সিলেট ১৩ই অক্টোবর, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ | ২৮শে আশ্বিন, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
প্রকাশিত: ৯:০৫ অপরাহ্ণ, অক্টোবর ১, ২০২৫
বাংলার ইতিহাসে এমন কিছু মানুষ আছেন যাদের জীবনযাত্রা নিছক ব্যক্তিগত উন্নতির গণ্ডিতে সীমাবদ্ধ থাকেনি, বরং তাঁদের প্রতিটি পদক্ষেপ জনকল্যাণের এক অনন্য দৃষ্টান্ত হয়ে উঠেছে। দানশীলতা, সমাজসেবা, শিক্ষা বিস্তার এবং মানবিকতার প্রতীক হিসেবে মহেশচন্দ্র ভট্টাচার্যের নাম আজও শ্রদ্ধার সাথে উচ্চারিত হয়।
জন্ম ও শৈশব
১৮৫৮ সালের ১ ডিসেম্বর ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার নবীনগর উপজেলার বিটঘর গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন মহেশচন্দ্র ভট্টাচার্য। তাঁর পিতা ঈশ্বরদাস তর্কসিদ্ধান্ত ছিলেন একজন সুপণ্ডিত এবং মাতা রামমালা দেবী ছিলেন গভীর ভক্তিমতী নারী। শৈশবেই পিতার মৃত্যু এবং দারিদ্র্যের কারণে প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষায় তিনি বেশিদূর এগোতে না পারলেও পিতামাতার সত্য ও ন্যায়ের আদর্শ তাঁকে জীবন গঠনের প্রেরণা যুগিয়েছে।
হোমিওপ্যাথি ব্যবসার সূচনা
১৮৮৩ সালে মহেশচন্দ্র ভট্টাচার্য কলকাতায় পাড়ি জমান। ১৮৮৯ সালে তিনি প্রতিষ্ঠা করেন এম. ভট্টাচার্য অ্যান্ড কোম্পানি, যা পরবর্তীতে বাংলার অন্যতম প্রধান হোমিওপ্যাথি ঔষধ ব্যবসায় পরিণত হয়। কুমিল্লা ও ঢাকায় শাখা খোলার মাধ্যমে তিনি আর্থিক সমৃদ্ধি অর্জন করলেও, সেই সমৃদ্ধিকে ব্যয় করেছেন মূলত সমাজসেবায়।
শিক্ষা ও সংস্কৃতিচর্চায় অবদান
শিক্ষা বিস্তারে মহেশচন্দ্র ভট্টাচার্যের অবদান অপরিসীম।
১৯১২ সালে তিনি মায়ের নামে কুমিল্লায় প্রতিষ্ঠা করেন রামমালা গ্রন্থাগার।
১৯১৪ সালে দরিদ্র ছাত্রদের জন্য প্রতিষ্ঠা করেন ঈশ্বর পাঠশালা এবং একইসাথে রামমালা ছাত্রাবাস।
১৯১৯ সালে নারী শিক্ষার প্রসারে প্রতিষ্ঠা করেন নিবেদিতা গার্লস স্কুল ও নিবেদিতা ছাত্রী নিবাস।
বারাণসীতে সংস্কৃত শিক্ষার জন্য তিনি গড়ে তোলেন ঈশ্বর পাঠশালা টোল।
নিজ গ্রামে প্রতিষ্ঠা করেন বিটঘর রাধানাথ উচ্চ বিদ্যালয়, যা পরে উন্নীত হয় দানবীর মহেশচন্দ্র বিদ্যাপীঠ কলেজে।
সমাজসেবা ও মানবিক কার্যক্রম
মহেশচন্দ্র ভট্টাচার্য শুধু শিক্ষা বিস্তারেই সীমাবদ্ধ থাকেননি।
গ্রামে পানির অভাব মেটাতে অসংখ্য পুকুর খনন করেন।
দুর্ভিক্ষপীড়িত মানুষের সেবায় প্রতিদিন শত শত মানুষের খাদ্যের ব্যবস্থা করতেন।
শীতকালে গরীবদের জন্য শীতবস্ত্র বিতরণ করতেন।
কলকাতায় ভ্রমণকারীদের জন্য কালীঘাট হোস্টেল এবং বারাণসীতে স্ত্রী হরসুন্দরীর নামে ধর্মশালা নির্মাণ করেন।
সাহিত্যকর্ম
জনসেবার পাশাপাশি তিনি লেখালিখিতেও যুক্ত ছিলেন। তাঁর উল্লেখযোগ্য গ্রন্থসমূহ হলো:
পারিবারিক চিকিৎসা,
স্ত্রীরোগ চিকিৎসা,
হোমিওপ্যাথিক ওলাওঠা চিকিৎসা,
পারিবারিক ভেষজতত্ত্ব,
এছাড়াও তিনি আত্মকথা নামে আত্মজীবনী রচনা করেন।
মৃত্যুর পর সম্মাননা ও স্মৃতি
১৯৪৪ সালের ১০ ফেব্রুয়ারি ভারতের বারাণসীতে মহেশচন্দ্র ভট্টাচার্য পরলোকগমন করেন। তবে তাঁর রেখে যাওয়া অবদান এখনও জীবন্ত।
১৯৬৭ সালে তাঁর স্মৃতিকে অমর করে রাখতে কলকাতার হাওড়ায় প্রতিষ্ঠা করা হয় মহেশ ভট্টাচার্য হোমিওপ্যাথিক মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতাল। কুমিল্লায় তাঁর প্রতিষ্ঠিত প্রতিষ্ঠানগুলো আজও জ্ঞানের আলো ছড়িয়ে যাচ্ছে।
উপসংহার
দানশীলতা, মানবসেবা ও শিক্ষা বিস্তারের এক উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত মহেশচন্দ্র ভট্টাচার্য। ব্যক্তিগত কৃচ্ছ্রসাধনের মাধ্যমে সঞ্চিত সম্পদ তিনি নিঃস্বার্থভাবে ব্যয় করেছেন মানুষের কল্যাণে। শিক্ষা ও সমাজসেবায় তাঁর অবদান বাংলার ইতিহাসে চিরস্মরণীয় হয়ে থাকবে।
#
সৈয়দা হাজেরা সুলতানা (শানজিদা)
শিক্ষার্থী
পদার্থবিজ্ঞান (সম্মান) ১ম বর্ষ
মুরারিচাঁদ কলেজ
সিলেট।
সম্পাদক : সৈয়দ আমিরুজ্জামান
ইমেইল : rpnewsbd@gmail.com
মোবাইল +8801716599589
৩১/এফ, তোপখানা রোড, ঢাকা-১০০০।
© RP News 24.com 2013-2020
Design and developed by ওয়েব নেষ্ট বিডি