আঞ্চলিক সহযোগিতা বাড়াতে অভ্যন্তরীণ হোমওয়ার্ক জরুরি

প্রকাশিত: ৫:০৫ অপরাহ্ণ, সেপ্টেম্বর ১২, ২০২২

আঞ্চলিক সহযোগিতা বাড়াতে অভ্যন্তরীণ হোমওয়ার্ক জরুরি

নিজস্ব প্রতিবেদক | ঢাকা, ১২ সেপ্টেম্বর ২০২২ : বিশ্বের বিভিন্ন দেশের সঙ্গে অর্থনৈতিক সম্পর্ক জোরদার ও আঞ্চলিক সহযোগিতা বাড়াতে নিজেদের (অভ্যন্তরীণ) হোমওয়ার্ক জরুরি বলে মত দিয়েছেন অর্থনীতিবিদ ও বিশিষ্টজনরা।
গত শনিবার রাজধানীর সার্কিট হাউজ রোডে তথ্য ভবন অডিটোরিয়ামে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) প্রথম সচিব (কাস্টমস) ড. মো. নেয়ামুল ইসলাম রচিত ‘দি আন্ডারস্টান্ডিং অব ফ্রি ট্রেড এগ্রিমেন্ট: দি রহেট্রিক অ্যান্ড রিয়েলিটি অব সাফটা’ বইয়ের প্রকাশনা উৎসব অনুষ্ঠানে বক্তারা এমন অভিমত ব্যক্ত করেন।
অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য মো. আখতারুজ্জামান। বিশেষ অতিথি ছিলেন বেসরকারি গবেষণা সংস্থা সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগ (সিপিডি) এর বিশেষ ফেলো ড. মোস্তাফিজুর রহমান।
আন্তর্জাতিক বাণিজ্য বিশেষজ্ঞ আলী আহমেদের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে অন্যান্যের মধ্যে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক ও গবেষণা সংস্থা সানেম এর নির্বাহী পরিচালক ড. সেলিম রায়হান, চলচ্চিত্র ও প্রকাশনা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক স ম গোলাম কিবরিয়া, দি ইউনিভার্সিটি প্রেস লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মাহরুখ মহিউদ্দীন ও অর্থ মন্ত্রণালয়ের যুগ্ম সচিব মোহাম্মদ আবু ইউসুফ বক্তব্য রাখেন।
বইয়ের লেখক ড. মো. নেয়ামুল ইসলাম কাস্টমসের অতিরিক্ত কমিশনার। বর্তমানে তিনি এনবিআরের প্রথম সচিব (কাস্টমস) হিসেবে কর্মরত আছেন।
নেয়ামুল ইসলাম বলেন, যে অঙ্গীকার নিয়ে সাফটার যাত্রা শুরু হয়েছিল, সে বিষয় বইটিতে তুলে ধরা হয়েছে। বাণিজ্য সহজীকরণ এবং গ্যাট চুক্তির বিষয়ে বিস্তারিত আলোচনা আছে, যা নীতি-নির্ধারক ও গবেষকদের কাজে লাগবে বলে আশা করি।
অনুষ্ঠানে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য মো. আখতারুজ্জামান বলেন, বইটি মূলত মুক্ত বাণিজ্যের অঙ্গীকারের উপর লেখা। সাফটার বিভিন্ন রেফারেন্স তুলে ধরা হয়েছে, যা আন্তর্জাতিক বাণিজ্য চুক্তি ও আলোচনার বিষয়ে গুরুত্বপূর্ণ উপাত্ত দেয়। তিনি বলেন, একজন ভালো স্কলারের কৃতিত্ব হলো অল্প কথায় অনেক কিছু তুলে ধরা। এই বইয়ে সেভাবে তুলে ধরা হয়েছে। পুরো দক্ষিণ এশিয়াকে একটি ইন্টিগ্রেটেড এনটিটি হিসেবে বিবেচনা করা হয়েছে বলে তিনি উল্লেখ করেন।
মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, ১৯৯৯ সালে সার্ক কনফারেন্স থেকে সাফটা আসে। সেখানে একটি রোডম্যাপ করা হয়। ২০০৬ সালে সাফটা চুক্তি যখন সই হয় তখনকার পরিবেশ ছিলো ভিন্ন। সাফটার আলোকে হয়ত আমরা এখন আঞ্চলিক সহযোগিতা দেখতে পারবো না। রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে বিভিন্ন দেশের অর্থনীতি কিন্তু পরিবর্তন হয়ে গেছে। তিনি বলেন, বইটি যদিও সাফটা নিয়ে লেখা। তবে সাফটার আঙ্গিকে বাণিজ্যের যে সমস্যা ও বাঁধাগুলো উঠে এসেছে তা দূর করতে কাজে লাগবে।
এই গবেষক আরও বলেন, আমাদের মোট বাণিজ্যের ক্ষেত্রে আঞ্চলিক বাণিজ্যের হিস্যা মাত্র ৫ শতাংশ। যেখানে আসিয়ানভুক্ত দেশে হিস্যা ২৫ থেকে ৩০ শতাংশ, ইউরোপীয় ইউনিয়নে ৭০ শতাংশ। ভারতের কথা বলতে পারি, ভারত এন্টি ডাম্পিং ডিউটি বসায়। কিন্তু আমরা কি আমাদের হোমওয়ার্কগুলো করেছি। ভারত ২০১০ সালে প্রথম, ২০১৫ সালে দ্বিতীয় এবং ২০১৮ সালে তৃতীয় লাইন অব ক্রেডিট দিয়েছে। কিন্তু আমরা তো ২০১০ সালের প্রথম লাইন অব ক্রেডিট এখনও বাস্তবায়ন করতে পারিনি।
অনুষ্ঠানে সানেমের নির্বাহী পরিচালক সেলিম রায়হান বলেন, প্রচুৃর তথ্য বইটিতে সন্নিবেশ করা হয়েছে। বিশ্বের বিভিন্ন দেশে আঞ্চলিক সহযোগিতার কথা নিয়ে আলোচনা হয়। বিশেষ করে প্রতিবেশি দেশগুলোর সঙ্গে আঞ্চলিক সহযোগিতা গড়ে তোলা। প্রয়োজনীতার জায়গা থেকে যখন দক্ষিণ এশিয়ার দিকে তাকাই, তখন দেখি যে এখানে আঞ্চলিক সহযোগিতা খুব কম।
তিনি বলেন, বাংলাদেশের অনেক রপ্তানিকারক অভিযোগ করেন, ভারতের বাজারে রপ্তানি করতে গিয়ে সমস্যায় পড়েন। রপ্তানিতে শুল্ক না থাকলেও কোয়ালিটি, স্টান্ডার্ড, ক্লিয়ারেন্সসহ বিভিন্ন কারণে রপ্তানি আটকে যায়।এন্ট্রি ডাম্পিং শুল্ক বসায় ভারত। এগুলোর সমাধানের বিষয়ে সাফটায় বলা আছে, অথচ সেটা কখনো ব্যবহার হয় না। কারণ যখন সাফটার ব্যবহার নেই, তখন সমাধানের বিষয় কেন সামনে আসবে।
তিনি মনে করেন আঞ্চলিক সহযোগিতা তখনই ফলপ্রসু হবে, যখন আমরা আমাদের অভ্যন্তরীণ হোমওয়ার্কগুলো করবো।

এ সংক্রান্ত আরও সংবাদ