক শিল্পের মতো স্পর্শকাতর খাতে তুরস্ক ও কাতারকে অস্ত্র তৈরির কারখানা নির্মাণের আহবান জানিয়েছে অন্তর্বর্তী সরকার। যুদ্ধমুক্ত পৃথিবী ও বিশ্বশান্তির পক্ষে বাংলাদেশের জন্য এটি সামরিক ঝুঁকি বাড়াবে। সামগ্রিক বিবেচনায় দেশের সম্পদ ও সার্বভৌমত্ব রক্ষায় দেশবিরোধী সব পদক্ষেপ অবিলম্বে বন্ধের দাবিতে এই রোডমার্চ কর্মসূচি।

এ সংক্রান্ত আরও সংবাদ