সিলেট ২রা জুলাই, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ | ১৮ই আষাঢ়, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
প্রকাশিত: ১:৪১ অপরাহ্ণ, নভেম্বর ২৬, ২০২৩
নিজস্ব প্রতিবেদক | ঢাকা, ২৬ নভেম্বর ২০২৩ : আসন্ন দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ১৪ দলের অন্যতম শরীক দলগুলোসহ অন্যান্যদের মধ্যে কাকে কতটি আসনে ছাড় দেবে আওয়ামী লীগ, সে সমঝোতা হবে শেষ মুহূর্তে। ভোটে অংশ নেওয়া বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের প্রার্থীর দক্ষতা ও যোগ্যতা, স্থানীয় পর্যায়ে তাদের গ্রহণযোগ্যতা এবং জনপ্রিয়তা বিবেচনায় নিয়ে আসন বণ্টন নিয়ে আলোচনায় বসবে তারা। এর আগে সংশ্লিষ্ট দলগুলোর মাঠপর্যায়ের ভিত্তি, সক্ষমতা এবং সামর্থ্যরে বিষয়টিও পরখ করে দেখতে চায় ক্ষমতাসীনরা।
বিএনপি-জামায়াতসহ শরিক ও সমমনা দলগুলো নির্বাচনে না আসার বিষয়ে এখনও অনড়।
বিগত তিনটি সংসদ নির্বাচনেই (নবম, দশম ও একাদশ) আওয়ামী লীগ জোটের পাশাপাশি আসন সমঝোতা করে অংশ নেয়। এরমধ্যে ২০০৮ সালের ২৯ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে তারা প্রথমবারের মতো ১৪ দল জোটগতভাবে অংশ নেয়।
ওই নির্বাচনের একেবারে শেষ মুহূর্তে জাতীয় পার্টি আওয়ামী লীগের সঙ্গে জোটভুক্ত হয়, যা পরে মহাজোটে রূপ নেয়। দেশের অন্যতম বৃহৎ রাজনৈতিক দল বিএনপি নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশ নিলেও খুব একটা সুবিধা করতে পারেনি। পরে ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারি অনুষ্ঠিত দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনেও ১৪ দল জোটগতভাবে অংশ নেয় আওয়ামী লীগ। অপরদিকে জাতীয় পার্টি আলাদাভাবে ভোটে অংশ নেয়। ওই নির্বাচনেও শেষ মুহূর্তে এসে আসন সমঝোতা করে আওয়ামী লীগ এবং জাতীয় পার্টি।
সর্বশেষ ২০১৮ সালের ৩০ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনেও আওয়ামী লীগ ১৪ দলগতভাবে অংশ নেয়। এর বাইরে জাতীয় পার্টি এবং বিকল্পধারা বাংলাদেশের সঙ্গে আসন সমঝোতা করে দলটি। জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের ব্যানারে বিএনপি একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশ নেয়। মাত্র ৮টি আসন নিয়েই সন্তুষ্ট থাকতে হয় তাদের। জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের আরেক শরিক দল গণফোরাম পায় দুটি আসন। এরমধ্য দিয়ে টানা দ্বিতীয়বারের মতো প্রধান বিরোধী দলের আসনে বসে জাতীয় পার্টি।
রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, শেষ মুহূর্তে এসে মাঠের বিরোধী দল বিএনপি আসন্ন দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশ নিলে আওয়ামী লীগের রাজনৈতিক কৌশল একরকম হবে। আর বিএনপি শেষ পর্যন্ত ভোটে অংশ না নিলে ক্ষমতাসীনদের নির্বাচনি কৌশল আরেক রকম হবে। তবে যেরকমই হোক না কেন-আওয়ামী লীগ এবারও ১৪ দলীয় জোটগতভাবেই দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশ নেবে।
এই জোটের অন্যতম শরিক দল বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টি, জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল-জাসদ, জাতীয় পার্টি-জেপি এবং বাংলাদেশ তরিকত ফেডারেশনকে আসন ছাড় দেবে আওয়ামী লীগ। শরিকদের বাইরে অতীতের মতোই আগামী নির্বাচনে জাতীয় পার্টি এবং বিকল্পধারা বাংলাদেশের সঙ্গে আসন সমঝোতা করবে দলটি। এর বাইরে তৃণমূল বিএনপি, বাংলাদেশ ন্যাশনালিস্ট মুভমেন্ট (বিএনএম), বাংলাদেশ কল্যাণ পার্টিসহ আরও কয়েকটি দলের সঙ্গে নেপথ্যে আসন সমঝোতার বিষয়টিও রাজনীতির অন্দরমহলে আলোচিত হচ্ছে।
এ প্রসঙ্গে প্রবীণ রাজনীতিবিদ, আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য ও ১৪ দলীয় জোটের প্রধান সমন্বয়ক আমির হোসেন আমু বলেন, ১৪ দলীয় জোট একটি আদর্শিক জোট। আমরা বিগত তিনটি নির্বাচন ১৪ দলীয় জোটগতভাবে করেছি। আগামী নির্বাচনও ১৪ দলগতভাবে করব। এর আগে ১৪ দলীয় জোটের শীর্ষ নেতাদের বৈঠকেও বঙ্গবন্ধুকন্যা ও আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা এমনটাই বলেছেন। নিশ্চয়ই তিনি এ বিষয়ে তার সিদ্ধান্ত জানাবেন। হাতে এখনও সময় আছে, তাই তাড়াহুড়ার কিছু নেই।
জোট গঠন এবং আসন ভাগাভাগির বিষয়ে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের ধানমন্ডির কার্যালয়ে গণমাধ্যমকর্মীদের বলেন, আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা ১৪ দলীয় জোটের চেয়ারম্যান। আমরা শরিকদের বিষয়ে এখনও কিছু ঠিক করিনি। কারণ জোটের বিপরীতে জোট হয়। এখানে আমাদের প্রতিপক্ষ যদি একটা বড় জোট করে, সেখানে এর বিপরীতে আমাদের জোট হবে। তাছাড়া আমরা কেন অহেতুক জোট করতে যাব। প্রয়োজন না থাকলে জোট করব না।
জানতে চাইলে এ প্রসঙ্গে আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন ১৪ দলীয় জোটের অন্যতম প্রধান শরিক জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল-জাসদ সভাপতি হাসানুল হক ইনু বলেন, আওয়ামী লীগসহ ১৪ দল মিলে জোটগতভাবেই আসন্ন সংসদ নির্বাচনে আমরা অংশ নেব। সে অনুযায়ী আসন ভাগাভাগির বিষয়টি চূড়ান্ত করা হবে। এখন প্রাথমিক আলাপ-আলোচনা চলছে। মনোনয়নপত্র প্রত্যাহারের আগ মুহূর্তে এ বিষয়টি চূড়ান্ত হবে।
এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে জাতীয় পার্টির মহাসচিব মো. মুজিবুল হক চুন্নু বলেন, আমরা জোট-মহাজোটে নেই। আমরা এককভাবে নির্বাচনের প্রস্তুতি নিচ্ছি। ৩০০ আসনেই প্রার্থী দেব আমরা। তিনি আরও বলেন, আমরা চাই অবাধ, সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ নির্বাচন। মানুষ নির্বিঘ্নে ভোট কেন্দ্রে গিয়ে পছন্দের প্রার্থীকে ভোট দিতে পারলে আমরা সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জন করব বলে মনে করি। কারণ এদেশের মানুষ পরিবর্তন চায়। তারা মনে করে জাতীয় পার্টি দেশে সুশাসন দিতে পারবে। জিনিসপত্রের দাম নাগালের মধ্যে রাখতে পারবে।
সংশ্লিষ্টদের মতে, বর্তমান একাদশ জাতীয় সংসদে জাতীয় পার্টি, বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টি, জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল-জাসদ, জাতীয় পার্টি-জেপি, বাংলাদেশ তরিকত ফেডারেশন এবং বিকল্পধারা বাংলাদেশের যেসব আসন রয়েছে, সেগুলোতে ছাড় দেবে আওয়ামী লীগ। ইতোমধ্যে এমন আভাসও দেওয়া হয়েছে এসব দলের শীর্ষ নেতাদের।
আজ আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে আসন্ন সংসদ নির্বাচনের জন্য ৩০০ আসনে দলীয় প্রার্থীর নাম ঘোষণা করা হয়েছে। সংশ্লিষ্ট একাধিক সূত্র জানিয়েছে, যেসব আসনে আওয়ামী লীগের শরিক দলের সংসদ-সদস্য রয়েছেন সেগুলো বাদ দিয়ে বাকি আসনের তালিকা প্রকাশ করবে ক্ষমতাসীনরা। জোট এবং সমঝোতার পথ খোলা রাখতেই এটা করা হতে পারে। তবে এই সমঝোতা হবে ভোটের ঠিক আগ মুহূর্তে মনোনয়নপত্র প্রত্যাহারের কাছাকাছি সময়ে।
১৪ দলীয় জোটভুক্ত একটি দলের শীর্ষ নেতা এ প্রসঙ্গে বলেন, যদি এখনই ৩০০ আসনে আওয়ামী লীগ তাদের চূড়ান্ত প্রার্থীর নাম ঘোষণা করে, তবে শরিক দলের প্রার্থীরা হতাশ হয়ে নির্বাচনি মাঠ ছেড়ে দেবে। একই সঙ্গে শরিক দলগুলোর সঙ্গে দীর্ঘদিনের সম্পর্ক সন্দেহ-অবিশ্বাসসহ নতুন করে টানাপোড়েন তৈরি হবে। এমনকি শেষ মুহূর্তে নির্বাচনে অংশ নেওয়ার সিদ্ধান্তে আসা জাতীয় পার্টিও বিষয়টি ইতিবাচকভাবে নেবে না। ওই নেতার মতে, আসন্ন নির্বাচনে শরিকদের সঙ্গে সম্পর্ক ফাটল ধরানোর ঝুঁকি আওয়ামী লীগ নিতে চাইবে বলে মনে হয় না।
নির্বাচন কমিশনের (ইসি) ঘোষিত তফশিল অনুযায়ী ৭ জানুয়ারি দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। ৩০ নভেম্বর মনোনয়নপত্র জমা দেওয়ার শেষ তারিখ। মনোনয়নপত্র বাছাই হবে ১ থেকে ৪ ডিসেম্বর। প্রার্থিতা প্রত্যাহারের শেষ তারিখ ১৭ ডিসেম্বর। পরদিন ১৮ ডিসেম্বর প্রতীক বরাদ্দ করা হবে। এবারের নির্বাচনে সারা দেশে মোট ভোটার ১১ কোটি ৯৬ লাখ ৯১ হাজার ৬৩৩ জন। ২ নভেম্বর সংসদ নির্বাচনের চূড়ান্ত ভোটার সংখ্যা প্রকাশ করে ইসি। তাদের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, মোট ভোটারের মধ্যে পুরুষ ৬ কোটি ৭ লাখ ৭১ হাজার ৫৭৯ জন ও নারী ৫ কোটি ৮৯ লাখ ১৯ হাজার ২০২ জন। আর হিজড়া ভোটারের সংখ্যা ৮৫২।
ইতোমধ্যে আওয়ামী লীগ এবং তাদের ১৪ দলীয় জোটের শরিকরা পুরোদমে নির্বাচনি প্রস্তুতি শুরু করেছে। প্রার্থী বাছাইও প্রায় শেষ। বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টি ও জাসদ প্রার্থীর নাম ঘোষণা দিয়েছে। আজ ক্ষমতাসীন দল নাম ঘোষণা করেছে। প্রধান বিরোধী দল জাতীয় পার্টিও প্রার্থীদের সাক্ষাৎকার নিচ্ছে। সব মিলে ভোটের প্রস্তুতি চলছে জোরেশোরেই। এর বাইরে নতুন নিবন্ধন পাওয়া দুই রাজনৈতিক দল তৃণমূল বিএনপি এবং বাংলাদেশ ন্যাশনালিস্ট মুভমেন্ট (বিএনএম) ভোটের রাজনীতিতে চমক দেখনোর জন্য অব্যাহত রেখেছে নিজেদের চেষ্টা।
দীর্ঘদিন সরকারবিরোধী আন্দোলনে থাকা বাংলাদেশ কল্যাণ পার্টিসহ তিনটি রাজনৈতিক দল মিলে ‘যুক্তফ্রন্ট’ নামে নতুন জোট গঠন করে নির্বাচনে অংশ নেওয়ার ঘোষণা দিয়ে বেশ নাটকীয়তার জন্ম দিয়েছে। নবগঠিত এই জোটের বাকি দুটি দল হচ্ছে-জাতীয় পার্টি (মতিন), বাংলাদেশ মুসলিম লীগ (বিএমএল)। ভোটের রাজনীতিতে প্রভাব না থাকলেও তিনটি দলই ইসিতে নিবন্ধিত।
লিবারেল ইসলামিক জোট এবং প্রগতিশীল ইসলামিক জোটের ব্যানারে ইসলামপন্থি আরও বেশকিছু রাজনৈতিক দল এখন নির্বাচনমুখী। ইসির তথ্যানুযায়ী, নিবন্ধিত ৪৪টি রাজনৈতিক দলের মধ্যে এখন পর্যন্ত অন্তত ২৬টি দল ৭ জানুয়ারির জাতীয় নির্বাচনে অংশ নেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। সময় যত গড়াবে, এই সংখ্যা আরও বাড়তে পারে-এমন সম্ভাবনার কথাও বলা হচ্ছে নানা মহল থেকে।
তবে মাঠের প্রধান বিরোধী দল বিএনপিসহ তাদের শরিক গণতন্ত্র মঞ্চ, ১২ দলীয় জোটসহ বিরোধী বলয়ে থাকা একটি বড় অংশ নির্বাচনে না যাওয়ার প্রশ্নে এখনও অনড়। ধর্মভিত্তিক এবং ইসলামপন্থি রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে প্রভাবশালী বলে বিবেচিত জামায়াতে ইসলামী, ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ, বাংলাদেশ খেলাফত মজলিস, জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম এবং বাংলাদেশ খেলাফত মজলিসও ভোট বর্জনের পক্ষে নিজেদের শক্ত অবস্থানের কথা এখনও জানান দিয়ে যাচ্ছে। বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টি (সিপিবি), বাংলাদেশের সমাজতান্ত্রিক দলসহ (বাসদ) বাম প্রগতিশীল ঘরানার একটি বড় অংশ নির্বাচনে অংশ নেবে না বলে জানিয়ে দিয়েছে।
বিএনপি ও অন্যান্য বিরোধী দলের বর্জনের মধ্যে ২০১৪ সালের নির্বাচনে ১২টি দল অংশ নেয়। ২০১৮ সালের নির্বাচনে ৩৯টি দল অংশ নিলেও ব্যাপক অনিয়মের অভিযোগ তুলে ফলাফল প্রত্যাখ্যান করে বিরোধীরা। আওয়ামী লীগ সরকারের অধীনে নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে অনিচ্ছুক হওয়ায় এবার বিএনপিসহ ১৪টি রাজনৈতিক দল নির্বাচনে অংশ না নেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। তবে চারটি দল এখনও নির্বাচনে অংশ নেওয়ার বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেয়নি। শেষ মুহূর্তে তারাও নির্বাচনে অংশ নিতে পারে-এমন আভাস পাওয়া গেছে।
সম্পাদক : সৈয়দ আমিরুজ্জামান
ইমেইল : rpnewsbd@gmail.com
মোবাইল +8801716599589
৩১/এফ, তোপখানা রোড, ঢাকা-১০০০।
© RP News 24.com 2013-2020
Design and developed by M-W-D