ফিলিপাইনে এশিয়া উইমেন কনফারেন্সে বাংলাদেশকে প্রতিনিধিত্ব করলেন ডা. তাসিন আফরিন ডায়না

প্রকাশিত: ৭:১৭ অপরাহ্ণ, সেপ্টেম্বর ২৯, ২০২৫

ফিলিপাইনে এশিয়া উইমেন কনফারেন্সে বাংলাদেশকে প্রতিনিধিত্ব করলেন ডা. তাসিন আফরিন ডায়না

Manual6 Ad Code

নিজস্ব প্রতিবেদক | ঢাকা, ২৯ সেপ্টেম্বর ২০২৫ : বাংলাদেশ কৃষক ফেডারেশনের সভাপতি বদরুল আলমের দ্বিতীয় কন্যা ও চিকিৎসক ডা. তাসিন আফরিন ডায়না ফিলিপাইনে অনুষ্ঠিত এশিয়া উইমেন কনফারেন্স ২০২৫-এ অংশ নিয়ে বাংলাদেশের নারী আন্দোলন, সংগ্রাম ও সম্ভাবনা নিয়ে এক লিখিত বক্তব্য উপস্থাপন করেছেন।

এশিয়ার বিভিন্ন দেশ থেকে নারী নেতৃত্ব, গবেষক, মানবাধিকারকর্মী, চিকিৎসক ও সামাজিক সংগঠকরা অংশ নেন এ সম্মেলনে। নারী নেতৃত্ব, লিঙ্গ সমতা, প্রজনন স্বাস্থ্য অধিকার, জলবায়ু পরিবর্তন এবং নারী আন্দোলনের ভবিষ্যৎ দিকনির্দেশনা—এসব বিষয় এ কনফারেন্সে আলোচিত হয়।

বাংলাদেশ কান্ট্রি রিপোর্টে ডা. ডায়নার বক্তব্য

সোমবার (২৯ সেপ্টেম্বর ২০২৫) ফিলিপাইনে আয়োজিত এশিয়া উইমেন কনফারেন্সে “Bangladesh Country Report – Asia Women Seminar 2025” শীর্ষক লিখিত বক্তব্যে ডা. তাসিন আফরিন ডায়না বলেন—

Manual1 Ad Code

বাংলাদেশের নারী শ্রমিকরা গত পাঁচ বছরে প্রতিরোধ, আন্দোলন ও সামাজিক পরিবর্তনের লড়াইয়ে অগ্রণী ভূমিকা রেখেছেন।

গার্মেন্টস শিল্পে কর্মরত প্রায় ৪০ লাখ নারী শ্রমিক বৈশ্বিক ব্র্যান্ডের জন্য কাজ করলেও তাদের জীবন এখনো দারিদ্র্যসীমায় আবদ্ধ।

নারীরা দেশে মোট অবৈতনিক শ্রমের ৮৫ শতাংশ বহন করছেন, যার আর্থিক মূল্য প্রায় ৬.৭ ট্রিলিয়ন টাকা, যা দেশের জিডিপির প্রায় ১৮.৯ শতাংশ।

শহরাঞ্চলে শিক্ষা, স্বাস্থ্য ও ডিজিটাল প্রযুক্তিতে প্রবেশাধিকার বেড়েছে ঠিকই, কিন্তু গ্রামীণ ও প্রান্তিক নারীরা ভূমিহীনতা, যৌতুক, কৃষি সহায়তা থেকে বঞ্চনা এবং বৈষম্যের শিকার।

প্রবাসী নারী শ্রমিকরা বিশেষ করে মধ্যপ্রাচ্যে নির্যাতন, বেতন বঞ্চনা ও যৌন সহিংসতার শিকার হচ্ছেন।

ডা. ডায়না তার বক্তব্যে আরও উল্লেখ করেন, ২০২৪ সালের অভ্যুত্থানে রাজনৈতিক পটপরিবর্তনে নারীরা সামনের সারিতে থেকে আন্দোলন পরিচালনা করেছেন, চিকিৎসা সহায়তা দিয়েছেন এবং সামাজিক মাধ্যম ব্যবহার করে রাষ্ট্রীয় দমন-পীড়ন নথিবদ্ধ করেছেন। কিন্তু এ আন্দোলনের পরপরই নারী শিক্ষার্থী ও কর্মীদের ওপর দমন, যৌন হয়রানি ও সন্ত্রাসী হামলার ঘটনা বেড়ে যায়।

রাষ্ট্রীয় দমন-পীড়ন ও নারীর নিরাপত্তা

তার প্রতিবেদনে আলোচিত হয় নারায়ণগঞ্জের শেজান জুস ফ্যাক্টরি অগ্নিকাণ্ড (২০২১) এবং মেঘনা আলমের নিপীড়নের ঘটনা।
ডা. ডায়না বলেন, “বাংলাদেশে নারী যদি প্রতিরোধ করে দাঁড়ায়, তবে তাকে দমন করার জন্য রাষ্ট্র ও ক্ষমতাসীন গোষ্ঠী নানা কৌশল নেয়। কখনো কারখানার দরজা বন্ধ করে আগুনে পুড়িয়ে মারা হয়, কখনো আদালত কক্ষে ন্যায্য বিচার থেকে বঞ্চিত করা হয়।”

Manual8 Ad Code

চ্যালেঞ্জ ও অগ্রগতি

Manual7 Ad Code

তিনি চারটি বড় চ্যালেঞ্জ চিহ্নিত করেন—

১. নিরাপত্তাহীনতা ও নাগরিক স্বাধীনতার সংকোচন।
২. অর্থনৈতিক অনিশ্চয়তা ও মজুরি বৈষম্য।
৩. ধর্মীয় মৌলবাদের উত্থান ও নারীবিরোধী মনোভাব।
৪. সংখ্যালঘু নারী (আদিবাসী, রোহিঙ্গা ও দলিত) সমাজের প্রান্তিকীকরণ।

অন্যদিকে অগ্রগতির মধ্যে রয়েছে—

১. রাজনৈতিক অঙ্গনে নারীর দৃশ্যমানতা ও তরুণ নেতৃত্বের উত্থান।
২. নারীবাদী নেটওয়ার্ক ও সিভিল সোসাইটির বিকাশ।
৩. গবেষণা ও নীতিমালায় নারীর শ্রম ও সময়ের মূল্যায়ন।

নারীর আন্দোলনের শক্তি ও ভবিষ্যৎ

ডা. ডায়না জানান, নারীর আন্দোলন এখন বহুমাত্রিক—

গার্মেন্টস শ্রমিকদের মজুরি ও নিরাপত্তা আন্দোলন।

Manual7 Ad Code

কৃষাণী নারীদের ভূমি অধিকার ও খাদ্য সার্বভৌমত্বের দাবি।

প্রবাসী নারীর নিরাপদ অভিবাসন ও ন্যায্য চুক্তি আন্দোলন।

ট্রান্স নারীদের স্বাস্থ্যসেবা ও আইনগত স্বীকৃতির দাবি।

মৌলবাদ ও সাম্প্রদায়িকতার বিরুদ্ধে নারীবাদী সংগঠনের লড়াই।

তিনি তার বক্তব্যে নারীর ক্ষমতায়নকে শ্রেণি-সংগ্রামের সঙ্গে যুক্ত করার আহ্বান জানান এবং বলেন,
“আমরা পিতৃতন্ত্র, পুঁজিবাদ ও ফ্যাসিবাদ একসঙ্গে ভাঙতে চাই। শহর ও গ্রাম, শ্রমিক ও কৃষক, নারী ও লিঙ্গ-বৈচিত্র্য সম্প্রদায়, তরুণ ও অভিজ্ঞ প্রজন্ম—সবাইকে ঐক্যবদ্ধ হতে হবে। জয় বাংলার নারী শক্তি!”

পরিবার ও দেশের জন্য গর্ব

ডা. তাসিন আফরিন ডায়না বর্তমানে চিকিৎসা পেশার পাশাপাশি নারী ও শিশু স্বাস্থ্য, প্রজনন স্বাস্থ্য এবং নারীর ক্ষমতায়ন বিষয়ক সামাজিক উন্নয়ন কার্যক্রমে সক্রিয়। আন্তর্জাতিক মঞ্চে বাংলাদেশকে প্রতিনিধিত্বের সুযোগ পাওয়ায় তিনি গর্বিত বলে ঘনিষ্ঠ মহল জানিয়েছে।

এর আগে রবিবার (২৮ সেপ্টেম্বর) সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে বদরুল আলম লিখেছিলেন,
“আমার দ্বিতীয় মেয়ে ডা. তাসিন আফরিন ডায়না এশিয়া উইমেন কনফারেন্সে যোগদানের জন্য ফিলিপাইন গিয়েছে।”

গুরুত্বের বহিঃপ্রকাশ

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এশিয়া উইমেন কনফারেন্স শুধু নারীর ক্ষমতায়ন নয়, বরং ভবিষ্যৎ নীতি ও আন্দোলনের রূপরেখা তৈরির একটি গুরুত্বপূর্ণ প্ল্যাটফর্ম। এখানে গৃহীত সুপারিশগুলো নীতি প্রণয়ন ও সামাজিক আন্দোলনে প্রভাব ফেলবে।

বাংলাদেশের পক্ষ থেকে ডা. ডায়নার অংশগ্রহণ নারী নেতৃত্বের এক নতুন সম্ভাবনার প্রতীক হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে।

 

এ সংক্রান্ত আরও সংবাদ

 


Follow for More!

Manual1 Ad Code
Manual7 Ad Code