সিলেট ১৪ই অক্টোবর, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ | ২৯শে আশ্বিন, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
প্রকাশিত: ১২:৩৯ পূর্বাহ্ণ, জুন ৩, ২০২৪
শুধু দেশ ও জনগণের পক্ষে দৈনিক ইনকিলাব পদার্পণ করলো ৩৯ বছরে। দেশের সংবাদপত্র জগতে পরিবর্তনের নিজস্ব ‘ভিশন’ নিয়েই আবির্ভাব ঘটেছে পত্রিকাটির।
ইনকিলাবের পথচলায় অঙ্গিকারের ব্যত্যয় ঘটায়নি। এগিয়ে চলার পথে কখনোই নীতির প্রশ্নে আপোষ করেনি পত্রিকাটি। পাঠকের কাছে প্রমাণ করেছে ইনকিলাব ‘শুধু দেশ ও জনগণের পক্ষে’। তাইতো ‘ইনকিলাব’ হয়ে গেছে এ দেশের মাটি ও মানুষের হৃদয়ের কণ্ঠস্বর।
ইনকিলাব পাঠকের আকাঙ্ক্ষাকেই তুলে ধরছে পত্রিকার পাতায় পাতায়। জাতীয় উন্নয়ন ও অগ্রগতির সব অর্জনকে সঠিকভাবে তুলে ধরছে সবসময়ই।
সিনিয়র সাংবাদিক ও বিশিষ্ট কলামিস্ট সৈয়দ আমিরুজ্জামান এক নিবন্ধে লিখেছেন, “গণমাধ্যমকে বলা হয় রাষ্ট্রের চতুর্থ স্তম্ভ। অপর তিনটি স্তম্ভ হচ্ছে, আইনসভা, বিচার বিভাগ ও নির্বাহী বিভাগ। বোঝাই যাচ্ছে গণমাধ্যমের গুরুত্ব ও অবস্থান কোথায়! জনস্বার্থ অভিমুখী মুক্ত গণমাধ্যম ছাড়া একটি গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র পূর্ণতা পায় না। সরকার ও প্রশাসনের অসঙ্গতি ধরিয়ে দেওয়াসহ জনগণের সংগ্রামের সহযোদ্ধা হিসেবে গণমাধ্যমকে অতন্দ্র প্রহরীর ভূমিকা পালন করতে হয়।
আসলে গণমাধ্যম হচ্ছে জনগণের সংগ্রামের সহযোদ্ধা, নীতি-আদর্শের যৌথ প্রচারক ও যৌথ আন্দোলনকারী, জনস্বার্থ ও রাষ্ট্রের পাহারাদার। গণমাধ্যমই সঠিক পথ বাতলে দেয় যাতে সরকার, প্রশাসন ও জনগণ সঠিক পথে পরিচালিত হতে পারে। গণমাধ্যম সরকার, প্রশাসন ও জনগণের প্রতিপক্ষ নয়; তবে জনস্বার্থে নজরদারী করবে। কাজেই বলিষ্ট ও শক্তিশালী গণমাধ্যম ছাড়া জনস্বার্থের রাষ্ট্রব্যবস্থা শক্ত ভিত্তির ওপর দাঁড়াতে পারে না।
রাষ্ট্রের অন্য তিনটি স্তম্ভ নড়বড়ে হয়ে গেলেও চতুর্থ স্তম্ভ শক্ত থাকলে রাষ্ট্রকে গণমুখী রাখা যায়। আর চতুর্থ স্তম্ভ নড়বড়ে হলে রাষ্ট্রব্যবস্থা গণবিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ে, রাষ্ট্র বিপদগ্রস্ত হয়।
আমি ব্যক্তিগতভাবে খুব আশাবাদী মানুষ। আঁধার কেটে নিশ্চয়ই আলো আসবে। কিন্তু সেটা কি প্রকৃতির নিয়মে হবে? কাউকে না কাউকে ভূমিকা পালন করতে হয়।
সাংবাদিকতায় ঝুঁকি থাকবেই। সজাগ ও সচেতন থাকলে সৎ ও নিষ্ঠাবান সাংবাদিকরা হারিয়ে যাবেনা। সাংবাদিকতার ডিকশনারি থেকে সততা ও পেশাদারিত্ব শব্দ দুটি কখনই বিলীন হবে না। সেখানে অসৎ আর হলুদ সাংবাদিকতার স্থান নেই।
একটু খেয়াল করলে দেখবেন, হলুদ সাংবাদিকতার ভয়ে মানুষ তটস্থ।
হলুদ সাংবাদিকদের কারণে এখন প্রবাদটির নতুন সংস্করণ হয়েছে। এখন বলা হচ্ছে, বাঘে ছুঁলে আঠারো ঘা, হলুদ সাংবাদিকরা ছুঁলে ৭২ ঘা। কেউ বিশ্বাস করুন বা না করুন পরিস্থিতিটা এমনই দাঁড়িয়েছে।
অনেকে বলেন, হলুদ সাংবাদিকদের দাপট অনেক বেশি। যদিও পেশাদার ও সৎ সাংবাদিকরাই সবচেয়ে বেশি মর্যাদাবান ও আদর্শিক।
পেশাদার ও সৎ সাংবাদিকরাই টিকে থাকবেন। যারা টিকে আছেন তাদের অভিবাদন জানাই। তারা সত্যি সত্যিই এই পেশাকে ব্রত হিসেবে নিয়েছেন।
আমার মনে হয়, সৎ ও পেশাদার সাংবাদিকরা সব চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করে টিকে থাকবে।
যারা নিষ্ঠা ও সততার সঙ্গে সাংবাদিকতার মতো মহান পেশাকে ব্রত হিসেবে নিতে চান তারাই টিকে থাকবেন। সবাইকে দিয়ে এই কাজ হবে না।
এ কথা এ কারণে বলছি যে, সততা, নিষ্ঠা ও পেশাদারিত্ব ছাড়া সুসাংবাদিকতা হয় না। আগে মনেপ্রাণে এই তিনটি বিষয় ধারণ করতে হবে।
সাংবাদিকতা পেশার সামগ্রিক স্বার্থেই বিষয়গুলো নিয়ে ভাবতে হবে।
কারও বিরুদ্ধে কোনো অভিযোগ পেলেই লিখে দিতে হবে তা মোটেই গ্রহণযোগ্য নয়। ভালোভাবে যাচাই করতে হবে। একজন রিপোর্টারের কলমের খোঁচায় অনেক বড় ক্ষতি হতে পারে। আবার অনেক বড় উপকারও হতে পারে। মানুষের উপকারের বিষয়টিই আমাদের মাথায় রাখতে হবে। দেশ ও দেশের মানুষের মঙ্গল সাধনই তো সাংবাদিকদের কাজ।”
ইনকিলাবের ৩৮তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী ও ৩৯ বছর পদার্পণে সকলকে অফুরন্ত শুভেচ্ছা।
ইনকিলাবের প্রতিষ্ঠাকালে দেশে তখন এতো সংবাদপত্র ছিল না। ছিল না তথ্য প্রযুক্তির এতো অবাধ প্রবাহ। প্রখ্যাত ইসলামী চিন্তাবিদ মাওলানা এম এ মান্নান (রহ.) প্রতিষ্ঠা করেন দৈনিক ইনকিলাব। ইনকিলাব অর্থ বিপ্লব। সত্যিই ইনকিলাব দেশের সংবাদপত্র শিল্পে বিপ্লব ঘটিয়েছে।
তথ্য ও যোগাযোগ মাধ্যমে দেশে বিপ্লব ঘটেছে। প্রিন্ট মিডিয়ার পাশাপাশি দেশে অসংখ্য টেলিভিশন মিডিয়া প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। গড়ে উঠেছে শত শত অনলাইন গণমাধ্যম। এসব গণমাধ্যম প্রতিদিন খবর প্রচার করছে। এছাড়াও তথ্য আদান প্রদানে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুক, টুইটারও জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে। এসবের ভীড়ে ইনকিলাব নিরপেক্ষভাবে সংবাদ প্রচার, খবরের পেছনের খবর প্রচারে স্বাতন্ত্র্য বৈশিষ্ট্য রক্ষা করেই প্রকাশনা অব্যাহত রেখেছে।
‘শুধু দেশ ও জনগণের পক্ষে’ স্লোগান নিয়ে ইনকিলাব ইনসানিয়াত ও ইসলামী মূল্যবোধের ভিত্তিতে নিরন্তর এগিয়ে চলছে। ইনকিলাব থেমে থাকেনি; আপোষহীনভাবেই এগিয়ে চলেছে। কর্পোরেট সাংবাদিকতার যুগে অনেকে টিকে থাকার স্বার্থে স্রোতে গা ভাসিয়েছে; কখনো কখনো কর্পোরেট হাউজের ঢাল হিসেবে ব্যবহৃত হয়েছে। কিন্তু ইনকিলাব সেই স্রোতে গা ভাসায়নি। মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ‘মানবিক মর্যাদা, সমতা ও সামাজিক ন্যায় বিচার’ প্রতিষ্ঠায় অবিচল থেকেছে। দেশের স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্ব রক্ষা এবং জাতীয় স্বার্থ ও গণমানুষের ন্যায়সঙ্গত অধিকারের পক্ষে ‘খবর প্রচারে’ সোচ্চার থেকে পাঠক মহলে প্রশংসা কুড়িয়েছে।
সম্পাদক এ এম এম বাহাউদ্দীনের নেতৃত্বে যে অঙ্গিকার নিয়ে যাত্রা শুরু করে দৈনিক ইনকিলাব; সংবাদ প্রচার ও মানুষের অধিকার আদায়ের ক্ষেত্রে সে তা আজো অটুট রেখেছে। বিগত শতকের আশির দশকে লেখাপড়া শেষ করে অন্য পেশায় না গিয়ে সাংবাদিকতায় নিজেকে উৎসর্গ করেছেন এ এম এম বাহাউদ্দীন। তাঁর দৃঢ়তায় দৈনিক ইনকিলাব ইসলামী মূল্যবোধকে সামনে রেখে সমাজ বিনির্মাণের চেষ্টা অব্যাহত রেখেছেন।
ইনকিলাবের নির্বাহী সম্পাদক ফাহিমা বাহাউদ্দীন পিতার পথ ধরেই সাংবাদিকতায় যুক্ত থেকেছেন। তিনিও দৃঢ়চেতা ও সমাজ সচেতন এবং নতুন প্রজন্মের প্রতিনিধিত্ব করছেন। তিনি প্রযুক্তিকে কাজে লাগিয়ে ইনকিলাবের অনলাইন ভার্সনকে সময়োপযোগী করে সাজিয়েছেন। ইনকিলাবের পাঠক কী চায়, তা নিয়ে গবেষণা করে সেভাবেই অনলাইন ভার্সনে সংবাদ প্রকাশ করছেন। তার দেশজ সংস্কৃতির প্রতি অনুরক্ত, দেশপ্রেমের সুচিন্তিত কমিটমেন্টে লাখ লাখ পাঠক দৈনিক ইনকিলাব ‘অনলাইন সংস্করণ’ নিয়মিত পড়ছেন।
ইনকিলাব খবর প্রচারে নিজস্ব কমিটমেন্ট রক্ষা করে চলেছে। সংবাদ প্রচারে খবরের সত্যতা, বস্তুনিষ্ঠতার প্রতি জোর দিয়েই খবর প্রচার করছে। সংবাদ প্রচারে দেশজ সংস্কৃতির প্রবহমান স্রোতধারার কৃষ্টি-কালচারকেই প্রাধান্য দিয়ে যাচ্ছে।
সারাবিশ্বে প্রিন্ট মিডিয়া সঙ্কটে পড়ে গেছে। দেশের বিপুল সংখ্যক পাঠক ইনকিলাব নিয়মিত পড়ছেন।
তথ্য-প্রযুক্তির বদৌলতে খবর এখন সহজলভ্য। টিভির রিমোট টিপলেই তাৎক্ষণিক তাজা খবর; মোবাইল টিপলেই অনলাইনের খবর পাওয়া যায়। তবে প্রিন্ট মিডিয়ার চাহিদা, গুরুত্ব ও প্রাসঙ্গিকতা ফুরিয়ে যায়নি। কিন্তু বস্তুনিষ্ঠতা, খবরের পেছনের খবর এবং খবরের নিরপেক্ষতার কারণে ইনকিলাব এখনো পাঠকদের কাছে সমাদৃত। প্রতিদিনের ইভেন্টের পাশাপাশি দেশের রাজনীতি, অর্থনীতি, সংস্কৃতি, খেলাধূলা, শিক্ষা, তথ্য-প্রযুক্তি, স্বাস্থ্যসেবা-চিকিৎসা, প্রবন্ধ-নিবন্ধ, মতামত, বিশ্লেষণ, শিক্ষাঙ্গন, সমাজ জীবন, সারা দুনিয়ার চালচিত্রের খবর সব শ্রেণীর দেশি বিদেশেী পাঠকের জন্য তুলে ধরছে নিরলসভাবে।
ইনকিলাব নীতির মধ্যে থেকেই সংবাদ প্রচারে বৈচিত্রময়তায় সব শ্রেণির পাঠকের মধ্যে তৈরি করেছে সেতুবন্ধন। পত্রিকাটি প্রতিষ্ঠার পর থেকে চিন্তায়, চেতনায়, কর্মে পরিবর্তনশীল বিশ্ব ও বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে যা কিছু সত্য, সুন্দর, ভালো, মহৎ, জনকল্যাণকর এবং দেশ-জনগণের জন্য ইতিবাচক সেগুলো প্রচারে প্রাধান্য দিয়ে যাচ্ছে।
ইনকিলাব নীতির ব্যাপারে আপোষ না করেও যুগ ও সময়ের চাহিদার সঙ্গে তাল মিলিয়ে এগিয়ে চলেছে। কাগজে মূদ্রিত পত্রিকার পাশাপাশি অনলাইন ভার্সন প্রকাশ করেছে। অনলাইন ভার্সনে পত্রিকাটি পাঠক মহলে সমাদৃত হয়েছে। ইনকিলাব পাঠক মহলে আস্থার প্রতীক হয়ে উঠেছে তা বিভিন্ন খবর প্রচারের পর সেসব খবর নিয়ে পাঠকদের মতামত প্রকাশে বোঝা যায়।
ইনকিলাবের পাতায় পাতায় পাঠক নিজস্বতা খুঁজে পান; দেখেন দেশবিদেশের খবরের পাশাপাশি ভূগোল, ইতিহাস, সমাজচিত্রসহ বাংলাদেশের গ্রামগঞ্জ-শহর-বন্দরের প্রসারিত রূপ। খবর প্রকাশ ও প্রচারে সময়ের সঙ্গে তাল মিলিয়েছে ঠিকই; কিন্তু তাল মেলাতে গিয়ে কখনো খেই হারায়নি; নিজস্বতাকে বিসর্জন দেয়নি। সরকারের ভাল কাজের প্রশংসা এবং মন্দ কাজের গঠনমূলক সমালোচনা করার সম্পাদকীয় নীতি গ্রহণ করেছে।
রাজনৈতিক ও সামাজিক সঙ্কট এবং বৈশ্বিক অতিমারী করোনাকালেও ইনকিলাব দেশের মানুষকে দেখিয়ে গেছে পথের দিশা।
দেশের পরিবর্তনশীল রাজনীতির বাঁকে বাঁকে ইনকিলাব কার্যত ঐতিহাসিক ভূমিকা পালন করেছে। খবর প্রচারে দেশের স্বাধীনতা সার্বভৌমত্বকে প্রাধান্য দিয়েছে; সমাজ, ধর্ম-বর্ণ-ভাষা-নৃতাত্ত্বিক-রাজনৈতিক-দেশজ সংস্কৃতিক পরিচিতি, গণতান্ত্রিক শাসন, মানবিকতার প্রতি সম্মান জানিয়েছে। জনগণের অধিকারের প্রতি সম্মান জানাতেই সরকারের ধারাবাহিক উন্নয়ন চিত্র তুলে ধরা, সরকারের ভাল কাজে উৎসাহিত করা এবং খারাপ কাজে নিরুৎসাহিত করার চেষ্টা অব্যাহত রেখেছে গঠনমূলকভাবেই। শুধু খবরাখবর প্রচারের সংবাদপত্র নয়; ইনকিলাব প্রমাণ করেছে গণমাধ্যম মানে পাঠকদের কাছে আরো শিক্ষণীয় কিছু।
ইনকিলাবের পাশে রয়েছেন পাঠকরা। অগণিত পাঠকের সিক্ত ভালোবাসা, আস্থা ও বিশ্বাস ইনকিলাবের অন্তহীন কর্ম-প্রচেষ্টায় চলার পথে আরো সাহস ও অনুপ্রেরণা যোগাবে নিশ্চয়ই। আর তাইতো ইনকিলাব ‘শুধু দেশ ও জনগণের পক্ষে’ ছিল, আছে ও থাকবে।
সম্পাদক : সৈয়দ আমিরুজ্জামান
ইমেইল : rpnewsbd@gmail.com
মোবাইল +8801716599589
৩১/এফ, তোপখানা রোড, ঢাকা-১০০০।
© RP News 24.com 2013-2020
Design and developed by ওয়েব নেষ্ট বিডি