সিলেট ১৩ই অক্টোবর, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ | ২৮শে আশ্বিন, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
প্রকাশিত: ১২:১০ পূর্বাহ্ণ, সেপ্টেম্বর ৩০, ২০২৫
মেহেদী হাসান রাসেল, বিশেষ প্রতিনিধি | লক্ষ্মীপুর, ৩০ সেপ্টেম্বর ২০২৫ : লক্ষ্মীপুর-৩ আসনের (লক্ষ্মীপুর সদর) সাবেক সংসদ সদস্য, সাবেক বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রী, জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সভাপতি এবং মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম সংগঠক বীর মুক্তিযোদ্ধা এ কে এম শাহজাহান কামালের দ্বিতীয় মৃত্যুবার্ষিকী আজ।
তিনি ২০২৩ সালের ৩০ সেপ্টেম্বর রাত ৩টা ১৯ মিনিটে রাজধানীর এভারকেয়ার হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন। মৃত্যুকালে তার বয়স হয়েছিল ৭৩ বছর। মৃত্যুর পর জাতীয় রাজনৈতিক অঙ্গন থেকে শুরু করে স্থানীয় পর্যায়েও শোকের ছায়া নেমে আসে।
রাজনৈতিক জীবন
শাহজাহান কামাল স্বাধীন বাংলাদেশের প্রথম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী হিসেবে নোয়াখালী-১১ আসন থেকে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। পরবর্তীতে ২০১৪ ও ২০১৮ সালে তিনি লক্ষ্মীপুর-৩ (সদর) আসন থেকে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। ২০১৮ সালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন মন্ত্রিসভায় তিনি বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব পান এবং প্রায় এক বছর মন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন।
এ ছাড়া তিনি আওয়ামী লীগের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব পালন করেন। ১৯৮৫ সালে তিনি লক্ষ্মীপুর জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি নির্বাচিত হন এবং দীর্ঘদিন জেলা রাজনীতির নেতৃত্ব দিয়েছেন। ২০১১ সালে তিনি লক্ষ্মীপুর জেলা পরিষদের প্রশাসক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। একই সঙ্গে ২০০৯ সালে জনতা ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদের সদস্য ছিলেন।
শিক্ষাজীবন ও পারিবারিক পটভূমি
১৯৫০ সালের ১ জানুয়ারি লক্ষ্মীপুর জেলার আটিয়াতলীতে জন্মগ্রহণ করেন শাহজাহান কামাল। তার বাবা ফরিদ আহমেদ এবং মা মাছুমা খাতুন। তিন ভাই-বোনের মধ্যে তিনি ছিলেন বড়।
তিনি ১৯৬৩ সালে লক্ষ্মীপুর মডেল হাইস্কুল থেকে এসএসসি, ১৯৬৫ সালে চৌমুহনী মদনমোহন কলেজ থেকে এইচএসসি এবং একই কলেজ থেকে স্নাতক ডিগ্রি অর্জন করেন। পরবর্তীতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যয়নকালে তিনি ছাত্র রাজনীতিতে সক্রিয়ভাবে সম্পৃক্ত হন।
মুক্তিযুদ্ধ ও রাজনৈতিক আন্দোলনে সক্রিয়তা
শাহজাহান কামাল ১৯৬৬ সালে বঙ্গবন্ধুর ঐতিহাসিক ৬ দফা আন্দোলন ও ১৯৬৯ সালের গণঅভ্যুত্থানে সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণ করেন। আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলায় বঙ্গবন্ধুর মুক্তির দাবিতে তিনি আন্দোলনেও অগ্রণী ভূমিকা রাখেন।
১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধে তিনি ভারতের প্রশিক্ষণ ক্যাম্প থেকে প্রশিক্ষণ গ্রহণ করে অস্ত্র হাতে যুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়েন। নোয়াখালী ও লক্ষ্মীপুর অঞ্চলে মুক্তিযোদ্ধাদের সঙ্গে থেকে সম্মুখযুদ্ধে অংশ নেন। স্বাধীনতার পর ১৯৭৩ সালে প্রথম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশ নিয়ে তিনি সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন।
বঙ্গবন্ধু হত্যাকাণ্ডের পর
১৯৭৫ সালে বঙ্গবন্ধুকে সপরিবারে হত্যার পর শাহজাহান কামাল রাজপথে নেমে আসেন। তিনি লক্ষ্মীপুর জেলায় আন্দোলনের নেতৃত্ব দেন এবং আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক ভিত্তি মজবুত করতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখেন।
মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে কর্মসূচি
আজ শাহজাহান কামালের দ্বিতীয় মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে লক্ষ্মীপুর জেলা আওয়ামী লীগ ও এর অঙ্গসংগঠনগুলো নানা কর্মসূচি হাতে নিয়েছে। এসব কর্মসূচির মধ্যে রয়েছে—কোরআন খতম, মিলাদ ও দোয়া মাহফিল, কবর জিয়ারত এবং আলোচনা সভা। দলীয় নেতাকর্মীরা জানান, মুক্তিযুদ্ধ থেকে শুরু করে রাজনৈতিক জীবনের প্রতিটি ধাপে তার অবদান চিরস্মরণীয় হয়ে থাকবে।
উত্তরাধিকার
শাহজাহান কামাল ছিলেন সততা, সাহস ও সংগঠনী দক্ষতার প্রতীক। মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে তার বীরত্বগাথা এবং রাজনীতিতে দীর্ঘ পথচলা ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে অনুপ্রাণিত করবে। লক্ষ্মীপুরবাসীর কাছে তিনি ছিলেন আস্থার প্রতীক, আর আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে এক নিবেদিতপ্রাণ সৈনিক।
সম্পাদক : সৈয়দ আমিরুজ্জামান
ইমেইল : rpnewsbd@gmail.com
মোবাইল +8801716599589
৩১/এফ, তোপখানা রোড, ঢাকা-১০০০।
© RP News 24.com 2013-2020
Design and developed by ওয়েব নেষ্ট বিডি