বিশ্ব শোভন কর্ম দিবস কাল : গণতন্ত্রই এর নিশ্চয়তা দেবে

প্রকাশিত: ১২:২৬ পূর্বাহ্ণ, অক্টোবর ৬, ২০২৫

বিশ্ব শোভন কর্ম দিবস কাল : গণতন্ত্রই এর নিশ্চয়তা দেবে

Manual7 Ad Code

বিশেষ প্রতিবেদন | ঢাকা, ৬ অক্টোবর ২০২৫ : আগামীকাল ৭ অক্টোবর, বিশ্বের অন্যান্য দেশের মতো বাংলাদেশেও পালিত হবে বিশ্ব শোভন কর্ম দিবস (World Day for Decent Work)। এবারের প্রতিপাদ্য — “গণতন্ত্রই শোভন কাজের ব্যবস্থা করবে”।

শ্রমজীবী মানুষের মর্যাদা, ন্যায্য মজুরি, সামাজিক নিরাপত্তা ও কর্মক্ষেত্রে ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠার দাবিতে এই দিবসটি প্রতিবছর পালিত হয়। ১৯৯৯ সাল থেকে আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থা (আইএলও) এই দিবস পালন শুরু করে, যা এখন বিশ্বের প্রায় ১৫০টিরও বেশি দেশে পালিত হচ্ছে।

Manual6 Ad Code

???? শোভন কাজ: একটি বৈশ্বিক এজেন্ডা

আইএলও ১৯১৯ সালে প্রতিষ্ঠার পর থেকেই শ্রমিকদের অধিকার, ন্যায্য মজুরি এবং সামাজিক সুরক্ষাকে তার মূল কর্মসূচির কেন্দ্রে রেখেছে।
শোভন কাজ (Decent Work) ধারণাটি আইএলও-র অগ্রাধিকারের মধ্যে অন্যতম এবং জাতিসংঘের টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা (SDG) ৮–এর মূল বিষয়ও হলো “শোভন কাজ ও অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি”।

আইএলও-র তথ্য অনুযায়ী, বিশ্বব্যাপী বর্তমানে প্রায় ৪ বিলিয়ন মানুষ পর্যাপ্ত সামাজিক সুরক্ষা থেকে বঞ্চিত। একই সঙ্গে ২০ কোটি মানুষ বেকার, এবং ১৫০ কোটির বেশি শ্রমিক অনানুষ্ঠানিক খাতে নিয়োজিত, যেখানে শ্রম অধিকার ও নিরাপত্তা প্রায় অনুপস্থিত।

Manual7 Ad Code

???? বাংলাদেশের প্রেক্ষাপট

বাংলাদেশের মোট শ্রমশক্তি প্রায় ৭ কোটি ৫৬ লাখ (বিবিএস, ২০২৩)। এর মধ্যে ৮৬ শতাংশ এখনো অপ্রাতিষ্ঠানিক খাতে কাজ করছে। নারী শ্রমিকদের অংশগ্রহণও বেড়েছে—বর্তমানে নারী শ্রমশক্তি অংশগ্রহণ হার ৩৮ শতাংশ, যা ২০১০ সালের তুলনায় প্রায় ১০ শতাংশ বেশি।

তবে শ্রমিকদের ন্যায্য মজুরি, নিরাপত্তা ও সামাজিক সুরক্ষা এখনো বড় চ্যালেঞ্জ।
বাংলাদেশে শ্রম আইন সংশোধন, আইএলও কনভেনশন ১৫৫, ১৮৭ ও ১৯০ অনুসমর্থনের সিদ্ধান্ত—সব মিলিয়ে সাম্প্রতিক বছরগুলোতে ইতিবাচক অগ্রগতি দেখা যাচ্ছে। বিশেষ করে কনভেনশন–১৯০ (Gender-Based Violence and Harassment Convention) বাস্তবায়িত হলে কর্মক্ষেত্রে হয়রানি প্রতিরোধে একটি গুরুত্বপূর্ণ দৃষ্টান্ত স্থাপন করবে।

???? শোভন কাজের ১০টি মানদণ্ড

শোভন কর্ম ধারণাটি শুধু চাকরি নয়, বরং মানবিক মর্যাদা, নিরাপত্তা ও সমান সুযোগ নিশ্চিত করার সার্বিক কাঠামো।
এর ১০টি মূল মানদণ্ড হলো:
১️⃣ কাজের অবাধ সুযোগ
২️⃣ উৎপাদনশীল কাজ
৩️⃣ কাজের স্বাধীনতা
৪️⃣ কাজে সমতা
৫️⃣ কাজে নিরাপত্তা
৬️⃣ কাজে মর্যাদা
৭️⃣ পর্যাপ্ত কর্মসংস্থান
৮️⃣ সামাজিক সুরক্ষা
৯️⃣ শ্রমিক অধিকারের নিশ্চয়তা
???? সামাজিক সংলাপের সুযোগ।

Manual7 Ad Code

???? শোভন কাজের চারটি মূল স্তম্ভ

আইএলও শোভন কাজ বাস্তবায়নের জন্য চারটি স্তম্ভকে কেন্দ্র করে কাজ করে:
১. কর্মসংস্থান: সবার জন্য সমান সুযোগ ও ন্যায্য মজুরি নিশ্চিত করা।
২. সামাজিক নিরাপত্তা: শ্রমিক ও তাদের পরিবারের জীবিকা সুরক্ষিত রাখা।
৩. সামাজিক সংলাপ: শ্রমিক, মালিক ও সরকারের মধ্যে আলোচনার মাধ্যমে সিদ্ধান্ত গ্রহণ।
৪. শ্রম অধিকার: সংগঠন করার অধিকার, দর কষাকষির অধিকার, শিশু ও বাধ্যশ্রম নির্মূল।

???? প্রযুক্তি ও নতুন কর্মবাজারের চ্যালেঞ্জ

চতুর্থ শিল্পবিপ্লব ও কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার যুগে কর্মক্ষেত্র বদলে যাচ্ছে দ্রুত।
বাংলাদেশে তৈরি পোশাক শিল্পে স্বয়ংক্রিয়তার কারণে আগামী ১০ বছরে প্রায় ২৮ শতাংশ শ্রমিকের কর্মসংস্থান ঝুঁকিতে পড়বে বলে আশঙ্কা রয়েছে (ILO–ADB যৌথ প্রতিবেদন, ২০২4)। তবে প্রযুক্তি নতুন দক্ষতা ও নতুন খাতে (আইটি, ই-কমার্স, গিগ ইকোনমি) কর্মসংস্থানের সুযোগও তৈরি করছে।

Manual6 Ad Code

???? শোভন কাজ কেন জরুরি?

অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা: ন্যায্য মজুরি দারিদ্র্য ও বৈষম্য কমায়।

স্বাস্থ্য ও নিরাপত্তা: নিরাপদ কর্মপরিবেশ শ্রমিকের মানসিক ও শারীরিক সুস্থতা নিশ্চিত করে।

লিঙ্গ সমতা: সমান সুযোগ ও বেতন বৈষম্য দূর করে নারী ক্ষমতায়ন বাড়ায়।

সামাজিক অন্তর্ভুক্তি: প্রতিবন্ধী ও প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর কর্মসংস্থানে সহায়তা করে।

টেকসই উন্নয়ন: দায়িত্বশীল ব্যবসা ও ন্যায়সংগত অর্থনীতির ভিত্তি তৈরি করে।

???? বাংলাদেশের অগ্রগতি ও সীমাবদ্ধতা

বাংলাদেশ ইতোমধ্যে শ্রমিক কল্যাণ, ন্যূনতম মজুরি নির্ধারণ, শ্রম আদালত এবং নিরাপত্তা পরিদর্শন ব্যবস্থা জোরদার করেছে।
তবে শ্রমিক সংগঠনের স্বাধীনতা, বেতনবৈষম্য, নারী শ্রমিকের সুরক্ষা ও অনানুষ্ঠানিক খাতে ন্যূনতম মান বজায় রাখার বিষয়ে আরও পদক্ষেপ নেওয়া প্রয়োজন।

২০১৩ সালের রানা প্লাজা দুর্ঘটনার পর গৃহীত অ্যাকর্ড অন ফায়ার অ্যান্ড বিল্ডিং সেফটি ইন বাংলাদেশ–এর মাধ্যমে শ্রমিক নিরাপত্তা বিষয়ে আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি অর্জিত হলেও, স্থানীয় শিল্পখাতে একই মান বজায় রাখা এখনো একটি বড় চ্যালেঞ্জ।

???? সামাজিক ন্যায়বিচার ও গণতন্ত্রের সম্পর্ক

এবারের প্রতিপাদ্য “গণতন্ত্রই শোভন কাজের ব্যবস্থা করবে”–এর মাধ্যমে বোঝানো হয়েছে, ন্যায়ভিত্তিক শ্রমনীতি কেবল আইন নয়, আমূল পরিবর্তন অভিমুখী একটি গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠা ও সংস্কৃতির প্রতিফলন।
যেখানে রাষ্ট্র, মালিক ও শ্রমিক—তিন পক্ষই সিদ্ধান্তগ্রহণে সমান ভূমিকা রাখে, সেখানেই শোভন কাজ বাস্তবায়ন সম্ভব।

???? উপসংহার

শোভন কর্ম দিবস শুধু একটি প্রতীকী দিবস নয়; এটি শ্রমজীবী মানুষের মর্যাদা, অধিকার ও সামাজিক ন্যায়বিচারের জন্য বৈশ্বিক অঙ্গীকারের পুনর্নিশ্চয়তা।
শ্রমজীবী মানুষ কেবল জীবিকার জন্য কাজ করেন না—তারা সমা, দেশের অগ্রগতি ও অর্থনীতির চালিকাশক্তি।
তাই শোভন কাজ নিশ্চিত করা মানে একটি ন্যায্য, অন্তর্ভুক্তিমূলক ও টেকসই ভবিষ্যৎ নিশ্চিত করা।

এ সংক্রান্ত আরও সংবাদ

 


Follow for More!

Manual1 Ad Code
Manual6 Ad Code