ক্ষমতার পরিবর্তনের সম্ভাবনা দেখলেই আমলাগোষ্ঠী রং বদলাবে: সংসদে কমরেড মেনন

প্রকাশিত: ৯:২৩ অপরাহ্ণ, জুন ১৯, ২০২২

ক্ষমতার পরিবর্তনের সম্ভাবনা দেখলেই আমলাগোষ্ঠী রং বদলাবে: সংসদে কমরেড মেনন

Manual5 Ad Code

বিশেষ প্রতিনিধি | জাতীয় সংসদ ভবন (ঢাকা), ১৯ জুন ২০২২ : “শেখ হাসিনা জানেন তার ক্ষমতার ভীত এই গরিব-নিম্নবিত্ত, মধ্যবিত্ত মানুষ। ক্ষমতার পরিবর্তনের সামান্যতম সম্ভাবনা দেখলেই বড়লোকরা আমলাগোষ্ঠী মুহূর্তের মধ্যে রং বদলাবে। বঙ্গবন্ধু হত্যার পর তাই দেখা গিয়েছিল।”
আজ রোববার (১৯ জুন ২০২২) রাত ৮টায় জাতীয় সংসদে ২০২২-২০২৩ অর্থ বছরে বাজেটের ওপর বক্তব্যে ১৪ দলীয় জোটের শীর্ষ নেতা, বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টি সভাপতি, সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটি সভাপতি ও ঢাকা -০৮ আসনের মাননীয় সংসদ সদস্য জননেতা কমরেড রাশেদ খান মেনন এসব কথা বলেন।

Manual3 Ad Code

বক্তব্যের পুরো অংশটি নিম্নে দেয়া হলো:

মাননীয় স্পীকার,
আপনাকে ধন্যবাদ। অভিনন্দন মাননীয় অর্থমন্ত্রীকে করোনার অভিঘাত মোকাবেলা করে অর্থনীতিকে উন্নয়নের ধারায় অব্যাহত রাখার জন্য। আমাকে যে সময় দিয়েছেন তাতে বুলেট পয়েন্টে আমাকে কথা বলতে হবে। তার আগে বলে নেই বাজেট আলোচনায় সংসদের ভূমিকা কার্যতঃ ‘শোনাউল্লাহ’ আর ‘বকাউল্লাহ’র। আর শেষে ‘হ্যা’ বলার। বাজেটের সাথে সংসদের, সংসদের কমিটিসমূহের সংশ্লিষ্টতা নেই। ভারতের পার্লামেন্টে বাজেট পেশের পর দু’থেকে চারদিন সাধারণ আলোচনার পর বাজেট বিভিন্ন স্থায়ী কমিটিতে চলে যায়। তার রিপোর্টের ভিত্তিতে সরকারি দল-বিরোধী দল স্থীরকৃত মন্ত্রণালয়ের বাজেটের উপর আলোচনা হয়। সাবেক অর্থমন্ত্রী আবুল মাল মুহিত বাজেট প্রণয়নের আগে সংসদের স্থায়ী কমিটির সভাপতিদের সাথে আলোচনা করতেন। মাননীয় অর্থমন্ত্রী সেটাও তুলে দিয়েছেন।

২। বাজেট প্রস্তাবে তিনি সংসদ প্রণীত আইনও তিনি বিবেচনায় নেয়ার প্রয়োজন বোধ করেন নি। সংসদ প্রণীত দুদক আইন ও মানি লন্ডারিং আইন দু’টোতেই অর্থ পাচার দন্ডনীয় অপরাধ। আওয়ামী লীগের নির্বাচনী ইশতেহারের ২৯ পৃষ্ঠায় অর্থ পাচার সম্পর্কিত উপ-শিরোনামে এ বিষয়ে বিস্তারিত বলা আছে। ’দু হাজার কোটি টাকার অর্থ পাচারে অভিযুক্ত সাবেক স্থানীয় মন্ত্রীর ভাই খন্দকার মোহাতে মোনেম জামিনের শুনানীতে হাইকোর্ট বলেছে এটা এত বড় অপরাধ যে জামিনও দেয়া যায় না। এটর্নী জেনারেল বলেছেন অর্থ পাচার সংঘবদ্ধ অপরাধ। নৈতিকতার কথা বাদ দিলাম। কারণ পুঁজি যেখানে লাভ দেখে সেখানে ফাঁসির দড়িতে ঝুলতেও রাজী। অর্থমন্ত্রী বলেছেন যেখানে সুখ আছে সেখানে টাকা যায়। তাই অর্থ পাচারকারীদের ৭% পার্সেন্ট সুদ নিয়ে সেই সুখের সুলক সন্ধান দিলেন অর্থমন্ত্রী। অর্থমন্ত্রী সেদিন বলেছেন তিনি এটা করবেনই, মাঝপথ থেকে ফিরে আসার লোক তিনি নন। কেবল সংসদ দিয়ে তিনি এটাকে বৈধ করে নিতে চান।

Manual5 Ad Code

৩। মাননীয় স্পীকার, আমি বাজেট নিয়ে এবার কথা বলতে নিজের কথার চাইতে অর্থনীতিবিদরা কি বলছেন তা বলতে চাই। বাজেট নিয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্ণর ড. ফরাসউদ্দিন যার নোট পড়ে আমি অর্থনীতিতে জেলখানায় বসে এম.এ পাস করেছি, বলেছেন প্রস্তাবিত বাজেট বিত্তবান ব্যবসায়ী, মুনাফাভোগী ও অর্থপাচারকারীদের স্বার্থ দেখা হয়েছে। সানেমের নির্বাহী পরিচালক ড. সেলিম রায়হান বলেছেন, প্রস্তাবিত বাজেটে সরকার যে সব খাতে অগ্রাধিকার দিয়েছে সেটা তার ঘোষিত নীতির সাথে সাংঘর্ষিক। দারিদ্র্য বিমোচন, কর্মসংস্থান সৃষ্টি বা দারিদ্র্য বান্ধব নীতি গ্রহণ সরকারের পঞ্চবার্ষিকী ও প্রেক্ষিত পরিকল্পনায় থাকলেও বাজেট বস্তুতঃ বৃহৎ ব্যবসা বান্ধব। তিনি বলেছেন প্রস্তাবিত বাজেটে করর্পোরেট কর হ্রাস করার কথা বলা হলেও তা বড় ব্যবসায়ীদের জন্য প্রযোজ্য। কিন্তু গত দুই বছরে করোনায় সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে ক্ষুদ্র অতি ক্ষুদ্র ও মাঝারি খাত। এরা কোভিড পুনরুদ্ধার প্রক্রিয়ায় খুব বেশি সহায়তা পায়নি। আবার বাজেটে করপোরেট করে যে ছাড় দেয়া হয়েছে তা এদের জন্য প্রযোজ্য নয়। বাস্তবতা হল এই খাতেই সবচেয়ে বেশি মানুষ কাজ করেন। অর্থনীতিবিদ এই এইচআর মনছুরও এমনই কথা বলেছেন। মাননীয় স্পীকার আমি সিপিডির কথা বললাম না। তাতে অর্থমন্ত্রীর গাত্রদাহ হবে। তবে সব অর্থনীতিবিদদের মতামতকে উড়িয়ে দেয়াটা যে গোয়ার্তুমি হবে সেটা বলার অপেক্ষা রাখে না। বাজেট বরাদ্দে সামাজিক সুরক্ষা খাতে বরাদ্দ অর্থনীতিবিদ ড. আতিউর রহমানকেও অবাক করেছে। আমাদের সময়কে তিনি বলেছেন, ‘সামাজিক সুরক্ষা যাতে বাজেট বরাদ্দ মাত্র ২ শতাংশ বেড়ে ১ লাখ ২৩ হাজার কোটি টাকা হয়েছে। বাজেটের শতাংশ হিসেবে এটি ১৯ শতাংশ থেকে কমে ১৭ শতাংশ হয়েছে। দ্রব্য মূল্যের চাপে থাকা এই বরাদ্দ অবাক করেছে। বিশেষ করে ওএমএস-এ বরাদ্দ ২২৩ কোটি টাকা কমে যাওয়া এবং অতি দরিদ্রের কর্মসৃজন কর্মসূচির বরাদ্দ ৯৫ কোটি টাকা কমে যাওয়াটা এ সময়ের জন্য অসামঞ্জস্যপূর্ণ। অতি দরিদ্রের ১০ টাকা কেজির ৩০ কেজি চালের দাম বাড়িয়ে কেজিতে ১৫ টাকা করা হয়েছে। খাদ্য মূল্যস্ফিতীর প্রেক্ষাপটে সম্ভবতঃ এটা করা হয়েছে। তবে এ সমন্বয়টি এখনই না করাটা কাম্য ছিল, মাননীয় কৃষিমন্ত্রী বলেছেন মোটা চালের দাম বাড়েনি। তা’হলে প্রশ্ন গরিবের চালে এই মূল্যবৃদ্ধি কেন।

৪। মাননীয় স্পীকার, করের ক্ষেত্রেও আঘাত এসেছে ৪ কোটি মধ্যবিত্ত ও তদুর্ধদের উপর। তাদের করজালে আনুন আপত্তি নাই। কিন্তু সম্পদশালীদের সম্পদ করের ব্যাপারে কোন কার্যকরী ব্যবস্থা না নিয়ে অর্থমন্ত্রী আপনি ৩৮ প্রকার সেবা পেতে কর রিটার্ণ দেয়ার বিধান করছেন মধ্যবিত্তের জন্য। মুসক কর্মকর্তাদের দিচ্ছেন ব্যবসা প্রতিষ্ঠান বন্ধ করে দেয়ার অধিকার। কি দোষ করেছে মধ্যবিত্ত, নিম্নবিত্ত, গরিব মানুষরা।
মাননীয় স্পীকার, শেখ হাসিনা জানেন তার ক্ষমতার ভীত এই গরিব-নিম্নবিত্ত, মধ্যবিত্ত মানুষ। ক্ষমতার পরিবর্তনের সামান্যতম সম্ভাবনা দেখলেই বড়লোকরা আমলাগোষ্ঠী মুহূর্তের মধ্যে রং বদলাবে। বঙ্গবন্ধু হত্যার পর তাই দেখা গিয়েছিল। মাননীয় অর্থমন্ত্রী ল্যাপটপের ক্ষেত্রে আমদানী শুল্ক বাড়িয়েছেন। কোভিডের সময় ছাত্ররা অন-লাইনে ক্লাস করেছে। ল্যাপটপ, স্মার্টফোন, ইন্টারনেটের অসুবিধা সে ক্ষেত্রে গরিব-মধ্যবিত্ত ছাত্রদের বিপদে ফেলেছিল। অর্থমন্ত্রী ল্যাপটপের আমদানি শুল্ক ও ইন্টারনেট সেবার করারোপ এই ডিজিটাল ডিভাইসকে আরও বাড়াবে। তিন দফার বাজেট অর্থমন্ত্রীর মেডিটেশনকে মানসিক স্বাস্থ্য বৃদ্ধির জন্য প্রয়োজন বিধায় একে করের বাইরে রেখেছেন। কোভিডের প্রতিক্রিয়ায় যখন মানুষের মনের প্রশান্তি বিপর্যস্ত সেখানে মেডিটেশনের আশ্রয় নিলে তাকে বেশি মূল্য দিতে হবে কেন? আমি এই প্রতিটি ক্ষেত্রেই করারোপ প্রত্যাহার করার প্রস্তাব করছি। একই সাথে ব্যক্তি করের সীমা ৩ লাখ থেকে ৪ লাখে উন্নীত করার প্রস্তাব করছি।

৫। মাননীয় স্পীকার, আমি কয়েকটি বাজেট বক্তৃতায় বলেছি বাংলাদেশের রাষ্ট্রের কর্তৃত্বভার এখন অতিক্ষুদ্র ধনীক গোষ্ঠী, সামরিক বেসামরিক আমলাদের বন্দী হয়ে আছে। কোভিডকালে প্রধানমন্ত্রী সাহসিকতার সাথে যে সকল প্রণোদনা দিয়েছেন তার কতখানি এরা বাস্তবায়িত করতে দিয়েছেন তার মূল্যায়ন হওয়া দরকার। সে সবের বাস্তবায়ন প্রক্রিয়ায় সংসদ সদস্যদের অতি অসম্মানজনকভাবে আমলাদের অধীন করা হয়েছিল। এই আমলা নিয়ন্ত্রণই রাজনীতিকদের দুর্বৃত্ত বলে বিবৃতি দিতে তাদের সাহস জোগায়।
মাননীয় স্পীকার, প্রতি বাজেট আলোচনাতেই আমি দেশের ক্রমবর্ধমান বৈষম্য কোন বিপজ্জনক পর্যায়ে পৌঁছেছে সে সম্পর্কে বলেছি। বৈষম্য পরিমাপের গিনি সোহাগ অনুসারে এই বিপদ কোন মাত্রায় তাও উল্লেখ করেছি। কোভিডের পর এই বৈষম্য আরও বেড়েছে। এই সময়কালে আমাদের দেশেসহ পৃথিবীর ধনীদের সম্পদ লাফিয়ে বেড়েছে, আর গরীব মধ্যবিত্ত নিম্নবিত্তদের আয় কমেছে। সরকারি কোন হিসাব নাই অথচ বেসরকারি হিসাবে নতুন তিনকোটি দরিদ্র হয়েছে। সরকার স্বীকার করছে না। তা’হলে সরকারিভাবে নতুন জরিপ করুন। দারিদ্র্য ও বৈষম্য নিয়ে আলোচনা করুন।

৬। বাজেটে মানবসম্পদ অর্থাৎ শিক্ষা, স্বাস্থ্য ও সংশ্লিষ্ট খাতে বরাদ্দে প্রস্তাব করা হয়েছে ১ লাখ ৬৭ হাজার ৫২৪ কোটি টাকা। কিন্তু হিসাবে ঐ উভয় খাতে বাজেট অনুপাতে বরাদ্দ কমেছে, জিডিপি মান সম্মত লক্ষ্য পুরণ করা দূরে থাক। স্বাস্থ্য খাতে দুর্নীতির মহোৎসবটি কোভিডকাল আমাদের দেখিয়েছে। মন্ত্রী নিজেই স্বীকার করেছেন স্বাস্থ্য খাতে বাজেট বাস্তবায়নে তাদের সক্ষমতা নাই। ২০১০-এর জাতীয় শিক্ষানীতি এখন যেন অতীতের ব্যাপার। নতুন শিক্ষাক্রমে বিজ্ঞান, গণিত পিছিয়েছে। আর দুর্নীতির কথা না বললাম।

৭। মাননীয় অর্থমন্ত্রী গত নভেম্বরে গ্লাসগোতে অনুষ্ঠিত জলবায়ু সম্মেলনে প্রধানমন্ত্রীর চারদফা দাবির উল্লেখ করে বলেছেন, ‘তিনি এখন জলবায়ু ঝুকিপূর্ণ দেশসমূহের নৈতিক কণ্ঠস্বর’। কথাটা যথার্থ। কিন্তু প্রদীপের নীচেই অন্ধকার। বিশ্ব পরিবেশ সুরক্ষা সূচকে ১৮০টি দেশের মধ্যে বাংলাদেশ ১৫ ধাপ পিছিয়ে ১৭২-এ। বায়ুদূষণ, শব্দদূষণ নদীদূষণ সম্পর্কে মাননীয় সংসদ সদস্য সাবের হোসেন চৌধুরী বলেছেন। আমি তাকে সমর্থন করি।
তামাক নিয়ন্ত্রণের ব্যাপারে সরকারের অনীহা। এ ব্যাপারে বাজেটে কি ব্যবস্থা নেয়া উচিত ছিল সে সম্পর্কেও বড় সংখ্যক সংসদ সদস্য প্রতিবারই আমরা অর্থমন্ত্রীকে চিঠি দেই। কিন্তু লাভ নাই। কেন সেটা উপেক্ষা করা হয়, মাননীয় সংসদ সদস্য সাবের হোসেন চৌধুরী বলেছেন।

মাননীয় স্পীকার, আমরা যখন আলোচনা করছি তখন সিলেট, সুনামগঞ্জ, নেত্রকোনা, কুড়িগ্রামের ভয়াবহ বন্যা হচ্ছে। বলা হচ্ছে উজানে বৃষ্টিপাতের কারণে নদীর পানি বেড়ে গেছে। কিন্তু জলবায়ু পরিবর্তনই কি এর জন্য দায়ী। ভারতের সাথে ৫৪টি নদীর সমস্যা সমাধানে যৌথ নদী কমিশনের বৈঠক দীর্ঘদিন না হওয়ায় পররাষ্ট্র মন্ত্রী হতাশা প্রকাশ করেছেন। বছরের পর বছর তিস্তা চুক্তি হচ্ছে না। আবার তিস্তা নদী খননের যে সমীক্ষা সরকার করেছে তার বাস্তবায়ন হতে পারছে না। কি কারণে? কি সেই ভূ-রাজনৈতিক বাধা? সুরমা নদী শুকনো মৌসুমে হেটে পার হওয়া যাচ্ছে। এখন সুরমার পানি সিলেট শহরের বাড়ীতে বাড়ীতে?

৮। মাননীয় অর্থমন্ত্রী মূল্যস্ফিতী নিয়ন্ত্রণকে বাজেটের অন্যতম কৌশল বলেছেন। কিন্তু কোন পথ নির্দেশ দেন নাই। খাদ্য ও নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্য মূল্য নিয়ন্ত্রণে বিশ্বযুদ্ধের সময় ব্রিটিশরা রেশনিং ব্যবস্থা চালু করেছিল। আবার তা পুনর্বহাল হোক। টিসিবির গাড়ীর পিছনে মধ্যবিত্তদের মুখ লুকিয়ে জিনিস কিনতে হবে না।

৯। দ্রব্য মূল্যবৃদ্ধিকে কেন্দ্র করে গার্মেন্টস শ্রমিক, সরকারি নিম্ন বেতনভুক্ত কর্মচারিদের বেতন বৃদ্ধির দাবি উঠছে। এসবকে ষড়যন্ত্রের অংশ বলে উড়িয়ে দেয়া ঠিক হবে না। গার্মেন্টস শ্রমিকদের মজুরি বোর্ড পুনর্গঠন করা হোক। সরকারি কর্মচারি সমন্বয় পরিষদের দাবিসমূহ বিবেচনায় নেয়া হোক।
ইউনিভার্সাল পেনশন স্কীম একটি সুখবর। এ দাবি আমি কয়েকটি সংসদে তুলেছিলাম। আমার প্রস্তাব খেতমজুরসহ অনানুষ্ঠানিক খাতের শ্রমজীবীদের জন্য এটা নন-কনট্রিডবিটরী করতে হবে।

১০। মাননীয় স্পীকার, আমি রাষ্ট্রপতি, প্রধানমন্ত্রী সংসদ সদস্যদের জন্য, পেনশন ব্যবস্থার মাননীয় সংসদ সদস্য মুজিবুল হকের প্রস্তাব আমি সমর্থন করি। এই সংসদ সংসদ সদস্যদের পেনশন আইন পাশ করেছিল। বিএনপির মহিলা সংসদ সদস্য ফরিদা রহমানের প্রাইভেট মেম্বার বিলে সেটা রদ করা হয়। বোধহয় বিএনপি নেতাদের পেনশন প্রয়োজন হয় না। সংসদ সদস্যের আয় দিয়েই তাদের চতুর্পুরুষ চলতে পারে।

Manual1 Ad Code

১১। মাননীয় স্পীকার, সাংস্কৃতিক আন্দোলনের নেতারা বলছেন সংস্কৃতি পিছিয়ে পরছে। জায়গা নিচ্ছে কর্পোরেট কালচার, বিপরীত দিকে সাম্প্রদায়িক মৌলবাদী ধারণা। বাজেটে সংস্কৃতি ক্ষেত্রে বরাদ্দ তো হাস্যকর বটেই, সংস্কৃতি ও সাংস্কৃতিক কর্মকান্ড সম্পর্কে কর্তৃপক্ষের মনোভাব আরও মারাত্মক। যাত্রাপালা, গাজীর গীত, বাউল গান নিষিদ্ধ। সেদিন একজন অভিযোগ করলেন মাইজভান্ডারী গান গাওয়ার জন্য ওসি সাহেব তার ঠাং ভেঙ্গে মামলা দিয়ে জেলে পাঠিয়েছে। বাংলাদেশে ইসলাম এসেছিল সুফী-সাধকদের মাধ্যমে। মার্কিন সাম্রাজ্যবাদ বিলিয়ন ডলার খরচ করে সৌদী সরকারের মাধ্যমে ওহাবীবাদ ছড়িয়েছে। বাংলাদেশ মওদুদবাদী জামাতী-সালাফীরা তার তল্পিবাহক। তাদের পছন্দ নয়, এমন সবকিছু, মিলাদ, কিয়াম, শবেবরাত সব কিছুই বেদাত। জামাতিরা নারী কর্মীদের নামিয়ে দিয়েছে তালিমের নামে, পর্দার নামে, নামাজের জায়গা দেয়ার নামে তাদের রাজনীতির প্রচারে। মাননীয় স্পীকার এই সংসদে আপনারা ছাড়া রাস্তায় বেরোলে বাঙালি ললনা দেখি না। মনে হয় আফগানিস্তানের রাস্তা দিয়ে চলছি।

মাননীয় স্পীকার, আমরা কঠিন সময় অতিক্রম করছি। কোভিডের অভিঘাত না কাটতেই রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ শুরু হয়েছে, চলছে। আমিরিকা ইউরোপে তার নেতৃত্ব পুনর্বহাল করতে ন্যাটোর সম্প্রসারণ করার খেলায় মেতেছে। আর তাই ন্যাটো-রাশিয়ার ছায়া যুদ্ধ চলছে ইউক্রেনে। কিন্তু প্রাচ্যেও যুদ্ধ তৈরির চেষ্টা চলছে। আমেরিকা ‘প্রাচ্যের ন্যাটো’ কোয়াড গঠন করেছে, অকাস গঠন করেছে, আইপিএফ-এর কাঠামো দিয়েছে। বাংলাদেশকেও তারা এসবের অন্তর্ভুক্ত করতে চায়। আর প্রাচ্যে এই যুদ্ধ শুরু হলে বাংলাদেশই অন্যতম ক্ষতিগ্রস্ত দেশ হবে। আমি বিশ্বাস করি বঙ্গবন্ধুর পররাষ্ট্রনীতি অনুসরণে তার কন্যা যে ভূ-রাজনৈতিক ভারসাম্য বজায় রাখছেন তার থেকে নড়বেন না।
ইতিমধ্যেই ‘রেজিম চেঞ্জের’ খেলা শুরু হয়েছে। মার্কিনীদের বন্ধুরা এমনভাবে কথা বলছেন যে খোদ স্টেট ডিপার্টমেন্ট তাদের পিছনে রয়েছে। সাত দিনের মধ্যে সরকার ফেলে দেয়ার কথা বলা হচ্ছে। আমি বলি ষড়যন্ত্রের খেলা বন্ধ করুন। এটা পচাত্তর বা ২০০১ নয়। নিজের অর্থায়নে বাংলাদেশ পদ্মাসেতু করেছে। এটা শেখ হাসিনার গৌরব, বাংলাদেশের গৌরব। তাকে হেয় করে, খাটো করে, তার দাবিদার সেজে বাংলাদেশকে পিছিয়ে দেয়া যাবে না। উন্নয়নশীল দেশের অভিধা নিয়ে বাংলাদেশ এগিয়ে চলেছে। এগিয়ে যাবে একটি অসাম্প্রদায়িক গণতান্ত্রিক উন্নত বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠায়। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী এ লড়াইয়ে ওয়ার্কার্স পার্টি, চৌদ্দ দল আছে, থাকবে। ধন্যবাদ মাননীয় স্পীকার।

Manual2 Ad Code

এ সংক্রান্ত আরও সংবাদ

 


Follow for More!

Manual1 Ad Code
Manual5 Ad Code