সাবেক রাষ্ট্রপতি বদরুদ্দোজা চৌধুরীর প্রথম মৃত্যুবার্ষিকী আজ

প্রকাশিত: ১২:১৫ পূর্বাহ্ণ, অক্টোবর ৫, ২০২৫

সাবেক রাষ্ট্রপতি বদরুদ্দোজা চৌধুরীর প্রথম মৃত্যুবার্ষিকী আজ

Manual6 Ad Code

বিশেষ প্রতিবেদন | ঢাকা, ০৫ অক্টোবর ২০২৫ : বাংলাদেশের সাবেক রাষ্ট্রপতি, খ্যাতিমান চিকিৎসক ও প্রবীণ রাজনীতিবিদ অধ্যাপক ডা. একিউএম বদরুদ্দোজা চৌধুরী (বি. চৌধুরী নামে পরিচিত)-এর প্রথম মৃত্যুবার্ষিকী আজ।

গত বছরের এই দিনে—২০২৪ সালের ৪ অক্টোবর শুক্রবার দিবাগত রাত ৩টা ১৫ মিনিটে—নিজের প্রতিষ্ঠিত উত্তরা মহিলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তিনি শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন। মৃত্যুকালে তাঁর বয়স হয়েছিল ৯৪ বছর।

শেষ সময় ও দাফন

Manual1 Ad Code

ফুসফুসে সংক্রমণের কারণে মৃত্যুর দুই দিন আগে—২ অক্টোবর ২০২৪—তাকে উত্তরা মহিলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। সেদিন তাঁর মেয়ে ডা. শায়লা চৌধুরী জানান, তার বাবা দীর্ঘদিন ধরে ইস্কেমিক হার্ট ডিজিজ ও বার্ধক্যজনিত জটিলতায় ভুগছিলেন।
জীবনের শেষ রাতে তিনি লাইফ সাপোর্টে ছিলেন বলে ছেলে মাহী বি. চৌধুরী জানিয়েছিলেন। দেশবাসীর কাছে তিনি বাবার জন্য দোয়া প্রার্থনা করেন।
পরদিন বিকেলে নিজ জেলা মুন্সীগঞ্জের শ্রীনগর স্টেডিয়ামে জানাজা শেষে তাঁকে গ্রামের বাড়িতে দাফন করা হয়।

জন্ম ও শিক্ষাজীবন

১৯৩০ সালের ১১ অক্টোবর কুমিল্লা শহরের প্রখ্যাত ‘মুন্সেফ বাড়ি’তে নানাবাড়িতে জন্ম নেন বদরুদ্দোজা চৌধুরী। তাঁর বাবা অ্যাডভোকেট কফিল উদ্দিন চৌধুরী ছিলেন কৃষক প্রজা পার্টির সহ-সভাপতি, যুক্তফ্রন্টের সাধারণ সম্পাদক এবং তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানের প্রাদেশিক মন্ত্রিসভার সদস্য।
বি. চৌধুরী ছিলেন মেধাবী ছাত্র। তিনি ১৯৪৭ সালে সেন্ট গ্রেগরি স্কুল থেকে মেধাতালিকায় দ্বিতীয় স্থান নিয়ে ম্যাট্রিকুলেশন পাস করেন এবং ১৯৪৯ সালে ঢাকা কলেজ থেকে প্রথম বিভাগে আইএসসি পাস করেন।
১৯৫৪-৫৫ শিক্ষাবর্ষে ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) থেকে এমবিবিএস ডিগ্রি অর্জন করেন। পরবর্তীতে লন্ডনের রয়েল কলেজ অব ফিজিশিয়ানস, এডিনবার্গ ও গ্লাসগো থেকে ফেলোশিপ (এফআরসিপি) লাভ করেন। তিনি চিকিৎসা বিজ্ঞানে বাংলাদেশের অন্যতম শীর্ষ বিশেষজ্ঞ হিসেবে খ্যাতি অর্জন করেন।

চিকিৎসা ও গণমাধ্যমজগতে অবদান

ষাটের দশকের শেষ দিকে বাংলাদেশ টেলিভিশনের জনপ্রিয় স্বাস্থ্যবিষয়ক অনুষ্ঠান ‘আপনার ডাক্তার’–এর মাধ্যমে তিনি ব্যাপক জনপ্রিয়তা অর্জন করেন। চিকিৎসা, জনস্বাস্থ্য ও রোগ প্রতিরোধ বিষয়ে সচেতনতা গড়ে তোলায় তিনি পথিকৃৎ ছিলেন।
তিনি রোগবিজ্ঞানে অধ্যাপনা ছাড়াও ছিলেন একজন উপস্থাপক, প্রাবন্ধিক, নাট্যকার ও বক্তা। চিকিৎসাক্ষেত্রে অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ তিনি বাংলাদেশের সর্বোচ্চ বেসামরিক সম্মাননা ‘স্বাধীনতা পদক’ (১৯৯৩) লাভ করেন।
তাছাড়া ১৯৭৭ সালে শ্রেষ্ঠ টিভি উপস্থাপক হিসেবে বাংলাদেশ টেলিভিশন পুরস্কার পান।

Manual3 Ad Code

রাজনীতিতে পদার্পণ

১৯৭৮ সালে তৎকালীন রাষ্ট্রপতি মেজর জেনারেল জিয়াউর রহমানের আহ্বানে বদরুদ্দোজা চৌধুরী রাজনীতিতে প্রবেশ করেন এবং বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি)-এর প্রতিষ্ঠাতা মহাসচিব হন।
তিনি ১৯৭৯ সালে মুন্সীগঞ্জ-১ আসন থেকে প্রথমবার সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়ে মন্ত্রিপরিষদে যোগ দেন। পরবর্তীতে ১৯৯১ সালে শিক্ষামন্ত্রী, সংসদ উপনেতা এবং ১৯৯৬ সালে বিরোধীদলীয় উপনেতা হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন।
২০০১ সালে তৃতীয়বার নির্বাচিত হয়ে তিনি বিএনপি সরকারের পররাষ্ট্রমন্ত্রী নিযুক্ত হন। একই বছরের ১৪ নভেম্বর তিনি বাংলাদেশের দ্বাদশ রাষ্ট্রপতি হিসেবে শপথ নেন।
রাজনৈতিক বিরোধের কারণে ২০০২ সালের ২১ জুন রাষ্ট্রপতির পদ থেকে পদত্যাগ করেন।

বিকল্পধারা প্রতিষ্ঠা ও পরবর্তী জীবন

Manual2 Ad Code

রাষ্ট্রপতির দায়িত্ব থেকে সরে দাঁড়ানোর দুই বছর পর, ২০০৪ সালের ৮ মে, বদরুদ্দোজা চৌধুরী প্রতিষ্ঠা করেন ‘বিকল্পধারা বাংলাদেশ’ নামের রাজনৈতিক দল। মৃত্যুর আগ পর্যন্ত তিনি দলটির প্রেসিডেন্ট হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন।
তিনি জাতিসংঘে তিনবার বক্তৃতা দিয়েছেন এবং দেশের রাজনীতি, শিক্ষা ও গণমাধ্যম অঙ্গনে একজন উদার, প্রজ্ঞাবান ও সুশীল কণ্ঠ হিসেবে পরিচিত ছিলেন।

পরিবার ও উত্তরসূরি

ব্যক্তিজীবনে তিনি ছিলেন স্ত্রী হাসিনা ওয়ার্দা চৌধুরী, দুই মেয়ে ও এক ছেলের জনক।
বড় মেয়ে মুনা চৌধুরী পেশায় আইনজীবী, ছোট মেয়ে ডা. শায়লা চৌধুরী উত্তরা মহিলা মেডিকেল কলেজে অধ্যাপনা করেন।
একমাত্র ছেলে মাহী বি. চৌধুরী বিকল্পধারা বাংলাদেশের নেতা এবং মুন্সীগঞ্জ-১ আসন থেকে তিনবারের সংসদ সদস্য।

উত্তরাধিকার

Manual1 Ad Code

ডা. বদরুদ্দোজা চৌধুরীর জীবন ছিল চিকিৎসা, শিক্ষা, সংস্কৃতি ও রাজনীতির এক বিরল সমন্বয়। চিকিৎসক হিসেবে যেমন তিনি জনগণের আস্থা অর্জন করেছিলেন, তেমনি রাজনীতিক হিসেবেও ছিলেন সংযমী, প্রজ্ঞাবান ও দেশপ্রেমিক।
আজ তাঁর প্রথম মৃত্যুবার্ষিকীতে রাজনৈতিক সহকর্মী, শিক্ষার্থী, চিকিৎসক সমাজ ও সর্বস্তরের জনগণ গভীর শ্রদ্ধায় স্মরণ করছেন এই বরেণ্য ব্যক্তিত্বকে।

 

এ সংক্রান্ত আরও সংবাদ

 


Follow for More!

Manual1 Ad Code
Manual8 Ad Code