চরিত্রগতভাবে রাষ্ট্রের কোনও পরিবর্তন হয়নি: সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী

প্রকাশিত: ৫:২১ অপরাহ্ণ, নভেম্বর ১০, ২০২৪

চরিত্রগতভাবে রাষ্ট্রের কোনও পরিবর্তন হয়নি: সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী

Manual2 Ad Code

নিজস্ব প্রতিবেদক | ঢাকা, ১০ নভেম্বর ২০২৪ : চরিত্রগতভাবে রাষ্ট্রের কোনও পরিবর্তন হয়নি বলে মন্তব্য করেছেন প্রাবন্ধিক ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইমেরিটাস অধ্যাপক সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী।

কমরেড আ ফ ম মাহবুবুল হকের সপ্তম মৃত্যুবার্ষিকীতে এক আলোচনা সভায় প্রধান আলোচকের বক্তব্যে এ মন্তব্য করেন তিনি।

Manual7 Ad Code

আজ রবিবার (১০ নভেম্বর ২০২৪) জাতীয় প্রেসক্লাবের তোফাজ্জল হোসেন মানিক মিয়া হলে আ ফ ম মাহবুবুল হক স্মৃতি সংসদের আয়োজনে চব্বিশের গণঅভ্যুত্থানে বামপন্থীদের ভূমিকা এবং করণীয় শীর্ষক এ আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়।

Manual6 Ad Code

সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী বলেন, আইয়ুববিরোধী ৬৯’র যে অভ্যুত্থান সে অভ্যুত্থানের চালিকা শক্তি ছিল বামপন্থিরা। এর সূত্রপাত মাওলানা ভাসানী করেছিলেন। তিনিই ছিলেন এর পরিচালক। বামপান্থিদেরই এখানে বড় ভূমিকা ছিল। কিন্তু আমরা ৭০’র নির্বাচনে কী দেখলাম, ক্ষমতা চলে গেলো বুর্জুয়াদের হাতে। রাষ্ট্র ভাঙলো না, রাষ্ট্র বদলালো না। রাষ্ট্র ৪৬-এ বদলায়নি, রাষ্ট্র ৭১-এ বদলায়নি। রাষ্ট্র যা ছিল সেটাই রয়ে গেছে এবং যে উপনিবেশিকতা ছিল ব্রিটিশ আমলে পাকিস্তানিরা এসে সেরকমই একটা নতুন অভ্যন্তরীণ উপনিবেশ তৈরি করার চেষ্টা করেছিল। সেই উপনিবেশের বিরুদ্ধেই লড়াই হচ্ছিলো এবং সেই লড়াইয়ের প্রধান ছিল বামপন্থিরা। কিন্তু তারা রাষ্ট্র ক্ষমতা দখল করতে পারেনি। তার একটা বড় কারণ ছিল বিভাজন, চীনপন্থি এবং রুশপন্থি বিভাজন। সেটাতে কত বড় ক্ষতি হয়েছে সেটা আমরা পরিমাপ করতে পারবো না। রাষ্ট্র ক্ষমতা বুর্জোয়াদের হাতে চলে গেলো এবং সেই বুর্জোয়ারাই তারপর থেকে শাসন করতে থাকলো।

তিনি আরও বলেন, আজও বাংলাদেশে আমরা উপনিবেশই দেখছি; আরেক ধরনের উপনিবেশ, ধনীদের উপনিবেশ। ঔপনিবেশিক শাসকেরা যেমন এ দেশের সম্পদ বিদেশে পাচার করত, দেশকে তারা নিজেদের দেশ মনে করত না, আজ বাংলাদেশের ধনীরা সেই কাজই করে। কাজেই চরিত্রগতভাবে রাষ্ট্রের কোনও পরিবর্তন হয়নি।

Manual7 Ad Code

এখন যে অভ্যুত্থান ঘটল, সেই অভ্যুত্থানে কোনো বিপ্লব ঘটেনি। এক চরম ফ্যাসিস্ট সরকারের পতন ঘটেছে। এই পতন নির্বাচনের মধ্য দিয়ে ঘটতো, ঘটতে পারতো। তাহলে আজ যারা পলাতক, তাদের পালাতে হতো না, তারা বেঁচে যেত। কিন্তু তারা তা চায়নি বলেই এ অভ্যুত্থান হয়েছে। একটি ফ্যাসিস্ট সরকারের পতন হয়েছে। আজ পৃথিবী জুড়েই পুঁজিবাদ ফ্যাসিবাদের রূপ নিয়েছে।– আরও যোগ করেন তিনি।

Manual8 Ad Code

সভায় অধ্যাপক আনু মুহাম্মদ বলেন, যে বিশ্ব ব্যাংক, আইএমএফ, এডিবির অর্থায়নের কারণে বাংলাদেশে বৈষম্য বেড়েছে এবং শিক্ষা-চিকিৎসার বাণিজ্যিকীকরণ হয়েছে। পাশাপাশি আমাদের এখানে জ্বালানি ও বিদ্যুৎ খাত ভয়ংকর রকম শঙ্কার মধ্যে পড়েছে। সেই বিশ্ব ব্যাংক ও আইএমএফ যদি এখনো দাপট নিয়ে চলে এবং এ সরকার যদি তাদের ওপর ভরসা করে এখনো অর্থনীতিকে পুনর্গঠনের চিন্তা করে, তাহলে পরিবর্তনটা কোথায় হচ্ছে? পরিবর্তনের যে আকাঙ্খা ও শক্তি প্রয়োজন ছিল, তার একটি অংশ জনগণের মধ্যে আছে।

বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টির (সিপিবি) সাবেক সভাপতি মুজাহিদুল ইসলাম সেলিম বলেন, মানুষের মধ্যে অহেতুক একটি বিতর্ক তৈরি করা হচ্ছে। ‘২৪ এর আন্দোলন কোনো বিপ্লব নয়, এটি অভ্যুত্থান। সমাজ ইতিহাসের একটি নিয়ম হলো মানুষের চেতনা অসমভাবে বিকশিত হয়। সবার চেতনা একসঙ্গে বিকশিত হয় না। তবে গণঅভ্যুত্থানের সময় একেবারে নিম্নস্তরের চেতনাসম্পন্ন মানুষও সামনে চলে আসে, এটি হলো একটি লক্ষণ।

সভায় সভাপ্রধান হিসেবে উপস্থিত ছিলেন আবু সাঈদ খান। আলোচক হিসেবে প্রথম আলোর যুগ্ম সম্পাদক সোহরাব হাসান, হারুনুর রশীদ ভুইয়া, নাসির উদ্দিন আহমেদ নসু, মহিউদ্দিন চৌধুরী লিটনসহ আরো অনেকে উপস্থিত ছিলেন।

 

এ সংক্রান্ত আরও সংবাদ