তোফায়েল আহমেদ আর নেই

প্রকাশিত: ১১:২৮ অপরাহ্ণ, অক্টোবর ৪, ২০২৫

তোফায়েল আহমেদ আর নেই

Manual5 Ad Code

নিজস্ব প্রতিবেদক | ঢাকা | শনিবার, ০৪ অক্টোবর ২০২৫ : আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য, মহান মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম সংগঠক ও ভোলা-১ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য তোফায়েল আহমেদ ইন্তেকাল করেছেন (ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন)।

শনিবার (৪ অক্টোবর ২০২৫) রাত সাড়ে ৯টার দিকে রাজধানীর একটি বেসরকারি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তিনি শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন। মৃত্যুর সময় তাঁর বয়স হয়েছিল ৮১ বছর। দীর্ঘদিন ধরে তিনি বার্ধক্যজনিত নানা জটিলতায় ভুগছিলেন বলে পারিবারিক সূত্রে জানা গেছে।

Manual1 Ad Code

তোফায়েল আহমেদের মৃত্যুর খবরটি নিশ্চিত করেছেন তাঁর ভাতিজা ও সাবেক এমপি আলী আজম মুকুলের ব্যক্তিগত সহকারী সালাউদ্দিন।

দেশের রাজনৈতিক অঙ্গনে গভীর শোক

বঙ্গবন্ধুর ঘনিষ্ঠ সহচর ও মুক্তিযুদ্ধের সংগঠক হিসেবে তোফায়েল আহমেদের মৃত্যুতে রাজনৈতিক অঙ্গনে নেমে এসেছে গভীর শোকের ছায়া। আওয়ামী লীগসহ দেশের বিভিন্ন রাজনৈতিক দল, পেশাজীবী সংগঠন ও সামাজিক সংগঠন তাঁর মৃত্যুতে শোক ও সমবেদনা জানিয়েছে।

মহান মুক্তিযুদ্ধের অকুতোভয় সংগঠক

Manual8 Ad Code

১৯৪৩ সালের ২২ অক্টোবর ব্রিটিশ ভারতের বঙ্গ প্রদেশের বাকেরগঞ্জ জেলার কোড়ালিয়া গ্রামে (বর্তমানে ভোলা জেলার দক্ষিণ দিঘলদী ইউনিয়নে) জন্মগ্রহণ করেন তোফায়েল আহমেদ। তাঁর পিতা মৌলভী আজহার আলী ও মাতা ফাতেমা বেগম।

ভোলা সরকারি হাই স্কুল থেকে ১৯৬০ সালে মাধ্যমিক, বরিশাল ব্রজমোহন কলেজ থেকে ১৯৬২ সালে উচ্চ মাধ্যমিক এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে মৃত্তিকাবিজ্ঞানে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি অর্জন করেন তিনি।

ছাত্রজীবনেই তিনি নেতৃত্বের গুণে পরিচিতি পান। ১৯৬৬-৬৭ মেয়াদে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইকবাল হলের (বর্তমানে শহীদ সার্জেন্ট জহুরুল হক হল) নির্বাচিত সহ-সভাপতি (ভিপি) ছিলেন। ১৯৬৮-৬৯ সালে ছাত্র আন্দোলনের উত্তাল সময়ে তিনি ডাকসুর ভিপি হিসেবে সর্বদলীয় ছাত্র সংগ্রাম পরিষদের আহ্বায়ক নির্বাচিত হন।

১৯৬৯ সালের ঐতিহাসিক গণঅভ্যুত্থানে তিনি নেতৃত্ব দেন এবং সেই সময় শেখ মুজিবুর রহমানকে “বঙ্গবন্ধু” উপাধিতে ভূষিত করার ঘোষণা দেন—যা বাংলাদেশের ইতিহাসে এক অনন্য মাইলফলক।

মুক্তিযুদ্ধ ও পরবর্তী রাজনৈতিক জীবন

১৯৭০ সালের নির্বাচনে আওয়ামী লীগের মনোনয়নে জাতীয় পরিষদের সদস্য নির্বাচিত হন তোফায়েল আহমেদ। ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধে তিনি মুজিব বাহিনীর অঞ্চলভিত্তিক চার প্রধানের একজন হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। মুক্তিযুদ্ধের পর ১৯৭২ সালে বঙ্গবন্ধুর রাজনৈতিক সচিব হিসেবে নিয়োগ পান।

১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট বঙ্গবন্ধু হত্যাকাণ্ডের পর সামরিক প্রশাসন তাঁকে গ্রেপ্তার করে। সহকারী ব্যক্তিগত সচিব মিন্টুকে হেফাজতে নির্যাতন করে হত্যা করা হয়।

পরবর্তী সময়ে তিনি আওয়ামী লীগের সংগঠন পুনর্গঠন এবং রাজনীতিতে পুনরায় দলকে নেতৃত্ব দিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখেন।

দীর্ঘ সংসদীয় ও মন্ত্রিত্বের জীবন

তোফায়েল আহমেদ ১৯৭৩, ১৯৮৬, ১৯৯১, ১৯৯৬, ২০০৮ ও ২০১৪ সালের জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী হিসেবে জয়লাভ করেন।
১৯৯৬ সালের ২৩ জুন শেখ হাসিনা সরকারের শিল্প ও বাণিজ্যমন্ত্রীর দায়িত্ব পান তিনি।
২০১৪ থেকে ২০১৯ সাল পর্যন্ত তিনি বাণিজ্যমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন।
সংসদে তিনি শিল্প মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত স্থায়ী কমিটির চেয়ারম্যান হিসেবেও দায়িত্ব পালন করেছেন।

Manual7 Ad Code

দলের ভেতরে তিনি দীর্ঘদিন সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য এবং পরবর্তীতে উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য ছিলেন।

Manual1 Ad Code

জীবনের শেষ অধ্যায়

২০২৪ সালের অভ্যুত্থানে আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর রাষ্ট্রপতি মোহাম্মদ সাহাবুদ্দিন সংসদ বিলুপ্ত করলে তিনি সংসদ সদস্য পদ হারান। এরপর থেকেই তিনি সক্রিয় রাজনীতি থেকে কিছুটা দূরে সরে গিয়ে পারিবারিক ও সামাজিক কাজের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন।

পারিবারিক জীবন

১৯৬৪ সালে তিনি দনিয়াস্থ আলহাজ্ব মফিজুল হক তালুকদারের জ্যেষ্ঠ কন্যা আনোয়ারা বেগমের সঙ্গে পরিণয়সূত্রে আবদ্ধ হন। তাঁদের একমাত্র কন্যা তাসলিমা আহমেদ জামান মুন্নী একজন চিকিৎসক। জামাতা তৌহিদুজ্জামান তুহিন স্কয়ার হাসপাতালে কর্মরত একজন কার্ডিওলজিস্ট।

তোফায়েল আহমেদ

একাধারে ছিলেন ছাত্রনেতা, মুক্তিযোদ্ধা, রাজনীতিক ও বঙ্গবন্ধুর বিশ্বস্ত সহযোদ্ধা। তাঁর মৃত্যুতে এক অনন্য রাজনৈতিক অধ্যায়ের অবসান ঘটল।

এ সংক্রান্ত আরও সংবাদ

 


Follow for More!

Manual1 Ad Code
Manual7 Ad Code