সেই যুগে প্রাপ্তবয়স্কদের জন্য ম্যাগাজিন সম্পাদনা ও লেখালেখি

প্রকাশিত: ৪:১৪ অপরাহ্ণ, অক্টোবর ৫, ২০২৫

সেই যুগে প্রাপ্তবয়স্কদের জন্য ম্যাগাজিন সম্পাদনা ও লেখালেখি

Manual5 Ad Code

সোভিক রাতুল বসু |

১৯৭১ সাল। প্রকাশিত হল প্রাপ্তবয়স্কদের সেক্স ম্যাগাজিন ‘উর্বশী’র শারদ সংখ্যা। সম্পাদকের নাম রীণা রায়চৌধুরী। চমকালেন? আজ্ঞে হ্যাঁ, আজ থেকে পাঁচ দশক আগে, এই বঙ্গে একজন মহিলা সম্পাদনা করেছিলেন একটি অ্যাডাল্ট পত্রিকার। এমনকী সেই পত্রিকার বিরুদ্ধে মামলাও হয়েছিল।

Manual7 Ad Code

কী ভাবছেন? ভুল শুনলেন। না মশাই, শুনেছেন ঠিক একদম। ১৯৭১ সালে প্রকাশিত হয়েছিল প্রাপ্তবয়স্কদের আদি রসাত্মক যৌন পত্রিকা— শারদীয়া ‘উর্বশী’। রঙিন ছবি থেকে টান টান আখ্যান, কী ছিল না এই সংখ্যায়। খোদ শিবরাম চক্রবর্তী— ‘আদম সুমারি’ নামে একটি গল্পও লিখেছিলেন এই সংখ্যায়। আর এই সমস্ত কিছু সাজিয়ে যিনি তুলে ধরলেন পাঠক-পাঠিকাদের সামনে, তিনি রীণা রায়চৌধুরী। পত্রিকার সম্পাদিকা। একটি যৌন পত্রিকার যাবতীয় কাজ নিজের কাঁধে তুলে নিচ্ছেন একজন মহিলা। ব্যাপারটা কিন্তু অত সহজ ছিল না সে কালে। সে দিন অশ্লীলতার অভিযোগে আদালতে বিচার বসেছিল— ‘উর্বশী’র বিরুদ্ধে।

১৯৬০ বা ৭০-এর কলকাতায় যাঁরা বড় হয়েছেন, তাঁরা অল্পবিস্তর সবাই মায়া বসুর নাম শুনেছেন। বিখ্যাত ঔপন্যাসিক এবং গল্পকার। এই মায়া বসুই ১৯৭১ সালে ‘শেষ পাপ’ নামে একটি উপন্যাস লিখেছিলেন— বিবাহিত ও প্রাপ্তবয়স্কদের জন্য প্রকাশিত শারদীয়া ‘নব যৌবনা’র পাতায়। পত্রিকাটির প্রচ্ছদ এবং পেছনের পাতায়— মহিলাদের অর্ধ-নগ্ন দেহের ছবি ছাপা হয়েছিল। কে না জানে যে পুরুষশাসিত সমাজ কোনও দিনই মহিলাদের শারীরিক চাওয়া পাওয়াকে গুরুত্ব দেয়নি। কিন্তু শুধুমাত্র ক্ষমতার বলে সব কিছু কি আর আটকে রাখা যায়! মেয়েরা জানতেন— ঠিক কোন পথে গেলে, শত্রুর মুখে ছাই দিয়ে গন্তব্যে পৌঁছতে পারবেন তাঁরা। রবি ঠাকুরের কথাই না হয় বলি খানিক। একটু মনে করুন তো ‘ল্যাবরেটরি’ গল্পের কথা। নীলা-কে মনে আছে নিশ্চই। আরে ওই মেয়েটা, যে আপনার আর আমার শাসন মানেনি। সুযোগ পেলেই অজায়গায় উঁকি ঝুঁকি দিতে চায়। এমন বই পড়ে যে বই টেক্সট বুক কমিটির অনুমোদিত নয়। শুধু কি পড়া? ছবিও দেখে। সে সব ছবি আবার গোপনে আনিয়ে নেয়।

Manual7 Ad Code

১৯৬৭ সনে প্রাপ্তবয়স্কদের জন্য প্রকাশিত ‘জীবন যৌবন’ পত্রিকার সম্পাদক এবং সহ-সম্পাদিকা ছিলেন যথাক্রমে পি কে দাশ এবং পূরবী দেবী। ঝকঝকে রঙিন আকর্ষণীয় প্রচ্ছদের উপর মহিলা সম্পাদিকার নাম দেখে পাঠক-পাঠিকার পত্রিকা ক্রয়ের চাহিদা বেশ কয়েক গুণ বেড়ে যেত। খেয়াল রাখতে হবে, যৌনতাকে কী করে বাজারে বিক্রি করতে হবে এই কৌশলটি তত দিনে রপ্ত করে ফেলেছেন প্রকাশকরা। পুরুষ পাঠকের, মহিলাদের লেখা বা সম্পাদিত যৌন পত্রিকা পড়ার জগৎটিকে আরও মনোরম করে তুলেছে — ‘বঙ্গসুন্দরী’ প্রতিযোগিতা। বিশ্বসুন্দরীর অনুকরণেই শুরু হয়েছিল ‘বঙ্গসুন্দরী’ প্রতিযোগিতা। স্বপ্নের নারী— ড্রিম গার্ল একজন বাঙালি কন্যাও হতে পারে। ১৯৬৮ সনে বড় বাজার ব্যায়াম সমিতির পরিচালনায় বঙ্গসুন্দরী প্রতিযোগিতায় প্রথম হয়েছিলেন— রুমা বোস, দ্বিতীয়— কাবেরী দত্ত এবং তৃতীয়— স্বপ্না ভট্টাচার্য্য। আর্থিক সহযোগিতায় ছিলেন— জুসলা কোম্পানি। ১৯৬৮-র ‘জীবন যৌবন’ নামক প্রাপ্তবয়স্কদের পত্রিকাটিতে এই তিন বঙ্গললনার ছবি এবং বিশদ বিবরণ প্রকাশিত হয়।

১৯৩৮ সালে প্রথম প্রকাশিত ‘নর-নারী’ নামক প্রাপ্তবয়স্কদের পত্রিকাটি রীতিমতো জনপ্রিয় ছিল সে কালের মেয়েমহলে। ১৯৪৮ সালে ‘নর-নারী’ পত্রিকার চিঠিপত্র বিভাগে শান্তা নামের একটি মেয়ে লিখেছিল— দাদার বালিশের তলা থেকে চুরি করে সে প্রথম এই পত্রিকা পড়ে। তার মতে, এই পত্রিকা মেয়েদের ক্লাবে রাখা উচিত। শান্তা যখন এই চিঠি লিখছে, তখন সে অষ্টম শ্রেণির ছাত্রী। ‘নর-নারী’র তরফ থেকে কিন্তু শান্তার এ ভাবে পত্রিকা পড়াকে ভালো চোখে দেখা হয়নি। সম্পাদক স্পষ্ট করে শান্তাকে চিঠিতে জানিয়ে দেন যে তার ‘নর-নারী’ পড়ার বয়স হয়নি এখনও। রাষ্ট্রের আইন নয়। ‘নর-নারী’ নিজেই সেন্সর করছে যে কে এই পত্রিকা পড়বে আর কে পড়বে না। যৌন পত্রিকা বলে কি আর সব ছাড় নাকি!

Manual3 Ad Code

 

Manual7 Ad Code

এ সংক্রান্ত আরও সংবাদ

 


Follow for More!

Manual1 Ad Code
Manual2 Ad Code