কালজয়ী গানের অমর স্রষ্টা এ কে আনামের ১৭তম প্রয়াণ দিবস আজ

প্রকাশিত: ১২:১৭ পূর্বাহ্ণ, সেপ্টেম্বর ২৮, ২০২৫

কালজয়ী গানের অমর স্রষ্টা এ কে আনামের ১৭তম প্রয়াণ দিবস আজ

Manual3 Ad Code

নিজস্ব প্রতিবেদক | শ্রীমঙ্গল (মৌলভীবাজার), ২৮ সেপ্টেম্বর ২০২৫ : বাংলা আঞ্চলিক সংগীত, বিশেষ করে সিলেটি গানের ভুবনে এক অনন্য নাম এ কে আনাম। কালজয়ী সুরস্রষ্টা, গীতিকার ও মরমি শিল্পসাধক এ কে আনামের ১৭তম প্রয়াণ দিবস আজ।

“সুরমা নদীর তীরে আমার ঠিকানারে, বাবা শাহজালালের দেশ সিলেট ভূমিরে”—এই পরিচিতিমূলক সংগীত থেকে শুরু করে “সিলেট পাইলে যেমন তেমন”, “আসমানেরও চাঁন”, “বিজয় দেখিলাম রে”, কিংবা “শ্রী আছে যার মঙ্গলও তার”—অসংখ্য কালজয়ী গানের স্রষ্টা ছিলেন তিনি। আঞ্চলিক গানের ভাণ্ডারকে তিনি যেভাবে সমৃদ্ধ করেছেন, তা তাঁকে সিলেটের সংগীতাঙ্গনে স্বতন্ত্র নক্ষত্রে পরিণত করেছে।

Manual8 Ad Code

বৈচিত্র্যময় সৃজনভুবন

এ কে আনামের সৃষ্টিশীলতার পরিধি ছিল বিস্তৃত। তাঁর গীতিকবিতায় ছিল প্রতীকী প্রকাশ, পরাবাস্তব ভাবনার ছোঁয়া এবং একইসঙ্গে সাধারণ মানুষের সহজ-সরল আবেগ। ধ্রুপদী মনন, লোকায়ত বাংলার সহজিয়া ঘরাণা এবং আধুনিক শিল্পরসের মেলবন্ধন তাঁকে এনে দিয়েছে ভিন্নমাত্রার পরিচিতি।

Manual6 Ad Code

শুধু গানের সুরে নয়, কথার বুননেও এ কে আনাম ছিলেন স্বতন্ত্র। তিনি সমাজচেতনা, প্রান্তিক মানুষের জীবনসংগ্রাম, দেশপ্রেম এবং আধ্যাত্মিকতা—সবকিছুকে তাঁর সুর ও কথায় ধারণ করেছেন। তাঁর গানের সুরপ্রবাহ আজও সুরমা, কুশিয়ারা আর খোয়াই উপত্যকার মানুষের প্রাণে দেশপ্রেম জাগায়, তাদের আনন্দ-বেদনা ও সংগ্রামকে জীবন্ত করে তোলে।

Manual1 Ad Code

শ্রীমঙ্গল: সাধনার কেন্দ্র

Manual2 Ad Code

জন্ম ও বেড়ে ওঠা শ্রীমঙ্গলে হলেও এ কে আনামের চিন্তা ও সৃজনের বিস্তার ছিল গোটা সিলেট অঞ্চলে। প্রকৃতির অপার সৌন্দর্য, চা-বাগানের লীলাভূমি, সবুজ পাহাড় ও ঝরনাধারা—এসবকেই তিনি গানে গানে এঁকেছেন মমতায়। তাঁর শিল্পসত্তা যেমন স্থানীয়, তেমনি সর্বজনীন।

শ্রীমঙ্গল ছিল তাঁর সাধনকেন্দ্র, কিন্তু তাঁর ধ্রুপদী মনোদৃষ্টি ছড়িয়ে পড়েছিল সমগ্র সিলেটের সাংস্কৃতিক পরিমণ্ডলে। এক জন শিল্পী হিসেবে তিনি ছিলেন শেকড়-সন্ধানী ও দূরগামী মুসাফির—যিনি সিলেটের গ্রাম থেকে গ্রামান্তরে ঘুরে বেড়িয়ে খুঁজেছেন সুর ও প্রেরণা।

কালজয়ী উত্তরাধিকার

এ কে আনামের সংগীতভুবন শুধু বিনোদনের জন্য নয়, বরং সময়ের দলিল। তাঁর গানে উঠে এসেছে সামাজিক বৈষম্য, অবহেলিত মানুষের বেদনা, আবার বিজয়ের আনন্দ ও দেশাত্মবোধও। এ কারণে তিনি শুধু সুরকার নন, তিনি ছিলেন সঙ্গীতের মাধ্যমে জনজীবনের ইতিহাসলেখক।

সঙ্গীতবোদ্ধাদের মতে, প্রতীকী ও পরাবাস্তববাদী ভাবপ্রকাশ তাঁর গানের অন্যতম বৈশিষ্ট্য। এজন্যই তিনি সিলেটি গানের জগতে হয়ে উঠেছেন স্বতন্ত্র এক কিংবদন্তি শিল্পসত্তা।

প্রয়াণ দিবসে স্মরণ

আজ তাঁর ১৭তম প্রয়াণ দিবসে তাঁকে স্মরণ করে বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টির মৌলভীবাজার জেলা সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য, আরপি নিউজের সম্পাদক ও বিশিষ্ট কলামিস্ট কমরেড সৈয়দ আমিরুজ্জামান বলেন—
“এ কে আনাম শুধু একজন সুরকার বা গীতিকার ছিলেন না, তিনি ছিলেন প্রান্তিক জনমানুষের কণ্ঠস্বর। তাঁর গান যুগে যুগে প্রজন্মকে দেশপ্রেমে উজ্জীবিত করবে। যতদিন সুরমা, কুশিয়ারা কিংবা খোয়াই বইবে, ততদিন এ কে আনামের সৃষ্টিসম্ভার চিরঅম্লান থাকবে।”

ক্ষণজন্মা ও অকালপ্রয়াত এই সুরস্রষ্টার প্রতি আজ জাতি গভীর শ্রদ্ধা নিবেদন করছে।

 

এ সংক্রান্ত আরও সংবাদ

 


Follow for More!

Manual1 Ad Code
Manual5 Ad Code