জীবনটা দু’মিনিটের ম্যাগী নুডলস নয়

প্রকাশিত: ৪:১৭ পূর্বাহ্ণ, আগস্ট ২৫, ২০২২

জীবনটা দু’মিনিটের ম্যাগী নুডলস নয়

চক্রবর্তী কমলিকা |

জীবনটা দুমিনিটের ম্যাগী নুডলস নয়। ধৈর্য ধরতে হয়। জীবনের প্রতিষ্ঠা থেকে সম্পর্ক ধরে রাখা সবক্ষেত্রেই ধৈর্যটাই আসল। আমরা আজ চাকরি না পেলেই ধৈর্য্যচূত হয়ে পড়ছি। ব্যবসায় সঙ্গে সঙ্গে সাফল্য দেখতে চাইছি। কিন্তু একটু ভালোভাবে পর্যবেক্ষণ করলে দেখা যাবে আমাদের বাবা মায়েরা কিন্তু জীবনের শেষ বয়সে এসে একটা গাড়ি বা এসি কিনে উঠতে পেরেছে। তাদের মধ্যে কিন্তু তার জন্য কোনো হতাশা গ্রাস করেনি। অথচ আমরা কি সহজেই অল্প বয়সেই হতাশ হয়ে পড়ছি। অবশ্য এ সবই digitalization and globalization-এর মায়া। রাস্তা খুঁজে বের করতে ধৈর্য্য ধরার আজ আর আমাদের প্রয়োজন হয় না। গুগল ম্যাপ আছে। ভালো রেস্টুরেন্ট-এ ডিনার করতে গিয়ে লাইন দিতে হয় না। টেবিল বুকিং সিস্টেম আছে। একটা ট্যাক্সি পেতে রাস্তার মুখে দাঁড়িয়ে থাকতে হয় না। ওলা উবের আছে। কলেজ স্ট্রিট-এ গিয়ে রোদ জ্বলা দুপুরে বই খুঁজে বেড়ানোর প্রয়োজনীয়তা আজ নেই। অ্যামাজন – ফ্লিপকার্ট আছে। সম্পর্ক গুলোও ধৈর্যহীন হয়ে পড়েছে। টেস্ট ম্যাচের ধৈর্য্য আর প্রেম ভালোবাসায় দেখা যায় না। যেখানে লুকিয়ে প্রেম। বাড়ির ল্যান্ডলাইন থেকে বাবা মা-এর চোখের আড়ালে ফোন। টিউশন শেষ করে অন্ধকার গলিতে মসার কামড় বা কেউ দেখে ফেলার ভয়কে উপেক্ষা করে দাড়িয়ে প্রেমালাপ, কিংবা ধৈর্য্য ধরে থেকে শেষমেশ বাবা মাকে রাজি করিয়ে সুখে শান্তিতে জীবনযাপন করা। এসব এখন পুরোটাই অতীত। T-২০ এর জামানায় আমরা দাড়িয়ে এখন। যেখানে সম্পর্ক শুরু না হতেই শেষ হয়ে যায়। সময় যেদিকে যাচ্ছে তাতে কেনো জানি না ভীষণ মনে হচ্ছে। কলকাতার কফি হাউজে তরুণ যুবক যুবতীদের প্রেমের স্পর্ধাটাকে কেরে নিতে চলেছে EX-CAFE নামক কোনো কফি এবং আড্ডা মারার জায়গা। যেখানে বিচ্ছেদ হয়ে যাওয়া সম্পর্কগুলো এসে সিট দখল করবে।
এই জেনারেশন e-library , kindle , google-এ খুব সহজেই বিদ্যা অর্জন করে ফেলছে। কিন্তু লাইব্রেরিতে বই ঘেঁটে নোট তৈরি করার ধৈর্যের যে শিক্ষা, তা অর্জন করতে পারছে না। আর এই ধৈর্যের অভাব, এই আমরা গলা উঁচু করে বলতে পারছি না ‘দাদা আমি বাঁচতে চাই’। বরং অকপটেই ঝুলে পড়ছি সিলিং ফ্যান থেকে, নয় ঝাঁপ দিয়ে দিচ্ছি রুফটপ থেকে।

সইতে পারার ধৈর্য্যটা ভীষণ কমে গেছে আমাদের। ইমিউনিটি ওফ হেলথ না থাকলে যেমনি সহজেই করোনা আক্রমন করে ফেলছে, তেমনি ইমিউনিটি ওফ মাইন্ড অ্যান্ড হার্ট না থাকলেই আক্রমন করে ফেলছে জীবনের ভুল পথ গুলো।

পার্থ-এর ক্রিকেট পিচে যেভাবে গ্লেন ম্যাকগ্রা এর সুইং এর বিরুদ্ধে মাটি আঁকড়ে পড়ে থাকত রাহুল দ্রাবিড়, ঠিক সেই ধৈর্য্যটা আমাদের গড়ে তুলতে হবে। মনে রাখতে হবে, জীবনটা তিন ঘণ্টার T-২০ ম্যাচ নয়, ৫ দিনের টেস্ট ক্রিকেট; যেখানে প্রথম ঘণ্টায় পেস এবং অ্যাটাক থাকবে, দিনের শেষে সুইং থাকবে এবং শেষ দুদিন প্রচণ্ড ঘুরবে বল। ধৈর্য্য ধরে মাটি আঁকড়ে পড়ে থাকলে জয় আবশ্যক।

আমার মা একটা কথা বলে, যে সয় সে রয়। আমাদের এই generation-কে আরও অনেক সইতে শিখতে হবে। শিখতে হবে ধৈর্য্য ধরতে। শিখতে হবে সমালোচনা সহ্য করতে। শিখতে হবে ধৈর্য্য ধরে সময়ের অপেক্ষা করতে!

এ সংক্রান্ত আরও সংবাদ