লাল তীরের বাবু পেঁপে চাষে চমক শ্রীমঙ্গলের কৃষক আসাদুল রহমানের

প্রকাশিত: ২:১৮ অপরাহ্ণ, আগস্ট ২৯, ২০২২

লাল তীরের বাবু পেঁপে চাষে চমক শ্রীমঙ্গলের কৃষক আসাদুল রহমানের

নিজস্ব প্রতিবেদক | শ্রীমঙ্গল (মৌলভীবাজার), ২৯ অাগস্ট ২০২২ : লাল তীরের বাবু পেঁপে চাষে চমক দেখালেন শ্রীমঙ্গলের কৃষক আসাদুল রহমান।
মো: আসাদুল রহমানের বয়স সবেমাত্র ৩৫ বছর। তার বাড়ি ভূনবীর ইউনিয়নের শাসন গ্রামের এলানপাড়ায়।
তার পিতা মো: মিজানুর রহমানও কৃষি কাজ করতেন। ব্যক্তিগত জীবনে বিবাহিত তিনি। একপুত্র ও কন্যা সন্তানের জনক। মা-বাবা ও এক ভাইসহ ছয় সদস্যের পরিবার তাঁর।
ছোটবেলায় থেকেই বাবার সাথে মাঠে কৃষি কাজে সহায়তা করতেন। এ থেকেই কৃষির প্রতি আলাদা অনুরাগ, আসক্তি ও ভালবাসা তার।

অাসাদুলের সাথে কথা হলে তিনি জানান, তাদের পরিবারকে কৃষি পরিবার বললেও ভুল হবেনা। ১৩ বছর বয়স থেকে লেবু চাষ করে আসছেন তিনি। এখানকার পাহাড়ী আবহাওয়া লেবুচাষের জন্য উপযুক্ত। পাশাপাশি সাথী ফসল হিসেবে পেঁপে চাষ শুরু করেন ২০১৬ সাল থেকে। থাইল্যান্ডের রেডলেডি নামের জাতটি দিয়েই যাত্রা শুরু তার। শ্রম ও খরচ কমে আসে ধীরে ধীরে। পেঁপে চাষে মনোনিবেশ করেন আরো শক্ত হাতে।

এক সময় রেডলেডি পেঁপে জাতটি মুজাহিক ভাইরাস নামে বালাই আক্রান্ত হলে গাছে কুঁকড়া দেখা দেয়। এতে সকল ফলন নষ্ট হয় এবং একাধিক গাছ পুরুষ গাছ হিসেবে বিশাল ক্ষতির সম্মুখীন হন। আর্থিকভাবেও ক্ষতিগ্রস্থ হন তিনি। তবে হাল ছাড়েননি তিনি। রোগবালাই মুক্ত উন্নত জতের সন্ধান শুরু করেন এবং এ ব্যাপারে স্থানীয় উপ সহকারী কৃষি কর্মকর্তা অজিত পালের সাথে দেখা করে পরামর্শ নিয়েছেন। এরপর তিনি সরাসরি শ্রীমঙ্গলের কৃষি কর্মকর্তা নিলুফার ইয়াসমিন মোনালিসা সুইটি এর কাছ থেকে পেঁপে চাষের কলাকৌশল সম্পর্কে জানেন। উন্নতজাতের সন্ধান পান। কৃষিক্ষেত্রে বাংলাদেশের মার্কেট লিডার লাল তীর সীড কোম্পানি লিমিটেডের কর্মকর্তাদের সহযোগিতায় বাবু পেঁপে সন্ধান পেয়ে বীজ সংগ্রহ করেন।

নতুনভাবে ১০ বিঘা জমিতে লেবু চাষের পাশাপাশি সাথী ফসল হিসেবে লাল তীরের বাবু পেঁপের চাষের কার্যক্রম শুরু করেন।
দিন যায়, মাস যায় প্রকৃতির নিয়মে নিজ সন্তানের মতো প্রতিটি গাছের যত্নে বেড়ে ওঠে সবকটি পেঁপে গাছ। কোনরকম রোগবালাই ছাড়া স্বল্প দিনে গাছ ভরে ফুল ফল আসে। চলতি মাসে ২০ টন পেঁপে ফল বিক্রি করে গুনেছেন ৩ লাখ টাকা। আগামী মাসে আরো ৫০ টন ফল বিক্রি অপেক্ষায় আছে তার। লাভের পাল্লা এবার দ্বিগুণ হতে পারে বলে জানালেন তিনি।

লালতীর সীড লিমিটেডের ডিভিশনাল ম্যানেজার তাপস চক্রবর্তী, রিজিওনাল ম্যানেজার কৃষিবিদ গোলাম আজম, পিডিএস কোর্ডিনেটর মাহমুদুল হাসান, টিএম অমল রায়, মো: মিলন মিয়াসহ লাল তীর এর একটি টিম বাবু পেঁপের মাঠ ও কৃষক আসাদুলের সাফল্য দেখতে সরজমিন মাঠ পরিদর্শন করেছেন এবং বাবু পেঁপের ফলনে সকলেই সন্তুষ্টি প্রকাশ করেন।
এখন মৌলভীবাজার ও হবিগঞ্জের বাবু পেঁপের সাফল্য নিজ চোখে দেখতে ভীড় জমাচ্ছেন আসাদুলের পেঁপের মাঠে এবং অনেকেই ফোন করে সাফল্যে গল্প শুনছেন তার মুখ থেকে। থেমে নেই প্রচার প্রচারনাও। এবার বাবু পেঁপে চাষে এগিয়ে আসছেন এলকার অন্যান্য কৃষকরাও।

শ্রীমঙ্গল কৃষি কর্মকর্তা নিলুফার ইয়াসমিন মোনালিসা সুইটি বলেন, আসাদুলের লাল তীরের বাবু পেঁপে চাষে সাফল্যের জন্য উন্নতজাতের বীজের প্রশংসা এবং আশাদুলের চাষে আন্তরিকতা উভয় ফলনের ক্ষেত্রে ভূমিকা রেখেছে বলে মনে করি।

তিনি আরো বলেন, বাড়ির পতিত পরিত্যক্ত জায়গায় বাবু পেঁপে চাষ করে অন্যরাও লাভবান হতে পারেন। লাল তীর সীড কোম্পানি লি: ব্যবসার পাশাপাশি সেবাধর্মী প্রতিষ্ঠানও বটে। গাজীপুরে তাঁদের নিজস্ব আরএনডিতে নিয়মিত উন্নত জাত আবিষ্কার, উন্নয়ন ও গবেষণা কার্যক্রম চলছে। কাজেই লালতীর কোম্পানির সীড মানেই ভালো ফলন।

এদিকে সম্ভাবনাময় লালতীরের বাবু পেঁপের জাতটি চমক দেখিয়ে পছন্দের শীর্ষ তালিকায় অবস্থান করছে বলে জানান কৃষক আসাদুল রহমান।
আগামীদিনে লাল তীর সীড কোম্পানি লিমিটেডের বাবু পেঁপে বিশালভাবে করার পরিকল্পনার কথাও জানান তিনি। প্রতিনিয়তই তার স্বপ্নের বাবুপেঁপের বাগান দেখতে ও প্রতিবেদন করার জন্য বিভিন্ন সংবাদ মাধ্যম ও টিভি চ্যানেলেরগুলো সাক্ষাৎকার নিচ্ছে তার।
কৃষক অাসাদুল এখন এলাকায় বেশ জনপ্রিয় হয়ে উঠেছেন। তাই হয়তো তাঁর মাঠে কৃষি বিভাগসহ বিভিন্ন এনজিও ও প্রকল্প কর্মকর্তারা পরিদর্শন করছেন।

এ সংক্রান্ত আরও সংবাদ