তথ্যপ্রযুক্তি ব্যবহার করে যেভাবে চলবে ‘ভার্চুয়াল আদালত’

প্রকাশিত: ৭:৪৮ পূর্বাহ্ণ, মে ১২, ২০২০

তথ্যপ্রযুক্তি ব্যবহার করে যেভাবে চলবে ‘ভার্চুয়াল আদালত’

Manual3 Ad Code

ঢাকা, ১২ মে ২০২০: কোভিড-১৯ মহামারীর মধ্যে আসামি, সাক্ষী এবং আইনজীবীদের সশরীরে উপস্থিতি ছাড়াই তথ্যপ্রযুক্তি ব্যবহার করে কীভাবে ভার্চুয়াল আদালতের কার্যক্রম চলবে, সে বিষয়ে নির্দেশিকা জারি করেছে সুপ্রিম কোর্ট।

সরকার ঘোষিত ছুটির মধ্যে পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত এই ‘প্র্যাকটিস ডাইরেকশন’ অনুসরণ করেই দেশের সর্বোচ্চ আদালত ও অধস্তন আদালতের বিচারিক কার্যক্রম পরিচালিত হবে।

সুপ্রিম কোর্টের রেজিস্ট্রার জেনারেল মো. আলী আকবর তিনটি আলাদা আদেশের মাধ্যমে এই ‘প্র্যাকটিস’ নির্দেশনা সবাইকে জানিয়ে দেন।

এছাড়া আইনজীবীদের ভার্চুয়াল আদালত ব্যবহারের বিষয়ে ‘আমার আদালত: ভার্চুয়াল কোর্টরুম ব্যবহার ম্যানুয়াল’ নামে আলাদা একটি নির্দেশিকা প্রকাশ করেছে সুপ্রিম কোর্ট।

Manual4 Ad Code

এই ভার্চুয়াল কোর্ট পরিচালনার জন্য এরইমধ্যে একটি ওয়েব পোর্টাল চালু করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন সুপ্রিম কার্টের একজন কর্মকর্তা।

তিনি বলেন, আবেদন, শুনানি সবই হবে এ পোর্টালের মাধ্যমে।

Manual4 Ad Code

ইমেইলে শুনানির সময় জানিয়ে ভিডিও কনফারেন্সের লিংক পাঠানো হবে আইনজীবীকে। এসএমএসে দেওয়া হবে অ্যালার্ট। নির্দিষ্ট সময়ে বিচারক ও সংশ্লিষ্ট আইনজীবী যুক্ত হবেন ভিডিও কনফারেন্সে।

শুরুতে এ পদ্ধতিতে শুধু জামিন আবেদন দাখিল, শুনানি, ও বেইল বন্ড দাখিলের সুযোগ পাবেন আইনজীবীরা। পরে অন্যান্য বিচারিক কার্যক্রমও পরিচালনার সুযোগ সেখানে রাখা হয়েছে বলে ওই কর্মকর্তা জানান।

Manual5 Ad Code

কোভিড-১৯ মহামারীর মধ্যে আদালতের প্রায় সকল কাজ বন্ধ হয়ে যাওয়ায় সরকার ভিডিও কনফারেন্সসহ অন্যান্য ডিজিটাল মাধ্যমে আদালতের কার্যক্রম চালানোর সুযোগ রেখে শনিবার একটি অধ্যাদেশ জারি করে। তারই আলোকে প্রধান বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেন রোববার ভার্চুয়াল আদালতের ‘প্র্যাকটিস ডাইরেকশন’ নির্ধারণ করে দেন।

‘আমার আদালত’

Manual6 Ad Code

ভার্চুয়াল আদালতে বাদী/বিবাদীর পক্ষে মামলা পরিচালনার জন্য একজন আইনজীবীকে নিজের নাম, ছবি, ইমেইল ঠিকানা ও মোবাইল নম্বর দিয়ে নিবন্ধন করতে হবে।

নিবন্ধন ও অন্যান্য কাজটি হবে ভার্চুয়াল আদালতের ওয়েব পোর্টাল mycourt.judiciary.org.bd এর মাধ্যমে।

নিবন্ধিত হওয়ার পর ইউজার নেইম ও পাসওয়ার্ড দিয়ে লগইন করে আইনজীবী ভার্চুয়াল কোর্ট পোর্টালে ঠুকতে পারবেন। সেখানে জামিন আবেদন ও বেইল বন্ড দাখিল সংক্রান্ত দুটি ঘর থাকবে।

কোনো আইনজীবী জামিন আবেদন করতে চাইলে জামিন সংক্রান্ত ঘরে প্রবেশ করে মূল জামিন আবেদন, ওকালতনামা ও সংযুক্ত নথিপত্র পৃথক তিন ধাপে আপলোড করবেন। এ ক্ষেত্রে কোনো আবেদন ফি লাগবে না।

আবেদন দাখিলের পর সংশ্লিষ্ট বেঞ্চের কর্মকর্তা এ আবেদনটি শুনানির জন্য গ্রহণের প্রক্রিয়া শুরু করবেন।

সংশ্লিষ্ট বিচারকের অনুমোদনের পর আইনজীবীর ইমেইলে শুনানির সময় জানিয়ে ভিডিও কনফারেন্সের জন্য একটি লিংক দেওয়া হবে।

নির্ধারিত সময়ে ওই লিংকে ঢুকে আইনজীবী বিচারকের সঙ্গে ভিডিও কনফারেন্সে যুক্ত হবেন এবং নিজের আবেদনের ওপর শুনানি করবেন।

জামিন মঞ্জুর হলে একই পোর্টালে বেইল বন্ড দাখিল করতে পারবেন আইনজীবী।

আদালতের জন্য নির্দেশনা

আসামি, সাক্ষী এবং আইনজীবীদের সশরীরে উপস্থিতি না হলেও তথ্যপ্রযুক্তি ব্যবহার করে তাদের যুক্ত করার মাধ্যমে সুপ্রিম কোর্ট, হাই কোর্ট এবং নিম্ন আদালগুলোকে বিচারিক কার্যক্রম পরিচালনার ক্ষমতা দেওয়া হয়েছে ‘আদালত কর্তৃক তথ্য-প্রযুক্তি ব্যবহার অধ্যাদেশে’।

আর সেই ভার্চুয়াল আদালতের কার্যক্রম কীভাবে চলবে সে বিষয়ে আপিল বিভাগের জন্য ১৩ দফা, হাই কোর্টের জন্য ১৫ দফা এবং অধস্তন আদালতের জন্য ২১ দফা নির্দেশনা দিয়েছেন প্রধান বিচারপতি।

অধ্যাদেশে বলা হয়েছে, “ফৌজদারি কার্যবিধি বা দেওয়ানি কার্যবিধি বা আপাতত বলবৎ অন্য কোনো আইনে ভিন্নতর যাই থাকুক না কেন, যে কোনো আদালত এই অধ্যাদেশের ধারা ৫ এর অধীন জারিকৃত প্র্যাকটিস নির্দেশনা (বিশেষ বা সাধারণ) সাপেক্ষে, অডিও-ভিডিও বা অন্য কোনো ইলেক্ট্রনিক পদ্ধতিতে বিচারপ্রার্থী পক্ষরা বা তাদের আইনজীবী বা সংশ্লিষ্ট অন্য ব্যক্তি বা সাক্ষীদের ভার্চুয়াল উপস্থিতি নিশ্চিত করে যে কোনো মামলার বিচার বা বিচারিক অনুসন্ধান বা দরখাস্ত বা আপিল শুনানি বা সাক্ষ্য গ্রহণ বা যুক্ততর্ক গ্রহণ বা আদেশ বা রায় প্রদান করতে পারবে।”

অডিও-ভিডিও বা অন্য কোনো ইলেক্ট্রনিক পদ্ধতিতে বিচারপ্রার্থী পক্ষ বা তাদের আইনজীবী বা সংশ্লিষ্ট অন্য ব্যক্তি বা সাক্ষীদের ভার্চুয়াল উপস্থিতি নিশ্চিত করা ছাড়া অন্যান্য বিষয়ের ক্ষেত্রে ফৌজদারী কার্যবিধি বা ক্ষেত্রমতে দেওয়ানি কার্যবিধি অনুসরণ করতে হবে।

এতদিন বিচারিক আদালতে সাংবিধানিকভাবে বিচারকার্য চালাতে আসামি, সাক্ষী এবং আইনজীবীদের সশরীরে উপস্থিতি প্রয়োজন হত। এ অধ্যাদেশে বলা হয়েছে, কোনো ব্যক্তির ভার্চুয়াল উপস্থিতি নিশ্চিত করা হলেই তা সশরীরে আদালতে উপস্থিতি হিসেবে গণ্য হবে।

ভার্চুয়াল উপস্থিতির সংজ্ঞায় বলা হয়েছে, “অডিও-ভিডিও বা অনুরূপ অন্য কোনো ইলেকট্রনিক পদ্ধতির মাধ্যমে কোনো ব্যক্তির আদালতের বিচার বিভাগীয় কার্যধারায় উপস্থিত থাকা বা অংশগ্রহণ।”

বাংলাদেশের প্রত্যেক জেলার জেলা ও দায়রা জজ, মহানগর এলাকার মহানগর দায়রা জজ, নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালের বিচারক, বিশেষ জজ আদালতের বিচারক, সন্ত্রাস দমন ট্রাইব্যুনালের বিচারক, দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালের বিচারক, জননিরাপত্তা বিঘ্নকারী অপরাধ দমন ট্রাইব্যুনালের বিচারককে এবং জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট, মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট নিজে অথবা তার নিয়ন্ত্রণাধীন এক বা একাধিক ম্যাজিস্ট্রেটকে দিয়ে এই ভার্চুয়াল আদালতের কার্যক্রম পরিচালনা করা যাবে।

তবে ‘বিশেষ প্রাকটিস নির্দেশনা’ অনুসরণ করে নিম্ন আদালতে আপাতত কেবল জামিন সংক্রান্ত বিষয়গুলো নিষ্পত্তি করা যাবে।

হাই কোর্ট বিভাগে ভার্চুয়াল আদালত পরিচালনার জন্য তিনটি বেঞ্চ গঠন করে দেওয়া হয়েছে, যেখানে ‘অতি জরুরি’ রিট ও দেওয়ানি মামলা, ফৌজদারি মামলা ও সংশ্লিষ্ট জামিন আবেদন এবং সম্পত্তি, বিবাহ বিচ্ছেদসহ কিছু মামলার শুনানি করা যাবে।

এছাড়া বিচারপতি নুরুজ্জামানকে দেওয়া হয়েছে সুপ্রিম কোর্টের চেম্বার আদালত পরিচালনার দায়িত্ব। তিনি আগামী ১৪ ও ২০ মে বেলা সাড়ে ১১টা থেকে ভার্চুয়াল আদালতে শুনানি নেবেন।

এ সংক্রান্ত আরও সংবাদ

 


Follow for More!

Manual1 Ad Code
Manual5 Ad Code