সিলেট ১২ই জুলাই, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ | ২৮শে আষাঢ়, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
প্রকাশিত: ৩:৫৭ অপরাহ্ণ, জুলাই ১০, ২০২৫
দ্বৈপায়ন, আমাদের ভ্রাতুষ্পুত্র।
তার দাদুর হাত ধরে প্রথম স্কুলে যাওয়া শুরু তার। বাবার তখন বুড়ো বয়স, হার্টেও সমস্যা, তবুও কোলে করে ৫ বছরের শিশুটিকে প্রতিদিন স্কুলে নিয়ে যেতেন তিনি, তাঁর চলে যাওয়ার পর মা নিয়ে যেতো।
প্রথম প্রথম নাকি মা যখন স্কুলে রেখে চলে আসত, সে মাকে ছাড়ত না, মার ইনাফির প্রান্ত ধরে কান্না করত, বাধ্য হয়ে মা স্কুলের পাশে বেঞ্চে বসে থাকত, এত মুখচোরা ছিল বাচ্চাটা!
এখন সারাবেলা তার কাটে দৌঁড়ঝাঁপ করে, হাসি তামাশায়, সকালে, দুপুরে, বিকেলেও তার বয়সী, কমবয়সী, তার চেয়েও একটু বয়সে বড়োরা এসে আড্ডা জমায় আমাদের বাড়ির বারান্দায়, তারপর চলে হুটোপুটি, দৌঁড়ঝাঁপ, খেলা, মোবাইলও হাতে থাকে; তবে সে বিভিন্ন খবরাখবর পড়ে, কমিকস পড়ে, দেখে, গেমও খেলে।
তার বয়সীদের মধ্যে সে নেতা, সবাই তারে ‘বস’ বলে ডাকে, শুনে সে মুখে একটা গম্ভীর ভাব ধরে রাখে, আমরা খুব মজা পাই দেখে।
আর আমাদের সান্ধ্যকালীন আড্ডায়ও সে নিয়মিত সদস্য, প্রতিদিন উপস্থিত থাকে, খুব মজা পায়, মজার গল্প শুনে হাসিতে লুটিয়ে পড়ে সময় সময়।
তবে তার সবচেয়ে বড় বন্ধু বোধ হয় তার নানু, আমাদের মা। দুনিয়ার এমন কোনও বিষয় নেই যা সে তার নানুকে বলে না, সৌরজগত থেকে শুরু করে কার্টুন, সিনেমা, খেলা, রাজনীতি, সব! শুনতে শুনতে আমার বয়স্ক মা ঘুমিয়ে পড়ে অনেক সময়, সে তখন, বুড়ি, গুমাপরলেগা! বলে মিমিক্রি করে হাসে, পরে মোবাইল হাতে নিয়ে কিছু সময় পার করে, আমাদের সাথে এসে বসবে, গল্প শুনবে।
তার বাবা-মার একমাত্র সন্তান এবং তাদের সবচেয়ে বড়ো বন্ধুও সে। দাদাও তখনকার দিনে নামকরা ছাত্র ছিল, তার হাতের লেখা এলাকার পরবর্তী প্রজন্মের জন্য একটা অনুকরণীয় বিষয় ছিল।
সারাদিনে যতক্ষণ দাদা বা বৌদি অবসরে থাকে তার গল্প চলতেই থাকে ভরাট গলায়, দু’জনে বিরক্ত হয়ে, দূর হ, বলে, সে আরও চিল্লায়া মাত করে ঘর! প্রতি পরীক্ষার পর বাড়ি এসে, আজকে তো ফাটাফাটি! ১০০ তে ১০০! খুব কম হলে ৯৯! শুনে তার বাবা, মাও মাঝে মাঝে, ইলগা, আরতা গপ না দি, ইঙ্গ ইয়া থাক….বলে তাড়ায়….কী মধুরতা! আমরা হাসি।
খুব আত্মবিশ্বাসী হয়েছে ছেলেটা, পরীক্ষা নিয়ে কোনও টেনশনও ছিল না, বরং গ্যাপের দিনগুলোয় পড়াশোনা শেষ করে এসে গল্প করে, শুনেও যেতো, মোবাইলও চালাত হালকা পাতলা, কিছু বললে বলত, এটা রিল্যাক্সেশন।
সাধারণত রেজাল্টের আগে আমরা তো একটু টেনশনেই থাকি, সে বিন্দাস! নো টেনশন!!
তার কাকা বড়ো প্রিয় তার, কাকারও সে খুব আদরের, মায়ার। দ্বৈপায়ন নামটাও তার কাকার দেয়া।
যখন নাটক নামে তাদের তখন সে কাকাকে ‘স্যার’ বলে ডাকবে, যাতে তারটা শুনে বাকিরাও তাই বলতে শেখে।
এত প্যাশন অভিনয় নিয়ে তার! পরীক্ষা শেষ হওয়ার পর থেকে আফসোস করেই চলছিল, ইশ্, নাটক আহান না করলাঙ, বলে। আর তার পরীক্ষা চলাকালীন যখন অন্য বাচ্চারা বাৎসরিক ওয়ার্কশপ দিচ্ছিল, তখন তার মর্মপীড়া হচ্ছিল খুব, এখন সে ফ্রি, এখন তারে পায় কে!
খুব ভালো অভিনেতা সে, আমাদের কিশোর দলের নাটক যারা দেখেছেন, তারা জানেন, সে কেমন অভিনয় করে, কীভাবে মাতিয়ে রাখে স্টেজ। জ্যোতির খুব ন্যাওটা সে, ছোট থেকেই, জ্যোতিও সোনা বাবা বলে ডাকে।
আমার খুব ভালোবাসার, প্রতিরাতে সে তার রুমে যাবার আগে একবার তার মাথায় মুখ লাগিয়ে আশীর্বাদ করি, কখনও যাবার সময় ভুলে গেলে ডাক দিই তার রুমের সামনে গিয়ে।
আমাদের সেই ছোট্ট দ্বৈপায়ন বড় হয়ে যাচ্ছে।
আজ ওর এসএসসির রেজাল্ট হলো, সবগুলো বিষয়ে ৯০ এর উপরে পেয়েছে ছেলেটা।
বাবা থাকলে হয়তো কোলেই নিয়ে নিতেন এত বড় ছেলেটাকে! এত আনন্দের মাঝেও একটা বিশাল শূন্যতা, এক বিষন্নতা ঘুরে ফিরছে ঘরময় তাই।
সবাই আশীর্বাদ করবেন আমাদের দ্বৈপায়নের জন্য।
সম্পাদক : সৈয়দ আমিরুজ্জামান
ইমেইল : rpnewsbd@gmail.com
মোবাইল +8801716599589
৩১/এফ, তোপখানা রোড, ঢাকা-১০০০।
© RP News 24.com 2013-2020
Design and developed by M-W-D