নতুন লেখকদের অনুপ্রেরণা দিন

প্রকাশিত: ৫:৪৯ অপরাহ্ণ, সেপ্টেম্বর ১১, ২০২২

নতুন লেখকদের অনুপ্রেরণা দিন

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক |

আমাদের পরিবারটা পাচঁ জনের। আব্বু আম্মু, আমার দুই ভাই,, আর আমি। দুই ছেলে সন্তান হওয়ার পর আমার আগমনে আমার বাবা অনেক খুশি ছিলেন।আমাদের পরিবারে প্রথমদিকে আমার বাবা একাই রোজগার করতেন কিন্তু দিন যতই যাচ্ছিলো সবদিক দিয়ে খরচ বাড়ায় আমার আম্মু একপর্যায়ে চাকরির খোঁজে বেড়িয়ে যান। আমার মা বাবা দুজনেই লেখাপড়া জানতেন। তাই খুব একটা চাকরির জন্য সমস্যায় পরতে হয়নি তাদের। এইভাবে দিন কাটতে লাগলো আমাদের। আমার আব্বুর সপ্ন ছিল আমার ভাইকে ইঞ্জিনিয়ার বানাবে এবং তার সপ্ন সত্যিতে পরিণত হলো। আমার ভাইও অনেক কষ্ট করে লেখাপড়া করেছে তা আমার নিজ চোখেই দেখা।
২০১৮।।
আমি তখন আমাদের বাড়ির সামনে বসে ছিলাম। সময় হবে সকাল ১১টা। আমার ভাইয়া হঠাৎ করে অফিস থেকে বাসায় চলে এসেছে,, অথচ সে সকাল ৭টা নাগাদ অফিস চলে গিয়েছিল, তবে কেন সে এখন আবার বাসায় আসলো। আমি তাকে জিজ্ঞাসা করবো ভেবেছিলাম কিন্তু তার মুখের অস্থিরতা দেখে আমি তাকে কিছুই জিজ্ঞাসা করতে পারি নি। আমি দেখলাম আমার ভাই খুব দ্রুত আমার মায়ের ঘরে ঢুকে গেল। আচমকাই আমি শুনতে পেলাম আমার ভাই কাঁদছে।এই প্রথমবারের মতো আমি ভাইয়ার কান্নার আওয়াজ শুনতে পাই। প্রায় ২০ মিনিট পর ভাইয়া অফিস চলে গেল। আম্মু আমাকে নাস্তা খেতে ডাক দিচ্ছিলেন। আমি যেয়ে দেখি আমার মা আমার সামনে অঝোরে কাঁদছে। আমি অনেকটা আন্দাজ করতে পেরেছিলাম,, কিন্তু আম্মুকে কিছু বলার সাহস পাইনি। মেয়েরা যতই বাবার আদরের হোক না,,, যতই বাবাদের পক্ষে টানুক না কেন মায়েরদের জন্য মেয়েদের একটা আলাদা টান আছে। আমার ক্ষেত্রেও ঠিক একি। সে দিন বিকাল বেলা আমি খেলতে যাইনি। আমি মেয়ে হলেও আমি ছেলেদের সাথে ক্রিকেট ফুটবল খেলতে যেতাম। প্রতি দিনের মতো সে দিন আমার বন্ধু মাহিন আমাকে ডাকতে এসেছিল কিন্তু আম্মুর অবস্থা খুব একটা ভাল ছিল না। তাই আমি যাইনি। সন্ধা ৬টায় আব্বু বাসায় ফিরে আসে। ঘরে তখন তুমুল ঝগড়া,,, বলে বুঝানো সম্ভব না, কি পরিমাণ ঘরে অশান্তি চলছিল। সারারাত সে দিন ঝগড়া।
সকালবেলা যে যার মতো নাস্তা করে বেরিয়ে গেল।ভাইয়া চাকরি করার পর থেকে আম্মু তার শিক্ষকতা করা ছেড়ে দিয়েছিলেন। ভাইয়া খুব ভালো কামাতো।স্বাভাবিকভাবে আগের দিন গুলোর মতো কাটতে লাগলো,, মনেই হলো না গতদিনের রাতের কথা। আমার ফাইনাল পরিক্ষার ঠিক ১মাস আগে শুনলাম ভাইয়ার নাকি বিয়ে। কিহ।।।। আমার ভাইয়ার বিয়ে!!!
অবাক লাগলো আবার খুশিও লাগলো,,, বিয়ে সম্পূর্ণ হলো। বিয়েতে আমার বাবার অমত ছিল, কারণ অনেক কষ্ট করে মানুষ করেছেন। তিনি চাইতেন তার ছেলে যেহেতু একজন ইঞ্জিনিয়ার, তার বউ হবে একজন ডাক্তার। কিন্তু আল্লাহ যার ভাগ্যে যাকে লিখে রেখেছেন, তার সাথেই বিয়ে হলো। কথা ছিল মেয়ের বাবা-মার তাদের মেয়েকে ৩ বছর পর তুলে দিবেন আমাদের বাড়িতে। মোহর করে তাকে ঘরে রেখেছেন। মাঝেমধ্যে ভাইয়া তাকে আমাদের বাড়িতে বেড়াতে আনতো। এই দিকে আমিও বড় হতে লাগলাম। আমার আরেক ভাইও তার পড়াশোনা শেষ করে ভালো একটা চাকরির আশায় অনেক চেষ্টা করছিল। আমি যখন এসএসসি পরীক্ষা দিলাম, তখন ভাইয়ার বিয়ের ৩বছর পরিপূর্ণ হলো। আমার ভাবিকে আমাদের বাসায় আনার সময় হয়ে গিয়েছিল। কিন্তু আমরা আমাদের বাড়ি অন্য এক জায়গায় শিফট করাতে তাকে ঠিক সময়ে আনা হয়নি। আমাদের নতুন বাড়ির কাজ করা ইতিমধ্যে শুরু করা হয়েছিল,,,, আমাকে কলেজ এ ভর্তি করানো হলো কিন্তু আমরা যে জায়গায় থাকতাম ওখান থেকে আমার কলেজ অনেক দূরে ছিল তাই আমাকে হোস্টেলে রাখা হলো। হোস্টেলে রাখার পর আমি অনেক সমস্যার সম্মুখীন হই। খাওয়া দাওয়া থাকা সব কিছুতেই আমি অনেক কষ্ট পাই। কিন্তু আব্বু আম্মুকে কিছুই বলি নাই। কারণ পড়ালেখার জন্য এতটুকু সেক্রিফাইস করাই যাই।
ওইদিকে আমার আম্মু ঘরের সব কাজ তারপর বাড়ির কাজ মানে মিস্ত্রি দেখাশুনা সব একাই করতেন। আমার ভাবি ঘরের কোন কাজ পারতো না। রান্নাঘরের কাজ বলতে সে কিছুই জানে না। আমার তাকে কোন দিন কাজের ব্যাপারে একটু ডাক দিতেন না, কারণ সে পরের ঘরের মেয়ে তাকে আদেশ করা বা তার উপর কোন কাজ চাপিয়ে দেওয়া এসব আমার মা করতেন না। নিজের কাজ নিজে করাই ভালো মনে করতেন। আমার ভাবি ঘরের কোন কাজ তহ করতই না বরং সে তার মায়ের বাড়ি গেলে ১/২ মাস থেকে আসত। আমার ভাই তার পছন্দ মতো বিয়ে করেছে। সে দিন যখন অফিস থেকে বাসায় এসেছিল আম্মুর কাছে বলেছিল তাকে যদি সে মেয়ের সাথে বিয়ে না দেওয়া হয় সে ঘর ছেড়ে দিবে। মেয়ে নাকি শিক্ষিত অনেক উঁচু বংশের। অনেক শিক্ষিত বার বার খালি এটাই বুঝাচ্ছিল। আমি পাশের ঘর থেকে সব শুনেছিলাম সেদিন। আমার বয়স খুব বেশি না কিন্তু আমার বুঝার বয়সটা হয়েছে। একটা মেয়ে যতই শিক্ষিত হোক না কেন,,,যতই সে দেশ বিদেশ স্বাধীনভাবে ঘুরিয়ে বেড়িয়ে কাটাক,,,, দিন শেষে তাকে তার পরিবারের কাছেই ফিরে আসতেই হয়। আমি বলছি না, তাকে যে আমাদের বাসায় তাকে দাসীর মতো খাটতে হবে। মেয়েদের এই দুনিয়াতে আপন বাড়ি বলতে কবর বাড়ি ছাড়া আর কিছুই নেই।তাকে শুধুই কিছু দিন পর পর জায়গা বদলাতে হয় আর এটাই নিয়ম।।
আমার মা সারাদিন কলুর বলদের মতো খাটতে থাকেন কিন্তু তার সাথে বিনয়ের সহিত দুটো কথা বলবে এমন কেউ নেই। মায়ের ভালবাসা কি জিনিস, আমি সেটা খুব কম বুঝিছি কারণ আমার জন্মের পরে আম্মু চাকরি করেছিল। আমাকে আব্বু সারাক্ষণ তার কাছে রেখেছেন কিন্তু তবুও কেন জানি আমার মায়ের জন্য আলাদা একটা টান কাজ করে। পড়াশোনা করার জন্য আমি ঘরের বাইরে থাকি তাই বলে আমি আমার পরিবারে সময় দিতে পারছি না। আমার মায়ের জন্য কেন জানি খুব কান্না পায়,,জানি না কবে আমি মায়ের জন্য অনেক অনেক বড় কিছু করতে পারবো। আমার ভাইয়ের উপর আমার অনেক অভিমান জমেছে সেটা আমি বলে বুঝাতে পারব না। আমি ছুটিতে যখন বাসায় যেতাম দেখতাম সকাল ১১টার পর তারা ঘুম থেকে উঠে, নাস্তা করে রুমে চলে যেত, আবার দুপুরে খাওয়ার জন্য রুম থেকে বেড়িয়ে আসত। এটাকে কি জীবন বলে??

আমার মা সবার আড়ালে কান্না করে, আমি সেটা খুব ভালো করেই জানি। আমি আসলে মাকে কি বলে সান্ত্বনা দিব, বুঝে উঠতে পারি না।। 🙂

সত্য ঘটনা অবলম্বনে

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক

আশা করি সবাই নতুন লেখকদের অনুপ্রেরণা দিবেন।

এ সংক্রান্ত আরও সংবাদ