চারটি কারণে দেশে আয় বৈষম্য বাড়ছে: ড. দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য

প্রকাশিত: ৬:৫৫ অপরাহ্ণ, সেপ্টেম্বর ২৫, ২০২৩

চারটি কারণে দেশে আয় বৈষম্য বাড়ছে: ড. দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য

নিজস্ব প্রতিবেদক | ঢাকা, ২৫ সেপ্টেম্বর ২০২৩ : “দেশের রাশিয়ান ওলিগার্চের মতো শ্রেণী তৈরি হয়েছে। যারা সম্পদশীল ও রাজনৈতিকভাবে খুবই প্রভাবশালী। যারফলে আয় বৈষম্য খুবই দ্রুত বাড়ছে। আর এই বৈষম্য বাড়ার পিছনে রয়েছে মূলত চারটি কারণ। সেগুলো হল: ব্যক্তিখাতে বিনিয়োগ বৃদ্ধি না পাওয়া, রাজস্ব আদায় অগ্রগতি না হওয়া , শিক্ষা ও স্বাস্থ্যখাতে স্বল্প বরাদ্দ দেয়া এবং সামাজিক সুরক্ষায় ঘাটতি থাকা।”
সোমবার (২৫ সেপ্টেম্বর ২০২৩) রাজধানীর কৃষিবিদ ইনস্টিটিউশন বাংলাদেশ (কেআইবি)-তে ‘বাংলাদেশের উন্নয়ন আখ্যান ও সমান্তরাল বাস্তবতা: পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠীর ভাবনা’ শীর্ষক নাগরিক প্লাটফর্মের সংলাপ ও জনপ্রকাশ অনুষ্ঠানে মূল প্রবন্ধে এসব কথা বলেন সংগঠনটির আহ্বায়ক ও সিপিডি-এর সম্মাননীয় ফেলো ড. দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য।

নাগরিক প্ল্যাটফর্ম-এর নতুন প্রকাশনা “বাংলাদেশের উন্নয়ন আখ্যান ও সমান্তরাল বাস্তবতা: পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠীর ভাবনা” এর মোড়ক উন্মোচনের মাধ্যমে সংলাপের সূচনা হয়।

সংলাপে সভাপতিত্ব করেন সিপিডি’র প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান অধ্যাপক রেহমান সোবহান।

সম্মানিত আলোচক হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বিশিষ্ট কথাসাহিত্যিক ও বাংলা একাডেমি’র সভাপতি সেলিনা হোসেন; বিশিষ্ট মানবাধিকার কর্মী ও নাগরিক প্ল্যাটফর্ম-এর কোর গ্রুপ সদস্য অ্যাডভোকেট সুলতানা কামাল; বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগের সাবেক বিচারপতি মো: আবদুল মতিন; বিশিষ্ট সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব মামুনুর রশীদ; নাগরিক প্ল্যাটফর্মের কোর গ্রুপ সদস্য ও সেন্টার ফর পলিসি ডায়লগ (সিপিডি)-এর সম্মাননীয় ফেলো অধ্যাপক মোস্তাফিজুর রহমান এবং নাগরিক প্ল্যাটফর্ম-এর কোর গ্রুপ সদস্য এবং অ্যাপেক্স ফুটওয়্যার লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক সৈয়দ নাসিম মঞ্জুর।

ড. দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য বলেন, দেশে বেসরকারি বিনিয়োগ বাড়ে নাই, যেটা বেড়েছে সেটা সরকারি বিনিয়োগ। শুধু সরকারি বিনিয়োগ দিয়ে কাঙ্খিত লক্ষ্য অর্জন করা সম্ভব না। শিক্ষা ও স্বাস্থ্যখাতের বরাদ্দ নিয়ে ড. দেবপ্রিয় বলেন, মধ্যম আয়ের দেশে উত্তরনে পথে একটি দেশে জিডিপির ২ শতাংশের চেয়ে বরাদ্দ শিক্ষাখাতে এবং ১ শতাংশের কম বরাদ্দ স্বাস্থ্যখাতে। এটা কলঙ্কজনক বিষয়। প্রশ্ন তুলেন সামাজিক সুরক্ষায় বরাদ্দের হিসাব নিয়েও।

ফলে দেশের উন্নয়ন হলেও তা সঠিক বন্টন হয়নি বলে মন্তব্য করেন প্লাটফর্মের আহ্ববায়ক ড. দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য।
তিনি বলেন, এখন এক দেশে দুটো ভিন্ন সমাজে দাঁড়িয়েছে, ভিন্ন বাস্তবতা বিরাজ করছে। একদিকে উন্নয়ন হয়েছে কিন্তু এর ভাগীদার সবাই হতে পারে নাই। ফলে সব শেষ হিসাব অনুযায়ী দেশের শীর্ষ ধনীদের ১০ শতাংশ মানুষের কাছে মোট সম্পদের ৪১ শতাংশ। অপরদিকে সবচেয়ে গরীব ১০ শতাংশ মানুষের কাছে আছে মোট সম্পদের ১ দশমিক শূণ্য ২ শতাংশ। যা বলে দেয় বৈষম্যের পরিমান।

অনুষ্ঠানে সভাপতির সমাপনী বক্তব্যে অর্থনীতিবিদ ড. রেহমান সোবহান বলেন, গত ১৫ বছর ধরে একটি ভালো অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি ধরে রেখেছে বর্তমান সরকার। পদ্মাসেতুর মতো প্রকল্প বাস্তবায়ন করেছে। এসবের জন্য সরকার প্রধানসহ সবাই সুধাবাদ পেতেই পারেন। কিন্তু অন্যান্য অবকাঠামো উন্নয়নে যে ব্যয় হয়েছে তাতে প্রান্তিক মানুষ কতটা ভাগীদার হয়েছে?

সরকার উন্নয়ন বাজেটে কতটা দলিত, নারী, প্রবীণ সমাজের উন্নয়নের মতো বিষয়গুলোতে রাখা হয়েছে তা নিয়ে প্রশ্ন তুলেন।

এই সময় ড. রেহমান সোবহান আরও বলেন, নির্বাচনের সময় নাগরিকের কথা শুনবে রাজনীতিবিদরা। কিন্তু নির্বাচনই যদি সঠিকভাবে না হয় তবে ফল আসবে না। এক্ষেত্রে ‘ডেমোক্রেটিক ফেইলর’ আছে বলেও মন্তব্য করেন তিনি।

অনুষ্ঠানের শূরুতে নাট্য ব্যক্তিত্ব মামুনুর রশীদ বলেন, বাংলাদেশ পরিকল্পনা করেন আমলারা। কিভাবে অর্থনীতিবিদ ও নগরবিদ ছাড়া পরিকল্পনা করা হয়? বঙ্গবন্ধুর সময়ও পরিকল্পনা কমিশন থেকে অর্থনীতিবিদ ও পরিকল্পনাবিদদের বের করে দিয়েছিল আমলারা, এখনও এটা চলছে। এই আমলা শুধু প্রকল্পের বাজেট বড় করা নিয়ে কাজ করেন বলে অভিযোগ করেন।

তিনি অভিযোগ করে বলেন, এখন রাজনৈতিবিদ লক্ষ্য একটায়, সেটা ক্ষমতায় যাওয়া। কিন্তু ক্ষমতায় যেয়ে কি করবে, তাদের কোন পরিকল্পনা নেই।

অনুষ্ঠানে সিপিডি সম্মানীয় ফেলো ড. মোস্তাফিজুর রহমানও আয় বৈষম্যের কথা তুলে ধরেন।
তিনি বলেন, আমরা গড় হিসাবে অনেক ভালো করেছি, কিন্তু সমান্তরাল বাস্তবতার সৃষ্টি হয়েছে। ফলে সামগ্রিক থেকে ব্যক্তি পর্যায়ে অনেক ধরণের অসাম্য ও বৈষম্য বিদ্যমান। জানান, বর্তমানে সর্বনিম্ন ও সর্বোচ্চ আয় পাথর্ক্য ৮০ গুন, যা ২০০৫ সালে ছিল ৩০ গুন। এ ধরণের বৈষম্যের বজায় রেখে টেকসই উন্নয়ন সম্ভব না বলেও মন্তব্য করেন মোস্তাফিজুর রহমান।

অনুষ্ঠানে মানবাধিকার কর্মী অ্যাডভোট সুলতানা কামাল বলেন, রাজনীতিবিদরা কোথায়, তাদেরকে খুঁজে পাওয়া যায় না। বিভিন্ন জায়গায় জনগণের প্রতিনিধি নেই। যদি জনগনের প্রতিনিধি না থাকে তাহলে কিভাবে সেখানে মানুষের কথা উঠে আসবে।

সংলাপে অংশগ্রহণকারী সকল বেসরকারি সংস্থার প্রতিনিধি, উন্নয়ন কর্মী, আন্তর্জাতিক উন্নয়ন সংস্থার প্রতিনিধি এবং সাংবাদিকদের জানাই আন্তরিক ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা।

এ সংক্রান্ত আরও সংবাদ