সিলেট ১৩ই অক্টোবর, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ | ২৮শে আশ্বিন, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
প্রকাশিত: ৪:২৭ অপরাহ্ণ, সেপ্টেম্বর ২৭, ২০২৫
নিজস্ব প্রতিবেদক | ঢাকা, ২৭ সেপ্টেম্বর ২০২৫ : মানবদেহের সঠিক বৃদ্ধি, শক্তি ব্যয়, প্রজনন ও স্বাভাবিক দৈহিক প্রক্রিয়া নিয়ন্ত্রণে হরমোনের ভূমিকা অপরিসীম। শরীরের বিভিন্ন গ্রন্থি থেকে নিঃসৃত এই হরমোনের মাত্রা বেড়ে বা কমে গেলে সৃষ্টি হয় নানা জটিল রোগ, যা চিকিৎসা বিজ্ঞানের ভাষায় পরিচিত “এন্ডোক্রাইন রোগ” নামে।
বিশেষজ্ঞদের মতে, ডায়াবেটিস থেকে শুরু করে থাইরয়েড, যৌন সমস্যা, শিশুদের গ্রোথ সমস্যা—সবই এন্ডোক্রাইন রোগের পরিধির অন্তর্ভুক্ত।
ডায়াবেটিস: সবচেয়ে বড় হুমকি
বাংলাদেশে প্রতিনিয়ত বাড়ছে ডায়াবেটিস রোগীর সংখ্যা। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (WHO) তথ্যানুযায়ী, এদেশে প্রাপ্তবয়স্কদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য অংশ ডায়াবেটিসে আক্রান্ত। ডায়াবেটিস হলে কেবল রক্তে শর্করাই বেড়ে যায় না, দীর্ঘমেয়াদে কিডনি, চোখ, স্নায়ু ও হৃদরোগের জটিলতাও দেখা দেয়।
গর্ভকালীন ডায়াবেটিসে আক্রান্ত মায়েদের ঝুঁকিও বাড়ে, যা ভবিষ্যতে মা ও শিশুর স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর হতে পারে।
থাইরয়েডের নানান সমস্যা
থাইরয়েড গ্রন্থি নিয়ন্ত্রণ করে শরীরের মেটাবলিজম। এই গ্রন্থির হরমোন বেশি হলে হয় হাইপারথাইরয়েডিজম—যার ফলে রোগীরা ওজন কমে যাওয়া, বুক ধড়ফড়, ঘাম বেড়ে যাওয়া ও হাত-পা কাঁপার মতো সমস্যায় ভোগেন। অন্যদিকে, হরমোন কমে গেলে হয় হাইপোথাইরয়েডিজম—যাতে ওজন বৃদ্ধি, শরীর ফুলে যাওয়া, কোষ্ঠকাঠিন্য ও কাজে অনীহা দেখা দেয়।
থাইরয়েড টিউমার, গলগণ্ড, থাইরয়েডাইটিস এবং গর্ভকালীন থাইরয়েড সমস্যা জনস্বাস্থ্যের বড় উদ্বেগ হয়ে উঠেছে।
নারী-পুরুষের হরমোনজনিত জটিলতা
নারীদের মধ্যে হরমোনের অসামঞ্জস্যের কারণে দেখা দেয় অবাঞ্ছিত লোম, গোঁফ-দাড়ি, অতিরিক্ত ব্রণ বা মাথার চুল পড়া। মাসিক অনিয়মিত বা অতিরিক্ত হওয়া, বয়সের আগেই মাসিক বন্ধ হওয়া এবং সন্তান ধারণে সমস্যা তৈরি হওয়া এ সমস্যার বড় অংশ।
মেনোপজের আগে-পরে নারীরা তীব্র বায়ুচড়া সমস্যায় ভোগেন—যেমন মাথা গরম হওয়া, ঘুম না আসা, অস্থিরতা ইত্যাদি।
অন্যদিকে, পুরুষদের মধ্যে যৌন দুর্বলতা, অক্ষমতা, যৌন আগ্রহ হ্রাস এবং হরমোনজনিত টাক হওয়া একটি সাধারণ সমস্যা।
শিশু-কিশোরদের বৃদ্ধি ও সাবালকত্বে সমস্যা
শিশুদের স্বাভাবিক বৃদ্ধি ব্যাহত হলে তারা খাটো, বেটে বা অস্বাভাবিক লম্বা হতে পারে। হরমোনজনিত কারণে কিছু শিশু অল্প বয়সেই দানবীয় আকৃতি পেয়ে যায়।
সাবালকত্বে সমস্যা হলে ছেলে শিশুদের ছোট অণ্ডকোষ, দাড়ি-গোঁফ না ওঠা, এমনকি বড় স্তন গঠনের মতো অস্বাভাবিকতা দেখা দেয়। মেয়েদের ক্ষেত্রেও বয়ঃসন্ধিকালে স্তন গঠন সঠিকভাবে না হওয়া বা অস্বাভাবিকভাবে বড় হয়ে যাওয়া, এমনকি অবিবাহিত অবস্থায় স্তন থেকে দুধ নিঃসৃত হওয়াও হরমোনের গোলযোগের ফল।
বিপজ্জনক হরমোনজনিত রোগ
এন্ডোক্রাইন রোগের মধ্যে এডিসনস ডিজিজ একটি গুরুতর অবস্থা। এতে রোগীর ত্বক কালো হয়ে যায়, দুর্বলতা, বমিভাব ও ক্ষুধামন্দা দেখা দেয়।
হাড় ক্ষয়, ক্যালসিয়ামের আধিক্য বা স্বল্পতা, বারবার কিডনিতে পাথর, প্রচুর প্রস্রাব হওয়া, অতিরিক্ত পিপাসা—এসবও হরমোনের ভারসাম্যহীনতার কারণে হতে পারে।
এছাড়া রক্ত ও লিভারে চর্বি জমা, শরীরে লবণের তারতম্যও গুরুতর জটিলতা তৈরি করে।
বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ
হরমোনজনিত রোগগুলো অনেক সময় নীরবে শরীরে বাসা বাঁধে। সাধারণ ক্লান্তি, ওজন বৃদ্ধি বা কমে যাওয়া, মাসিক অনিয়ম, ঘাম বেড়ে যাওয়া কিংবা যৌন সমস্যা—এসব উপসর্গকে হালকা করে দেখলে ভবিষ্যতে মারাত্মক জটিলতা দেখা দিতে পারে।
তাই বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকরা বলছেন—যে কোনো অস্বাভাবিক পরিবর্তন হলে দেরি না করে এন্ডোক্রাইন বিশেষজ্ঞ বা হরমোন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে।
সম্পাদক : সৈয়দ আমিরুজ্জামান
ইমেইল : rpnewsbd@gmail.com
মোবাইল +8801716599589
৩১/এফ, তোপখানা রোড, ঢাকা-১০০০।
© RP News 24.com 2013-2020
Design and developed by ওয়েব নেষ্ট বিডি