সিলেট ১৩ই অক্টোবর, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ | ২৮শে আশ্বিন, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
প্রকাশিত: ৩:১৭ অপরাহ্ণ, সেপ্টেম্বর ২০, ২০২৫
নিজস্ব প্রতিবেদক | ঢাকা, ২০ সেপ্টেম্বর ২০২৫ : আসন্ন দুর্গাপূজা উপলক্ষে দেশের পাঁচটি জেলাকে উচ্চ ঝুঁকিপূর্ণ এবং ২৪টি জেলাকে মাঝারি ঝুঁকিপূর্ণ হিসেবে চিহ্নিত করেছে ‘সম্প্রীতি যাত্রা’ নামের একটি সামাজিক প্ল্যাটফর্ম।
শনিবার (২০ সেপ্টেম্বর ২০২৫) রাজধানীর ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটিতে (ডিআরইউ) সাগর–রুনি মিলনায়তনে সংবাদ সম্মেলন করে এ তথ্য জানায় সম্প্রীতি যাত্রা।
উচ্চ ঝুঁকিতে থাকা জেলাগুলো হলো- ঢাকা, রংপুর, যশোর, চাঁদপুর ও নোয়াখালী।
মানচিত্র অনুযায়ী, মাঝারি ঝুঁকিতে থাকা জেলাগুলো হলো গাজীপুর, ফরিদপুর, মানিকগঞ্জ, রাজবাড়ী, চট্টগ্রাম, বান্দরবান, কুমিল্লা, ব্রাহ্মণবাড়িয়া, লক্ষ্মীপুর, ফেনী, পাবনা, চাঁপাইনবাবগঞ্জ, নাটোর, লালমনিরহাট, দিনাজপুর, গাইবান্ধা, সাতক্ষীরা, বাগেরহাট, খুলনা, কুষ্টিয়া, সুনামগঞ্জ, বরিশাল, পটুয়াখালী ও নেত্রকোনা। দেশের অন্য জেলাগুলোকে নিম্ন ঝুঁকিপূর্ণ হিসেবে উল্লেখ করে সম্প্রীতি যাত্রা।
সম্প্রীতি যাত্রা প্ল্যাটফর্মটি জানায়, ২০১৪ থেকে ২০২৫ সাল পর্যন্ত বিভিন্ন সংবাদমাধ্যম ও মানবাধিকার প্রতিবেদনে প্রকাশিত পূজা ও অন্যান্য সময়ে পূজামণ্ডপ, শোভাযাত্রার রুট বা সংখ্যালঘু বাড়িঘরে হামলার ঘটনা বিশ্লেষণ করে তারা এই ঝুঁকির মানচিত্র তৈরি করেছে।
আয়োজকেরা জানান, বিভিন্ন লেখক, সাহিত্যিক, কবি, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক কর্মীদের উদ্যোগে সম্প্রীতি যাত্রা প্ল্যাটফর্ম গঠিত হয়েছে। শিগগিরই দেশের বিভিন্ন জেলা ও উপজেলায় এই প্ল্যাটফর্মের উদ্যোগে কমিটি গঠন করা হবে। যাঁরা বিভিন্ন মন্দির, মাজার, ধর্মীয় স্থাপনা ও সংখ্যালঘুদের নিরাপত্তা রক্ষায় কাজ করবেন।
সাংস্কৃতিক কর্মী বিথী ঘোষের সঞ্চালনায় সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন লেখক ও গবেষক মীর হুযাইফা। তিনি বলেন, কারও বিরুদ্ধে অভিযোগ উঠলে দেশের আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সেটি দেখার কথা। কিন্তু নানা অভিযোগে দীর্ঘ দুই দশকেরও বেশি সময় ধরে দেশে সম্প্রীতি বিনষ্টের অপতৎপরতা চলছে। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে তার পরিসর আরও বিস্তৃত হয়েছে। বৈষম্যহীনতার আকাঙ্ক্ষা নিয়ে ২০২৪ সালের গণ-আন্দোলনের পরও এ প্রবণতার কোনো ইতিবাচক পরিবর্তন ঘটেনি।
ধর্মীয় স্বাধীনতা উপভোগ করা দেশের প্রত্যেক নাগরিকের সাংবিধানিক অধিকার উল্লেখ করে মীর হুযাইফা বলেন, ‘ধর্মীয়, জাতিগত, ভাষিক ও সংস্কৃতিগত প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর সুরক্ষা নিশ্চিত করা রাষ্ট্রের মৌলিক দায়িত্ব। যদি আগাম প্রস্তুতি, কার্যকর আইন প্রয়োগ, জবাবদিহিমূলক প্রশাসনিক ব্যবস্থা এবং স্থানীয় সমাজের অংশগ্রহণ একত্র করা যায়, তবে মন্দির, মাজার, আখড়া এবং প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর সাংস্কৃতিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করা সম্ভব।’
সংবাদ সম্মেলন থেকে কয়েকটি পদক্ষেপের কথা জানায় সম্প্রীতি যাত্রা। এর মধ্যে রয়েছে- স্থানীয় সম্প্রীতি কমিটি গঠন, মনিটরিং ও নথিভুক্তি, গুজব প্রতিরোধে তথ্যপ্রবাহ, দ্রুত সহায়তা কাঠামো এবং প্রতিবেদন ও নীতি-প্রস্তাব।
আয়োজকেরা জানান, সম্প্রীতি যাত্রা কেবল তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়ায় সংগঠিত কর্মসূচি নয়, বরং সম্প্রীতি ও সহাবস্থানের জন্য কাঠামোগত সংস্কারের একটি দীর্ঘমেয়াদি আন্দোলন।
মন্দির, মাজার, আখড়া ও প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর নিরাপত্তা নিশ্চিতে অন্তর্বর্তী সরকারের কাছে বাড়তি পুলিশ ও দ্রুত রেসপন্স টিম মোতায়েন, গুজব প্রতিরোধ কাঠামো তৈরি, অভিযোগ গ্রহণে স্বচ্ছতা, প্রযুক্তিগত নিরাপত্তা এবং ক্ষতিগ্রস্তদের জরুরি সহায়তা প্রদানেরও আহ্বান জানায় সম্প্রীতি যাত্রা।
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের খণ্ডকালীন শিক্ষক মাহা মির্জা বলেন, ‘যে ঘটনাগুলোর কথা আমরা বলছি, এই ঘটনাগুলো ইতিমধ্যে বিভিন্ন গণমাধ্যমে এসেছে। কিন্তু আমরা সরকারের পক্ষ থেকে জোরালো পদক্ষেপ দেখতে পাইনি। আমরা মনে করি, সরকার যদি চায়, তাহলেই মব থামানো সম্ভব। কিন্তু আমরা দেখতে পাচ্ছি, অন্তর্বর্তী সরকার এই অপরাধগুলোর ব্যাপারে পুরোপুরি চোখ বন্ধ করে আছে।’
চব্বিশের গণ-অভ্যুত্থানপরবর্তী সময়ে দেশের সংখ্যালঘুরা ভয়ের মধ্যে আছে উল্লেখ করে মাহা মির্জা আরও বলেন, ‘জুলাই গণ-অভ্যুত্থানে মূল স্পিরিটের একটা জায়গা ছিল সহমর্মিতার বাংলাদেশ। মূল স্পিরিটের একটা জায়গা ছিল সকল ধর্ম ও বর্ণের মানুষ মিলেমিশে থাকবে। খুব সিম্পল একটা ব্যাপার। কিন্তু আমরা এই মুহূর্তে যে বাংলাদেশকে দেখছি, সেটা খুবই ভীতিকর এবং সরকারের আচরণে আমরা আসলে ক্ষুব্ধ।’
সংবাদ সম্মেলন থেকে সম্প্রীতি যাত্রা নামে দেশজুড়ে একটি কর্মসূচির ঘোষণা দেওয়া হয়। আয়োজকেরা জানান, সাম্প্রদায়িক উসকানি ও বিভ্রান্তি রোধে তারা একটি ফ্যাক্টচেকিং দল গঠন করবেন। পাশাপাশি ঝুঁকিপূর্ণ জেলাগুলোর স্থানীয় নাগরিক ও সামাজিক সংগঠন, মাইনরিটি সংগঠন, সুফি ও মাজারভিত্তিক সংগঠন, বাউল ও ফকির সম্প্রদায়, আদিবাসী সংগঠন, নারী সংগঠন, সাংস্কৃতিক সংগঠন, পেশাজীবী সংগঠন ও রাজনৈতিক দলগুলোর প্রগতিশীল ব্যক্তিদের নিয়ে প্রতিরোধ গড়ে তোলা হবে।
এ সময় উপস্থিত ছিলেন চিন্তক ও শিল্পী অরূপ রাহী, লেখক ফেরদৌস আরা রুমী প্রমুখ।
সম্পাদক : সৈয়দ আমিরুজ্জামান
ইমেইল : rpnewsbd@gmail.com
মোবাইল +8801716599589
৩১/এফ, তোপখানা রোড, ঢাকা-১০০০।
© RP News 24.com 2013-2020
Design and developed by ওয়েব নেষ্ট বিডি