বীর মুক্তিযোদ্ধা শাহরিয়ার কবিরকে মুক্তি দিন

প্রকাশিত: ৯:০১ পূর্বাহ্ণ, আগস্ট ২৪, ২০২৫

বীর মুক্তিযোদ্ধা শাহরিয়ার কবিরকে মুক্তি দিন

Manual2 Ad Code

মঞ্জুরে খোদা টরিক |

শাহরিয়ার কবিরের পরিচয় তিনি একজন লেখক, শিশু সাহিত্যিক, সাংবাদিক ও প্রামাণ্যচিত্র নির্মাতা। সর্বোপরি তিনি একজন মুক্তিযোদ্ধা ও বয়স্ক নাগরিক। তিনি প্রায় ৭০টির মত বই লিখেছেন। পেয়েছেন বাংলা একাডেমি পুরষ্কার (১৯৯৫)। কিন্তু ইউনূস সরকার তাঁকে গ্রেফতার করেছেন। কারণ তিনি জুলাই অভ্যুত্থানের ছাত্র হত্যার গায়েবি মামলার আসামী যা পুরোপুরি মিথ্যা ও বানোয়াট।

তাঁকে গ্রেফতারের মূল কারণ আসলে তিনি একজন মুক্তিযোদ্ধা ও ৭১এর ঘাতক-দালালদের বিচারের দাবীতের সোচ্চার থাকা একজন ব্যক্তি। তিনি স্বাধীনতা যুদ্ধে মানবতার বিরুদ্ধে অপরাধের তথা যুদ্ধাপরাধীদের বিচার চেয়েছেন, সেই আন্দোলনকে সংগঠিত করেছেন, সেটাই কি তাঁর অপরাধ?

বর্তমানে তিনি কারাগারে গুরুতর অসুস্থ। সেই অবস্থাতেও তাঁকে একাধিকবার রিমান্ডে নেওয়া হয়েছে। তিনি তো আওয়ামী লীগের কেউ না, তাহলে তাঁকে কেন জেলে পুরে রাখা হয়েছে? কিন্তু আওয়ামী লীগের এমপি-মন্ত্রী ছিলেন, তাঁদের কাউকে কাউকে ধরে ছেড়ে দেওয়া হয়েছে। তাদের সহযোগী আমলা-ব্যবসায়ীরাও বহাল আছেন। সবই আছে ক্ষমতা সংশ্লিষ্টতার সমীকরণ।

Manual6 Ad Code

উনি নাকি হত্যা মামলার আসামী? রিয়েলি? খুন করে কেউ বাসায় থাকে? তিনি লীগ সরকারের কোন পদপদবিতে ছিলেন না, তাহলে? আওয়ামীপন্থী বুদ্ধিজীবী হওয়া কি অপরাধ? গত সরকারের সুবিধাভোগী ও দল করা অনেক ব্যক্তিরা তো এই সরকারের উপদেষ্টা ও পদপদবিতে আছেন। কি নেই? নাম বলতে হবে? সে রকম অভিযোগ তো আরো অনেকের বিরুদ্ধে আছে! তাদের কি গ্রেফতার করা হয়েছে?

আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পর সিরাজগঞ্জের ’ঘাতক-দালাল নির্মূল কমিটি’কে নিয়ন্ত্রণ করতো আওয়ামী সমর্থক কতিপয় ব্যক্তি। যাদের কাজ ছিল এই ব্যানারকে ব্যক্তি স্বার্থে ব্যবহার করে সুবিধা আদায় ও প্রতিপক্ষকে ঘায়েল করা। আমার ছোট ভাই একজন আইনজীবী, যে প্রগতিশীল রাজনীতি ও সিরাজগঞ্জের সাহিত্য-সাংস্কৃতিক কর্মকান্ডের সাথে যুক্ত। তার সাথে ব্যক্তিগত দ্বন্দ্বের কারণে তারা এই ব্যানারকে ব্যবহার করে তাকে রাজনৈতিকভাবে হেয় করতে চেয়েছিল। সেই সময় আমি শাহরিয়ার কবীরকে ফোন করি এদের কর্মকান্ড ও ঘাতক-দালাল নির্মূল কমিটি সম্পর্কে জানতে। তিনি আমাকে বলেন, দেখ আমি ঘাতক-দালাল নির্মূল কমিটির সাথে নেই যারা আছে তুমি বরং তাদের সাথে যোগাযোগ করো।

Manual7 Ad Code

এই ঘটনা বলার উদ্দেশ্য হচ্ছে তাঁকে যদি এই সংগঠনের সাথে যুক্ত থাকার কারণে গ্রেফতার করা হয় তাহলে বলছি, তিনি এই সংগঠনের সাথেও যুক্ত নেই অনেক বছর, আর থাকলেও সেটা কোন অন্যায় নয়। এটা কোন নিষিদ্ধ সংগঠন নয়। তাহলে কেন তাঁকে গ্রেফতার করা হলো? তিনি যুদ্ধাপরাধী ও ঘাতক-দালালদের বিচার চেয়েছেন বলে?

তিনি আওয়ামী লীগের শাসনামলে- শেখ হাসিনার শাসন, দুর্নীতি, গণতন্ত্রহীনতা, রাজনীতিতে ধর্মের ব্যবহার, তাদের আপোষকামিতা দেশকে চরম বিপদে ফেলবে, সে কথা বার বার বলেছেন। শুধু বাংলাদেশ নয় দক্ষিন-পূর্ব এশিয়ায় মৌলবাদ কিভাবে বিপদ তৈরী করছে ও বিকাশ-বৃদ্ধি ঘটছে সেই বিষয়গুলো তিনি তাঁর লেখায় তুলে এনেছেন। আজ ভারতে, পাকিস্তান, আফগানিস্তান, মিয়ানমার, বাংলাদেশে কি সেই বিপদ তৈরী করেনি?

তিনি তাঁর প্রবন্ধে বলেছেন, এই দল গণতন্ত্র ও উন্নয়নকে হুমকির মুখে ফেলছে। এই দলটি এখন রাজনীতিকদের হাতে নেই ব্যবসায়িক ও দুর্নীতিবাজদের হাতে চলে গেছে। মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস চেতনার নামে চলছে রাজনীতি। এ সব কথা বলার জন্য আওয়ামী লীগও তাঁকে পছন্দ করেনি, তাদের কোন অনুষ্ঠানে ডাকেনি।

মুক্তিযুদ্ধ, সাম্প্রদায়িকতা, মৌলবাদের বিপদ নিয়ে লেখা তাঁর বেশ কয়েকটি বই আমি পড়েছি। সেখানে নিছক কোন আওয়ামী বন্দনা নেই। তাদের দুঃশাসন, লুটপাট পক্ষের কোন সাফাই নেই। তিনি হয়তো আওয়ামী বিরোধীতা করে মাঠ কাঁপাননি কিন্তু তাদের পক্ষেও লোক হলেও তাদের পক্ষে গলাবাজি করে বেড়াননি।

নিউ ইয়র্ক টাইমসের প্রতিবেদনের সংক্ষেপে যে কথাগুলো বলা হয়েছে সে কথাগুলোই শাহরিয়ার কবীর তাঁর বইয়ের বিভিন্ন প্রবন্ধে তথ্য-উপাত্ত ও ঐতিহাসিক প্রেক্ষাপটে বিস্তারিত লিখেছেন। তার সেই কথাগুলোর কোথায় ভুল আছে বলতে পারেন?

Manual2 Ad Code

এখানে তাঁর কয়েকটি বই ও প্রবন্ধের শিরোনাম উল্লেখ করছি। শিশু সাহিত্য বাদে তার বইগুলোর মধ্যে আছে,
১। দক্ষিন এশিয়ার মৌলবাদ প্রসঙ্গ বাংলাদেশ,
২। বাংলাদেশের সাম্প্রতিক চালচ্চিত্র,
৩। বাংলাদেশের মৌলবাদ ও সংখ্যালঘু সম্প্রদায়,
৪। মুক্তিযুদ্ধের বৃত্তবন্দী ইতিহাস,
৫। একাত্তরের মুক্তযুদ্ধে ভারতের ভূমিকা,
৬। একাত্তরের গণহত্যা নির্যাতন ও যুদ্ধাপরাধীদের বিচার প্রভৃতি।

Manual8 Ad Code

উল্লেখযোগ্য প্রবন্ধগুলি হচ্ছে ;
১। দক্ষিণ এশিয়ার মৌলবাদ : প্রসঙ্গ বাংলাদেশ
২। মৌলবাদের লেবাস পরে আওয়ামী লীগ কোথায় যেতে চায়
৩। বিএনপির সাম্প্রদায়িক বিষবৃক্ষ এবং আওয়ামী লীগের সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির স্বরূপ।
যে প্রবন্ধগুলো লেখা হয়েছে ৯৬ সালে শেখ হাসিনা ক্ষমতায় আসার পর।

তাঁর অনেক বক্তব্যের সাথে আমি দ্বিমত পোষন করি, আপনিও করতে পারেন কিন্তু তাই বলে কি আপনি তাকে নির্যাতন করবেন? মিথ্যা মামলা দিয়ে প্রতিহিংসা চরিতার্থ করতে জেলের মধ্যে তাঁর হত্যা নিশ্চিত করতে চান?

কেন তাঁকে জামিন দেয়া হবে না? তিনি কি পালিয়ে যাবেন? ৭১ এ যে তরুণ জীবনের পরোয়া করেননি জীবণ সায়াহ্নে এসে তা করবেন? শীর্ষ সন্ত্রাসী, চিহ্নিত জঙ্গী, সাজাপ্রাপ্ত যুদ্ধাপরাধীরা মুক্তি পেলো আর দেশকে হানাদার মুক্ত করা ৭৫ বছর বয়সী বীর মুক্তিযোদ্ধা শাহরিয়ার করিব থাকবেন জেলে? এ দেশের জন্মদান কি ছিল তাঁর আজন্ম পাপ, অপরাধ?
#
[] মঞ্জুরে খোদা (টরিক), লেখক-গবেষক ও রাজনৈতিক বিশ্লেষক।

এ সংক্রান্ত আরও সংবাদ

 


Follow for More!

Manual1 Ad Code
Manual4 Ad Code