সিলেট ১লা জুলাই, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ | ১৭ই আষাঢ়, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
প্রকাশিত: ২:৩০ পূর্বাহ্ণ, আগস্ট ২৪, ২০২২
একটি কুঁড়ি দুটো পাতা- র (১৯৩৭) লেখক মুলুক রাজ আনন্দ (১৯০৫-২০০৪) দীর্ঘ জীবন লাভ করেছিলেন কিন্তু উপন্যাসের পাত্র – পাত্রীদের আন্দোলনের আলোর পাদদেশে আসতে হয়তো দেখেননি। কিন্তু এখন তারা কথা বলছে যেমন রূপকথার চম্পার সাতভাই একদিন কথা বলে উঠেছিল। এই কুঁড়ি আর পাতারা হয়তো কথা বলতো কিন্তু বাংলাদেশের আমরা মধ্যবিত্তরা কান পেতে শোনার চেষ্টা করি নি। আজ ইলেকট্রনিক ও সামাজিক মিডিয়ার কল্যাণে তাদের কথা শুনতে পারছি। অনেকে আবেগতাড়িত হয়ে চা পান বর্জনের কথাও বলেছেন; সকলকে সাধুবাদ জানাই।
Mulk Raj Anand
বৃটিশ শাসনের পটভূমিতে মুলুক রাজ আনন্দের উপন্যাসের চিত্রায়ণও হয়েছে; জীবন সেখানে বেদনা- আনন্দে ভরা। সেলুলয়েডে অনেক কিছু রঙিন বা প্রেমময় থাকে। এরপর চা শ্রমিকদের জীবনের নির্যাস নিয়ে রচিত গান মধ্যবিত্তের বিনোদন হয়েছে। যেমন, চল মিনি আসাম যাবো।
চা এখন আমাদের সভ্যতার প্রতীক; স্বাস্থ্যের আমেজের সাথে জড়িত হয়ে পড়েছে। এখন সবুজ চা অর্গানিক চা আমাদের বৈদেশিক বাণিজ্যেরও অংশ কারণ আমাদের সাধারণ চা তত মানসম্মত নয়। চা উৎপাদনে বিশ্বে নবম- দশম হয়েও আমাদের সবুজ চা চীনের রাজধানীতেও বিক্রি হয়। ১৬৭টি চা বাগানে প্রায় ৮ কোটি কেজির উপর চা উৎপাদন হয়, ১৬ কোটি লোকের চায়ের চাহিদা মেটাতে চা আমদানি করতে হয়। চায়ের কেজির নিলাম দর গড়ে ২৭০। চা বাগান এখন উত্তরবঙ্গের সমতল ভূমিতেও ছড়িয়ে পড়েছে। সেখানে শ্রমিক ভাড়া করতে হয় দৈনিক ১২০০/১৩০০ টাকায়। কিন্তু যে এক লক্ষাধিক চা শ্রমিক আন্দোলনে আছেন তারা কিন্তু উপনিবেশিক আমলে আনত অবাঙালি, বর্তমানে বাংলাদেশী। এরা চাবাগানের সংলগ্ন জমিতে বসবাসের প্রতিশ্রুতিতে আগত।
বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে চা শ্রমিকদের উল্লেখযোগ্য অবদান রয়েছে।
মুক্তিযুদ্ধের শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত চা শ্রমিকরা গণহত্যা ও গণনির্যাতনের শিকার হয়েছিলেন। আবার চট্টগ্রাম ও সিলেটের চাবাগানগুলো হয়ে উঠেছিলো মুক্তিযোদ্ধাদের আশ্রয়স্থল। ১৯৭০ সালে তারা আওয়ামী লীগকে ভোট দিয়েছিল। এসব অঞ্চলে প্রায় ৬০০-এর অধিক শ্রমিক শহীদ হন, বহু নারী সম্ভ্রম হারান। চা শ্রমিকদের মধ্যে প্রায় ৩০০ জন গেজেটভুক্ত মুক্তিযোদ্ধা আছেন।
বাংলাদেশের স্বাধীনতা অর্জনে চা শ্রমিকদের অবদান বলে দেয় এই দেশ তাদেরও।
চা শ্রমিকদের সাম্প্রতিক আন্দোলন সম্পর্কে সবাই ওয়াকিবহাল।
আমার মনে হয়েছে বাংলাদেশের সংশ্লিষ্ট শিল্প ও শ্রম আইন অ- বৈষম্যমূলকভাবে তাদের অধিকার আদায়ের জন্য প্রযোজ্য। ভূমিতে আবদ্ধ আছে বিধায় বা এই শিল্প অর্থকরী কৃষিও বলে হয়তো ট্রেড ইউনিয়ন আন্দোলন বহুধা বিভক্ত কিন্তু বৃটিশ আমল থেকে চা শ্রমিকদের মধ্যে ট্রেড ইউনিয়ন সক্রিয়। বামপন্থীদের এখানে অবদানও রয়েছে।
ট্রেড ইউনিয়ন আন্দোলন শুধু মজুরির জন্য আন্দোলন নয়, বেঁচে থাকা বা জীবন যাপনের দাবিও। আমাদের চা শিল্পের মালিকগণ পরিপূর্ণ আধুনিক শিল্পেরও মালিক কিন্তু চাবাগানের মালিক হিসেবে উপনিবেশিক আইনের ধারাবাহিকতায় জমিদারও বটে। এদের দখলে আছ ২ লাখ ৮০ হাজার একর জমি। বাগানেগুলোতে মুনাফা হচ্ছে এবং আধুনিক সংস্কারও তারা করছেন কিন্তু শ্রমিকরা তাদের নজরে নেই; এখন সময় বদলাচ্ছে। এই বার আন্দোলনের ফলাফল যাই হোক না কেন যারা কোমল কোমল হাতে কুঁড়ি ও পাতা তোলেন তারা আজ কঠিন স্বরে জাতিকে তাদের পরিস্থিতি জানিয়েছেন। নারী শ্রমিকদের ধ্বনি আজ চারিদিকে প্রতিধ্বনিত হচ্ছে।
মুলুক রাজ আনন্দকে সালাম জানাই। ১৯৩৭-এ তিনি যাদের কথা বলেছিলেন, তারা আজ নিজেরাই নিজেদের কথা বলছেন। চা শ্রমিকদের অর্থনৈতিক মুক্তির আন্দোলন সফল হোক!
স্বাধীন বাংলাদেশ তার নাগরিকদের সংবিধানে প্রদত্ত মুক্তি ও সাম্যের ওয়াদা বাস্তবায়ন করুক!
#
শরীফ শমসীর
সদস্য, কেন্দ্রীয় কমিটি
বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টি।
সম্পাদক : সৈয়দ আমিরুজ্জামান
ইমেইল : rpnewsbd@gmail.com
মোবাইল +8801716599589
৩১/এফ, তোপখানা রোড, ঢাকা-১০০০।
© RP News 24.com 2013-2020
Design and developed by M-W-D