ডাকসু নির্বাচনও সংগ্রামের অংশ

প্রকাশিত: ৬:৩০ অপরাহ্ণ, আগস্ট ২৭, ২০২৫

ডাকসু নির্বাচনও সংগ্রামের অংশ

Manual3 Ad Code

তাহেরা বেগম জলি |

সংসদীয় নির্বাচনে একবার নির্বাচন করতে হয়েছিলো আমার। আমার জন্য সে ছিলো হিমালয় জয় করবার মতো অবস্থা। টাকা নেই, দলে লোক নেই। বাড়তি অসুবিধা-আমি নারী। কী করি, কী করি ভেবে তখন আমার ঘুম হারাম। তবে একেবারেই যে বেসামাল পরিস্থিতি ছিলো তা নয়। বাস্তবের চেয়ে আমাকে কাল্পনিক ভয় পেয়ে বসেছিলো বেশি। তারপর অনেকটা গাঝাড়া দিয়ে উঠে ভাবলাম আমাকে লড়তেই হবে। একটা সুযোগ আমাকে তখন হাতছানি দিয়ে যেন ডাক দিলো। আমি জাসদ রাজনীতি করবার সময় বেশ একটা বড় সময় রাজনৈতিক কারণে আত্মগোপন জীবনে ছিলাম। সেই সূত্রে ঝিনেদা অঞ্চলের গ্রামের পর গ্রাম যেমন আমার চেনা ছিলো, তেমনি সেই সব গ্রামের অগণিত মানুষ ছিলো আমার পরিচিত। ভেবে নিলাম, সেই সকল পুরোনো মানুষদের সঙ্গে এই সুযোগে আবার দেখা হয়ে যাক। সিদ্ধান্ত নিয়েছিলাম, সাধ্যমত বাড়ি বাড়ি যাবো। ভোট তারা দিক আর না দিক, যারা একদিন আমাকে প্রাণে বাঁচিয়েছিলো, তাদের সঙ্গে যদি এই সুযোগে আবার দেখা হয়ে যায়, সেও তো কম নয়। অতঃপর শুরু হোলো আমার যোগাযোগ অভিযান। প্রতিদিন সকাল থেকে রাত পর্যন্ত যতক্ষন পারা যায়, নিজের যতটুকু লোকবল তাই নিয়ে-ঘুরেছি বাড়ি বাড়ি। দেখা হয়েছে পুরোনো মিত্রদের সঙ্গে। বাড়তি পাওয়া ছিলো নতুনদের সঙ্গেও দেখা। নির্বাচনের আগে এধরণের যোগাযোগের জন্য খুব বেশি সময় পাওয়া যায় না। কিন্তু তারপরও যেতে পেরেছিলাম অনেক বাড়ি। মুখোমুখি হয়েছিলাম অনেক মানুষের। মাঝে মধ্যে কিছু সভা সমাবেশ করতে হয়েছে। কিন্তু আমি জোর দিয়েছিলাম ব্যক্তিগত যোগাযোগের। তাতে আমার দু’টো কাজ হয়েছিলো। পুরোনো ভালোবাসার মানুষদের সঙ্গে দেখা এবং নতুন করে তাদের সঙ্গে যোগাযোগ স্থাপন। তারপর আমি দীর্ঘদিন রাজনৈতিক ময়দানে ছিলাম। নির্বাচনের সময় যাদের সঙ্গে আবার সম্পর্ক স্থাপন করতে পেরেছিলাম,পরবর্তী সময়ে আমার রাজনৈতিক জীবনে তারা রীতিমতো হালের পানি যুগিয়েছিলো। আমি এখন সরাসরি রাজনৈতিক মাঠে নেই। কিন্তু অদ্ভুত ব্যাপার আমার সে সম্মন্ধ আজও ছিন্ন করতে পারিনি আমি। যখনই ঝিনেদা যাই, নানাভাবে আমার সেই সব পরম আত্মীয় স্বজনের সঙ্গে আমাকে যোগাযোগ করতেই হয়। এখনও গ্রামে গ্রামে যেতে হয়। আমার অভিজ্ঞতা বলে, সামাজিক প্রয়োজনে পরিচালিত জীবন কিছু কেড়ে নেয় না। বরং দেয় উজাড় করে।

Manual5 Ad Code

এবার আসি ডাকসু নির্বাচনের কিছু কথা নিয়ে। আমি জানিনা ৪০ হাজার ছাত্রের মধ্যে কত জন হলে অবস্থান করে। দিনরাত খেটে আমাদের যোদ্ধারা তাদের সাধ্যমত আবাসিক সহ ছাত্র থেকে ছাত্রের সঙ্গে যদি যোগাযোগ গড়ে তুলতে পারে, তবে সেটাই হবে আমাদের শক্তি। এই যোগাযোগ দিয়ে কতো ভোট প্রতিরোধ পর্ষদ পাবে, তা বড় কথা নয়। নির্বাচনকে সঙ্গে নিয়ে যে যোগাযোগ আজ গড়ে উঠবে, কাল এবং তারপর যেকোনো আন্দোলন সংগ্রামের সময় এই যোগাযোগ হয়ে উঠবে একটা বড় শক্তি। আমার জীবনের অভিজ্ঞতা দিয়ে আমি এটা বুঝেছি। আমি জানি, আমাদের লড়াকু শক্তি শুধুমাত্র জয়ের স্বপ্নে বিভোর নয়। তারা সাহস এবং বিচক্ষণতা প্রমাণ করে প্রতিদিন যে এগিয়ে যাচ্ছে তা তো দেখতেই পাচ্ছি। কিন্তু তারপরও নিজের ক্ষুদ্র অভিজ্ঞতা বিনিময় করলাম। যদি সামান্য কাজেও তাদের লাগে। নির্বাচনে জয়লাভ নিশ্চয় আমাদের পদক্ষেপ। কিন্তু আমাদের মূল লক্ষ্য আমাদের দেশের ভবিষ্যৎ আন্দোলনের অপ্রতিরোধ্য শক্তি নির্মাণ করা। প্রতিরোধ পর্ষদের জ্ন্য অনেক শুভ কামনা। তারা ক্রমে হয়ে উঠুক আমাদের দেশের আন্দোলন সংগ্রামের প্রাণশক্তি।

Manual6 Ad Code

 

এ সংক্রান্ত আরও সংবাদ

 


Follow for More!

Manual1 Ad Code
Manual7 Ad Code