উদ্যোক্তা থেকে ‘সুযোগসন্ধানী নারী’ অপবাদ, ডেটিং অ্যাপ প্রতিষ্ঠাতার অবিশ্বাস্য গল্প

প্রকাশিত: ৩:২৮ পূর্বাহ্ণ, সেপ্টেম্বর ২২, ২০২৫

উদ্যোক্তা থেকে ‘সুযোগসন্ধানী নারী’ অপবাদ, ডেটিং অ্যাপ প্রতিষ্ঠাতার অবিশ্বাস্য গল্প

Manual2 Ad Code

বিনোদন প্রতিবেদক | ঢাকা, ২২ সেপ্টেম্বর ২০২৫ : ডেটিং-অ্যাপ দুনিয়ায় বিপ্লব ঘটানো নাম হুইটনি ওলফ হার্ড। টিন্ডার অ্যাপের সহপ্রতিষ্ঠাতা ছিলেন হুইটনি, পরে সেই প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে মামলা করে খবরের শিরোনামে আসেন। মামলা, হুমকি, অপবাদ আর পুরুষতান্ত্রিক করপোরেট সংস্কৃতির ভেতরেও হাল ছাড়েননি তিনি। বরং নিজের ভাঙন থেকেই গড়ে তুলেছেন নতুন সাম্রাজ্য—বাম্বল। সেই সিদ্ধান্তই তাঁকে বানিয়েছে বিশ্বের কনিষ্ঠতম স্বোপার্জিত নারী কোটিপতি। হুইটনির বৈচিত্র্যময় জীবনের গল্প নিয়ে তৈরি হয়েছে ওয়েব সিনেমা ‘সোয়াইপড’। টরন্টো উৎসবে প্রিমিয়ারের পর ১৯ সেপ্টেম্বর হুলুতে মুক্তি পেয়েছে সিনেমাটি। র‍্যাচেল লি গোল্ডেনবার্গের সিনেমাটিতে হুইটনির চরিত্রে অভিনয় করেছেন লিলি জেমস।

টিন্ডারের সূচনা
২০১২ সালে যৌথভাবে টিন্ডার প্রতিষ্ঠা করেন হুইটনি। তরুণ প্রজন্মের জন্য সহজে ব্যবহারযোগ্য অ্যাপ বানানোর আইডিয়া তখনো নতুন। নামকরণ, বিপণন কৌশল আর অ্যাপটিকে জনপ্রিয় করতে ক্যাম্পাস থেকে ক্যাম্পাসে ছুটে বেড়ানো—সব একা হাতে করেছেন হুইটনি। সিনেমার একটি দৃশ্যে দেখা যায়, হুইটনি কীভাবে শিক্ষার্থীদের কাছে অ্যাপ ব্যবহার করতে অনুরোধ করছেন। তাঁর পরিশ্রম বৃথা যায়নি; দ্রুতই তরুণদের কাছে জনপ্রিয় হয়ে ওঠে টিম্বার।

অপমানের শুরু
কিন্তু ব্যক্তিগত সম্পর্কই হুইটনির কর্মজীবনে কাল হয়ে দাঁড়ায়। টিন্ডারের সহপ্রতিষ্ঠাতা জাস্টিন মেটিনের সঙ্গে প্রেম ভেঙে যাওয়ার পর শুরু হয় অপমান আর হয়রানি। দিনরাত আসতে থাকে হেনস্তামূলক বার্তা, যেগুলোর অংশ পরে হুবহু মামলা আর সিনেমার চিত্রনাট্যে জায়গা পায়।

Manual1 Ad Code

অল্প সময়ের মধ্যেই হুইটনি বুঝতে পারেন ধীরে ধীরে তাঁকে সরিয়ে দেওয়া হচ্ছে। মিটিং থেকে বাদ দেওয়া হচ্ছে, গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্তে তাঁর নাম নেই। একদিন টাইম ম্যাগাজিনে টিন্ডারের সাফল্যের বড় একটি প্রতিবেদন ছাপা হলো—কিন্তু প্রতিষ্ঠাতা হিসেবে হুইটনির নামের উল্লেখ পর্যন্ত নেই। এ ঘটনার পরই তাঁর কাছে পরিষ্কার হয়ে যায়, এখানে তাঁর আর জায়গা নেই।

মামলা, অপবাদ আর একাকিত্ব
২০১৪ সালে সাহস করে টিন্ডারের বিরুদ্ধে মামলা করেন হুইটনি। অভিযোগ, প্রায় ১৮ মাস ধরে তিনি হেনস্তার শিকার। মামলা আদালতের বাইরে নিষ্পত্তি হয়, কিন্তু এর পরিণতি ছিল ভয়াবহ। এনডিএ (গোপনীয়তা চুক্তি) সই করতে বাধ্য হন, ফলে গণমাধ্যমের সামনে কিছু বলার সুযোগ আর তাঁর থাকে না। অন্যদিকে তথ্য ফাঁস হয়ে তাঁর বিপক্ষে ঘুরে যায় জনমত। মিডিয়ার চোখে তিনি হয়ে ওঠেন ‘লোভী’, ‘সুযোগসন্ধানী নারী’।

বাম্বলের জন্ম
হুইটনির অন্ধকার জীবনে নতুন আলো নিয়ে আসেন রাশিয়ান উদ্যোক্তা আন্দ্রে আন্দ্রেভ। তিনি প্রস্তাব দেন, হুইটনি চাইলে নতুন একটি ডেটিং অ্যাপ বানাতে পারেন। ২০১৪ সালের ডিসেম্বরে টেক্সাসের অস্টিনে অফিস খুললেন হুইটনি। সঙ্গে নিলেন টিন্ডারের কয়েকজন সাবেক সহকর্মীকে। নাম দিলেন বাম্বল।

এবার লক্ষ্য একেবারেই আলাদা—একটি নিরাপদ, নারীবান্ধব প্ল্যাটফর্ম। যেখানে প্রথম পদক্ষেপটা নেবে নারী, আর পুরুষকে অপেক্ষা করতে হবে। নতুন এই দর্শনই মুহূর্তে জনপ্রিয়তা পায়। প্রথম বছরেই ব্যবহারকারী এক মিলিয়ন, ২০১৯ সালে ৩৫ মিলিয়ন। বর্তমানে মাসিক সক্রিয় ব্যবহারকারী প্রায় ৪ কোটি।

Manual8 Ad Code

টেক দুনিয়ায় নারীর কণ্ঠ
বাম্বল কেবল ব্যবসায়িক সাফল্যই নয়, সামাজিক প্রভাবও তৈরি করে। অনলাইনে অনিচ্ছাকৃত অশালীন ছবি পাঠানোকে অপরাধ হিসেবে স্বীকৃতি দিতে টেক্সাসে আইন পাস করাতে বড় ভূমিকা রাখেন হুইটনি।
পরিচালক গোল্ডেনবার্গ বলেন, ‘পুরুষতান্ত্রিক এক দুনিয়ায় মানিয়ে নেওয়ার চাপ আর প্রতিবাদ করার ঝুঁকির মধ্যে ভারসাম্য খুঁজে পাওয়া কঠিন। হুইটনি সেই পথটা খুঁজেছেন—প্রথমে ভুল করেছেন, পরে সেই ভুল থেকেই শিখেছেন।’

পর্দায় হুইটনির রূপকার
লিলি জেমস এই সিনেমায় কেবল হুইটনির চরিত্রে অভিনয়ই করেননি, তিনি ছবিটির সহপ্রযোজকও। তাঁর লক্ষ্য ছিল হুইটনির চিন্তা আর আবেগকে জীবন্ত করা। ‘ওর মস্তিষ্ক খুব দ্রুত কাজ করে, সেই ছন্দটা ধরাই ছিল আমার সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ’, বলেন জেমস।
লিলির আশা, এই ছবি দেখার পর আরও তরুণী উদ্যোক্তা হতে উৎসাহ পাবেন। ‘যদি একজন নারীও নিজের স্বপ্ন আঁকড়ে ধরতে সাহস পান, তবে আমাদের কাজ সার্থক হবে’, বলেন তিনি।
তথ্যসূত্র: টাইম

Manual4 Ad Code

 

Manual2 Ad Code

এ সংক্রান্ত আরও সংবাদ

 


Follow for More!

Manual1 Ad Code
Manual6 Ad Code