সিলেট ২রা জুলাই, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ | ১৮ই আষাঢ়, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
প্রকাশিত: ১১:০৪ পূর্বাহ্ণ, নভেম্বর ২৬, ২০২৩
নভেম্বর মাস যেমন আমার জীবন থেকে অনেক কিছু কেড়ে নিয়েছে, তেমন শতগুণ ফিরিয়ে দিয়েছে। বলা যায় এই মাস কেবল আক্ষরিক অর্থে জন্মমাস কিংবা আনন্দের মাস নয়, একজন মানুষ আদ্যোপান্ত পরিবর্তন হয়ে নতুন মানুষের জন্ম হয়েছে এই মাসেই।
জীবনের এই ভাঙা-গড়ার খেলায় যতটুকু উপলব্ধি করেছি, মানুষকে খুব জোরালোভাবে নিজের মূল্য বুঝিয়ে না দিলে তারা কিছুতেই বুঝতে চায় না।
আমার নিঃশব্দ অভিব্যক্তি, নীরব কর্তব্যবোধ, চোখের ভাষা আর ভালোবাসার বহিঃপ্রকাশের মূল্য এককালে কেউ দেয়নি। দীর্ঘ অপেক্ষার পর ধৈর্যহীনতায় ভুগে আমি নিজেকে আমূল পরিবর্তন করে নিজের জন্য একটা দাঁড়িপাল্লা নির্দিষ্ট করে তুমুল স্বার্থপর হয়েছি। আমার জন্য যতটুকু করা হবে, দাঁড়িপাল্লায় ওজন করে ঠিক ততটাই আমার দিক থেকেও আশা করা সম্ভব। আর অতীতে যা আমার জন্য করা উচিত ছিল, কিন্তু করা হয়নি…. সে হিসেবও বর্তমানে যে কোনও মূল্যে পরিশোধ করতে হবে। বলা ভালো সুদে-আসলে সেই সব আমি আদায় করে নেব।
স্থূল জাগতিক দুনিয়া থেকে সরে গিয়ে নিজের বৃত্তে প্রবেশের পর দেখলাম, অদ্ভুতভাবে সমস্ত কিছুর সংজ্ঞা ধীরে ধীরে বদলে গেল। কোনোদিনও আমার যথার্থ মূল্যায়ন না করা মানুষগুলো আজ আমার জন্য নিঃস্ব হয়ে নিজেকে নিংড়ে দিতেও প্রস্তুত। কিন্তু সময়ের চাকা বড় সাংঘাতিক! একবার ঘুরে গেলে, মাথা খুঁড়ে মরলেও তাকে আর ঠিক আগের মতো ফেরত পাওয়া যায় না।
এই প্রসঙ্গে বলা যায়, যে একদিন বিনামূল্যে তোমার হতে চেয়েছিল, তাকে আজ পৃথিবীর সর্বোচ্চ মূল্য পরিশোধ করেও তুমি আর নিজের মনের মতো করে পেতে পারবে না। কারণটা হল সময়। যে সময়ে সে তোমার কাছে মূল্যহীন হয়েছিল, সেই সময়ে সে নিজের কাছে হয়ে উঠেছিল অমূল্য। তার মূল্য পরিশোধ করার ক্ষমতা আজ আর তোমার নেই…
আজ আমি স্পষ্টবক্তা হয়েও অচেনা বৃত্তে নির্বাক কিংবা স্বল্পভাষী। প্রয়োজনে যেমন শব্দের বন্যা বইয়ে দিতে পারি, তেমনই সঠিক সময়ে সরে এসে নিপুণভাবে মেপে কথা বলার অভ্যাসও রপ্ত করেছি। তবে জীবনের একাধিক বসন্ত পেরিয়ে এসে কী পেলাম, এ প্রশ্ন যদি নিজেকে করি, তার উত্তরে বলতে হয়…. হাতেগোনা দু-একজন মানুষ সকলের অলক্ষ্যে লুকিয়ে থাকা আমার আসল “আমি”-কে ছুঁতে পেরেছে। আজকের দিনটাকে ঘিরে তাদের উন্মাদনা মনে রাখার মতো। হঠাৎ কথা প্রসঙ্গে মুঠোফোনের স্ক্রিনে ছোটখাটো বার্তা ভেসে আসে। “আসছে…. আসছে তোমার জন্মদিন। এই দিনটাকে ঘিরে যে কি পরিমাণ পাগলামি হবে, সে একমাত্র আমিই জানি।” এবার আমি যদি তার উত্তরে বলি, “এমন করিস কেন? অনেক দেরি আছে তো রে! সবে নভেম্বর মাস পড়ল!” তার উত্তরে স্ক্রিনে ভেসে আসে, “দুর্গাপুজোর প্রস্তুতি তো বিশ্বকর্মা পুজো থেকেই নেওয়া হয়…”
মনে লেগে যাওয়ার মতো যন্ত্রণাদায়ক কথা তো এই সংসারে অনেকেই বলে। সেই সংখ্যাটা বড্ড বেশি। কিন্তু আজীবন মনে থেকে যাওয়ার মতো কথা কতজন বলতে পারে? আর কিছু না হলেও, বিনা স্বার্থে নিখাদ ভালোবাসার জন্য এ জীবনে কিছু মানুষ আমি পেয়েছি। এই অহংকার আমার একার। বিচ্ছেদ ও বিস্মৃতির এই যুগে তাদের আমি হারাতে চাই না।
আজ নিজেকে মেলে ধরার দিন। তাই এই একটা দিনে নিজের সম্পর্কে কিছু কথা বলতে ইচ্ছে করে। বছরের বাকি দিনগুলোতে না হয় শামুকের কঠিন খোলের মতো আচ্ছাদনের ভিতরে নিজেকে আড়াল করে রাখব।
এখন নিজের লেখালিখির বাইরে সামাজিক মাধ্যমে তেমন কিছু লিখতে ইচ্ছে করে না। মানুষের সঙ্গে যোগাযোগ আগের চেয়ে অনেক কমিয়ে স্বেচ্ছায় খানিক অন্তর্মুখী হয়েছি। নীরব দৃষ্টিতে পরিস্থিতি বিশ্লেষণ করে মস্তিষ্কের অনুমোদনে যা বুঝেছি, যে সময়ে আমি সামাজিক মাধ্যমে এসেছিলাম, সেই সময়ের সঙ্গে আজকের সামাজিক মাধ্যমের পার্থক্য বিস্তর। আর বলা বাহুল্য, এই পার্থক্য উন্নতির নয়, বরং কিছুটা অধঃপতনের। এখানে এখন শত শত নীরব দৃষ্টি বিচারকের আসন অলংকৃত করে থাকেন। মানুষের আবেগের বহিঃপ্রকাশে সামান্যতম ভুল-ত্রুটি হলে তাঁরা দাঁত-নখ বের করে আছড়ে পড়বেন। মানুষ মানুষকে আর ভালোবাসতে চায় না। ঘৃণা ছড়িয়ে, বিপরীত দিকের মানুষকে ছোট করে আত্মশ্লাঘা অনুভব করে তৃপ্ত হতে চায়। এ একপ্রকার নৈতিক অধঃপতন, যার প্রভাব সুদূরপ্রসারী।
এই পরিবর্তনের সঙ্গে আমি নিজেকে ঠিক মানিয়ে নিতে পারিনা। তাই আজকাল সামাজিক মাধ্যমকে বুড়ি ছোঁয়ার মতো ছুঁয়ে থাকি, জুড়ে থেকেও খানিক দূরে থাকি। ভালোটা গ্রহণ করার চেষ্টায় থাকি, খারাপটা নিঃশব্দে বর্জন করে এড়িয়ে যাই। এখন এটা বুঝেছি, দীর্ঘ পোস্ট বা কমেন্ট সেকশনে যুদ্ধ করে প্রশ্ন করে কিংবা ব্যঙ্গ করে মানুষের মনের পরিবর্তন আনা সম্ভব নয়। সামগ্রিক পরিবর্তন নির্ভর করে তার পরিবার, নৈতিক শিক্ষা ও পারিপার্শ্বিকতার ওপর। সামাজিক মাধ্যম সাময়িক প্রভাব বিস্তার করলেও, এর কুপ্রভাবই বেশি। আর মানবমন সংশোধনের যে প্রকৃত ক্ষেত্র, সেই কঠিন ক্ষেত্রের সঙ্গে এই যুদ্ধক্ষেত্রের তেমন কোনও সম্পর্ক নেই।
ঘরে হোক, কিংবা বাইরে, নিজের মূল্য নিজেকেই নির্ধারণ করতে হয়। নিজেকে ভালো রাখার দায়িত্ব দিনশেষে একমাত্র নিজেরই। বয়স বাড়ছে। ধৈর্য আর বেঁচে থাকার সময় কমছে। আরও একটা জন্মদিন পেরিয়ে এক পা বাড়িয়ে দিলাম মৃত্যুর দিকে।
সময় ফুরিয়ে যাওয়ার ভয়ে আজকাল নিজেকে সময় দিই বেশি। মনের আনন্দে থাকি। আমি অনেক ভেবে দেখেছি, যে সকল মানুষ আমার জীবন বা ব্যক্তিগত পরিসরের সঙ্গে সরাসরি যুক্ত নয়, আমার শুভচিন্তক নয়, সর্বোপরি যাদের আমি নিজের বৃত্তে আসতে দিইনি, তাদের কাছে আমি আমার কোনোপ্রকার কৃতকর্মের জবাবদিহি করতে বাধ্য নই। এতে বৃথা সময় নষ্ট হয়। সেই সঙ্গে মানসিক শান্তিও বিঘ্নিত হয়। যতদিন কিপ্যাডের ওপর আঙুল চলছে, কেবল কর্মক্ষেত্র হিসেবে সামাজিক মাধ্যমে থেকে যেতে চাই…
কেবলই কি মন্দবাসা? ভালোবাসা নেই এখানে? এ প্রশ্নের উত্তরে বলতে হয়, সকাল থেকে একাধিকবার ফোন ও ডেস্কটপ হ্যাং হয়ে গেছে। কানের থেকে ফোন নামাতে না পেরে ভালোবাসার মানুষদের সঙ্গে ব্লুটুথে কথা বলেছি। এই প্রাপ্তিগুলোই আমাকে বুঝিয়ে দেয়, আজকের দিনটা আর পাঁচটা সাধারণ দিনের থেকে পৃথক ও বিশেষ।
23rd নভেম্বর মাঝরাতে লম্বা-চওড়া শুভেচ্ছাবার্তা টাইপ করে যারা ঘড়ির কাঁটার দিকে চেয়ে আকুল হয়ে রাত বারোটা বাজার অপেক্ষা করে, আমি তাদের জন্য কোনোদিনই বিশেষ কিছু করতে পারিনি। আজ একটা ছোট্ট লেখা তাদের জন্য লিখলাম। ধরে নিতে পারো, এত এত শুভেচ্ছাবার্তার বিনিময়ে এটা ক্ষুদ্র রিটার্ন গিফ্ট।
আমার ভালোবাসার মানুষদের উদ্দেশে বলি :
আমি যদি শব্দ দিয়ে দৃষ্টি আঁকি
তোর চোখে যেন সমুদ্র জন্ম নেয়
আমি যদি বাগানে একটা রক্তগোলাপ ফোটাতে পারি,
তোর ঠোঁটে যেন গোলাপ রঙ ছুঁয়ে যায়।
আমি যদি বার্ধক্যকে আলিঙ্গন করি
তোর স্পর্শ যেন জেদি বলিরেখা হয়ে আমাকে আঁকড়ে ধরে,
আমার ছাদের ঘুলঘুলি থেকে যদি উড়ে যায় সাধের চড়াই
তোর বুকের ভিতর যেন একশো বুলবুলি ডানা ঝাপটায়।
আমি যদি আনমনে স্পর্শ করি আমার রুক্ষ ওষ্ঠ
তোর অধর যেন তৃষ্ণার্ত হয়,
আমি যদি অন্ধকার আকাশের গায়ে বুনি আলোর চাদর
তোর একটা নির্ঘুম রাত যেন আমার একার হয়।
আমি যদি মনের ক্যানভাসে হৃদয় দেখি
তোর যেন হৃদস্পন্দন বেড়ে যায়;
আমি যদি মৃদু হেসে কলমের আঁচড়ে প্রেম লিখি
সেদিন তুই আমার কানে ঠোঁট ছুঁয়ে বলিস, ভালোবাসি…
~সাথী
আমার সকল ভালোবাসার মানুষকে আমিও মনপ্রাণ দিয়ে ভালোবাসি। 💜💚
জন্মদিনে ভালোবাসার ঠাস বুননে ঘেরা এই শাড়িটা আমাকে উপহার দিয়েছে দেবায়ন মুখার্জী। 🌟❤️
আজ আমার পেজে ও প্রোফাইলে একটু চোখ রেখো। থাকছে তোমাদের জন্য একটা বিশেষ চমক। আমি এক কথার মানুষ। বছর ফুরিয়ে যাওয়ার আগে কথা দিয়ে কথা রাখার সময় হয়েছে যে… 🥰
সম্পাদক : সৈয়দ আমিরুজ্জামান
ইমেইল : rpnewsbd@gmail.com
মোবাইল +8801716599589
৩১/এফ, তোপখানা রোড, ঢাকা-১০০০।
© RP News 24.com 2013-2020
Design and developed by M-W-D