সিলেট ১৩ই অক্টোবর, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ | ২৮শে আশ্বিন, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
প্রকাশিত: ৮:১০ অপরাহ্ণ, সেপ্টেম্বর ২৮, ২০২৫
বিশেষ প্রতিনিধি | ঢাকা, ২৮ সেপ্টেম্বর ২০২৫ : বিশ্বে প্রতি পাঁচটি অকালমৃত্যুর মধ্যে একটি হৃদরোগের কারণে ঘটে, যার অন্যতম প্রধান কারণ উচ্চ রক্তচাপ। অথচ শতকরা ৮০ ভাগ হৃদরোগ ও স্ট্রোক প্রতিরোধযোগ্য। বাংলাদেশে মোট মৃত্যুর প্রায় ৩৪ শতাংশই হৃদরোগজনিত। বিশেষজ্ঞদের মতে, উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে আনতে পারলেই হার্ট অ্যাটাক ও স্ট্রোকের ঝুঁকি উল্লেখযোগ্যভাবে কমানো সম্ভব।
বিশ্ব হার্ট দিবস ২০২৫ উপলক্ষে সোমবার (২৮ সেপ্টেম্বর) গবেষণা ও অ্যাডভোকেসি প্রতিষ্ঠান প্রজ্ঞা (প্রগতির জন্য জ্ঞান) আয়োজিত “উচ্চ রক্তচাপ ও হৃদরোগ ঝুঁকি” শীর্ষক এক ওয়েবিনারে বক্তারা এসব তথ্য তুলে ধরেন। আয়োজনে সহযোগিতা করে গ্লোবাল হেলথ অ্যাডভোকেসি ইনকিউবেটর (জিএইচএআই)। এ বছরের প্রতিপাদ্য ছিল “ডোন্ট মিস এ বিট”।
বাংলাদেশে উদ্বেগজনক চিত্র
ডব্লিউএইচও-এর গ্লোবাল রিপোর্ট অন হাইপারটেনশন ২০২৫ অনুযায়ী, বাংলাদেশে প্রতি চারজন প্রাপ্তবয়স্কের একজন উচ্চ রক্তচাপে আক্রান্ত। প্রতিবছর প্রায় ২ লাখ ৮৩ হাজার মানুষ হৃদরোগে মারা যান, যার মধ্যে ৫২ শতাংশের জন্য দায়ী উচ্চ রক্তচাপ। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার তথ্য বলছে, উচ্চ রক্তচাপজনিত হার্ট অ্যাটাক ও স্ট্রোকে বিশ্বে প্রতি ঘন্টায় এক হাজারেরও বেশি মানুষের মৃত্যু হয়—যার বেশিরভাগই প্রতিরোধযোগ্য।
বিশেষজ্ঞদের মতামত
ওয়েবিনারে জাতীয় হৃদরোগ ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালের সাবেক পরিচালক অধ্যাপক ডা. আব্দুল্লাহ আল শাফি মজুমদার বলেন, “উচ্চ রক্তচাপ হার্টের রক্তনালী সরু করে কার্যকারিতা কমিয়ে দেয়, যা হার্ট অ্যাটাকের ঝুঁকি বাড়ায়। তাই সঠিক সময়ে উচ্চ রক্তচাপ শনাক্ত ও ওষুধের মাধ্যমে নিয়ন্ত্রণ জরুরি।”
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের সিবিএইচসি প্রোগ্রাম ম্যানেজার ডা. গীতা রানী দেবী জানান, “ওষুধ প্রাপ্যতায় কিছুটা ঘাটতি থাকলেও বর্তমানে কমিউনিটি ক্লিনিক স্বাস্থ্য সহায়তা ট্রাস্টের আওতায় দেশব্যাপী ওষুধ সরবরাহের চেষ্টা চলছে।”
ন্যাশনাল হার্ট ফাউন্ডেশন হাসপাতালের ইপিডেমিওলজি ও রিসার্চ বিভাগের প্রধান অধ্যাপক ডা. সোহেল রেজা চৌধুরী বলেন, “হৃদরোগের ঝুঁকি কমাতে হলে তৃণমূল পর্যায়ে উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণের হার বাড়াতে হবে।”
জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ এবং পাবলিক হেলথ অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের প্রেসিডেন্ট ইলেক্ট ডা. আবু জামিল ফয়সাল মনে করেন, “হৃদরোগ ও উচ্চ রক্তচাপ মোকাবেলায় জনগণের অংশগ্রহণসহ একটি সমন্বিত কর্মসূচি গ্রহণ ও বাস্তবায়ন অপরিহার্য।”
অন্যদিকে ব্র্যাক জেমস পি. গ্রান্ট স্কুল অব পাবলিক হেলথের অধ্যাপক ডা. মলয় কান্তি মৃধা জানান, “গবেষণা বলছে, গড়ে সিস্টোলিক রক্তচাপ মাত্র ৫ মি.মি. পারদচাপ কমানো গেলে দেশে স্ট্রোক ও হৃদরোগজনিত মৃত্যু যথাক্রমে ১৪ ও ৯ শতাংশ হ্রাস পাবে।”
সচেতনতা ও অংশগ্রহণের আহ্বান
ওয়েবিনারে আলোচক হিসেবে অংশ নেন জিএইচএআই বাংলাদেশ কান্ট্রি লিড মুহাম্মাদ রূহুল কুদ্দু। তিনি হৃদরোগ প্রতিরোধে সামাজিক ও জনআন্দোলনের প্রয়োজনীয়তার ওপর গুরুত্ব দেন।
এছাড়াও ভার্চুয়ালি যুক্ত ছিলেন মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক গবেষক, রাজনৈতিক সংগঠক, ইংরেজি দৈনিক দ্য ফিনান্সিয়াল পোস্ট ও সাপ্তাহিক নতুন কথা’র বিশেষ প্রতিনিধি, আরপি নিউজের সম্পাদক ও বিশিষ্ট কলামিস্ট কমরেড সৈয়দ আমিরুজ্জামান। যিনি দীর্ঘদিন জনআন্দোলন ও সামাজিক আন্দোলনের সঙ্গে সম্পৃক্ত।
প্রজ্ঞার নির্বাহী পরিচালক এবিএম জুবায়ের ওয়েবিনারের সভাপতিত্ব করেন এবং সমগ্র অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনা করেন প্রজ্ঞার কোঅর্ডিনেটর সাদিয়া গালিবা প্রভা।
জনগণের জন্য গুরুত্বপূর্ণ বার্তা
প্রজ্ঞার সমন্বয়ক সাদিয়া গালিবা প্রভা জানান, “বাংলাদেশে হৃদরোগ ও উচ্চ রক্তচাপ এখন নীরব মহামারিতে পরিণত হয়েছে। এ বিষয়ে জাতীয় পর্যায়ে সচেতনতা সৃষ্টি ও কার্যকর নীতিগত পদক্ষেপ জরুরি। আমাদের এই ওয়েবিনারের মাধ্যমে বিশেষজ্ঞরা সুপারিশ তুলে ধরেছেন, যা ভবিষ্যৎ কর্মপরিকল্পনায় ভূমিকা রাখবে।”
দেশের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে নানা শ্রেণি-পেশার মানুষ অনলাইনে যুক্ত হয়ে হৃদরোগ প্রতিরোধে সচেতনতা বৃদ্ধির এ আলোচনায় অংশ নেন।
প্রেক্ষাপট
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (WHO) ও বিভিন্ন গবেষণার তথ্য অনুযায়ী, হৃদরোগ পৃথিবীজুড়ে মৃত্যুর প্রধান কারণ। বাংলাদেশেও এর ব্যতিক্রম নয়। জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, স্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাস, নিয়মিত ব্যায়াম, ধূমপান ত্যাগ এবং উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণের মাধ্যমে হৃদরোগের ঝুঁকি উল্লেখযোগ্যভাবে হ্রাস করা সম্ভব।
উপসংহার
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বাংলাদেশে হৃদরোগজনিত অকালমৃত্যু কমাতে হলে সর্বাগ্রে উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে আনতে হবে। এজন্য প্রয়োজন সময়মতো সনাক্তকরণ, ওষুধের প্রাপ্যতা নিশ্চিতকরণ এবং জনগণকে সচেতন করা।
সম্পাদক : সৈয়দ আমিরুজ্জামান
ইমেইল : rpnewsbd@gmail.com
মোবাইল +8801716599589
৩১/এফ, তোপখানা রোড, ঢাকা-১০০০।
© RP News 24.com 2013-2020
Design and developed by ওয়েব নেষ্ট বিডি