বায়ু ও শব্দ দূষণমুক্ত বাসযোগ্য শহর গড়তে যুবকদের এগিয়ে আসার আহ্বান সৈয়দা রিজওয়ানা হাসানের

প্রকাশিত: ৫:৪৫ অপরাহ্ণ, অক্টোবর ৩১, ২০২৪

বায়ু ও শব্দ দূষণমুক্ত বাসযোগ্য শহর গড়তে যুবকদের এগিয়ে আসার আহ্বান সৈয়দা রিজওয়ানা হাসানের

Manual1 Ad Code

বিশেষ প্রতিনিধি | ঢাকা, ৩১ অক্টোবর ২০২৪ : বায়ু ও শব্দ দূষণমুক্ত দূষণমুক্ত বাসযোগ্য শহর গড়তে যুবকদের এগিয়ে আসার আহ্বান জানিয়েছেন পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়ের মাননীয় উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান।

বায়ুমন্ডলীয় দূষণ অধ্যয়ন কেন্দ্র (ক্যাপস) এবং ওয়ার্ল্ড ভিশন বাংলাদেশ-এর যৌথ আয়োজনে “Youth leading climate and local action for cities” শীর্ষক একটি যুব সংলাপে প্রধান অতিথির বক্তৃতায় তিনি এ আহবান জানান।

বিশ্ব শহর দিবস-২০২৪ উপলক্ষে বৃহস্পতিবার (৩১ অক্টোম্বর ২০২৪) সকালে ডেইলী স্টারের এ. এস. মাহমুদ সেমিনার হলে এক যুব সংলাপ অনুষ্ঠিত হয়।

ওয়ার্ল্ড ভিশন বাংলাদেশের সিনিয়র ডিরেক্টর চন্দন জেড. গোমেজের সভাপতিত্বে উক্ত যুব সংলাপে বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভূগোল ও পরিবেশ বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. এম শহীদুল ইসলাম, ইন্সটিটিউট অব আর্কিটেক্টস বাংলাদেশ (আইএবি)-এর ভাইস প্রেসিডেন্ট অধ্যাপক মোহাম্মদ আলী নকী এবং বায়ুমন্ডলীয় দূষণ অধ্যয়ন কেন্দ্র (ক্যাপস)-এর চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. আহমদ কামরুজ্জমান মজুমদার। শুভেচ্ছা বক্তব্য প্রদান করেন ওয়ার্ল্ড ভিশন বাংলাদেশ-এর ডেপুটি ডিরেক্টর মঞ্জু মারিয়া পালমা এবং সংলাপে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন ওয়ার্ল্ড ভিশন বাংলাদেশ-এর শিশু সদস্য ফাতেমা ইসলাম তাঁজ।

মোঃ মোস্তাফিজুর রহমান (যুব ফোরাম সদস্য) এর সঞ্চালনায় সংলাপে উপস্থিত যুবক-যুবতি, শিশু এবং অতিথিবৃন্দ প্রশ্নোত্তর পর্বে স্বতঃস্ফূর্ত অংশগ্রহণ করেন। ঢাকা শহরে শুধুমাত্র জলবায়ু পরিবর্তন জনিত সমস্যাই নয়, শহরটি অগ্নিকাণ্ড ও ভূমিকম্পের মতো বিপর্যয়ের ক্ষেত্রে বেশ উচ্চ ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে। ঘনবসতিপূর্ণ এই শহরে অনেক ভবন নির্মাণকাজে বিল্ডিং কোড অনুসরণ না করায় বিপদ আরও বেড়ে গিয়েছে। নিম্নবিত্তদের ঠাই হচ্ছে শহরের সবচেয়ে ঘনবসতির এলাকায়। এই বিষয়গুলো নিয়ে যুবরা তাদের সুপারিশসহ প্রশ্নসমূহ তুলে ধরেন এবং অতিথিবৃন্দ পর্যায়ক্রমে এক একজন করে যুবদের প্রশ্নের উত্তর প্রদান করেন।

প্রশ্নোত্তরপর্বে অংশগ্রহণ করেন, ইকো নেটওয়ার্ক গ্লোবাল এর প্রোগ্রাম ম্যানেজার রেজওয়ানা কাদির রাইসা, স্টামফোর্ড ইউনিভার্সিটি বাংলাদেশের শিক্ষার্থী প্রতিনিধি তানহা বিন মোর্তুজা, বাংলাদেশ সুপ্রীমকোর্ট এর আইনজীবী অ্যাডভোকেট রাশেদুজ্জামান মজুমদার, কনসার্ন ওয়ার্ল্ড ওয়াইড অ্যাডভাইজার শাহনেওয়াজ ওয়ারা, ঢাকা পরিবহন সমন্বয় কর্তৃপক্ষের সিনিয়র রোড সেফটি স্পেশালিস্ট মোঃ মামুনুর রহমান, গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের নগর উন্নয়ন অধিদপ্তরের সিনিয়র নগর পরিকল্পনাবিদ মাকসুদ হাশেম, সাউথ এশিয়ান ক্লাইমেট চেঞ্জ জার্নালিস্ট ফোরামের নির্বাহী প্রেসিডেন্ট মোঃ কেরামত উল্লাহ বিপ্লব, জাতীয় নদী রক্ষা কমিশন এর সচিব মোঃ হায়দার আলী, ইয়ুথনেট গ্লোবালের প্রধান নির্বাহী সমন্বয়ক সোহানুর রহমান, আইইউবিএটি এর সহযোগী অধ্যাপক ডক্টর ফেরদৌস আহমেদ এবং বারসিক এর সমন্বয়ক মোঃ জাহাঙ্গীর আলম।

Manual2 Ad Code

যুব সংলাপে প্রধান অতিথির বক্তব্যে পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান বলেন, আমরা এমন শহরে বাস করি যেগুলো প্রায়ই আন্তর্জাতিক মানদণ্ডে অবসবাসযোগ্য নগরের তালিকায় শীর্ষে স্থান পায়। আমাদের প্রানপ্রিয় ঢাকা নগরসহ অন্যান্য নগরীতে বায়ু দূষণের মাত্রা মারাত্মক এবং ঢাকা প্রায় সময়েই দূষণের শীর্ষে থাকে। এই বায়ু দূষণের কারণে দেশে প্রচুর পরিমাণ মৃত্যু ঘটছে এবং আমাদের গড় আয়ু ৫-৭ বছর কমে যাচ্ছে। ঢাকা শহর হচ্ছে বায়ু ও শব্দদূষণে শীর্ষে থাকা নগরী। স্বাধীনতার ৫৩ বছর পরেও আমরা বর্জ্যব্যবস্থাকে উন্নত করতে পারিনি। ঢাকায় বা শহরগুলোতে শিশুদের খেলার কোন জায়গা নেই। এই অবস্থার পরিবর্তনের দায় কারো একার নয়। আমাদের তরুণ তরুনীরা ১৫ বছরের ফ্যাসিজম মুক্ত করে নতুন দেশ উপহার দিয়েছে, তারা অবশ্যই পারবে আমাদের নগরীকেও বাসযোগ্য করে তুলতে। এই কাজে বর্তমান অন্তর্বর্তীকালীন সরকার অবশ্যই তাদের পাশে দাঁড়াবে।

Manual8 Ad Code

ওয়ার্ল্ড ভিশন বাংলাদেশ-এর ডেপুটি ডিরেক্টর মঞ্জু মারিয়া পালমা তার শুভেচ্ছা বক্তব্যে বলেন, মানব উন্নয়ন সূচকে অন্যান্য শহরগুলোর তুলনায় ঢাকা পিছিয়ে আছে। বর্তমানে ২ কোটিরও বেশি মানুষ এই শহরে বাস করে। জলবায়ু পরিবর্তনসহ নানা ধরণের সমস্যায় আমাদের এই শহর পর্যদুস্ত হলেও আশার বিষয় যে আমাদের যুবরা এই বিষয়ে কাজ করে যাচ্ছে। আমাদের যুবরা বৃক্ষরোপণ, বর্জ্যমুক্ত রাস্তা, ওয়ার্ড ঘোষণা করছে। তাই আমরা আশা করি, জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবে যে ক্ষতি হচ্ছে তা থেকে যেন বাংলাদেশ মুক্ত হতে পারে।

ইন্সটিটিউট অব আর্কিটেক্টস বাংলাদেশ (আইএবি)-এর ভাইস প্রেসিডেন্ট অধ্যাপক মোহাম্মদ আলী নকী বলেন, আমাদের সিচুয়েশন আসলেই ক্রিটিক্যাল, তাই যুবদের এগিয়ে আসতে হবে। যুবদের লিডারশীপে থাকতে হবে। আমাদের সহনশীল হয়ে তরুণদের আইডিয়াগুলো নিতে হবে এবং যুবদের স্টেকহোল্ডারদের কাছে যাওয়ার সুযোগ করে দিতে হবে। প্ল্যানিং ও পলিসির জায়গায় তরুণদের অন্তর্ভুক্ত করতে হবে।

Manual1 Ad Code

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভূগোল ও পরিবেশ বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. এম শহীদুল ইসলাম বলেন, আমাদের অনেক পরিকল্পনা আছে কিন্তু বাস্তবায়ন নেই। এই তরুণরা বাস্তবায়নে যদি এগিয়ে আসে তবেই পরিবর্তন আসবে। বিকেন্দ্রিকরন করতে হবে বলা সহজ, কিন্তু করা কঠিন। আমাদের প্রকল্প বাস্তবায়ন সঠিকভাবে করতে হবে এবং তরুণদের স্বতঃস্ফূর্ত অংশগ্রহণ নিশ্চিত করতে হবে।

Manual3 Ad Code

যুব সংলাপে বায়ুমন্ডলীয় দূষণ অধ্যয়ন কেন্দ্র (ক্যাপস) এর চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. আহমদ কামরুজ্জমান মজুমদার বলেন, বর্তমানে আমরা পরিবেশ সংস্কারের যে জায়গায় আছি, আমাদের উচিত অগ্রাধিকার ভিত্তিতে সংস্কার পরিকল্পনা করা। তরুণদের নেতৃত্বে দূষণমুক্ত শহরের তালিকায় ঢাকার নাম যেন আসে, সেই প্রত্যাশা করি। তিনি বায়ু দূষণ, শব্দ, দূষণ এবং প্লাস্টিক দূষণ মোকাবেলায় সরকারকে সহায়তা করার জন্য যুব সমাজের প্রতি আহ্বান জানান।

পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়ের উপসচিব ধরিত্রী কুমার সরকার বলেন, শহর অঞ্চলে জলবায়ু পরিবর্তনের লক্ষণীয় প্রভাব রয়েছে। এই প্রভাব থেকে বাঁচতে চাইলে আমাদের সম্মিলিত প্রচেষ্টার দরকার। তার জন্য সর্বপ্রথম আমাদেরকে জীবাশ্ম জ্বালানির ব্যবহার কমাতে হবে, ঢাকার ড্রেনেজ সিস্টেম ঠিক করতে হবে পাশাপাশি পানি ও বিদ্যুতের অপচয় কমাতে হবে।

সভাপতির বক্তব্যে ওয়ার্ল্ড ভিশন বাংলাদেশ এর সিনিয়র ডিরেক্টর চন্দন জেড. গোমেজ বলেন, বসবাসযোগ্য শহর এবং দূষণমুক্ত শহর বিনির্মাণে সবাই যার যার জায়গা থেকে কন্ট্রিবিউশন করলেই সমস্যার উত্তরণ সম্ভব। এই মুহূর্তে আমাদের ৫০০ স্কুলে জলবায়ু বিষয়ক কার্যক্রম পরিচালিত হচ্ছে। আমাদের কর্ম এলাকায় আমরা শিশু ও যুবদের নিয়ে ক্লিনিং কর্মসূচী করবো। এখন থেকে প্রতিমাসে একদিন আমরা ক্লিনিং ডে হিসেবে ঘোষণা করবো। পাশাপাশি শিক্ষার্থীদের সাথে নিয়ে ক্লাইমেট জাস্টিস নিয়ে কাজ করতে চাই।

বাংলাদেশ সুপ্রীমকোর্ট এর আইনজীবী অ্যাডভোকেট রাশেদুজ্জামান মজুমদার বলেন, আমাদের পরিবেশ সংক্রান্ত পর্যাপ্ত আইন রয়েছে, তবে বাস্তবায়ন ও সচেতনতা নাই। পরিবেশগত সমস্যা নিয়ে কেউ অভিযোগ করেনা। যুবকদের পরিবেশ আইন বিষয়ে আরও বেশী সচেতন হতে হবে।

ঢাকা পরিবহন সমন্বয় কর্তৃপক্ষ (ডিটিসিএ) এর সিনিয়র রোড সেফটি স্পেশালিস্ট মো. মামুনুর রহমান বলেন, রিসোর্স এলোকেশন-কে বিকেন্দ্রীকরণ না করে শুধুমাত্র এক জায়গায় নিয়ে আসার জন্যই পরিকল্পিত নগরায়ন হয়নি। তিনি বলেন, ‘লেখাপড়া করে যে, গাড়িঘোড়া চড়ে সে’এই আলোকে আমাদের বড় করা হয়েছে। এভাবে কোন পরিবর্তন হয় না। তিনি যুবদের বলেন, আপনারা যদি লোভী না হয়ে সত্যিই দেশের জন্য কাজ করেন, তবে অবশ্যই সুন্দর পরিবর্তন আসবে।

এটিএন বাংলার কারেন্ট অ্যাফেয়ার্স এডিটর এবং সাউথ এশিয়ান ক্লাইমেট চেঞ্জ জার্নালিস্ট ফোরামের নির্বাহী সভাপতি কেরামত উল্লাহ বিপ্লব বলেন, আমাদেরকে শুধু উন্নয়ন করলেই হবে না উন্নয়নের সঠিক পরিকল্পনা করে সেটি বাস্তবায়নে সচেষ্ট হতে হবে। রাজনৈতিক বিবেচনা নয় বরং যাচাই-বাছাই করে সত্যিকার অর্থে ক্ষতিগ্রস্থ বাস্তুচ্যুত পরিবারগুলোকে আবাসন বরাদ্দ দিয়ে সম্পদে পরিনত করতে হবে।

এছাড়াও উক্ত যুব সংলাপে আরও উপস্থিত ছিলেন বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থী প্রতিনিধিগণ, যুব ফোরামের প্রতিনিধিগণ, বায়ুমন্ডলীয় দূষণ অধ্যয়ন কেন্দ্র (ক্যাপস) এবং ওয়ার্ল্ড ভিশন বাংলাদেশ-এর প্রতিনিধিগণ।

 

এ সংক্রান্ত আরও সংবাদ

 


Follow for More!

Manual1 Ad Code
Manual5 Ad Code